somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

বিপন্ন মানবতার উত্তরণ চাই

১৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিপন্ন মানবতার উত্তরণ চাই
ফকির ইলিয়াস
=======================================
দেখতে দেখতে আরেকটি বাংলা বছর চলে গেল। ১৪১৭-এর বৈশাখ স্বাগত জানাল বাঙালি মননকে। বাংলা নববর্ষ এই জাতিকে শাণিত হওয়ার প্রত্যয় দেখায়। জানিয়ে যায়, মানুষের জন্য মানুষ। মানবতাই পরম ধর্ম। কিন্তু এই জাতি কি সেই ঐতিহ্য ধরে রাখছে? এই প্রজন্ম কি পারছে সেই ধারাবাহিকতার পতাকা উড়িয়ে যেতে?
ক'দিন আগে রংপুরে একটি সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র দেখলাম টিভি চ্যানেলগুলোতে। গাড়িটি উল্টে গেছে। নিহতও হয়েছেন ক'জন। তারপরও ওই বাস থেকে আহত-নিহত মানুষের জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে কারা! কী ভয়াবহ সংবাদ! মানবিক সাহায্য না করে লুটপাট চালিয়েছে পাষ-রা! কত ভয়াবহ মানসিকতা হলে এমনটি করা যায়।
এই যে লুটপাট, এই যে চোখ রাঙানি তা কোথায় নেই? প্রধানমন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যানদের সমাবেশে খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, 'আপনারা গুন্ডা পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করবেন না।' এই কথা কি প্রমাণ করে না দেশে পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কেন বেড়েছে? কারণ মানবিক মূল্যবোধ লোপ পেয়েছে চরমভাবে। তা না হলে জনপ্রতিনিধিরা পেশিশক্তি পুষবেন কেন?
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে 'ইভটিজিং'-এর হার বেড়েছে মারাত্মকভাবে। রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে শক্ত কোন আইন করতে পারছে না। মুখে অনেক কথা বললেও তারা আইনের প্রয়োগে সচেষ্ট হচ্ছে না। বখাটেদের উৎপাতে গেল এক মাসে বেশ ক'জন তরুণী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। কোথাও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কথিত প্রেমিক হত্যা করেছে 'প্রেমিকা'র মা-বাবাকে।
সন্দেহ নেই দেশে ব্যতিক্রমী অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অবৈধভাবে কারও ছবি সংগ্রহ করে তা বস্ন্যাকমেইল করার শাস্তি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না গেলে, এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাবে না। আর সেই সঙ্গে রাজনৈতিক মদদদান কর্মটিকেও সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।
আমরা পত্র-পক্রিকায় দেখছি বাংলাদেশের 'সাইবার ক্রাইম' নিয়ে বিভিন্ন সিকিউরিটি ইউনিটের সদস্যরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আইন প্রণেতারা কী করছেন?
এক সময় ছিল কেউ ধর্ষণের শিকার হলে ভয়ে মুখ খুলত না। সেই সময় এখন আর নেই, ধর্ষণকারী কি আলামত রেখে গেছে তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ-সমাধান বিশ্বজুড়ে বেরিয়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলেই এর প্রয়োগ, আইনি কার্যক্রম শক্ত হাতে কার্যকরী করা হয়নি কিংবা যায়নি। এ বিষয়ে মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার কোন বিকল্প নেই।

দুই
বাংলাদেশে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে বিভিন্নভাবে। মানবিক সাহায্যের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে তা মেরে দেয়া হচ্ছে। টিভিতে ঘূর্ণিঝড়, আইলা উপদ্রুত এলাকার মানুষের ওপর একটি সচিত্র ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখছিলাম। সেখানে ওইসব অঞ্চলের মানুষ হাউমাউ করে কেদে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। তারা বলছিলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এসে দেখে যান আমরা কেমন আছি।'
এটা আমরা সবাই জানি একজন রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে গোটা দেশ চষে বেড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা কি করছেন? তারা ওইসব এলাকার মানুষের এ ভোগান্তির নির্মমতা নিরসনে সামান্য উদ্যোগী হচ্ছেন না কেন?
বর্তমান সরকারের বেশ ক'জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের ক্ষমতা এখনও জব্দ করা হয়নি। প্রকাশিত সংবাদে জানা যাচ্ছে, তাদের কেউ কেউকে অফিসে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী 'প্রধানমন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন'। অথচ এমনটি কথা ছিল না। শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এসব কাজের মূল্যায়নের কোন নিদর্শন রাষ্ট্র এবং জনগণ দেখতে পারেনি। কোন মন্ত্রীর রদবদলও হয়নি উল্লেখযোগ্যভাবে। অথচ দেশে চলছে নানা ধরনের দখলের রাজনীতি।
রাজনীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে সরকারদলীয় দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করা জরুরি। টেন্ডারের জন্য খুনোখুনি করলেও প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। সরকারি বাহিনী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়েই থেকে যাচ্ছে। এভাবে 'অন্ধ' হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব কি না তা ভেবে দেখতে হবে সরকারের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকদের।
গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের যে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে, এর জন্য অতীত কর্মকান্ডের সমালোচনা করাটা যথার্থ কাজ নয়। সমস্যাগুলোর সমাধান করতে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এদেশে বিদেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা আসার সাহস হারিয়ে ফেলবে ক্রমেই। ১৫ কোটি মানুষের দেশে সমস্যাগুলোর সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। কিন্তু শুরু করার কাজটি করে দেখিয়ে দেয়া দরকার বর্তমান মহাজোট সরকার জনগণের আস্থার মূল্যায়ন করছে বিশ্বস্ততার সঙ্গে।
বাংলাদেশে মানবতার উত্তরণের প্রয়োজন খুব জরুরিভাবে।
যারা বখাটে, তাদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লার মানুষকে সোচ্চার হতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মানবতাবাদী কর্মকা-, গরিব-দুস্থ মানুষকে সাহায্য, মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা ইত্যাদি অনেক কাজ গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায়, ইউনিয়নে সামাজিক উদ্যোগে গৃহীত হতে পারে।
সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমাজের মানুষের পরিশুদ্ধ জাগরণ। এই কাজটি করতে তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে নিতে হবে। আমরা ঘুণে ধরা সমাজ ভাঙার কথা মুখে বলি।
এজন্য যে চেতনার দরকার, তার উন্মেষ ঘটাতে হবে ন্যায়পরায়ণ, সৎ মানুষদেরই। আমাদের উৎস ছিল সৌহার্দ্য ও সম্প্রতির। পহেলা বৈশাখ সেই ডাকই দিয়ে যায়। ১৪১৭ সালে এই নবজাগরণ ঘটাক। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
নিউইয়র্ক ,১৪ এপ্রিল, ২০১০
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ১৬ এপ্রিল ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি- ইভ টিরাডো




৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×