somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংস্কৃতির উৎসব, উৎসব পালনের সংস্কৃতি

১২ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পয়লা বৈশাখের ভোজ হিসেবে পান্তা-ইলিশের বাইরে বিকল্প কিছু বের করা সম্ভব হয় না। মুসলিমদের কুরবানির ঈদে গরুই দিতে হবে, তা না হলে যেন কুরবানি আর ধর্ম ভিত্তিক সামাজিক উৎসব কোনটাই পালন সম্ভবপর নয়। এখানেও দেখি, হ্যাম ছাড়া বড়দিনের উৎসবে 'কী যেন নাই', 'কী যেন নাই' ভাব। শুধু ছাগল কুরবানিটা নিচু জাতের লোকদের জন্য। অথবা যারা ঘুষ খোর কর্মচারীর হালাল উপার্জনের সাথে সখ্যতা করে গরুর ভাগায় শরীক হবার সামাজিক উৎসবে যোগ দিতে পারেন না তাদের জন্য খাসি ভাগ্য। অথবা গরু কেটে ধর্ম পালনের পরেও এক মাসে বাড়তি রসনা যোগাতেও একটা খাসি ম্যা ম্যা করতে শোনা যায়।

প্রবাসে দেখি বড়দিন গুলোতে ঠান্ডার চোটে মানুষ গৃহবন্দী হয়ে উৎসব করে। পালনের পরিসরটা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের বাইরে প্রতিবেশি বা আরো বৃহত্তর দিকে যায়না। ঘরেই কেক কেটে, গাছে আলো বাতি ঝুলিয়ে শান্তিপূর্ণ ধর্ম-উৎসব-ভোজ চলে। ক্রিসমাস ইভের সন্ধ্যার আগেই দোকান-পাট বন্ধ করে ঘরে বসে উৎসব পালনের প্রস্তুতি নেয়, আমাদের চান রাতের মত কিছু নেই এখানে। ঠিক তখনই উপলব্ধি করি বাইরে এসে খোলা আকাশের নিচে জড়ো হয়ে উৎসব করার একটা চাহিদা, সকলকে পাশে নিয়ে, সশব্দে । শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত সদলবলে হাটাটা ক্লান্তিকর লাগার কথা নয়, শুধু মাত্র উৎসবের আমেজের কারণে। মানুষ, রঙ, মানুষর শব্দ, সূর্য, সজ্জা- জিনিস গুলো না দেখলে সেটিকে উৎসব নাম দেয়া অসম্ভব মনে হয়।

দুর্ভাগ্যবশত, এই উপলব্ধিটা স্বদেশে থাকার সময় ছিলনা। আবার সৌভাগ্যবশত উৎসব পালনের সংস্কৃতিগত ফারাকটা দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে। রথ যাত্রা, দোল উৎসবের মত মিছিল বা খোলা আকাশের নিচে সমাবেশের প্রয়োজনীয়তাটা এদের বুঝানোর চেষ্টা করি। "উড ইউ লাইক টু হ্যাভ ক্রিসমাস ইন সামার? ইউ বেটার মেইক এ ট্রিপ টু অস্ট্রেলিয়া টু হ্যাভ এ ডিফরেন্ট ফ্লেভার ।" কিন্তু অভ্যেসগত কারণে শীত বা বরফের বাইরে ক্রিসমাস পালনের কথা এরা ভাবতে পারনো, ঘর বন্দী উৎসব পালনেই এদের সুখ।

দেশে থাকার সময় পয়লা বৈশাখের ভিড়ে বের হওয়াটা স্বস্তিদায়ক ছিলনা। মানুষের মাঝে উৎসব বলে আলাদা "জীবনাচার পালনের" বাড়তি উৎসাহ থাকে। অন্তত একটা ছুটির দিন, বিশ্রাম, ভোজ বা বাইরে যাবার উপলক্ষ। গেও গেরামে মেলা ছাড়া বাড়তি কিছু আকর্ষণ ছিলনা। মাটির খেলনা, বাতাসা না পেলে ছোটদের উৎসব গুলো পুরোটাই অন্ধকার হয়ে যেত। এপ্রিল মাসে তরমুজ হয় বলে সাথে দৈ চিড়া যোগে ফলাহার করে উৎসব করা যায়। তাই তখন, বন্ধুদের ভদ্রতার থাতিরে করা, "নববর্ষ কেমন কাটল, কী পরিকল্পনা?"র জবাবে একটা স্বস্তিদায়ক উত্তরও দেয়া যায়। অন্তত হ্যালুইনে কী সাজলে বা ক্রিসমাসে ঐমুক প‌্যান কেইক বানিয়েছিলে কিনার জবাবে "প্রশ্ন এড়ানো উত্তর" দিবার প্রয়োজন হয়না।

এখন তাই ইচ্ছে হয়, পয়লা বৈশাখে রমনা থেকে টিএসসির ভিড়ে সদলবলে হাটতে, মানুষের সুখী রঙিন মুখ দেখতে। যেকোন বছরে এই দিনটিতে সূর্যের তাপদাহ থাকে, গলা শুকায়। তারপরেও গরমে রাস্তায় দাড়িয়ে সফেদ পাঞ্জাবি-শাড়ি জোড়া গুণতে ইচ্ছে হয়। প্রবাসে থেকে ধর্ম সংস্কৃতির ক্ষুধাগুলো এভাবেই চাড়া দেয়। কিন্তু পুরনো অসামাজিকতার জঙ্গলা খাদে পড়ে উঠে দাড়াবার মত মানসিক শক্তি পাইনা, কেউ উঠে আসার জন্য হাতও বাড়ায়না। দানা পানি নিয়ে পোকা মাকড়ের মত বেঁচে থাকি জঙ্গলা খাদে, করুণা পাবার মত এখনও অনেক অভুক্ত মানুষ আছে।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:১২
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×