somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন বছরের শিশুরও রেহাই নেই!

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির বয়স ২ বছর ৯ মাস।
ছেলে- মেয়ে না বলে তাকে শিশু বলাই ভালো। এখনও পুরোপুরি কথা শেখেনি। মুখের বুলি তাই আধো আধো। সারাদিন ছোটাছুটি, খেলাধুলা করাই তার কাজ। এই বয়সে একটি শিশুর অবশ্য এসবই করার কথা। কিন্তু শিশুটি গত দুদিন ধরে এসবের কিছুই করতে পারছে না। কারণ সে এখন হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পাশে বসে অসহায় মা দেখছেন আর চোখের পানি ফেলছেন। কী হতে পারে শিশুটির? স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নের উত্তর হবে, খেলতে গিয়ে হয়তো গুরুতর আহত হয়েছে। তাই সে হাসপাতালে। এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটিকেই অস্বাভাবিক করেছে ১৭ বছরের বখাটে ও সন্ত্রাসী নয়ন। যার পাশবিকতা ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকে। ২ বছর ৯ মাস বয়সী মেয়েটির ধর্ষক এই নয়ন। মানুষ কতটা নির্মম, বর্বর হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণাকাতর শিশুটির পাশে উদ্বিগ্ন মা। কদিন আগে ঢাকার উত্তর খান এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার শিশুকন্যা। জানালেন, শিশুটি ভেবেছে একটি ভূত তাকে কামড়িয়েছে। কোনও একদিন ঘুম পাড়াতে গিয়ে মা তাকে ভূতের এমন গল্পই শুনিয়েছিলেন। তাই এ ঘটনার পর থেকে ওর মনে হচ্ছে তাকে হয়তো গল্পের সেই ভূতেই কামড়িয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বোঝার মতো বয়স বা মানসিকতা কোনটিই তার হয়নি। শারীরিকভাবে একসময় মেয়েটি হয়তো সেরে উঠবে। কিন্তু ওর মন?
শিশুটির পেরেনিয়াম ফেটে গেছে। এ কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। অস্ত্রোপচার করে সেটি ঠিক করা হয়েছে। তার সেরে উঠতে সপ্তাহ দুয়েক লাগবে। কিন্তু মানসিকভাবে মেয়েটি কবে সেরে উঠবে এর কোনও উত্তর নেই।
এই ভয় কাটিয়ে উঠে আবার কি সে কার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে?
সে এখনও শিশু তাই সে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন সে আর অন্যের ওপর ভরসা রাখতে পারবে না। তার আস্থার জায়গাটা কমে যাবে। পরবর্তীতে সে কারও ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। আরেকটি ব্যাপার হতে পারে যে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত এ ধরনের ঘটনার শিকার মেয়েরা সমাজে সেভাবে মিশতে পারে না। নিজেকে আড়ালে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে ছেলেদের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলতে তারা অনেকটা ভয় পায়। ফলে পরবর্তীতে বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কে তারা অভ্যস্ত হতে পারে না। সারাজীবন মনে মনে সে এই ভয়কে বহন করে যায়। শারীরিক আঘাতগুলো দেখা যায়, সে অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে ঠিক করা যায়। কিন্তু মনের এই আঘাত কোনও ওষুধ দিয়ে দূর করা যায় না। মেয়েটি যেহেতু অনেক ছোট, এখন ব্যাপারটি সে বুঝবে না। কিন্তু বড় হওয়ার পর যখন তার কোনও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় আসবে তখন ছোটবেলার এই ভয় তার মনে ভর করবে। তখন আর তার পক্ষে স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন চর্চা করা কঠিন হয়ে যাবে। এটা যে সচেতনভাবে হচ্ছে তা নয়। তার অবচেতন মনে ব্যাপারটি ঢুকে যাবে তার অজান্তেই। তখন সে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করবে। এমনিতেই আমাদের দেশে স্বাভাবিক শারীরিক ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক কড়া নিয়ম-কানুন থাকে। আর এ ধরনের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে চারপাশের পরিবেশ তাকে আরও দুর্বল করে দেয়। সেই মুহূর্তে সে নিজেকে দোষী ভাবে। ফলে দেখা যায় সে চুপচাপ হয়ে যায়, সহজে অন্যের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা রাখতে পারে না। এখন হয়তো মেয়েটি শিশু হওয়ার কারণে পরিবারের সাহায্য পাচ্ছে কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে এই সহযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। আর আমাদের সমাজের মানুষের মানসিকতা তো জানাই আছে। এসবই আসলে এ ধরনের ঘটনায় আক্রান্ত মেয়েদের জীবনের স্বাভাবিকতাকে ধ্বংস করে দেয়। পূর্ণ সহযোগিতার বদলে সমাজের মানুষ তাদেরই দোষ দেয় যারা ঘটনার শিকার।’
যন্ত্রণায় কাতর শিশুটিকে তার মা কী সান্ত্বনা দেবেন? শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া কী করার আছে এই অসহায় মায়ের? তাই কাতর মনে এখন আদরের মেয়ের সুস্থতাই
কামনা করছেন মা।

আসুন আমরা ধর্ষকদের সামাজিকভাবে সমাজের সকলক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত করে সমাজকে ধর্ষক মুক্ত করি।



৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×