somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি আরবি গল্পের বাংলা অনুবাদ

১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পের নাম:রাজপথের ডাকাত দল
মূল: মারুন ‘আব্বোউদ।
বাংলা অনুবাদ: সুমন সোহরাব

লেখক পরিচিতি:

লেবাননের নামকরা সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, মারুন আব্বোউদ (১৮৮৬-১৯৬২) মূলত একজন গুরুত্বপূর্ন সাহিত্য সমালোচক ছিলেন, সততার একনিষ্ঠ পুজরী এই লেখক সবদিক দিয়েই ছিলেন প্রথা বিরোধী। তার মতো গুনবান লোক সচারাচর যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না। আধুনিকতার দিকে অগ্রযাত্রায় ও আরবি কবিতার আধুনিকায়নে তার কাজ নেপথ্য চালিকা শক্তির ভূমিকা পালন করেছে। কবিতা সর্ম্পকে অনেক পুরাতন ধ্যান-ধারনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি কবিতা ও এর সমালোচক দের জন্য নতুন সব পথ উন্মুক্ত করেন। এত সবের পরও তাকে সমালোচকের চেয়ে আরো বেশী কিছু বলে ভাবা হয়। সাহিত্যের অনেক নতুন নতুন ধারার প্রবর্তন করেন তিনি। তার ছোট গল্প গুলোতে চারপাশের জীবন ও জীবনানুভুতির বিশদ বর্ননা ঠাই পেয়েছে। এসব গল্পের মাঝে জীবনের অনিবার্য উপাদান সমুহ ও পৃথীবির প্রতি তার একধরনের সিমাহীন ভালোবাসার অনুপুঙ্খ চিত্রায়নের সন্ধান মেলে। তার কল্প কাহিনি গুলোর মধ্যে ফেরিস আগা, একাউন্টস অব দ্যা ভিলেজ এবং দ্যা প্রিন্স উইদ হুইট-কালার স্কিন উল্লেখযোগ্য। আব্বোউদ এমন একটা সময়ে কলম ধরেছিলেন যখন আরব বিশ্ব থেকে অন্ধকার সরে গিয়ে মুক্ত আবহ বিরাজ করতে শুরু করে, আজকের আরব বিশ্বের মত তখনো সেখানে এক ধরনের বেপরোয়া বোধ কতৃত্ব করছিলো। সমকালিন আরো অনেক লেখকের মতো তার কল্পকাহিনি গুলোতে, অস্থির সেই সময়ের প্রতিফলন সহ, নিজস্ব রসবোধ ও আনন্দ অভিজ্ঞতা ঠাই পেয়েছে।


রাজপথের ডাকাত দল

বাউ খাত্তার ধুলো মলিন অবস্থায় বড়ি ফিরলো।(আবু শব্দ থেকে উৎপন্ন বাউ এর মানে বাবা) রাইফেলটা ঝুলিয়ে রেখে তার পাশেই দেয়ালের ফোকরের মধ্যে পিস্তলাখানি সেধিয়ে দিয়ে, এক এক করে নিজের সার্টের পকেটে লুকিয়ে থাকা জিনিস পত্র খালাস করে নিলো। এর পর বেল্ট খুলে পাশের একটা পাথরের তাকে ভাজ করে রাখলো। নিত্যদিনকার মতো গতানুগতিক কাজ গুলো সেরে আগুনের কাছে এসে পায়ের উপর পা দিয়ে আরাম করে বসলো।
তার বউ বারসিট্টা একটা জগ ও গামলা এনে কাছে রাখলো, প্রায় সাথে সাথে সে মুখ আর টাকের চারপাসের চুল ধুতে শুরু করলো। কিন্তু তারপরও মুখে একটুও বিরতি নেই লোটির, কথা সে বলেই যেতে লাগলো। কিছুক্ষন পর পর সে বউকে একটা প্রশ্ন করার জন্য থামছিলো, এসময় মুখে লেপ্টে থাকা সাবানের দিকেও সে লক্ষ্য রাখছিলো না। তাকানের সময় চোখে জ্বালা ধরলে পর চোখ দুটো বন্ধ করে আবার খুলতে লাগলো, যাতে কথা না থামিয়ে একটানা বলে যেতে পারে। লম্বা সময় ধরে সে বক্ বক্ করে গেলো। বারসিট্টা যখন অমনোযোগী হয়ে পানি ঢালছিলো, সে তখন ভয়ে কেঁপে বিষন্ন হয়ে উঠছিলো, তার পর পরই তার আজকের পাপের কথা মনে পড়লো, এত সব ভেবে মনে মনে শুকনো মুখে সে প্রার্থনা করতে লাগলো তারপরও একটানা কথা সে বলেই যেতে লাগলো। এর পর চুল আচড়াতে আচড়াতে এটার পর একটা প্রশ্ন করে যেতে লাগলো, তবে এর একটারো উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলো না বা আশা কছিলো না। এবার গোঁফে চিরুনি চালিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঘুরিয়ে আকৃতি দেবার সময় সত্যি সত্যি থামতে হলো তাকে, নিজেকে নায়ক সুলভ উপস্থাপনের জন্য একে বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলা দরকার ছিলো। কাজটি করতে অনেক বেশী নিরবতার প্রয়োজন।
খানিকবাদে ঘোরানো একটি নিচু টেবিল ঘিরে পুরো পরিবারটা একত্রিত হলো, এখানে বসেই তারা খাবার খায়। উরুর উপর একটা করে রুটি নিয়ে বসে ছিলো সবাই, রুটি গুলো দেখতে বড় ন্যাপকিনের মতো ছিলো। খাবার সময় তারা নিজের হাতগুলোকে কাঁটা, এবং রুটির টুকরো গুলোকে চামচের মতো করে ব্যবহার করছিলো। খাবার সময় বাউ খাত্তার তাদের কথা বলার অনুমতি দেয়নি। কাজেই কাউকে প্রশ্ন করলে কেবল উত্তর দিতে হতো; অন্যথা আশা করা হতো সবাই চুপচাপ নিজের খবারের বাসনটার দিকে মনোযোগ দিবে। ঠিক যত ক্ষন পর্যন্ত পাতে হাত দিলে ডুমুর বা ঝোলা গুড় ঠেকতো ততক্ষন তাদের এভাবেই কাটাতে হতো; পরিবারটি সচরাচর এ খাবার গুলো খেতো। প্রতিদিন তাদের ভাগ্যে রুটি জুটিয়ে দেবার জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানাবার পর, সবার উদ্দেশ্যে বাউ খাত্তার তার উপদেশ বিতরন করে ও অন্যান্য আদেশ, নির্দেশ জারি করে। প্রথমে স্ত্রী, তারপর দুই শিশুর দিনের যাবতীয় ভুলচুক শুধরে দেয় সে। শেষমেশ তার কমান্ডার-ইন-চিফের মত দুই ছেলের দিকে নজর দেন, খাত্তার ও শালহোব কে কোন একটি কাজ করার উপায় বাতলে দেন, দিনের বেলায় করা প্রতিটি ভুলের জন্য এসময় তাদের সমালোচনা করা হয়।
“তুমি পেছন দিক থেকে ওর কাছে ঘেষে ছিলে” খাত্তরকে সে বলে। “সামনে থেকে এটা তোমার করা দরকার ছিলো। ওকে সব কিছু তোমার হাতে তুলে দিতে বলে অপেক্ষা করতে পারতে। অবাক করে দেয়ার চেয়ে এটা অনেক ভালো হতো; এ অবস্থায় লোকটাকে আঘাত করাও সহজ হতো, অন্তত ওকে ধমকাতে পারতে, আর মরার মত ভয় পাইয়ে দিতে পারতে। আর তুমি শালহোব,” ওর দিকে ঝুকে,“আমি যে ভাবে বলেছি সে ভাবে যদি তুমি চার রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থাকতে, শুয়োরটা তাহলে তোমাকে বোকা বানিয়ে কিছুতেই পালাতে পারতো না- তাতে করে তুমি ওর টাকা গুলোর মালিক বনে যেতে। থাক ওনিয়ে ভেবো না, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আবার সুজোগ আসবে। সে সময় মনযোগী থেকো।”
“আজকে আমাদের ভাগ্য তেমন একটা ভলো যায়নি” স্ত্রীর প্রতি সে মন্তব্য ছুড়লো। “আমাদের ওপর প্রচন্ড রাগ করা উচিত ছিলো তোমার।” মৃদু একটা বসমানা হাসি হাসলো ইম্ম খাত্তার (উম বা উম্মে’র আঞ্চলিক উচ্চারন হলো ইম্ম যার মানে মা)। আরো কয়েকটা বিষয়ে সংক্ষেপে আলাপ করার পর বাউ খাত্তার লম্বা একটা হাই তুলে বললো, “চলো এবার হাটু গেরে প্রার্থনা করি।” সে পিলারের মত শক্ত হয়ে দড়িলো। তারপর ছেলে দের একজনের বসা নিয়ম মত হয়নি বলে জানালো। তাকে থামতে বলে, তার পর বাবার সাথে বড় ছেলের নেতৃত্বে প্রর্থনা শুরু হলো: মা মেরির উদ্দেশ্যে প্রর্থনা শুরুর পর বাউ খাত্তার বার কতক গলা চড়িয়ে মেরি ও পূর্ব পুরুষের নাম ধরে ডাকলো, এর পর সে পরের দিন ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করে দেবার জন্য কুমরি মাতার প্রতি আকুল আবেদন করলো।
সব শেষে সোজা বিছানায় পিঠ বিছিয়ে শুয়ে পড়লো। “বারসিট্টা” চাদর মুড়ি দিয়ে সে বউকে ডাকলো, “কালকের নিয়ে যাবার জন্য আমাদের খাবার তৈরী করে রাখ। ভুলে যেওনা কাল শুক্রবার, তাই কিছু আলু সেদ্ধ করে দিও।” তারও কিছু ক্ষন পর বালিস থেকে মাথা তুলে, “ আমার পাজামাটা ছিড়ে গেছে,” সে বললো, “ওটার একটা গতি করতো দেখি, পারবে? আর আমার ওয়েস্ট কোটটারও যাচ্ছে তাই অবস্থা,” এটুকু বলেই সে আবার বিড় বিড় করে মনে মনে কিছু একটা আওড়াতে শুরু করে দিলো, “শুয়োরের বাচ্চাটাকে কালকে ধরবোই।”
কাঁথার নিচে কিছু ক্ষন থাকার পর, কামানো কুঁচকানো মাথাটা আবার সে বের করলো আর ছেলেদের বলতে লাগলো, ছুরি গুলো ধার দিয়ে রাখো, সাথে বন্দুক গুলো পরিষ্কার করো; আজকের ঘটনা যেন আবার না ঘটে তার জন্য বারুদের পুটলিটাও খানিকটা গরম করে নাও।” একথা শোনার পর কৌতুহলি হয়ে ইম্ম খাত্তার হাতে ইশারা করে জানতে চাইলো, ছেলে পাল্টা ইশারায় বাবা ঘুমিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে এক ফাঁকে জানালো, “আজকে আমরা দু’টি লোককে পাকড়াও করে ছিলাম। এক জনকে সাফাই করতে পারলেও অন্য জন পালিয়ে যায়। লোকটির সাহস ছিলো বলতে হয়, বয়সেও ছিলো তরুন।” ছেলেটি এবার একটা আংটি বের করে দেখালো, সেটার গায়ে “ইয়াজুল” নামের কারো প্রতি উৎসর্গ লেখা ছিলো। “লোকটার প্রেমিকার জন্য উপহার ছিলো এটা,” এই বলে সে বলতে শুরু করলো, কিভাবে তোমরা এ কাজ করতে পারলে?” খাত্তার ঈঙ্গিতে বাবার দিকে দেখালো। আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেনো, উনাকে বলো,” তার পর সে বলতে লাগলো, “আমি যদি কোন রকম প্রতিবাদ করতাম অথবা লোকটিকে ছেড়ে দিতে বোলতাম, তাহলে সে আমার উপর ভয়ানক ক্ষেপে যেতো। ‘শয়তান,’ সে বলতো, ‘তুই সব সময় কিছু একটা ছুতা খুজে বের করিস! ওদের চোদ্দগুষ্টির তোয়াক্কা না করে, যার যা আছে কেড়ে নে, যা!’ ”
এর পর পরই সবাই চুপ হয়ে গেলো, কেবল বাউ খাত্তার থেকে থেকে নাক ডাকছিলো। ঘুমের ঘোরে সে কার সাথে যেন কথা বলছিলো, লোকটাকে হুমকি ধামকি দিয়ে সেচ্ছায় আতœসমর্পনের জন্য ডাকছিলো, তারপর ছেলে কে তল্লাশি চালাবার জন্য চিৎকার হাকডাক দিছিলো, “খাত্তার!”
সকালে স্বাভাবিকভাবে তার ঘুম ভাঙ্গলো, তার পর বিছানার কোনায় কিছু ক্ষন পায়ের উপর পা রেখে বসে থেকে মা মেররি প্রতি প্রর্থনা জানালো। কোন কোন সময় এই প্রর্থনা দীর্ঘ ক্ষন ধরে চলতে থাকতো, এসময় সে কুমারী মাতার প্রতি অজান্তে করা সব অন্যায় আচরনের জন্য ক্ষমা চাইতেন, ছিনিয়ে আনা সব ধন সম্পত্তির চারভাগের একভাগ তার হাতে তুলে দেবার প্রতিশ্রুতি দিতেন। বেশীরভাগ সময়, র্চাচের জন্য এটাকায় বাতি কেনার, বা বাতিদানি দেবার, অথবা বাতির পরিমান আরো বাড়িয়ে দেবার কথা বলে এধরনের প্রতিশ্র“তি দেয়া হতো, আর যদি সে কাজে কর্মে আরো বেশী উন্নতি করতে পারে তাহলে আস্ত একটা হাতে তৈরী ঘন্টা উপহার দেবার কথা ঘোষনা করে।
ঘন্টাখানেক একটানা প্রর্থনার পর, প্রতি দিনের মত আবার তারা রাস্তার সেই জায়গাটায় গিয়ে দাড়ালো। খাবারের পুটলি কাঁধে নিয়ে ছোট ছেলে ওদের পেছন পেছন ছুটলো।
হাতে একটি জপ মালা আনতে কখনই ভুল হয়না বাউ খাত্তারের। আবিরাম সে ঈশ্বরের নাম জপতে থাকে, কোন একটা পুঁথি ছেড়ে গেছে এমন সন্দেহ হলে সে ক্ষতি পুরন করবার জন্য আবার জপ মালার প্রথম থেকে শুরু করে সে। আপন প্রর্থনাকে সে পরিচ্ছন্ন, সরল ও শুদ্ধ রাখতে চায়, ভুল বা কোন অংশ বাদ পড়েযাওয়া থেকে মুক্ত রাখতে চায়। তা না হলে কি করে স্রষ্টা তার ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করে দিবে?
চার্চের রাশি রাশি ঘন্টা ধ্বনি বেজে ওঠার পর পথেই সে প্রার্থনা সারে। বুকে ক্রুশ একে নিজের যাবতীয় ভুলের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করে মন ও আতœার শান্তি প্রার্থনা করে।
সুর্য ওঠার পর প্রতিদিনের মত ঘন্টার ভয়ানক শব্দে সে আপন মুর্তী ধারন করে। লাল রঙের টুপিখানা কপালের পিছে ঠেলে দিয়ে, মেঝেতে হাটুগেরে বসে পুত্র ধনদের সঙ্গে চেঁচিয়ে প্রার্থনা শুরু করে দেয়। তার পর আবার আগের মত তারা স্ব স্ব স্থানে লুকিয়ে, নিজেদের জিবিকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বাউ খাত্তার মনে মনে অনুভব করতে পারে কুমারী মা তার ওপর সব সময়ই তুষ্ট ছিলেন আর তাই ভাগ্য তার সুপ্রশন্ন হবেই হবে।
ধারে কাছে কেউ এক জন গাইছিলো, শুনতে পেল সে।
বাউ খাত্তার ইশারায় দু’ছেলেকে অভিযানে নামার জন্য তৈরী হতে বললেন। লোকটা সুখি আর নিরাপদবোধ করছিলো বলে মনে হচ্ছিল, তার পর দেখা গেলো লোকটা হাতে একটা জপমালা নিয়ে জপ করতে করতে এগিয়ে আসছে আর হঠাৎ সতর্ক হয়ে উঠছে। লোকটির ভয় জড়ানো প্রতিক্রিয়ায় বিষ্মিত সে, প্রার্থনায় মগ্ন লোকটির সামনে সাহসের সাথে এগিয়ে এসে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে অভিবাদন করলো সে।
বাউ খাত্তার চোখে মুখে রোষ প্রকাশ করে তার ফোঁলা লাল দুটি চোখে চোখ রাখলো।
লোটি তার শ্যেন দৃষ্টি উপেক্ষা করে আপন মনে হাটতে লাগলো। বাউ খাত্তার নিজের জপ মালা দিয়ে ঈঙ্গিতে তাকে থামতে আদেশ করলো, কিন্তু এবারো সে আকার ঈঙ্গিত উপেক্ষা করে হাটতে লাগলো। এই পর্যায়ে বাউ খাত্তার চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো, দেখ, এমন কিছু করতে বাধ্য করো না যা আমাকে ক্ষেপিয়ে তুলবে! আমাকে আমার প্রার্থনা শেষ করতে দাও!”
লোকটি বুঝতে পারছিলো সে বাউ খাত্তারের হাতে পড়েছে। “ এই সে” মনে মনে সে ভাছিলো।
লোকটিকে দাড় করিয়ে রেখে বাউ খাত্তার প্রর্থনায় মগ্ন হলো। প্রার্থনা শেষে লোকটির কাছে এসে আঙ্গুল উচিয়ে সে বললো, তোমার কাছে যা কিচু আছে সব আমাদের হাতে তুলে দাও।”
“বাউ খাত্তার, আমার কাছে কিছুই নেই।”
“তোমার কাছে কিছুই নেই? আর কে বললো আমিই বাউ খাত্তার?
“আমি নিজে থেকে তোমাকে চিনতে পেরেছি।”
“অন্ধ ঈশ্বরই তোমাকে এ ক্ষমতা দিয়েছেন! যাই হোক, তোমার কাছে যা কিছু আছে আমার হাতে তুলে দাও।”
“আমার কাছে কেবল দশ মাজিড আছে, বাচ্চাদের রুটির ব্যবস্থা করতে ওগুলো আমি ধার করেছি।”
“ওগুলো আমার হাতে দাও, হয়তো ঈশ্বর আবার ওগুলো ফিরিয়ে দেবেন।”
“কুমারী মাতা মেরির দোহাই, ওগুলো আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না!”
বাউ খাত্তার মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো ওগুলো তার হাতে তুলে দেবার জন্য ইশারা করলো। অনেক অনুনয়, বিনয়, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও কান্নাকাটির পর, কুমারী মাতা মেরির খাতিরে বাউ খাত্তার মুদ্রা গুলোর ভাগদিতে রাজি হয়। লোকটি অর্ধেক মুদ্রা বাঁচাতে পেরে বিড় বিড় করে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজ গন্তব্যের দিকে পা চালাতে থাকে।
মুদ্রা গুলো হাতে নিয়ে বাউ খাত্তার ক্রস কাটলো, তারপর সেগুলো শার্টের ভেতর গলিয়ে দিল।
“আজকের এ শার্টটা কত সৌভাগ্য বয়ে এনেছে!” এক জন ধার্মিকের সুরে সে বললো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে সে তার প্রিয় কুমারি মেরির পানে অনুনয়ের সুরে বললো, কেবল তেমার কারনে লোকটাকে ক্ষমা করে দিলাম,” এর পর সে আবার বললো, “এবার আমাদের সেই ক্ষতি পুরন করে দাও।”
কিছু লোক এক পাল খচ্চর নিয়ে এদিকটায় আসছিলো, এবার সে তাদের শব্দ শুনতে পেলো; তারা দ্রব্য মূল্য, ভালো মৌসুম সহ আরো অনেক বিষয়ে আলাপ করছিলো। “আমাদের ভাগ্য এবার হাতের কাছে এসে ধরা দিচ্ছে,” ফিস ফিস করে বললো বাউ খাত্তার, “ও দিক থেকে এক দল লোক এগিয়ে আসছে!”
খাত্তার তার রাইফেল তাক করলো আর শালহোব তার কুড়ালি প্রস্তত রাখলো, সে এমন করে এটি তাক করে দাড়ালো যেন শিকার তার একদম সামনে দাড়িয়ে।
তিন জন লোক তাদের খচ্চরের আগে আগে পথ দেখিয়ে এগিয়ে আসছিলো। বাউ খাত্তার এবার প্রচন্ড এক চিৎকার জুড়লো, নদীর জলে প্রতি ধ্বনিত হয়ে সেই আওয়াজ বহুগুন বেড়ে গেলো, “ঠিক আছে....., ভদ্রলোকেরা, এর সব গুলো এক্ষুনি আমাদের হাতে বুঝিয়ে দাও।” “ তা না হলে!” তিন জনের মধ্যে থাকা উদ্ধত এক তরুন তীর্যকভাবে এর জবাব দিলো আর তাদের মা তুলে গাল দিলো। লোকটাকে ভয় দেখাতে বাউ খাত্তার এবার একটা গুলি ছুড়লো, জবাবে পাল্টা গুলি ছুড়লো লোকটা, কিন্তু চুড়ান্ত গুলিটা বাউ খাত্তারের রাইফেল থেকেই বের হলো। তরুন লোকটা মাটিতে ছিটকে পড়লো আর তার বন্ধুরা আত্মসমর্পন করলো। তাদের কাছে থাকা সব কিছুই কেড়ে নেয়া হলো, এমন কি তাদের কাপড় চোপড় সহ খাবারের পুটলি পর্যন্ত বাদ যায়নি।
সুভ এই দিনটাতে সে কি কি আয় করলো, এক জায়গায় বসে তার একটা হিসেব করছিলো বাউ খাত্তার। এর মধ্যে ছিলো পয়ত্রিশ স্বর্ন মুদ্রা, কিছু রিয়াল এবং ধাতব মুদ্রায় ভরা একটা টাকার থলে, সেটা এত ভারী যে তুলতে গিয়ে বাউ খাত্তার আর্তনাদ করে উঠেছিলো।
ছিনিয়ে নেয়া অন্যান্য জিনিসো খুঁটিয়ে দেখছিলো সে-ওগুলোর মধ্যে ছিলো ব্রোঞ্জের একটা বাঁকানো হাতল ওয়ালা কুড়াল, বড় একটা ছোরা, ইস্পাতের ভারী একটা চাকু আর একটা রাইফেল।
তার ঈশ্বর আজ তাকে যা দিয়েছে তার জন্য সে নুয়ে মাটিতে চুমু খেলো। “অকৃতজ্ঞ মাটিতে চুমু খাও!” সে তার ছেলেদের বলে উঠলো। তার পর হেসে উঠলো, এক সাথে এত টাকা আর অস্র। একে তো সৌভাগ্যই বলে।”
লুটের মালের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে কুমারি মাতা মেরির সাথে মজা করতে শুরু করে দিলো। “ ভদ্রমহিলা তোমাকে ধন্যবাদ, স্রষ্টা তোমাকে আরো দীর্ঘ জীবন দান করুক! আজকে তুমি বাউ খাত্তার কে উজার করে দিয়েছো। আমি তোমাকে এমন ভালো একটা ঘন্টা বানিয়ে দেব যার মতো কখনই তৈরী হয়নি! ছেলেরা কাধের থলে খুলে খাবার বের করো!”
নদীর মাঝ বরাবর তিন জনে একটা পাথরের উপর বসে এত বড় বিজয়ের পর বিষ্ময়ে খাবার খাচ্ছিলো। ছোট ছেলেটি ছিনিয়ে পাওয়া পিঠ থলে থেকে এক টুকরো পনির বের করলো, এতে বাউ খাত্তার তাকে একটা চড় বসিয়ে দিলো। “অভদ্র ছোট লোক, কিছুটা হলেও সম্মান দেখাতে শেখ!” সে বললো, “কত বড় সাহস তোমার শুক্রবারে চর্বি খাচ্ছ? কেবল বিশ্বাসে ঘারতির কারনেই লোকটার কি অবস্থা হলো তাকি দেখতে পাওনি, গাঁধা!”


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:৩২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×