somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ওয়াজেদ সাহেবকে ঘিরে কিছু স্মৃতি

০১ লা এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

. ওয়াজেদ সাহেবের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ১৯৬১ সালে ফজলুল হক হলে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ অনার্সের ছাত্র (ইংরেজি), ড. ওয়াজেদ পদার্থ বিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্র। আমরা সিনিয়রদের যথেষ্ট সমীহ করে চলতাম। তারা নিজেরা এগিয়ে এসে আলাপ না করলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। সম্ভবত সেপ্টেম্বরের শেষে একদিন ডাইনিং হলে পাশাপাশি দুজন বসেছি। ওয়াজেদ সাহেব আমার নাম ঠিকানা পরিচয় জানতে চাইলেন। আমার বাড়ি রংপুর শুনে প্রায় লাফিয়ে উঠে বললেন যে তার জেলার লোক আমি। আমি তাকে ওয়াজেদ ভাই বলা শুর" করলাম এবং উনি আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করলেন। জানাতে দেরি করলেন না যে তিনি হলের ভিপি পদপ্রার্থী।

সরকারিভাবে ছাত্র সংগঠন নিজেদের নাম ব্যবহার করতো না। কিন্তু সবাই জানতো কোন প্যানেল কোন দলের। ওয়াজেদ ভাই ছাত্রলীগের প্যানেলের। আজ বলতে বাধা নেই যে সেদিন আমার মাঝে প্রবলভাবে আঞ্চলিকতা কাজ করেছিল। আমি অত্যন্ত উৎসাহী হয়ে উঠলাম। প্রথম বর্ষের ছাত্র। অক্টোবরে লম্বা ছুটি হয়েছিল। মাত্র কদিন বাড়িতে কাটিয়ে হলের ডাইনিং হল না খুললেও হলে চলে এলাম। ওয়াজেদ নীরব প্রচার চালিয়ে যেতে লাগলেন। আমি তার সঙ্গে। দুজন কোনো সময় গুলিস্তানের হোটেল সেলিমাবাদ অথবা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনের পপুলার হোটেল থেকে খেয়ে আসতাম। ওয়াজেদ ভাই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন। সে সময় ভিপি-জিএস পদে মেধাবী ছাত্রদের কদর ছিল বেশি। নির্বাচনে ওয়াজেদ ভাই ভিপি হলেন। জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন নুর"ল ইসলাম। তিনি সংখ্যাতত্ত্বের ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এজিএস। রাজ্জাক সাহেব রাজনৈতিক অঙ্গনে সংগ্রামী এবং সফল ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপি। ওয়াজেদ ভাইয়ের নিকটতম প্রতিন্দন্দ্বী ছিলেন এনএসএফ তথা আইয়ুব খানের ছাত্র সংগঠনের এরশাদুল হক। তিনি সিএসপি হয়েছিলেন। বেগম জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন আমলা। যে কারণে বেগম জিয়া যখন প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী তখন এরশাদুল হক যুগপৎ শিক্ষা সচিব এবং নির্বাচন কমিশনেরও সচিব। একটা মজার ঘটনা মনে পড়লো। সচিবালয়ে একদিন বারবার তার দিকে তাকিয়ে চিনবার চেষ্টা করছি। ভদ্দরলোক নিজেই বলে ফেললেন যে তিনি শ্মশ্র" বিবর্জিত, তাই চিনতে কষ্ট হ"েছ। তিনি যখন ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখন তিনি ছিলেন শ্মশ্র"মণ্ডিত। আমি অবশ্য জিজ্ঞেস করিনি যে তিনি স্বে"ছায় এটা করেছেন নাকি লাহোর সিভিল সার্ভিস একাডেমির কোনো বিধিবিধানের কারণে। এসব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা শিষ্টাচার বহির্ভূত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বহুদিন আর ওয়াজেদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। বিভিন্ন সময় খবর পেয়েছি। পরবর্তী শিক্ষা জীবনে তার সাফল্যের কথা। বিয়ের সংবাদটা তো পত্রিকায় পেয়েছি। ’৭৫-এর জানুয়ারির এক সন্ধ্যায় বাসায় রয়েছি। এমন সময় টেলিফোন পেলাম ওয়াজেদ ভাইয়ের। আমাকে সার্কিট হাউসে যেতে বললেন। তখন আমি বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। সার্কিট হাউসে গিয়ে দেখি ওয়াজেদ ভাই এবং তার সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোলে শিশুকন্যা পুতুল। কয়েক মাস বোধহয় বয়স হবে। ছেলে জয় ঢাকায় নানা নানির কাছে রয়ে গেছে। ওয়াজেদ ভাই এক সপ্তাহের জন্য পীরগঞ্জ গ্রামের বাড়ি যা"েছন। সে সময় আরিচা যেতে বেশ কয়েকটি ফেরি পার হতে হয়। এ কারণে বগুড়ায় একরাত বিশ্রাম নি"েছন। সকালে বাড়ি যাবেন। বগুড়ায় তার এক সহপাঠী সাজাহানের মুখে শুনেছেন আমি এখানে আছি। সাজাহান সাহেব তখন বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজেদ ভাই বললেন যে, আমি তার ভাষায় অত্যন্ত একটা দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছি। আর এ কারণে তিনি স্বে"ছায় আমার অতিথি হয়েছেন। রাতের খাবার এবং সকালের নাস্তা আমার বাসা থেকে দিতে হবে। সার্কিট হাউসের সরকারি ব্যবস্থাপনায় কিছু করার প্রয়োজন নেই। এটি আমার জন্য পরম সৌভাগ্য। উনি আমার পূর্ব পরিচিত। তাই তেমন একটা বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু ভাবনায় পড়লাম তার স্ত্রী অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে। তিনি তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আমার এই ক্ষুদ্র আপ্যায়নকে কিভাবে নেবেন। আমার আরো সমস্যা ছিল যে, আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়ি পাবনায় গেছে। তবে এ কথাও ভাবছিলাম যে যিনি ১ সপ্তাহের জন্য উত্তর বঙ্গের নিভৃত পল্লীতে যা"েছন, তিনি নিশ্চয়ই সব পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন। তিনি তো সেরা বাঙালি রাজনীতিকের কন্যা। অল্পক্ষণের ভেতর আমার শঙ্কা কেটে গেলো। ওয়াজেদ ভাই যে অত্যন্ত নিরহংকার ব্যক্তি তা আগে থেকে জানতাম। তবে পরিচিতজনের উন্নতি-অগ্রগতিতে তিনি যে এতোটা আনন্দ পান, সেটা আমাকে ডেকে নেয়ার ঘটনায় বুঝলাম। এটা তারাই পারেন যাদের মন অত্যন্ত উদার, যারা জ্ঞানতাপস, তারাই তো অপরের কল্যাণকে নিজের কল্যাণ মনে করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকেও সেদিন দেখেছি অত্যন্ত অমায়িক এবং নিরহংকারী খোলামেলা আচরণ করতে। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। ঐতিহ্যবাহী বাঙালি নারীর গুণ তার ভেতর সেদিন দেখেছিলাম। রাতে ড্রয়িংর"মে অনেকক্ষণ ওয়াজেদ ভাইয়ের সঙ্গে গল্প হলো। বিশেষ করে একাত্তর সালের অভিজ্ঞতার কথা বললেন। কেননা একজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের দেখাশুনার দায়িত্ব তার ছিল। ওয়াজেদ ভাই ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্য হলেন পরম শ্রদ্ধেয়া বেগম মুজিব, শেখ হাসিনারা দুইবোন এবং দুই ভাই কিশোর জামাল এবং শিশু রাসেল। ওয়াজেদ ভাইকে নাকি সপ্তাহে একদিন সংশ্লিষ্ট সামরিক অফিসে গিয়ে বাসার হাল হকিকত বলে আসতে হতো। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন যে সব জায়গাতে ভালো মন্দ মিশিয়ে লোক থাকে। একটি ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে এ কথা বললেন। একদিন বিকেলে শেখ জামাল খেলা করছিলেন বাড়ির বাগানে। উনি বারান্দায় বসে। কিছুক্ষণ পর আর তাকে পাওয়া গেলো না। খোঁজাখুঁজি করে কোনো অবস্থাতে হদিস মিললো না। কদিন পর সামরিক অফিসে হাজিরা দিতে গেলেন। কিছুটা সহানুভূতি বা কর"ণা লাভের জন্য তিনি সামরিক কর্মকর্তাকে বললেন যে তার শাশুড়ি শয্যাশায়ী। কেননা বড় ছেলে শেখ কামালের তো প্রথম থেকেই খোঁজ নেই। গত কদিন ধরে মেজ ছেলের খোঁজ পাওয়া যা"েছ না। একজন পাকিস্তানি সেনা অফিসার নিভৃতে তাকে বলেছিলেন যে তারা খবর পেয়েছেনÑ ওরা দুভাই কলকাতায় এবং ভালোই আছেন। সেদিন রাতে ওয়াজেদ ভাই যে সব ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন, তার প্রায় সব কথাই আমি পড়েছিলাম তার লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু কথা বই’তে। নাম মনে করতে পারছি না কোনো একটা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তবে আমার মনে হয়েছে যে যুদ্ধের ৯ মাস যতোটা শঙ্কা এবং উৎকণ্ঠার সঙ্গে কাটাতে হয়েছিল তাকে, তার চেয়ে বেশি শঙ্কার সঙ্গে কাটাতে হয়েছে ১৫ আগস্টের পর। ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তাদেরকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু কেন? ওনারা দুবোনতো রাজনীতি করতেন না। ড. ওয়াজেদ দেশের একজন গর্বিত পরমাণু বিজ্ঞানী। ‘বিপথগামী’ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এই নারকীয় ঘটনা ঘটালো। কিন্তু তারপর সুপথগামীরা যখন শাসনভার নিলেন, তারা তো সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে নির্দেশ দিতে পারতেন যে জামাতাসহ বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয় যেন নিরাপদে থাকেন, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একাত্তরে শত্র" চিহ্নিত ছিল। পঁচাত্তরে তা বুঝার উপায় ছিল না। বরিশালের জেলা প্রশাসক জেলার যে কোনো অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর গুণকীর্তন করার জন্য অস্থির হয়ে যেতেন। আবার সেই ব্যক্তি ১৫ আগস্টের পর বলেছেন ‘আল্লাহ আমাদের ফেরাউন নমর"দের হাত থেকে রক্ষা করেছেন’। ১৫ আগস্ট ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাকে প্রহার করতে করতে রাস্তার ফুটপাতে এনে ফেলে দেয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ টেলিভিশনে সে দৃশ্য দেখানো হয়েছে। দূতাবাসে তো সভ্যভব্যদের চাকরি করার কথা। কোনো মাস্তানি করার জায়গা নয়। আমরা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করি মরহুম হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীকে। তিনি নিভৃতে নিরাপদে পরিবারটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। মহান নেত্রী ইন্দিরার ভারতে পাঠিয়েছিলেন। কেননা সেদিন বনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা এই পরিবারের খোঁজ পেলে এদেরকে মৌখিক অপমানতো বটেই এমনকি শারীরিকভাবে নির্যাতন করার লোকেরও অভাব হতো না। বঙ্গবন্ধু কন্যাদের নিরাপত্তা দেবে কে? খন্দকার মোশতাক, জেনারেল জিয়া, জেনারেল খালেদ মোশররফ সবাইতো বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিসিয়ারি। ’৭৫-এর ৩ থেকে ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ক্ষমতার জন্য লড়াই করলেন। নাম দেয়া হলো সিপাহি বিপ্লব। কী আদর্শ, উদ্দেশ্য এই বিপ্লবের, তা জানা গেলো না। পাকিস্তানের স্বঘোষিত ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খান ’৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর তৎকালের পাক প্রেসিডেন্ট ধুরন্ধর ইস্কান্দর মীর্জাকে রাতের আঁধারে ক্ষমতাচ্যুত করলেন। এই দস্যুবৃত্তির নাম দিলেন বিপ্লব। ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। প্রতি বছর ২৭ অক্টোবর মহাসমারোহে উদযাপিত হতো। এরপর ’৬৯-এ গণআন্দোলনে তার দেয়া সংবিধান এবং বিপ্লব নিয়ে বিদায় নিলেন। এই তো গেলো বিপ্লব সমাচার। ’৭৫-এর নভেম্বরে জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কময় ঘটনা সংযোজিত হলো। তা হলো জেলহত্যা। স্বাধীনতার পর পাবনায় দেখেছি অবাঙালিরা গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় থাকা পছন্দ করতেন। কারণ সেটা ছিল নিরাপদ। প্রাণ হরণের ভয় ছিল না। বেদনাদায়ক হলো যে দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত জেল তথা ঢাকা সেন্ট্রাল জেল নিরাপদ হলো না বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধকালীন সময়ের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং অপর দুই জাতীয় নেতার জন্য। জেলখানায় তাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো। তারপর খুনিদের নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠানো হলো। তারা গেলো আরেক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গাদ্দাফীর লিবিয়ায়। পরে জেনারেল জিয়া বিভিন্ন দূতাবাসে এসব খুনিকে চাকরি দেন। তাই তারা কিভাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের নিরাপত্তা দেবেন।

গত ১৩ মে ড. ওয়াজেদের স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় গিয়েছিলাম। বিভিন্ন বরেণ্য বক্তা তার জীবনের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। তবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তৃতায় একটি বিস্ময়কর ঘটনা জানতে পারলাম। নেত্রী শেখ হাসিনা জেলে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের কথা। ওয়াজেদ ভাই ভীষণ অসুস্থ। স্কয়ার হসপিটালে ভর্তি করতে হবে। টাকার পরিমাণটা ভালো করে শুনিনি। বোধহয় ১ লাখ হবে। এটা মানবসেবার এই হসপিটালে জমা দিতে হবে। নেত্রীর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে সরকার। এই টাকাটা বাংলাদেশে জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। নেত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা লন্ডন থেকে পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশে এই কটা টাকা নিয়ে এগিয়ে আসেননি কেউ। কারণ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাখোশ হবে। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ একজন বরেণ্য বিজ্ঞানীর চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে পারতো। করেনি। বিজ্ঞানী হলে কী হবে, অসুস্থ হলে কী হবে, তিনি যে একজন নেত্রীর স্বামী যাকে মাইনাস করার চেষ্টা চালা"েছন ক্ষমতাসীনরা, আর তাদের সমর্থন দি"েছন একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী। কথায় কথায় বহুদূর চলে এসেছি। ফিরে যাই ’৭৫-এর জানুয়ারিতে বগুড়া সার্কিট হাউসে। ওয়াজেদ ভাই পর দিন সকালে পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন, যাওয়ার সময় বলে গেলেন ঠিক সাত দিনের মাথায় বিকালে আসবেন। রাত্রিযাপন, পরদিন ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা। আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য একই। সে সময় বগুড়াতে কৃষি ও শিল্পমেলা চলছিল। যা এক্সিবিশন বলে বেশি পরিচিত। ফেরার পর সন্ধ্যার পর মেলায় নিয়ে গেলাম। তিনি একাই গেলেন। যারাই তার সঙ্গে কথা বললেন, মুগ্ধ হলেন তার খোলামেলা সহজসরল কথাবার্তায়। কোনো রকমের অহংকার নেই। মেলার আয়োজকদের একজন ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক। যদি আমার স্মৃতি বিভ্রান্ত না করে, তাহলে সম্ভবত তার নাম জাহেদুর রহমান যাদু।

এককালের উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত যক্ষ্মারোগের চিকিৎসক ড. মফিজ সাহেবের ছেলে। তিনি কয়েকটি হ্যান্ডিক্রাফটস উপহার ছিলেন। আমি পরিচয় জানিয়ে দেয়ায় হেসে বললেন, গ্রহণ করা নিরাপদ। নিশ্চয়ই পত্রিকায় উঠবে না যে প্রধানমন্ত্রীর জামাতা টাকা না দিয়ে মেলার জিনিস নিয়ে গেছেন। তারপর তার জীবনের ওপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গেছে তা আমরা সবাই জানি। এরপর তেমন একটা তার সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি। বেশ আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বৃহত্তর রংপুর জেলা সমিতির সভায় দেখা হয়েছিল। সালাম দিয়েছি, কেমন আছি জানতে চেয়েছেন। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জ্ঞানতাপস, নিরহংকার, শিশুসুলভ এই মানুষটিকে। নাগরিক শোকসভায় রাশেদ খান মেনন এমপি যথার্থ বলেছেন যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার তো দূরের কথা ক্ষমতাই ব্যবহার করেননি। মহান আল্লাহর কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করি, আরো প্রার্থনা যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই শোক সামলানোর ক্ষমতা যেন অর্জন করতে পারেন।

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলামিস্ট।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×