somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন গর্বিত রাজাকার

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টানা আটদিন বঙ্গোপসাগর আর আরব সাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছালাম পাকি বন্দর করাচী । পথে বেশ ভালই কেটেছে । সাগর ছিল শান্ত, একেবারে ডাইনিং টেবিলে সাজানো একগ্লাস ঠান্ডা পানির মতই। নভেম্বর - ডিসেম্বর মাসে আবহওয়া এমনই থাকে। ভারত আর শ্রীলংকার পাশ দিয়ে আসার সময় টিভিতে মেলা অনুস্ঠান দেখতে দেখতে এসেছি।
অনেকদিন সাগরে থাকার পর মাটিতে পা রাখার রোমাঞ্চ আর মজাটাই আলাদা, যা লিখে প্রকাশ করা যাবেনা - শুধু হৃদয় দিয়েই তা অনুভব করা যেতে পারে।
তবে এই করাচীতে নামাটা আমার কাছে সম্পুর্ণ অন্য ধরনের মনে হয়। এখানে এলেই মনে হয় এদেশের মানুষেরা কত নিস্ঠুর অমানুষিক ভাবে আমাদের দেশে হত্যা, লুন্ঠন আর ধর্ষণ করেছিল। একধরনের ঘৃণায় মনটা বিষিয়ে উঠে।
তবে পাকিদের দিক থেকে লক্ষ্য করেছি, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর পাকিস্তান থেকে আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলোর ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রতিক্রিয়াবিহীন। তাদের সামনে পড়লেই তারা লম্বা একটা সালাম ঠুকবে আর হাতদুটো বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, " খোশ আমদেদ, আইয়ে আইয়ে বৈঠিয়ে, ক্যায়সা হালচাল হ্যায়?"
তারেক রোডে যাবো শপিং করতে, তো পথ চিনিনা, এক পাকিকে জিজ্ঞাসা করলাম পথের ঠিকানা, বললাম, " আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, এদেশে নতুন, তারেক রোডটা কোন দিকে বলতে পারো?"
সে পাকি তো মহানন্দে বললো, " আরে, তুমি আমার দেশের মেহ্‌মান, এসো এসো, তোমাকে বাসে করে তারেক রোডে পৌঁছে দিই।" সে আমাকে বাসে তুললো, পকেট থেকে ভাড়াটাও দিলো তারপর তারেক রোডে পৌঁছে দিয়ে বললো,"এই তোমার তারেক রোড, এবার তুমি অনুমতি দিলে আমি যেতে পারি।"
ভাবলাম ব্যাটা আমার জন্য এত খাটলো, ওকে একগ্লাস বেদানার সরবৎ খাওয়াই।
সরবৎ খাওয়ার কথা শোনা মাত্র সে বললো, "তুমি আমার দেশের মেহ্‌মান, আমারই উচিৎ তোমাকে সরবৎ খাওয়ানো।"
এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল, যাহোক, অনেক কষ্টে তাকে সরবৎ খাইয়ে বিদায় দিয়েছিলাম।
তারপর বাজার সওদা করতে শুরু করলাম। যেখানেই যাই ব্যাটারা কিভাবে যেন বুঝে যায় আমি বাংলাদেশী, আর ওমনি শুরু করে স্পেশাল খাতির। একবারো প্রকাশ করে না যে তারা একাত্তরে কি অত্যাচারটা করেছিল আমাদের উপর।
বাজার সওদা শেষ করে খাওয়াটাও সেরে নিলাম। তারপর একটা হলুদ ক্যাবে উঠলাম। মাঝবয়সী ড্রাইভারকে জাহাজের ঠিকানা দিয়ে বললাম সেখানে নিয়ে যেতে। চলতে চলতে তার প্রশ্ন আমি বাঙ্গাল মুলুক থেকে এসেছি কি না।
আমার হ্যাঁ সূচক জবাব শুনে সে খুশীতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো," ম্যায় ভি উধার থা।"
"কখন তুমি বাংলাদেশে ছিলে"?
"কেন, ঐ যে তোমাদের যুদ্ধের সময়।"
"কি করতে বাংলাদেশে?"
"কেন, যুদ্ধ করতাম।"
ভাবলাম সে বোধহয় পাকি সেনাবাহিনীর সদস্য ছিল।
ততক্ষণে সে সগর্বে বলেই যাচ্ছে, "আমি পূর্বপাকিস্তানে রাজাকার ছিলাম। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব আর অখন্ডতা বজায় রাখতে গিয়ে কি লড়াইটাই না লড়েছিলাম তখন। এই শালার ইন্ডিয়ার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনটাকে সঁপে দিয়েছিলাম শহীদের দরজায়। দেশ বাঁচাতে পারিনি শুধু ঐ নিমখারাম মাদার- - বেঈমান মুক্তিবাহিনীর জন্য। এই মুক্তিবাহিনীর জন্যই ইন্ডিয়া যুদ্ধে জিতে যায়, আমরা হারাই পূর্বপাকিস্তান আর তোমরা বাঙ্গালীরা হয়ে যাও ইন্ডিয়ার গোলাম।"
এবার সামান্য একটু বুঝতে পারলাম আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানীদের ধারনাটা।
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×