somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যন্ত্রণা-১৫

১৫ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তমা হাসপাতালে এসে পৌঁছাল বিকাল চারটায়। ভিতরে ভিতরে ও ভীষণ কৌতুহলী ব্যাপারটা সম্পর্কে জানার জন্য। ও এই ধরনের কথা কখনো শোনেনি যে কেউ নিজের অপরাধ স্বীকার করতে চায়। হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমে কথা বলে নিল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহতাবের সঙ্গে। ভদ্রলোক সরকারী চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন বছর পাঁচেক। নিজের ইচ্ছায় এখানে কাজ করছেন। তমাকে স্নেহ করেন অনেক। যে ভদ্রলোক হাসপাতালে ডোনেসন দিতে চাইছেন তার সম্পর্কে জানালেন অনেক কিছুই। ভদ্রলোক বহুবছর দেশের বাইরে ছিলেন। ফিরেছেন কিছুদিন আগে। বিত্তবান কিন্তু ভোগ করতে পারছেন না আর বেশিদিন। তিনি এইডসে আক্রান্ত। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। দেশে ফিরে শুনেছেন এই সংস্থাটার কথা। জেনেছেন তাদের কার্যক্রমের কথা। তিনি চান তার অর্থের বড় একটা অংশ দান করে যেতে অসহায় মেয়েদের সাহায্যে। কিন্তু তার আগে তার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কথা জানাতে চান কর্তৃপক্ষকে, স্বীকারোক্তি দিতে চান নিজের কৃত অপরাধের। আর ভর্তিও হয়েছেন এই হাসপাতালে।
‘মা, ভদ্রলোক বিশেষভাবে বারবার আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলেন।’
‘আমার সাথে!’ অবাক হয় তমা, ‘উনি আমাকে কি করে চেনেন?’
‘তাতো জানি না। কিন্তু উনি বারবার আপনার কথা বলছিলেন।’

হাসপাতালের এক প্রান্তের একটা কেবিনে আছেন ভদ্রলোক। তমা ভিতরে ঢুকে দেখল জানালার দিকে মুখ করে বসে আছেন ভদ্রলোক। বাইরের বাগান দেখছেন। ডাক্তারের ডাকে ধীরে ধীরে মুখ ফেরালেন। তমা তাকিয়ে রইল। তাকিয়ে আছেন ভদ্রলোকও। আস্তে আস্তে মাথার ভেতরটা শূণ্য হয়ে যেতে শুরু করল তমার। কানের ভেতর ঝাঁ ঝাঁ। মুখের রঙ বদলে ধীরে ধীরে হয়ে গেল ফ্যাকাশে, সাদা। টলে উঠল তমা, কোনরকমে হাত দিয়ে আকড়ে ধরল সামনের টেবিলের একটা দিক। ডা. মাহতাব কিছু বলছেন, কিন্তু তমার কানে যাচ্ছে না। তমা কিছুই দেখছে না, কিছুই শুনছে না। শুধু মনে পড়ছে ভয়ংকর কিছু মূহুর্ত, লজ্জার অপমানের পরাজয়ের........। নিজের করুণ আকুতির কথা, একটুখানি দয়া ভিক্ষার কথা। মনে পড়ছে কত নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল সে আকুতি। বিদীর্ণ হয়েছিল তমা, হয়েছিল নিঃস্ব, রিক্ত, বদলে গিয়েছিল ওর জীবনটা এক নিমিষেই। যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছে তারপর থেকে। একদিন এক মূহুর্তের জন্যও সে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পায়নি। জ্বলে পুড়ে ছাই হয়েছে প্রতি মূহুর্তে।

তমা বহুদিন অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য। এই দিনটা শুধু ওর হবে এই প্রতীক্ষাতেই কাটিয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু আজ এই মূহুর্তটার সামনে দাঁড়িয়ে তমা নির্বাক হয়ে গেল। মনে হচ্ছে শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। ও আর ওর মাঝে নেই। বহু দিনের প্রতীক্ষিত এই মূহুর্তটির জন্য ওর কোন প্রস্তুতিই ছিল না। ও একেবারেই তৈরি ছিল না এখন, এই মূহুর্তে এই সত্যটির মুখোমুখি হতে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিমান সত্যটিকে তমার ভীষণ ইচ্ছে হল অস্বীকার করতে। কিন্তু তমা কিছুই করতে পারল না। পাথরের মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মারুফের মুখোমুখি। টেবিলের কোনা আঁকড়ে ধরা হাতের আঙুলগুলো বরফের মত সাদা, চেপে বসা দুঠোঁট, গাল ফ্যাকাশে কাগজের মতন, শুধু চোখ দুটো জ্বলজ্বল করতে লাগল। ঠিকরে বেরোতে লাগল ঘৃণা! এত বছর পরে দুইজন আবার মুখোমুখি।



চলবে................
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৪০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×