somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালে সেরে উঠছেন আনোয়ার হোসেন

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। অসুস্থ হওয়ার প্রথমদিকে কথা বলতে পারলেও পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাকশক্তিও হারিয়েছেন তিনি। সপ্তাহ দেড়েক আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি পারকিনসন রোগে ভুগছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। প্রয়োজনীয় চিকিত্সা পেয়ে ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি। তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন ভালো বলেই জানিয়েছেন চিকিত্সক মির্জা নাজিম উদ্দিন।
একটা সময়ে শুটিংয়ের কাজে দেশের আনাচ-কানাচে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে দেশীয় চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে। অথচ অসুস্থ হওয়ার পর সব চিত্রই যেন পাল্টে যায়! কর্মব্যস্ত ও প্রতিনিয়ত ছুটে চলা মানুষটার জগত্ হয়ে ওঠে শুধু কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসার একটি ঘর। চার দেয়ালে বন্দী অবস্থায় কাটতে থাকে তাঁর দিনরাত। কেউ গেলে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকেন শুধু। নিঃসঙ্গ আনোয়ার হোসেনের একাকী জগতের সঙ্গী শুধুই তাঁর সহধর্মিণী নাসিমা আনোয়ার। মাঝেমধ্যে আনোয়ার হোসেনকে দেখতে দেশের বাইরে থেকে ঢাকায় আসেন তাঁর সন্তানেরা। এই তালিকায় কালে ভদ্রে যোগ হয় তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মক্ষেত্র চলচ্চিত্র অঙ্গনের কিছু লোকজনও। তবে তা নাকি নেহায়েত উল্লেখ করার মতো নয়।
হঠাত্ করেই সপ্তাহ দেড়েক আগে আনোয়ার হোসেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সারা দিন বমি করার ফলে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। এতে বেশ ঘাবড়ে যান তাঁর স্ত্রী নাসিমা আনোয়ার। দ্রুত আনোয়ার হোসেনকে কলাবাগানের বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। এই হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক চিকিত্সক মির্জা নাজিম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে এখন চিকিত্সা চলছে আনোয়ার হোসেনের। ১৩১৭ নম্বর কেবিনে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আছেন দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। নয় দিন ধরে স্কয়ার হাসপাতালের এই কেবিনেই তাঁর চিকিত্সা চলছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আনোয়ার হোসেনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে হাসপাতালের কেবিনে ঢুকতেই দেখা গেল বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন তিনি।পাশের সোফায় বসে আছেন আনোয়ার হোসেনের সহধর্মিণী নাসিমা আনোয়ার।



নাসিমা আনোয়ার জানান, ‘এমনিতে অনেক দিন ধরেই তো তিনি অসুস্থ। হঠাত্ করে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে গেলে খুব ঘাবড়ে যাই। তারপর সবার সিদ্ধান্তে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে খুব ভালোভাবেই তাঁর চিকিত্সা চলছে। সবাই বেশ খোঁজখবরও নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আনোয়ারের চিকিত্সার ব্যাপারে খুব সচেতন। সকালেই জানতে পারলাম স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীও আনোয়ারকে দেখতে আসবেন। এ ছাড়া চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই এসে আনোয়ারের পাশে সময় কাটিয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা আসতে পারছেন না, ফোনে খোঁজখবর নিচ্ছেন। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যেন তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারেন।’



নাসিমা আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে রুমে ঢোকেন চিকিত্সক মির্জা নাজিম উদ্দিন। যাবতীয় দেখভাল করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘তাঁর অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। তিনি পারকিনসন রোগেও ভুগছেন। আগেই তাঁর দেহে রোগটি বাসা বাঁধলেও এত দিন ডায়াগনসিস করা হয়নি। সঠিক সময়ে চিকিত্সা না পাওয়ায় আনোয়ার হোসেন শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন। আমরা এবারই প্রথম তাঁর ডায়াগনসিস করলাম। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিত্সাও দিয়েছি। আর সে চিকিত্সায় তিনি এখন অনেক ভালো আছেন। তবে আরও সময় লাগবে। তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাওয়ার। আমাদের পাশাপাশি তাঁর একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শও খুব দরকার।’



প্রসঙ্গত, পারকিনসন রোগ সম্পর্কে প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন জেমস পারকিনসন। তাঁর নাম অনুসারেই এই রোগের নাম। মস্তিষ্কের এই রোগের কারণে সারাক্ষণ হাত-পা কাঁপা, শরীরের মাংসপেশি অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে থাকা, স্পর্শকাতরতা কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।



আনোয়ার হোসেনের জন্ম জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ভাত দে’সহ তিনি পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি বাংলার মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাচসাস, পাকিস্তানের নিগারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গুণী এ অভিনয়শিল্পী। ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরে আরও দুইবার তিনি এ সম্মানে ভূষিত হন। এ ছাড়া ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান আসর থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন গুণী এ শিল্পী। বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৫ সালে একুশে পদকও পান তিনি। আনোয়ার হোসেনের চার ছেলে ও এক মেয়ে। চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে থাকেন সুইডেনে। অন্য তিন ছেলে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×