কুনোব্যাঙ
কুনোব্যাঙ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়—গবেষণায় এ রকম ইঙ্গিত পাওয়ার দাবি করেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। গতকাল বুধবার ওই বিজ্ঞানীরা জানান, তাঁরা দেখেছেন ইতালির সাম্প্রতিক এক বড় ভূমিকম্প আঘাত হানার পাঁচ দিন আগে অসংখ্য ব্যাঙ তাদের প্রজননক্ষেত্র ছেড়ে চলে যায়। সম্ভবত ভূমিকম্প হবে বিষয়টি টের পেয়েই এমন আচরণ করেছিল ব্যাঙগুলো। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী মধ্য ইতালিতে কুনোব্যাঙের ওপর গবেষণা করার সময় ব্যাঙগুলো এমন আচরণ করে। একটি প্রজননক্ষেত্র থেকে ব্যাঙের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার কয়েক দিন পরই সেখানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। গত বছরের এপ্রিলে লাকুইলা শহরে আঘাত হানা ওই শক্তিশালী ভূমিকম্পে কয়েক শ মানুষ মারা যায়।
গবেষক র্যাচেল গ্র্যান্ট বলেন, গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলছে, কুনোব্যাঙেরা ভূমিকম্প-পূর্ব উপসর্গ যেমন ভূগর্ভ থেকে গ্যাস বা চার্জযুক্ত কণার উদিগরণ শনাক্ত করতে পারে এবং এগুলোকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসেবে ব্যবহার করে।
গবেষকেরা জানান, প্রজননঋতুর মধ্যে হুট করে দলে দলে ব্যাঙগুলোর ওই স্থান ত্যাগে বিস্মিত হয়েছিলেন তাঁরা। ভূমিকম্প আঘাত হানার পরদিনই ব্যাঙগুলো আবার প্রজনন স্থানে ফিরতে শুরু করে।
জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের সাময়িকী জার্নাল অব জুওলজি-তে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন আগে ব্যাঙদের প্রজনন এলাকাটি সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা জানান, ব্যাঙগুলো সম্ভবত ভূগর্ভ থেকে নিঃসৃত র্যাডন গ্যাসের মাত্রায় পরিবর্তন টের পেয়েছিল। ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভে চাপ বাড়ার কারণে বাড়তি র্যাডন গ্যাস নিঃসৃত হয়। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, এই প্রাণীরা অতি সূক্ষ্ম কম্পনও টের পায় যা হয়তো মানুষ বুঝতে পারে না।
তবে বিজ্ঞানীদের এ দাবি সম্পর্কে পুরোপুরি একমত নন ব্রিটিশ জুওলজিক্যাল সার্ভের ভূকম্পনবিদ রজার মুসন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেকেই প্রাণীদের অদ্ভুত আচরণ দেখতে পান। এর পর হয়তো সেখানে ভূমিকম্প হয়। ফলে তারা দুটো ঘটনার মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে চান। আবার এমন অনেক ঘটনাই পাওয়া যাবে, যেখানে প্রাণীরা অস্বাভাবিক আচরণ করেছে কিন্তু কোনো ভূমিকম্প হয়নি।’
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা ও লোককথায় ভূমিকম্প বা এ ধরনের বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে পশুপাখির অদ্ভুত আচরণের সম্পর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত প্রমাণ নেই বললেই চলে।
ভূমিকম্পের সঙ্গে পশুপাখির আচরণের সম্পর্ক নিয়ে এ পর্যন্ত গবেষণায় চূড়ান্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেন রজার মুসন।
এর আগে নব্বইয়ের দশকে জাপানের বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানার জন্য এক ধরনের মাগুর মাছের ওপর গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ায় ওই গবেষণা প্রকল্প বাতিল করা হয়।