somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ পোষ্ট আস্তিক-নাস্তিক, বি.এন.পি-আওয়ামি লীগ সবার জন্য, এ পোষ্ট মানবতার জন্য, বাংলাদেশের জন্য।

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পোষ্টের শুরুতেই সবার প্রতি একটা অনুরোধ, পোষ্টটা যদি পড়েন তবে সম্পূর্ণটা মনোযোগ দিয়ে অন্তত একবার হলেও পড়েন। আর পোষ্টটা পড়তে হয়তো সর্বোচ্চ ১৫-২০ মিনিট লাগবে। বাংলাদেশের স্বার্থে এই সময়টুকু আপনার কাছে চেয়ে নেওয়াটা হয়তো খুব দোষের কিছু নয়। আর একটা অনুরোধ, পোষ্টটা পড়ার সময় ভূলে যান আপনি বি.এন.পি/আওয়ামি লীগ/রাজনীতি বিবর্জিত কেউ, মনে করুন আপনি একজন মনে প্রাণে বাংলাদেশী। ভূলে যান আপনি আস্তিক/নাস্তিক, মনে করুন আপনি একজন বিবেকবান মানুষ, মানবতাই আপনার ধর্ম।


আজ আপনাদের চারপাশের কিছু মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। ছোট্ট ছোট্ট মানুষ। আপনার ছেলে/মেয়ের সমান, আপনার ছোট ভাইয়ের সমান অথবা আপনার ভাগ্নীর সমান। তারা এ দেশের-ই মানুষ, হয়তো ভবিষ্যতের আপনার মতো কোন ব্লগার, আপনার বাবার মতো কোন সৎ চাকুরিজীবি অথবা আপনার মায়ের মতো কোন সহজ-সরল গৃহিণী। হয়তো আমার বোন এর মতো কোন স্টুডেন্ট আবার হয়তো আপনার ভাই এর মতো কোন এক্সিকিউটিভ/ইন্জিনিয়ার/ডাক্তার।

কিন্তু তারা তা হতে পারবে না। কারণ, তারা আসলে আমাদের কেউ হয় না। তাদের জন্ম হয়তো হয়েছে ভূল একটা সময়ে আর ভূল একটা জায়গায়। আপনার-আমার ঘরে তো আর জন্ম নেয় নাই। তাদেরকে নিয়ে দেখা এ দেশের স্বপ্ন অনেক আগেই আকাশে ডানা মেলার আগে ভেঙ্গে গেছে, তারা এ সমাজের "ব্রোকেন উইংগস"। আসেন তাহলে কিছু ব্রোকেন উইংগসের ছবি দেখি। আপনার-আমার বাসার আশে-পাশে থেকে তোলা কিছু ছবি।




এই ছবিটা আফ্রিকার কোন শিশুর নয়, ভালো করে খোঁজ নেয়ে দেখেন- এ শিশুটা আপনার বহুতল বিল্ডিং এর পিছনের বস্তিতে থাকে।




এই শিশুটি আর কেউ নয়- এটা আমি। আজ হয়তো আমি তার জায়গায় থাকতাম আর সে এই পোস্টটা লিখতো। সময় ও স্থান এর চিরাচরিত বৈষম্যের কারণে তা হয়নি। তারপরেও সে স্বপ্ন দেখে পড়াশুনা করে একদিন সে বড় হবে। আপনার-আমার যেকোন একজন যদি প্রতিমাসে সেলফোনে একটু কম কথা বলি, তবে সেই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে তার স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পারি।




সিভিল ইন্জিনিয়ার না হয়েও আমি বলে দিতে পারি এই বাসার আয়তন খুব বেশি হলে ৮০ স্কয়ারফিট। আপনার পার্সোনাল রুমের চেয়ে অন্তত কিছুটা হলেও ছোট। তাদের জন্য বাসা বানিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও আপনার-আমার সবার সামর্থ্য আছে তাদের এই ছোট্ট ঘরের ভাঙ্গা বেড়া (যা দিয়ে বর্ষাকালে প্রতিনিয়ত বৃষ্টির পানি পড়ে) ঠিক করার জন্য মাত্র ১০০-টা টাকা দেওয়ার। একবার চিন্তা করে দেখুন তো এরকম একটা ঘরে কি একদিন সারাদিন কাটাতে পারবেন?




কিছুই বলার নেই এর সম্পর্কে। আপনি-আমি ফুটপাথে একে পাশ কাটিয়ে গেছি হাজার-বার। মাঝে মাঝে ২-১টি টাকা ছুড়ে দিয়েছি তার পাশে। আপনি বলেন, সে যদি আপনার সন্তান হতো, অথবা আপনার ছোটভাই -- আপনি কি করতেন?




ডাস্টবিন দেখে আমরা নাকে হাত চেপে ধরে চলি। সে কি করছে জানি না, তবে এইটুকু জানি যে কেউ ইচ্ছা করে ডাস্টবিনের পাশে বসে থাকে না। যা করছে পেটের দায়ে করছে। আমার-আপনার শখের বসে আজকে বিকালের খাওয়া এক পিছ ফ্রাইড চিকেনের টাকা দিয়ে অন্তত সে টানা ৪৮ ঘন্টা এই অসস্তিকর জায়গা থেকে দূরে থাকতে পারতো।




আপনার আদরের কোন ছোটবোন আছে? আপনার না থাকলেও আমার আছে। এটা আমার ছোটবোনের ছবি। আপনি কি আমার ছোটবোনের জন্য এবার ঈদে ফুটপাথ থেকে একটা সস্তা জামা কিনে দিতে পারবেন?
গত ৩ ঈদ থেকে সে নতুন জামা পরার স্বাদ পায় নি।





আর্টিকেলটা বেশি স্যাড হয়ে যাচ্ছে মনে হয়, তাহলে এবার ভালো কিছু পিকচার দেই .......




স্যালুট সেই যুবককে, যে অন্তত কয়েকজন ব্রোকেন উইংগস-কে অক্ষরজ্ঞান শেখাচ্ছে। আর ধিক্কার আমাকে, যে এডুকেটেড হওয়া সত্ত্বেও এই সিনারিও বসে বসে দেখছে।




স্যালুট সেই মা-কে, যিনি এতো দারিদ্রতার মাঝেও ভালোবাসা নামক এক অ্যাবসট্রাক্ট বিষয়ের মূল্য বোঝেন। আর ধিক্কার আমাদেরকে, যারা নিজেদের মাঝে দ্বন্দ তৈরি করে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াই অন্য কোথাও।




সাধ আর সাধ্যের অসম সমীকরণের মাঝেও বেঁচে থাকুক "ব্রোকেন উইংগস"-দের স্বপ্ন, আমার অবহেলিত ভাই-বোনদের একটু ভালো করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। শত কষ্টের মাঝেও যেন তারা ধরে রাখে এই অমলিন হাসি।






পোষ্টের শিরোনামেই আমি বি.এন.পি-আওয়ামি লীগ লিখেছি। যারা রাজনীতি করেন আর যারা করেন না তাদের আমি আমার সীমিত জ্ঞান থেকে একটা মতামত জানাই- "একটা দেশ তখনই উন্নতি করবে যখন সেই দেশের প্রায় সবাই জাতিগত একটা স্বার্থে এক হবে। স্বার্থটা যেকোন কিছুই হতে পারে যা দেশের জন্য কল্যাণজনক।" উদাহরণ দিচ্ছিনা- আপনারা সবাই এটুকু জানেন ও বোঝেন বলে আমি বিশ্বাস করি। আসেন না আমরা সবাই এক হয়ে এদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। আমার ধারনামতে ব্লগে যতই গ্যান্জাম হোক না কেন, এই ব্লগের সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসে। এই দেশ-ই যাদের শিকড়, দেশ-ই যাদের মূল ঠিকানা - তারা এই দেশকে ভালো না বেসে যায় কই। আমরা যদি এদের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে বুকে হাত রেখে এটুকু বলতে পারি যে, এদের মধ্যে অনেকে বড় মাপের কিছু না হতে পারলেও অন্তত স্বনির্ভর হতে পারবে। আর আপনার-আমার সন্তান অন্তত কিছুটা হলেও দেশে একটা ভালো পরিবেশ পাবে।



পোষ্টের শিরোনামে আমি আস্তিক-নাস্তিক লিখেছি। যারা আস্তিক, তারা তো অবশ্যই ধর্ম মানেন। পৃথিবীর সব ধর্মেই মানবসেবার কথা বলা আছে, যা সবাই আমার মতো জানেন। আর যারা নাস্তিক, তাদেরও আর সবার মতো একটা হৃদয় আছে। তারা মানবতা জিনিসটা অনেক ভালো বোঝেন। আস্তিকতা-নাস্তিকতা এই এক জায়গায় ছেড়া সুতাটা কিছু সময়ের জন্য জোড়া লাগিয়ে আমরা কি পারি না, মানবসেবা ও মানবতা নিয়ে একসাথে কাজ করতে। মনুষ্যত্ব, মানবিকতা ও মান রক্ষার্থে যারা প্রতিনিয়ত কাজ করেন তারাই মানুষ। আস্তিক-নাস্তিক, আমাদের সবার রক্তের রং তো একই। "ব্রোকেন উইংগস"-দের রক্তও তো আমাদের মতো লাল। আসেন না একই রক্তের টানে আমরা তাদের একটু ভালো করে বাঁচবার সুযোগ দেই।



সামহয়ারইন-এ অনেক ব্লগারের সাথে অনেক ব্লগারের সুসম্পর্ক আছে। দেখতে ভালোই লাগে যে সবাই টীম এর মতো। আমি ব্লগে খুব একটা পুরাতন না (মাত্র ৬ মাস)। আপনারা যারা সিনিয়র ব্লগার আছেন তারা একটা টীম ফ্রন্ট করতে পারেন। যারা জুনিয়র তারা সাপোর্ট করেন। আপনারা অনেক মৃত্যু-পথযাত্রীকে বাঁচিয়েছেন, সেজন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এবার আপনারা আর একটা টীম হয়ে না হয় আর একটা ফান্ড অ্যারাইজ করেন, কিছু জীবিত থেকেও প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুদের জন্য। আপনাদের অল্প সাহায্য তাদেরকে এ দেশের সুনাগরিক করে তুলতে পারে। আমার মতো যারা প্রবাসী ব্লগার আছেন তারাও সাধ্যমতো সে ফান্ডে ডোনেট করতে পারেন। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে আপনার আমার কিছু স্বল্প সাহায্য হয়তো সেইসব পথশিশুদের কাছে অনেক বড় পাওয়া হবে। আর দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু হলেও তো করা হবে।

আমি ব্লগেও যেমন জুনিয়র, তেমন বয়সেও খুব একটা বেশি হবো না। তাই যদি আপনাদের উপরের "ব্রোকেন উইংগস"-দের জন্য ফান্ড অ্যারাইজেশনের আইডিয়াটা ভালো লাগে তাহলে আপনারা যারা অভিজ্ঞ, তারা সবাই মিলে একটা টীম ফ্রন্ট করা শুরু করে দেন। একজন সাধারন মেম্বার হিসেবে আমাকে অবশ্যই পাশে পাবেন যথাসাধ্য সামর্থ্য নিয়ে।


আবার এমনও হতে পারে আমার এই আইডিয়াটা অতিরিক্ত আবেগের বশে বলে ফেলা একটা কথা মাত্র। এটা সত্য যে, আপনারা হয়তো মাঝে মাঝে অনেকে পকেট থেকে কিছু টাকা বা খাদ্য কিনে দিয়ে অনেক পথশিশুদের সাহায্য করেন। তাদেরকে আমার স্যালুট। তারপরেও ভাই, আমরা আজ থেকে অন্তত নিজের বিবেকের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে এ দেশের স্বার্থে ও মানবতার খাতিরে সপ্তাহের একবেলার খাবারের টাকা দিয়ে কিছু খাবার কিনে কিছু ক্ষুধার্ত পথশিশুর মুখে হাসি ফোটাবো। সামর্থ্য থাকলে একটা ব্রোকেন উইংগস-এর শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করে দেশকে উন্নত করার কারিগর হিসেবে কাজ করবো। শেষকথা, আপনার-আমার নিজের অজান্তে কিছু অপ্রয়োজনীয় খরচ এর টাকা দিয়ে আমরা কিন্তু একটা ব্রোকেন উইংগস এর স্বপ্নের ভাঙ্গা পাখা জোড়া লাগাতে পারি, বাংলাদেশকে একটা ভালো পজিশনে নিয়ে যেতে পারি - Impossible Is Nothing !!!!!!!!!


[ছবিগুলো আমার হোম ইউনিভার্সিটির এক স্টুডেন্ট(জুবায়ের বিন ইকবাল) এর কাছ থেকে সংগ্রহ করা। সে-ও হয়তো আপনার-আমার মতো একটা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। তার প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা।]
৫৭টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×