somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ভেঙে পড়ে স্বপ্নের ভিত

০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বাড়ি ফিরতে রাত এগারোটার মতো বাজল। গলির ভিতরে দুর্গন্ধ, অনেকটা অন্ধকার । এমনিতেই ক’দিন ধরে পাড়াটা থমথম করছে। গালর্র্স স্কুলের জমিতে স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বহুতল শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা আঁটছে। তারই জের ধরে গালর্র্স স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী দিন কয়েক আগে খুন হয়েছেন। খুনির নাম নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে।
রিয়াদ তার ঘামে ভেজা শরীরে শীতল স্রোত টের পায়।
যথারীতি লোড শেডিং চলছে। বাড়িটা অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ি মানে আড়াই কাঠা জমির ওপর চারতলা দালানের রংশূন্য ধস্ত একটা কাঠামো। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সইবার কথা নয়। বাইরের আস্তর উঠে গেছে, একবারই রং করা হয়েছিল ... আর করা হবে কিনা কে জানে। রিয়াদের বাবার শেষ বয়েসে বাড়ি করার নেশা চেপেছিল। জীবনে তেমন কিছুই করতে পারেননি ভদ্রলোক, সম্ভবত বাড়িটা করে নিজের হীনমন্যতা ঢাকতে চেয়েছিলেন। সেই বাড়িই এখন লোড শেডিংয়ের খপ্পড়ে পড়ে অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
লোহার গেট ঠেলে ভিতরে পা রাখতেই কারেন্ট এল। তবুও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করল না রিয়াদ। বাড়িটা কোনওমতে শেষ করে বাবা হঠাৎই স্ট্রোক করে মারা গেলেন । আত্মীয়স্বজন এর-ওর কাছে টাকা ধার করে বাড়ির পিছনে ঢেলেছিলেন; তারা এখন টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য ভয়ানক চাপ দিচ্ছে । তা ছাড়া ট্যাক্সের ঝামেলা এড়াতে হাউস বিল্ডিংয়ের লোন নিয়েছিলেন। সুদের হার বেড়েই চলেছে । ঘন ঘন চিঠি আসছে, আসছে ক্রোকের নোটিশ।
ওদের ফ্ল্যাটটা চারতলায়। ওর কাছে এক্সট্রা চাবি থাকে। চারতলায় উঠে দরজা খুলল। খাওয়ার ঘরে আলো জ্বলছে। মা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? মায়ের শরীর এখন অনেক দূর্বল। সারাক্ষণ ঝিমুনির ভাব। ডাক্তার বলেছেন- এই সময় এরকম হতেই পারে। তার ওপর মার ঠিকঠাক যত্ন হয় না। জেরিন মাকে দেখে না; সারাক্ষণ বাড়ির বাইরে-বাইরে থাকে, কিছু বলা যায় না। বললে ভয়ানক চিৎকার-চেঁচামেচি করে। কাজের একটা মেয়ে আছে। ঝর্না, অল্প বয়েস; মেয়েটা যতটুকু পারে মাকে দেখে। রিয়াদ জানে: মার আজকাল রাতে ভালো ঘুম হয় না। অসুখের দুশ্চিন্তায়। অবশ্য আরলি স্টেজ। তবু টেনশন আছেই। কলাবাগান থেকে মমতাজ খালা ঘন ঘন আসছেন। তিনিই মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। দুজনে মিলে ফিসফিস করছেন। রিয়াদের তখন নিজেকে অনেক দূরের মনে হয়।
আজ বাড়িতে পা রাখতেই আলো আসল। রিয়াদ তবুও ও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করল না। এ বাড়ির এক, দুই ও তিন তলা ভাড়াটে থাকে। ভাড়া যা পায় তাতে সংসার খরচ ও মায়ের চিকিৎসায় চলে যায়। জেরিনের ডিম্যান্ডও কম নয়। তা ছাড়া হাউস বিল্ডিংয়ের লোনের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। রিয়াদ দু-তিনটে টিউশনি করছে। এ বছর সেমিষ্টার ড্রপ দিতে হচ্ছে। বন্ধুরা সব অনার্স পাস করে যাবে ...
আজকাল খালি পেটে থাকলে হাত-পা কাঁপে, চোখেমুখে অন্ধকার দেখে। হাতমুখ ধুয়ে এসে খেতে বসল। জেরিন-এর ঘরে বন্ধ। তবে দরজার নিচে আলো দেখা যায়। টিভি চলছে বলে মনে হল। মাস তিনেক হল ড্রইংরুমের টিভিটা নিজের ঘরে নিয়ে গেছে। মা আর টিভি দেখে না-এই অজুহাতে। যতক্ষণ ঘরে থাকে টিভি দেখে আর ফোনে কথা বলে। কে ওর বিল মেটায় কে জানে। জেরিন আজও রাত করে বাড়ি ফিরেছে মনে হল। কলেজে ওঠার পর কেমন বদলে যেতে জেরিন। সুন্দরী। মডেলিং করার জন্য এখানে-ওখানে দৌড়ায় ...তখনই হয়তো মানিকের সঙ্গে পরিচয়। বছর খানেক হল জেরিন মানিকের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছে। মানিক উঠতি মাস্তান, স্থানীয় এমপির পোষা ক্যাডার। মানিকের মধ্যে কি পেল জেরিন? হয়তো মানিক ওকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। দু-বছর আগে এ্যালিফেন্ট রোডে মানিককে ছিনতাই করতে দেখেছে রিয়াদ। জেরিনকে শাসন করে লাভ হয়নি। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দিয়েছে। ওকে নিয়ে এক সময় মায়ের যথেষ্ট উদ্বেগ ছিল। এখন মা কিছু বলে না ...নিজের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে ভীষণ কাহিল মা...
রিয়াদ খাওয়া শেষ করে ছাদে উঠে এল।
সিঁড়িতে ওঠার সময় হাঁপিয়ে গেল।
আজকাল খুব ঘাম হয়, সন্ধ্যোর দিকে শরীর কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে, গলার কাছে তৃষ্ণার ভাব, ঘন ঘন প্রশ্রাব হয়, খালি পেটে হাত-পা কাঁপে, সিঁড়ি ভাঙলে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে। পাড়ার এক বন্ধু রিপন; প্রাইভেট একটা মেডিকেল কলেজে ফোর্থ ইয়ারে পড়ছে - তাকে খুলে বলেছিল। রিপন ব্লাড টেস্ট করতে বলছে। রিয়াদ এড়িয়ে চলে। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুতে পারে।
মাস কয়েক হল সে ছাদঘরে উঠে এসেছে। টিন শেডের ঘরটা ছোট। ভিতরে আস্তর করা হয়নি। দুটো চেয়ার, একটা খাট। আগে এ ঘরে আলম থাকত, ছেলেটা এ বাড়ি দারোয়ান। আলমকে নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে। রিয়াদ পাখি ভালোবাসে। দরজার কাছে চেয়ারে বসে পাখি দেখে। ছাদে কত রকমের পাখি আসে। ছাদের রেলিং ঘেঁষে নাড়কেল গাছে টিয়ে পাখিরা ঝুল খায়। কোনও কোনও নির্জন দুপুরে সে অপার্থিব দৃশ্য দেখে রিয়াদ।
বিছানায় হেলান দিয়ে সিগারেট ধরালো। গরম লাগছে। গরমের দিন বলেই করগেটের ছাদটা তেতে আছে। সবুজ রং করা পুরনো একটা ফ্যান আছে। ওটা চলার সময় বিশ্রী ঘরঘর শব্দ ওঠে। মনে হয় যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে ...
এতক্ষণে শুভ্রার মুখটা মনে পড়ল। শুভ্রাও ওর জীবন থেকে সরে যাচ্ছে। শুভ্রাকে ও স্কুলজীবন থেকেই চেনে, একই পাড়ায় বেড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন একটা মনোরম সম্পর্ক ছিল শুভ্রার সঙ্গে। আজকাল কেবলই মনোমালিন্য হয়ে যাচ্ছে। রিয়াদ এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় গ্যাপ দিচ্ছে। টাকা জমিয়ে মায়ের ট্রিটমেন্ট করবে। ব্যাপারটা শুভ্রার ভালো লাগেনি। আজকাল প্রায়ই বলে: তোমাদের এত সমস্যা ...আমার আর ভাল্লাগে না।
রিয়াদ জানে, শুভ্রা আজকাল মঈনের সঙ্গে ঘুরছে। মঈন রিয়াদেরই ফ্রেন্ড-একই স্কুল-কলেজে পড়েছে। আজকাল রিয়াদের ফোন করলে শুভ্রা আর ফোন ধরে না। মাস তিনেক আগে জেরিনকে বিচ্ছিরি একটা গালি দিয়েছিল শুভ্রা। রিয়াদ শুভ্রাকে চড় দিয়েছিল । চড় মারতে চায়নি। বোনের নামে বাজে কথা বলল, মাথায় রক্ত চড়ে গেল ...অবশ্য বাজে কথা না ...জেরিন ...
রিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গুমোট রাতের দূর আকাশের পানে চায়। মার্চের মেঘশূন্য রাত্রির আকাশে কিছু তারা মিটমিট করে। দূরের নক্ষত্রগুলি রিয়াদের সান্ত্বনার কারণ হয়ে ওঠে না। কোথায় এই দুঃখের সূত্রপাত? সে গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
দিনটা আজ অসহ্য ঠেকছিল। টিউশনি সেরে সন্ধ্যার মুখে নীলক্ষেত গিয়েছিল। অনেকক্ষণ ঘোরঘুরি করে একটা বই কিনল। Our Place in the Universe; ... Norman K. Glendenning এর লেখা। এ ধরনের বই সে সচরাচর পড়ে না। তার উৎসাহ পাখিতে, পাখি বিষয়ক বই পেলে কিনে। আজ কী মনে করে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের বই কিনল। পাখিরা যে বাস্তব ভৌত জগতে বাস করে সে সম্বন্ধে তার উৎসাহ কম। তারচে তার ভালো লাগে পাখি, পাখির রুপ, পাখির কূজন, পাখির জীবন। ধনেশ পাখি তার প্রিয়। একটা সময় ছিল যখন ও বন্ধুদের নিয়ে পাখি দেখতে মেঘনা পেরিয়ে গোমতী নদী অবধি চলে যেত। সেসব সুখের দিন এখন ফুরিয়ে এসেছে। এখন ভারি দুঃসময়; এখন দুঃখের দিনে ফিরে তাকাতে চায় মহাবিশ্বে ...আজকাল সে কেবলি ভাবে কেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হল? যখন কারও কারও জীবন কেবলই দুঃখযন্ত্রণার দীর্ঘ বিস্তার।
হঠাৎ কী মনে হতেই Norman K. Glendenning এর লেখা Our Place in the Universe বইটি তুলে নেয়। পাতা ওল্টায়। এ বইয়ে দুঃখ-কষ্টের সূত্রপাতের কথা লেখা আছে? রিয়াদ পড়তে থাকে। ... In an instant of creation about 14 billion years ago the universe burst forth, creating space where there was no space, and time when there was no time. It was so hot and so dense that not even nucleons, the building blocks of atomic nuclei, had as yet formed. Until about 1/100,000th of a second all that existed was an intense fire and primitive particles called quarks and electrons and all their heavier kin together with their antiparticles; in a sense, these were the elementary particles conceived of by two early Greek philosophers of the fifth century BC, ...After that first brief moment, the quarks coalesced into neutrons, protons and other versions of these nucleons, never to be free again. In that inferno the lightest elements | deuterium and helium | were forged from the neutrons and protons during the next few minutes. These two primordial elements make up fully one-quarter of the mass in the universe today...পড়তে পড়তে রিয়াদ সচেতন হয়ে ওঠে। এসব বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও অনুমানের সঙ্গে আমার জীবনের সর্ম্পক কোথায়? আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। সে স্বপ্নের ভিত এখন ধ্বসে যাচ্ছে। আমি এখন কি করব? আমি এখন কি করতে পারি? পাখি দেখতে আর ভালো লাগে না ...মানিকের ব্যাপারে জেরিন মাস দুয়েক আগে রিয়াদকে গালাগাল করেছিল। স্থানীয় গালর্র্স স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী খুন হওয়ার পর পুলিশ মানিককে সন্দেহ করছে। মানিক গা ঢাকা দিয়েছে। নিহত প্রধান শিক্ষয়েত্রী অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। পাড়ার লোকে জেরিন সঙ্গে মানিকের সর্ম্পকের কথা জানে। রিয়াদের আশঙ্কা তারা ক্ষেপে উঠে তাদের বাড়িটি যে-কোনও মুহূর্তে আক্রমন করতে পারে। মানিক কোথায় লুকিয়ে আছে তা জেরিন নিশ্চয়ই জানে। মাঝেমাঝে জেরিন টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে কই যেন যায়। তখন জেরিন বোরখা পড়ে। তখন জেরিনকে আরও অপরিচিত লাগে।
রিয়াদের শরীর হিম হয়ে আসে।
আজও লাল ছাপ মারা সর্বনাশা ক্রোকের চিঠি এসেছে।
গতকাল ঝিকাতলা থেকে ইসহাক চাচা ফোন করেছিলেন। কি রে রিয়াদ? টাকার কি হল রে ? শাহিনার বিয়ে। তোদের উপকার করতে গিয়ে আমার মেয়ের বিয়ে আটকে থাকবে তাতো হয় না।
রিয়াদের শরীর হিম হয়ে আসে।
ডাক্তার খান মাকে বলছেন, এখন আপনার আরলি স্টেজ। একবার সিঙ্গাপুর কিংবা ব্যাঙ্কক গিয়ে চেক আপ করিয়ে এলে ভালো হয়, রিস্ক থাকে না। এসব সেনসেটিভ ব্যাপার।
কয়েক মাস আগে পাড়ার নাজিম আঙ্কেল বলছিলেন, রিয়াদ, তোমার মাকে বল এত টাকার ধার শোধ হবে না। তারচে তোমার মা বরং জমিসহ বাড়িটা বেচে দিক । আমি পার্টি দেখি। আমার এক বন্ধু-রিয়েল স্টেট ফার্মে আছে-হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর নাম শুনেছে? সেখানে। আশরাফ সব শুনে ইন্টারেষ্ট দেখাল।
কথাটা মাকে বলা যাচ্ছে না। মা ভীষণ ভেঙে পড়বেন।
নাজিম আঙ্কেল শুভ্রার বাবা; তাঁর কাছ থেকে বাবা সাত লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন। ইসহাক চাচা বাবার চাচাতো ভাই-তিনি পান সাড়ে চার লাখ...
রিয়াদের শরীর হিম হয়ে আসে।
গতকাল অরুণ একটা অদ্ভুত কথা বলল। জাহিদের সঙ্গে শুভ্রার বিয়ে ঠিক। শুভ্রা নাকি অষ্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। জাহিদ শুভ্রার কাজিন, অনেকদিন ধরেই অষ্ট্রেলিয়ায় সেটলড; ‘শেল’- এ চাকরি করে। অরুণও শুভ্রার কাজিন। অরুণ কি মিথ্যা বলল? না, অরুণকে অবিশ্বাস করার কিছু নেই, দীর্ঘদিনের বন্ধু, একই পাড়ায় একই সঙ্গে বড় হয়েছে। রিয়াদ অবাক হয়ে ভাবল শুভ্রা যখন জাহিদ সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়া চলেই যাচ্ছে তাহলে ও মঈনের সঙ্গে এত ঘুরছে কেন?
আসলে এই ভৌত জগতে মানুষের এই সম্পর্কজাল বড় জটিল।
মা দেবীদ্বার চলে যেতে চাইছে। দেবীদ্বার উপজেলার উত্তর জাফরগঞ্জ মায়ের বাবার বাড়ি। সেখানেই মায়ের জন্ম। জায়গাটা গোমতী নদীর পাড়ে । সুখের দিনে কলেজের বন্ধুদের নিয়ে গোমতী নদীর পাড়ে পাখি দেখতে গিয়েছিল। অরুণ মঈন শিবলী রঞ্জু। প্রত্যেকেই গোমতীর রুপে মুগ্ধ হয়েছিল। ওরা প্রচুর পাখির ছবি তুলেছিল। বিশেষ করে, বড় আকারের লম্বা লেজের নিচু বাঁকা ঠোঁটের হর্ণবিল বা ধনেশ পাখির ছবি। ধনেশ পাখির গেছো স্বভাব। রিয়াদ আগে থেকেই জানত- বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের ধনেশ পাখি পাওয়া যায়। তখনই লক্ষ করেছিল-ধনেশ পাখি গাছের খোড়লে বাসা বানায়; স্ত্রী ধনেশ ঠোঁট দিয়ে কাদা বিষ্ঠা ইত্যাদি দিয়ে বাসার মুখে একটি সরু ফাঁক রেখে বাকিটা আটকে দেয় ...
মা কি গোমতী নদীর পাড়ে মেয়েবেলায় এসব লক্ষ করেছিল?
পশুপাখিরা বাসাকে কি যতœ করে আটকে রাখে? অথচ কিছু কিছু মানুষ নক্ষত্রের ফেরে উৎখাত হয়ে যায়।
চোখ টনটন করছে। রাতটা ক্রমশ ভোরের দিকে হেলে পড়ছে। হাত থেকে কখন খসে পড়েছে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের অবাস্তব বইটা। দরজাটা খোলা। ঘরে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছে। একটা সিগারেট ধরাতে যাবে- ঘরের বাতাসে মিষ্টি গন্ধ পেল। ছাদজুড়ে নানা সাইজের টবে ফুলের গাছ। গন্ধরাজ ডালিয়া সন্ধ্যামনি দোপাটি মোরগঝুঁটি ... মা শখ করে করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মা ছাদের বাগানে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। রিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে...রিয়াদ জানে ...গোমতী পাড়ে রিয়াদের মাতৃপুরুষের ভিটে এখন প্রায় শূন্য, তবুও মা সে শূন্য ভিটায় অভিমান করে চলে যেতে চাইছেন। মা চলে যাবেই ...মা খুব জেদি।
জেরিনের পাটও চুকল এ বাড়ি থেকে। জেরিন আগুন নিয়ে খেলছে। যারা আগুন নিয়ে খেলে তারা এক জায়গায় দীর্ঘদিন বাস করতে পারে না ...মার তাহলে কি দোষ?
বাকি রইল সে আর ঋনগ্রস্থ একটি দালান ...
রিয়াদ ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে আসে।
ভোরের হাওয়ায় শরীর হিম হয়ে আসে। খালি গা, পরনে পায়জামা। ওকে রাতজাগা তরুণ কবির মতো দেখায়। নম্র আলোয় ভরে উঠছে ছাদ। পুবের আকাশে আর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে রঙের হোলি খেলা। শীতল হাওয়ায় ফুলের গন্ধ। এখনও আজান হয়নি।
রিয়াদ ছাদের কিনারায় পৌঁছে কি মনে করে নিচে উঁকি দিল। নিচে গেটের কাছে কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে, দারোয়ান আলমের সঙ্গে কথা বলছে। দূরে একটা ভ্যান থেমে। রিয়াদের বুক ধক করে ওঠে। জেরিনকে অ্যারেষ্ট করতে এসেছে?
ও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। দেখল সিঁড়িঘরের সামনে ঝর্না । দৌড়ে এদিকেই আসছে। চিৎকার করে বলল, মামা, মামা। তাড়াতাড়ি আসেন, খালাম্মা কেমন জানি করতেছে।
রিয়াদের শরীরটা জমে ওঠে।
ও ঘোরের মধ্যে সিঁড়ি ঘরের দিকে যেতে থাকে।
এই মুহূর্তে সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে: পুলিশ আসার আগেই যেন মা চলে যায় ...
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×