somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনর্পাঠ : নির্মল হালদারের কবিতা

০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নির্মল হালদার
গরামথান

চৈতু মাহাত-র ছেলে তুই

কি সুন্দররে দেখতে

আমাকে ভালোবাসবি?


কে বলছে কাকে, পাখি কী বললো গাছকে,

গাছ কী বললো মাটিকে,

যে যা-ই বলুক, সবাই সুন্দর। তাই তো চৈতু মাহাত-র চোখে

ধান-গম, আলু-বেগুন

বাছুরের হামলে-ওঠা, মুর্গির লাফানো

ছাগল-ছানার তিড়িং-বিড়িং

আমিও কী আছি, কে জানে
৩.

ফুটলো ঝিঙা ফুল

সাঁঝ বেলায় ফুটলো ঝিঙা ফুল।

আমার ফুল আমার ঘরে থাক

তোর ফুল তোর ঘরে থাক

আমার গরব আমারই

তোর গরব তোর-

আমার গা থেকেও গন্ধ ওঠে ফুলের,

তোর গা থেকেও ফুলের গন্ধ

আমরা আনন্দ


৪.

সেই চন্ডীমণ্ডপ, বটতলা তো আর নাই

হুঁকাও নাই আমাদের

খানিক রাস্তার মোড়ে, খানিক পান-দোকানে

আরে বাপু কথা তো বলতে হবে

পান খেয়ে হোক বিড়ি ধরিয়েই হোক, কথা যে বলতে হয়

জিরিয়ে নিতেও হয়

কোনো নিশান নাই আমাদের

শুধু পুব আর পশ্চিম

আলো জ্বলা আর আলো নিবা

তার ভিতরেই সুখ-দুঃখ, তার ভিতরেই শুয়ে-পড়া

অবিকল এক মানুষ প্রায় নুয়ে-পড়া

রোদ থেকে বাঁচতে ছায়া খুঁজছে


৫.

লাঙলে মরচে পড়লে

জমিও অফলা-

লাঙল ও জমি দুই-ই দেবতা আমাদের

আমরা গড় করি

আমরা ধার দি লাঙলের ফলায়

মাটিকেও মাটি রাখি গোবর দিয়ে


৬.

নুনা কাঁদছে ঘরে। নুনার মা বাসন মাজছে ঘাটে

কান্নার কাছে এসে দাঁড়ায় একটা শালিক

একটা চড়–ই। কান্না থেমে যায়

ওদিকে ডাকছে কেউ, নুনার মা নুনার মা...

পাখি উড়ে যায় শুরু হয় আরও কান্না

একটা কাক উড়তে থাকে কান্নাকে ঘিরে


৭.

ধান এসেছে ঘরে

ঝাড়াই-পেটায় হলো, বাঁধাও হলো।

কতক ধান সিদ্ধ হচ্ছে, নতুন চালে পিঠে গড়া

খেদও শোনা যায় পিসির মুখ থেকে

সবইতো হলোরে, ধানের ছড়া দুয়ারে দুয়ারে বাঁধলি না এবার

আসতে-যেতে মাথায় ঠেকবে

আসতে-যেতে আশীর্বাদ

ওই আমাদের দুয়ারে বাঁধা ভগবান


৮.

মাগো মা সরষে বুনেছি

ভাইরে ভাই সরষে বুনেছি

ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিব

ভালোবাসায় ভরিয়ে দিব

কলসি কলসি তেল

মাগো, পিঠা ছাঁকবি

লুচি ছাঁকবি

বহিনরে, ফুর্তিতে খাবি

বাপগো, মজাসে খাবি

ভাইরে, সরষে ফুলে আঁধার ঘুচাবো


৯.

ধানগাছের তো আয়না নাই

আমাকেই দেখাতে হয় সে কত বড় হলো

আমাকেই দেখতে হয় তার রোগজ্বালা

আশ্বিন-কার্ত্তিকের হাওয়াতে দুধ জমে ধানে

আমাকেই বলতে হয়

সে তখন লজ্জাবতী

মুখ নামায় মাটিতে

এ কথাগুলি শুনতে শুনতে মনে হলো,

ধানগাছের হয়ে-ওঠার ভিতরে আমি যদি থাকি

মাখামাখি করবে কী আমার হৃদয়?


১০.

সুপারি কাটতে জাঁতিটা লাগে

পিতলের জাঁতিটা কই

পানের বাটা তো কবেই গেছে

দোক্তা ভাজার পাট কবেই চুকেছে

পানের রঙে রাঙানো ঠোঁট

কেউ দেখে না আর

জাঁতিটা তো লাগবেই


আশালতা যে দেখাতে চায় মনটা কেটে কেটে

মনের কাছেই রাখা


১১.
আকাশে দু-একটি তারা তখনও জেগে

কুকুরও ডাকছে এদিক সেদিক

অঘ্রানের অন্ধকার-কুয়াশা ঠেলে এগিয়ে আসছে

খোল-কীর্তন

হারমোনিয়ামের সুরে: রাই জাগো রাই জাগো

শুকসারি বলে...।

পরের পংক্তিটি মনে মনে গেয়ে ওঠে

অনিলের মা দোহারের মতোই;

কত নিদ্রা যাও গো রাধে শ্যামনগরের কোলে...।

অনিলের মায়ের বাঁ-হাতে জলের ঘটি

ডানহাতে গোবর

ভোরের মাডুলি দিতে হবে দুয়ারে


পুনর্বার
তুমি অশ্র“চ্যুত হলে আর আমি অশ্র“পীড়িত।

পীড়িতের কাছেই ভিক্ষা চাও, পুনর্বার

আঁখিজলে হও জীবিত


ভিখিরি
ভিক্ষে দিলেই ভিক্ষে পাই

যা চাইবো জল মাটি আগুন

যা চাইবো আলো হাওয়া, কল্যাণ

তোকে পাবো বলে

দশ গাঁয়ে যাওয়া, যদি

আমার ঝুলিতে পড়ে এক মুঠো তুই


জ্যৈষ্ঠ

কেহ থাকে না এ সকালে

পাখি বসিয়াছে শুকনো ডালে

রোদ আসিয়াছে উঠানে

তোমার মন কি জানে

এই রৌদ্রের নাম

যদি বলি ঘাম

তুমি কি পাইবে সুগন্ধ

এই জ্যৈষ্ঠেরও আছে থরে থরে ছন্দ


অন্বয়
দিনের আলো ফুরিয়ে এলে

একটি কলসি ভেসে ওঠে হাড়াই নদীতে

তখন নদী ঝলমল ঝলমল

তখন নদীর নয়নে কাজল

কে থাকে হাড়াইয়ের পারে

আমি আঁধার খুঁজি আঁধারে

আঁধারের ভূমিকা বাঁশি বাজায়

আর নদীর দিকে যায়



জীবনের স্বাদ
কেন যে আসিল সে

কান্না এলো অবশেষে

এই কান্না অনেক দূর যায়

সাগরে মিলায়।

সাগরও উথলে ওঠে

জীবনের স্বাদ লাগে ঠোঁটে



আমার উদ্দেশে

নীরবতা,

তাহার নীরবতা।

আকুলতা,

আমার আকুলতা।

আমি কল্পনির্ঝর

আমারই জ্বর

জ্বরের ভিতর রামধনু উঠিল

কে একজন মুঠি খুলিল

আমলকি তো নাই

আমি যাই

সমুদ্রের তলদেশে

আমার উদ্দেশে

আমি তোমাকেই চাই
___________________
অর্কিড ৪-এ প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:৫৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনিদের আত্মদান ধর্মযুদ্ধ নয়; এটি স্বাধীকারের যুদ্ধ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যেকোন বিষয়কে ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে উপস্থাপন করে৷ ইসলামের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা তার ভিত্তিতে কনভারজেন্স নির্ধারিত হয়৷ বাঙালি মুসলমানরা এক্ষেত্রে এক কাঠি ওপরে৷ পক্ষ বিপক্ষ বেছে নেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×