somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্র রসবোধ (২)

১০ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্র রসবোধ—২
ভদ্রতা

বোলপুর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ট্রেনে কলকাতায় আসছিলেন।
সংগীরা ছিলেন অন্য কামরায়। বর্ধমানে কবিগুরু লেমোনেড
খেয়ে মহা বিপদে পড়ে গেলেন। কারন, উনি নিজের কাছে
কখনো টাকা পয়সা রাখতেন না। ট্রেন তখন ছাড়ো ছাড়ো,
বয়টা উনার অবস্তা বুঝে চলে গেলো। সেই থেকে কবিগুরু
সঙ্গে কিছু টাকা পয়সা রাখতেন।
যদিও উনি বলতেন, ‘কাছে পয়সা না থাকাই বিশেষ সুবিধে।
কোনো কিছুর দরকার পড়লে, তখন এ পকেট ও পকেট
দু’একবার হাতড়াতে শুরু করলে, সঙ্গে যিনি থাকেন—
বিশেষ করে করুনহৃদয়া হলে তো কথাই নেই, .........
বলে ওঠেন, ‘ব্যস্ত হবেন না, ও আমি দিয়ে দিচ্ছি।
বলা বাহুল্য, বিন্দুমাত্র ব্যস্ত হইনি, তবু মুখের ভাবটা
যথাসাধ্য নিরুপায় এবং করুন মুখ করে বলা যায়, আহা!
তুমি আবার কেন কষ্ট করে—না, না, সে কি!!!
--এই রকম করে বেশ ভাল ভাবেই চলে যায়।।

........................................................................।।
Brain

এটা একটু খাবেন? রোজ রোজ আপনাকে কি নিরামিষ খাওয়াব
ভেবে পাইনে। বললেন মৈত্রেয়ী দেবী।
“ও পদার্থটা কি”?
“Brain”.
“এই দেখ কান্ড, এ তো প্রায় অপমানের সামিল! কি করে ধরে নিলে ঐ পদার্থটার আমার প্রয়োজন হয়েছে? আজকাল কি আর ভাল লিখতে পারছিনে? বিশ্বকবির কবিত্ব শক্তি হ্রাস হয়ে আসছে? থাক, সন্দেহ যখন একবার প্রকাশ করেই ফেলেছ, তখন শুরু হয়ে যাক!!!!
........................................................................
আলুবাবু

দ্বিতীয় যাত্রায় মংপু পৌছেই কবি বললেন, “ওরে আলু, আমার সেই পুরীর টাকার থলিটা সাবধানে রাখিস, এখানে আবার বলতে নেই,-----সকলের স্বভাব তেমন সুবিধের নয়। আলু নামের উতপত্তি জানো তো? ওর একটা মজবুত রকম সংস্কৃত নাম ছিল, কিন্তু সে এখন আর কেউ জানে না, যেদিন শুনলুম ও পটোলের ভাই, সেইদিন থেকে ও আলু। আজকাল আবার দিশী আলুতে কুলোচ্ছেনা, তাই বলি পটেটো!
আমার একদিকে বলডুইন এক দিকে পটেটো...... জোরালো সব নাম”।

তা পুরীর টাকার থলিটা কি? “ওই দেখ, ঠিক দৃষ্টি পড়েছে। যার যেই স্বভাব। পুরীতে পার্স উপহার দিয়েছিল। জানো, ওর মধ্যে আছে তাজা উনিশ টাকা আট আনা। তা যে জায়গায় এসেছি, এখন সামলে রাখতে পারলে হয়”।
........................................................................
আলোর খেলা

সন্ধ্যে-বেলায় বারান্দায় একটা চৌকিতে কবি বসতেন। সামনের পাহাড়ের গায়ে একটি একটি করে আলো জ্বলে উঠত। এইটি কবির দেখতে ভারী ভাল লাগত।
“ওকি ও, অন্ধকারে মাঠের মধ্যে আমাদের মহামান্য পটেটো আর ডাক্তার (মৈত্রেয়ীর স্বামী) কী করছেন? আলু যখন আছে তখন মনে হচ্ছে আজ একটা কান্ড ঘটবেই”।
সামনের পাহাড়ে চিত্রিতারা(ছোট বোন) আছে, তারা আলো দিয়ে এখুনি আমাদের কথা বলবে। আমাদের নিজেদের কোড আছে। তাই ওরা আলো নিয়ে তৈ্রী হচ্ছেন”।
“ও বাবা, এতো ব্যাপার কম নয়। সুচিত্রা দেবী বিরহিনী বসে আছেন, আর এখান থেকে ভগ্নীপতি আলোর দুত পাঠাবেন। ও হে ডাক্তার, এ যে মেঘদুত কেও ছাড়িয়ে গেলো। ঐ যে জ্বলছে আলো। এতোটা বাড়াবাড়ি,- তুমি সহ্য কর কি করে?—আবার হাসে, এত হাসি কেন? বারবার বলেছি
আমার কথায় কখনো হেসোনা তোমরা। আমি তো ঠাট্টা করতে পারিনে, আমার যে হিউমার বোধ নেই তা প্রমান হয়ে গেছে, জানো না? একজন প্রফেসার প্রমান করে দিয়েছেন লিরিক কবিদের হিউমারের বোধ থাকেনা। অকাট্য তার সব যুক্তি। কাজেই হয় মানতে হয় আমি কবি নয়, --এত কষ্টের কবি-খ্যাতিটি খোয়া যাবে? কাজ কি, তার চেয়ে আমার
কথায় তোমরা আর হেসোনা”।
........................................................................
জামা চুরি

একদিন রাত্রে প্রচন্ড ঝড় উঠল একেবারে হঠাত। কবির ঘরের স্কাই লাইট খোলা ছিল। মৈত্রেয়ীরা ভাবনায় পড়ে গেলেন। স্বামী, স্ত্রী দু,জনে আস্তে করে কবির ঘরে ঢুকে জানালা বন্ধ করে, নিঃশব্দে কবির গায়ে কম্বল ঢাকা দিয়ে চলে এলেন। পরদিন সকালে উঠেই কবি বললেন, “ কাল তোমরা স্বামী-স্ত্রী
মিলে কি কান্ডই করলে! সে এক সমারোহ ব্যাপার! আমি চুপ করে দেখছি যে কি দুর্ঘটনা ঘটে”।
“আপনি জেগে ছিলেন? আমরা কিছু তো বুঝতে পারলুমনা”।
“বুঝতে না দিলেই বোঝা যায় না। রাত-দুপুরে এসে জানালা বন্ধ করছেন, পাছে ভুমিকম্প ঢুকে পড়ে। দু’জনে দিব্যি আমার দুটো জামা চুরি করে......
“আহা আপনার জামা কেনো চুরি করব”?
“আবার বলে কেন চুরি করব? ঐ রকমই স্বভাব বলে। স্পষ্ট দেখলুম আমার মত জামা”। “ওতো ড্রেসিং গাউন”।
ফস্ করে একটি ইংরেজি নাম বলে দিলেই হল,-- যাক্ যা যাবার তা যাবে, একলা চলেছি এ ভবে, জামা যার লবার সে লবে”।
........................................................................


বয়স তাঁকে ছোঁয়নি

"বয়স হলেই বৃদ্ধ হয়ে যে মরে
বড় ঘৃণা মোর সেই অভাগার' পরে
প্রাণ বেরোলেও তোমাদের কাছে তবু
তাই তো ক্লান্তি প্রকাশ করিনে কভু"

এ কথা যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে কত সত্য তা যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, সবাই জানতেন।
আশি বছর বয়সেও নবযৌবনের প্রতীক কবি, শারীরিক কোনো দুর্বলতা, রোগের ক্লান্তি, কিছুই তাঁর মনকে স্পর্শ করতে পারত না। তিনি সহাস্য পরিহাসে আলাপে কৌ্তুকে আনন্দে মুখরিত করে রাখতেন কাছের মানুষদের।
কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু হাসিমুখে, কবিতার ঝর্ণায়, সুরের প্রবাহে, সহাস্য কৌ্তুকে শরীরের সমস্ত দুঃখ গোপন করেছেন। কাউকে এতটুকু দুঃশ্চিন্তা দেয়া দূরের কথা, আনন্দে মাতিয়ে রেখেছেন চারপাশের আবহাওয়া।

মানুষের জীবন কত আনন্দোজ্জ্বল, কত প্রাণরসে পরিপুর্ণ, কৌ্তুকে সুস্নিগ্ধ হতে পারে তা তাঁকে না দেখলে কেউ কল্পনা করতে পারত না।
৩৩টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×