somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত থেকে বিদ্যুৎ পেতে হবে কঠিন শর্তে

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদ্যুৎ সংকটে হাবুডুবু খাওয়া বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন শর্তেই ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিপত্রের খসড়া তৈরি হলো। দুই দেশের আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি খসড়া চুক্তিপত্রটির বেশির ভাগ শর্তই বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠোর। খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, আমদানি করা বিদ্যুতের দাম ঠিক করবে ভারত। বিদ্যুৎ বিল প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। আর মাত্র দুই মাসের বিল বকেয়া থাকলেই সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারবে ভারত। এ ক্ষেত্রে ভারত একাই সিদ্ধান্ত নেবে। শুধু তাই নয়, বকেয়া বিলের জন্য বাংলাদেশকে দিতে হবে জরিমানা, যার হারও নির্ধারণ করবে ভারত। আর সঞ্চালন লাইন বসানোর খরচের প্রায় তিন শতাংশ পাবেন ভারতীয় পরামর্শকরা। খসড়া চুক্তিপত্রটি চূড়ান্ত করতে এখন মতামতের জন্য রয়েছে অর্থসচিব, বাণিজ্যসচিব ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবের টেবিলে। আগামী সপ্তাহে মতামত হাতে পেলেই তা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিদ্যুতের দাম, ট্যারিফ, আইনগত বিধিবিধান ও অন্য শর্তাবলির বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রের একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, কাজ চলছে। শিগগির তা চূড়ান্ত করা যাবে বলে আশা করছি।'
চলতি বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে। এরপর গত ১২ জানুয়ারি নয়াদিলি্লতে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুদেশের সচিব পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটির সভা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। পাশাপাশি এসব বৈঠকে পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের পিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম, ট্যারিফসহ অন্যান্য বিধিবিধান সংবলিত একটি চূড়ান্ত চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তৈরি হলো এ খসড়া চুক্তিপত্রটি।
খসড়ার প্রস্তাবিত শর্তগুলোকে বাংলাদেশের জন্য অসম ও একপেশে বলে মনে করছেন পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভারতেই বর্তমানে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতিতে রয়েছে। তার পরও তারা কিভাবে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেবে, এটা আমার বোধগম্য নয়। আর বিদ্যুৎ আমদানির জন্য খসড়া চুক্তিতে যেসব শর্তের কথা শুনলাম তাতে ভারতের স্বার্থই বেশি সংরক্ষিত থাকবে। বিল নির্ধারণ, বকেয়া পড়লে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি ক্ষমতা ভারতীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে দেওয়ার প্রস্তাব রাখায় বাংলাদেশ অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়তে পারে।' তিনি আরো বলেন, যে টাকায় আড়াই বছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনার চেষ্টা চলছে। তারচেয়ে অনেক কম খরচে মাত্র ১৮ মাসে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ বাংলাদেশেই উৎপাদন করা সম্ভব।
সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা যেহেতু সঞ্চালন লাইন তৈরি করব, তাই আমরা মনে করি সপ্তাহখানেকের মধ্যে খসড়ার বিষয়ে মতামত পাব। এরপর তা চূড়ান্ত করে জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ভারতের বিদ্যুৎ বাংলাদেশ সঞ্চালন লাইনে আনা সম্ভব হবে।' তিনি আরো জানান, ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি হলেও প্রথম পর্যায়ে আড়াই শ মেগাওয়াট আনা সম্ভব হবে। বিদ্যুতের দাম ও ট্যারিফসহ অন্য শর্তাবলির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খসড়া চুক্তিপত্র থেকে জানা যায়, ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিটি পরবর্তী ২৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে বাংলাদেশ চাইলে চুক্তি নবায়ন করতে পারবে। এতে আরো বলা হয়, ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের বহরমপুরে ৪০০ কেভির একটি সুইচিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। ২৩০ কেভির একটি সুইচিং স্টেশন স্থাপন করা হবে বাংলাদেশের ভেড়ামারায়। ভারতের বহরমপুর ও বাংলাদেশের ভেড়ামারায় তৈরি হবে ৪০০ কেভির দুটি সার্কিট লাইন। পিডিবিকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের নির্ধারিত সব সেবামাশুল (চার্জ) পরিশোধ করতে হবে।
ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদক দেশ হিসেবে এর নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার জন্য এককভাবে দায়বদ্ধ হলেও খসড়ায় যুদ্ধ, সশস্ত্র বিদ্রোহ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অবরোধ, বন্যাসহ যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায়দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি।
খসড়ায় বিদ্যুতের দামের ব্যাপারে বলা হয়েছে, সঞ্চালনের সেবামাশুল ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্ধারিত মাসিক হার ভিত্তিতে পিডিবিকে পরিশোধ করতে হবে। পাওয়ার গ্রিড অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় বিদ্যুৎ বিল তৈরির দায়িত্ব পালন করবে। বিভিন্ন সেবামাশুলসহ মাসিক বিল তৈরি হবে। যদি বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে অন্যান্য বিল সংযুক্ত করা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বিল পাঠানো হবে। বিলে কোনো বকেয়া রাখা যাবে না। বকেয়া হলেও তা দুই মাসের মধ্যে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জন্য জরিমানা দিতে হবে। এ জরিমানা নির্ধারণ করবে ভারত। তবে দুই মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ভারতকে।
খসড়ায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো বিলে সমস্যা থাকলে তা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়ার গ্রিড অব ইন্ডিয়াকে জানাতে হবে। সমস্যাকবলিত বিলের বাইরে অন্য বিলগুলো যথাসময়েই পরিশোধ করতে হবে। বিল ভারতীয় মুদ্রায় অথবা ডলারে পরিশোধ করা যাবে। সাধারণত লেটার অব ক্রেডিট বা এলসির মাধ্যমে মূল বিলের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ বেশি ধরে এলসি করতে হবে। এলসি করার খরচ বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। জরুরি কারণে এলসি করা না গেলে সরাসরি লেনদেন করার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। তা চেক বা চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে করা যাবে।
প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তিতে বিদ্যুৎ আমদানিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দুই দেশ সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করার চেষ্টা করবে। বড় কোনো সংকট দেখা দিলে এবং বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হলে সে ক্ষেত্রে আলোচনার ভিত্তিতে তৃতীয় দেশের আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। প্রথমে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মোট ব্যয়ের ছয় শতাংশই তাদের ফি ধরা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের আপত্তির মুখে তা কমিয়ে ২ দশমিক ৯২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে

সূত্রঃকালের কণ্ঠ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:৪৪
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×