somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলু

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাজারে মেলা বসেছে। বিশাল মেলা। মেলাতে সার্কাস পার্টিও এসেছে। সার্কাস পার্টিতে নাকি একটা ছেলে আছে যে শো এর সময় কিভাবে কিভাবে জানি মেয়ে হয়ে যায়! হি হি হি। নীলু মেলায় যায় নি। সে এসব কথা শুনেছে তার ভাই নাবিলের কাছ থেকে। নীলুর খুব ইচ্ছা করছে মেলায় যেতে। মা যেতে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। বাবা বাড়িতে থাকলে অবশ্য যাওয়া যেত। বাবার হাত ধরে চুলে ফিতা বেঁধে বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে ঘোরা যেত।



নীলু এবার ক্লাস এইটে পড়ে, নাবিল সেভেনে। তাদের বাবা ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে শুধু দুই ভাইবোন আর মা। নীলুর মা একটু রাগী ধরণের। রাগী না ভিতু সেটা নিয়ে অবশ্য নীলুর খানিকটা সন্দেহ আছে। তার মায়ের শুধু একটাই ভয় - ‘লোকে কি বলবে?’ এখন যদি নীলু গিয়ে মেলায় যাওয়ার বায়না ধরে, মা নির্ঘাত বলবেন – এত বড় হয়েছ, মেলায় গিয়ে নাচানাচি করলে লোকে কি বলবে? এইতো সেদিন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। নীলু মায়ের কাছে গিয়ে বলল, মা, আমি আর নাবিল একটু বৃষ্টিতে ভিজি। মা মুখের উপর বলে বসলেন, তুমি কি বাচ্চা? বৃষ্টিতে লাফালাফি করলে লোকে কি বলবে? নীলু ভেবে পায় না – দুই ভাইবোন মিলেই তো একটু বৃষ্টিতে ভিজবে। লোকের কি এমন ক্ষতি তাতে?



নাকি নীলু সত্যি সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। কত বড়? ক্লাস এইটেই তো উঠেছে মাত্র। এইটও মনে হয় বড়দের ক্লাস। নাহলে ক্লাসে সবার ‘বয়ফ্রেন্ড’ আছে, কিন্তু তার কথা বলারও কেউ নেই শুনে তার বান্ধবিরা এরকম হা করে থাকবে কেন? ‘কথা বলার কেউ নেই’ কথাটা মনে হয় একটু ভুল বলা হল। নীলুর একটা খালাতো ভাই আছে, নিলয় নাম। ভাইয়ার সাথে তার ভালোই ভাব ছিল। কিন্তু ভাইয়াটা না ইদানিং বাজে বাজে কথা বলে। অসভ্য!



নীলু ঠিক করল সে মাকে না বলেই মেলায় যাবে। নাবিলটাকে নিতে পারলে আরো ভালো হত। কিন্তু সে চলে গেছে ফুটবল খেলতে। নাবিলটা সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ির উপর থাকে। তার মত হতে পারলে ভালোই হত। নীলু খাটের নিচ থেকে তার মাটির ব্যাংকটা বের করল। হাতি আকৃতির এই ব্যাংকের সুবিধা হল এর পিঠ দিয়ে টাকা ঢুকানো লাগে আর দরকার পড়লে পেটের নিচ দিয়ে টাকা বের করা যায়। নিজের সাথে লুকোচুরি খেলার মত আরকি।



দুপুর পেরুবার আগে আগেই মাকে ঘুমে রেখে নীলু বেরিয়ে পড়ল। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানো মায়ের অভ্যাস। নীলুর একটু ভয় ভয় করছে। ফিরে আসলে মাকে কি বলবে। সে ঠিক করল, আসার সময় মায়ের জন্য সন্দেশ নিয়ে আসবে। মা সন্দেশ পছন্দ করেন। পছন্দের জিনিস পেলে হয়ত আর রাগারাগি করবে না মা।



বাজারে ঢুকেই নীলু অবাক হয়ে গেল। কত বড় গেট বানিয়েছে মেলার জন্য! চারিদিকে হাজারো মানুষ। এত মানুষের ভিড়ে তাকে দেখাই যায় না। নীলু ভিড় ঠেলে এগুতে লাগল।



মেলায় অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে নীলু এখন সার্কাসের টিকেট কেনার লাইনে। তার হাতে একটা প্যাকেটে এক বক্স কাঁচের চুড়ি, একটা শোপিচ – ডিমসহ পাখির বাসা, সন্দেশ, আর কয়েকটা রংবেরং এর ঘুড়ি। নীলু ঘুড়ি উড়াতে পারে না, ঘুড়িগুলো নাবিলের জন্য।



সার্কাস দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। নীলুর মনে পড়লো বাড়ি যাওয়ার কথা। সার্কাসের মেয়েটা কিভাবে আবার ছেলে হয়ে যাবে, সেটা দেখার একটু ইচ্ছা ছিল। জানতে পারলে স্কুলে গল্প করা যেত। নাহ, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। নীলু বাড়ির দিকে পা ফেলল।



বাড়ির বাইরের গেট আঁটকে ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেল মা রনরঙ্গিণী মূর্তিতে বসে আছেন। নীলু কিছু বলার আগেই মা ঠাস করে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। মা এতটা রেগে যাবেন, নীলু ভাবতে পারে নি।



নীলু নিজের ঘরের জানালার পাশে বসে আছে। তার গাল বেয়ে পানি পড়ছে আর ক্রমাগত হেঁচকি উঠছে। নীলু কি কাঁদছে। না, নীলু কাঁদছে না। কাঁদছে কৈশোর। কৈশোরের কান্না দেখে লোকে কিছু বলে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×