somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Ugly Duckling (সম্পূর্ণ রঙ্গীন ফ্যান্টাসী গল্প)

৩১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো, অনেকক্ষন ধরেই, একটানা।
রাস্তার দুই প্রান্ত থেকে হেঁটে এসে এক বিন্দুতে দেখা হল তাদের।
টিনটিন আর বাবলস্‌ এর।
দুইজনের মাথার উপরেই ছাতা, ছাতার উপরে বৃষ্টি (গুড়ি গুড়ি)।
টিনটিনের প্রথম চোখে পড়লো বাবলস্‌কে, আর বাবলসের চোখে পড়লো টিনটিনের হাতের বইটা। 'পরশুরাম সমগ্র!'
বাবলস্‌ই প্রথম কথা বললো, 'আমারটা হারায় গেসে!'
: কি?
: পরশুরাম! আর হ্যান্স অ্যান্ডারসন। দুইটাই....
: আমারটা দিতে পারবো না, অনেক কষ্টে জোগাড় করসি।
: আমি কি চাইসি তোরটা? চাইসি বল?? দুই লাইন বেশি কি বুঝাই লাগবে তোর? (ক্ষেপে টং!)
: না, মানে, এতোদিন পর দেখা, আর কোন কথা না বলেই বইটার কথা বললি, তাই ভাবলাম.... (লজ্জিত!)
: যা ভাগ, আর জীবনে কথা বলবো না তোর সাথে... আমি হুদাই লেইট হয়ে গেলাম ক্লাসে...
: আমি বুঝছি তো, তুই বইটা চাস নাই... সরি! সরি! সরি! সরি!
: হুমমম, আচ্ছা ঠিক আসে। যাহ, এইবারের মতো মাফ করে দিলাম, but I'm really getting late!
: তোর আগের নাম্বারটাই তো আছে?
: হুমমম, গেলাম, বাই-ই-ই-ই-ই!

***********************************************
(১ সপ্তাহ পর)

টিনটিনের ফোন বাজছে। স্ক্রীনে ভেসে উঠেছে বাবলসের নাম।
: হ্যাঁ বাবলস্‌।
: কি করিস?
: মেজাজ খারাপ করে বসে আছি।
: ক্যান?
: 'শরদিন্দু সমগ্র' খুঁজে পাচ্ছি না!
: তোরও আমার মতো ছোটবেলার প্রিয় বইগুলা কালেকশানে রাখার অভ্যাস, না রে?
: হুমমম, আমার জন্য এই বইগুলা শুধু বই না। আমার বাচ্চাকালের একেকটা পার্ট!
: আমি কালকে নীলক্ষেত থেকে অনেক খুঁজে হ্যান্স অ্যান্ডারসনের সেই বইটা পাইসি, যেটা আমার ছিল। অন্য এডিশনগুলা অতো ভালো লাগে নাই!
: হুমমম।
: কিন্তু পরশুরাম পাই নাই!
: হুমমম।
: মন খারাপ করিস না। আমার কাছে শরদিন্দু আছে, তুই চাইলে নিতে পারিস।
: হুমমম।
: তুই একটা ছাগল!
: হুমম.... হ্যাঁ, কি বললি?
: বললাম তোর মাথা! আমার একটা কথাও তো শুনিস নাই! হুদাই আমি প্যাঁচাল পারতেসি! আমার ভুলই হইসে তোকে ফোন করে। আমি ফোন রাখলাম।
: আচ্ছা, ঠিক আছে, ভালো থাকিস!
: ঠিক আছে মানে? ঠিক আছে? আচ্ছা ঠিক আছে? কি ঠিক আছে? কিচ্ছু না!
'বাবলস্‌ আসলেই একটু রগচটা!' টিনটিন ভাবলো...

**********************************************

(২ মাস পর)

গাছের নিচে বসে বাবলস্‌, মন খারাপ। দূর থেকে দেখলো টিনটিনকে এগিয়ে আসতে।
: তুই এইখানে আসিস নাকি প্রায়ই?
: না, শুধু মন খারাপ থাকলে?
: ক্যান?
: সামলের দিঘীর পানি অনের স্বচ্ছ... নিজেকে দেখি।
: ওওওওওও! আর বাসার আয়না গুলা?
: ফালায় দিসি।
: ক্যান?
: আমি কি দেখবো কি আয়না দিয়ে? কি দেখবো? আমার বিচ্ছিরি চেহারা?
: মানে কি?
: মানে বুঝো না? আমি যে দেখতে কুৎসিৎ এইটা তুমি জানো না মনেহয়??
: না, আমি আসলেই বুঝতেসি না। কিন্তু কোন ঝামেলা হইসে, তা বুঝতেসি। তোর সাথে আমার দেখাই হয় এতোদিন পর পর...
: মোজো জোজো বলসে...
: কি?
: বলসে, You are ugly!
: Impossible!
: তাই, না? Impossible? এইটা দেখ...
বাবলস্‌ ওর ফোন থেকে একটা এসএমএস বের করে টিনটিনের হাতে দেয়।
"It's not my fault, it's U! U r ugly!"
: Now don't ask me anything about it! Not a single thing...
: হুমমম, এইজন্য আমাকে দেখা করতে বলসিলি?
: তোকে না বলসি এই টপিকে কোন কথা বলবি না? মানা করসিলাম না? আমার ভুলই হইসে তোর মতো একটা ছাগলের সাথে এইটা শেয়ার করে...
রাগ করে উঠে চলে যায় বাবলস্‌। টিনটিন বাবলসের শূণ্যস্থান পূরণ করে। বাবলস্‌ যেখানে বসে ছিলো সেখানে বসে ওর চলে যাওয়া দেখে।
আর ভাবতে থাকে, "মোজো জোজোর মতো ছেলেদের জন্যই বাবলসের মতো এরকম জোশ মেয়েরা কমপ্লেক্সে ভোগে!"

******************************************

(৬ মাস পর)

কফিশপ। বাবলস্‌ আর টিনটিন মুখোমুখি। বাবলসের সামনে কফি। ও চা পছন্দ করে না। টিনটিন চরম চা-খোর!
: তুই আমাকে কতদিন ধরে চিনিস?
: কি জানি? হিসাব করি নাই! ছোটবেলা থেকেই তো! ক্লাস থ্রি থেকে! ওরে বাবা, অনেক দিন হয়ে গেল তো!
: হুমমম।
: ক্যান রে? হঠাৎ করে এই কথা যে?
: আমি ভাবতেসিলাম। তোর সাথে আমার আসলে অনেক মিল। আমরা দুই জনই বইয়ের পোকা...
: আর?
: দুইজনই ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি!
: আর??
: আর... রান্না করতে পছন্দ করি!
: আর???
: আর....
: আর কিছুই না! তুই আর আমি পুরা উলটা! তুই একটু হাবলা টাইপ আছিস, আমি ফাজিল টাইপ।
: হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
: হাসিস ক্যান?
: আমি অনেক খুঁজেও শরদিন্দু পাই নাই!
: আমিও তো, পরশুরাম পাইলাম ই না! চল, আমরা এক্সচেইন্জ করি!
: সেও তো একই কথা হইলো!
: তো কি করবি?
: আমাদের দুইজনের কাছেই রাখি!
: আল্লাহহহহ! আমিও তো তাই ই ভাবতেসিলাম! এমন কিছু, যাতে দুইটা বই-ই দুইজনের কাছে থাকে!
: সত্যি?? তুই ও তাই-ই ভাবতেসিলি? আমি আরো ভাবসি, তুই না জানি কিভাবে রি-অ্যাক্ট করিস! আমি সেই ছোটবেলা থেকেই ভাবসি...
: ছোটবেলা থেকে? তখন একটু টাফ ছিলো না?
: হাঃ হাঃ তা তো ছিলোই! আমরা পুরাই কেস এ পড়তাম। জেইল ও খাটতে হইতো হয়তো!
: হুমমম, সেই! বই ফোটোকপি করা তো আসলে ইললিগ্যাল।
: ফোটোকপি??
: তো? তুই বই ফোটোকপি করার কথা বলতেসিশ না?
: তুই বই ফোটোকপি করার কথা মিন করসিশ? হায় রে.....!
বাবলস্‌ কিছু না বুঝতে পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে থাকলো!

******************************************

(২ বছর পর)

বাবলস্‌ এর ঘুম এখনো দেরীতেই ভাঙে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে টিনটিন চা বানাচ্ছে। বাবলস্‌ এখন চরম চা-খোর!
ঘুম ভাঙার পর মনে পড়লো, গতরাতে টিনটিনের সাথে ঝগড়া হয়েছিলো, আর রাগ করে টিনটিন ড্রয়িংরুমে ঘুমিয়েছিলো। বাবলস্‌ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে, টিনটিন টিভি দেখছে। আজকে তাদের ঘুরতে বের হওয়ার কথা ছিল, অনেকদিন পর তারা একসাথে ছুটি পেল, বিজয় দিবস উপলক্ষে। কোথায় যাবে তা নিয়ে কথা বলতে বলতে কিভাবে যেন ঝগড়া বেঁধে গেলো...
: ঠিক আছে, আশুলিয়াই যাব।
: না, জোর করে কোথাও যেতে হবে না... ধানমন্ডিই যাই। অনেকদিন দেখা হয়না বাবা মায়ের সাথে। (একের পর এক চ্যানেল চেইন্জ করে যাচ্ছে)
: কৈ? গত সপ্তায়ই না গেলাম? তাছাড়া, আব্বু আম্মু মনে হয় না বাসায় থাকবে। তারাও তো ছুটিছাটায় ঘুরতে বের হয়। আমরা আশুলয়াই যাই, কি বলিস?
: বললাম না জোর করে কোথাও যেতে হবে না?
: ওরে আমার অভিমানের বাচ্চা রে-এ-এ-এ! উনার অভিমান হইসে! উনি গাল ফুলাইসে, ঠোঁট উলটাইসে.....
বাবলসের এই কথা শুনে টিনটিন হো: হো: করে হেসে ওঠে!
: তারচেয়ে চল্‌, কোথাও না যাই! অনেকদিন তো একসাথে সারাদিন বাসায়ও থাকা হয়না!
: সেই ভালো। চল পিকনিক করি। তুই খিচূড়ি রান্না কর, আর আমি বিফ ভুনা!
: চল! চল! চল! চল!

টিনটিন আর বাবলস্‌ এভাবেই ঝগড়ে করতে করতে, হাসতে হাসতে পুরা একটা জীবন পার করে দেয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:২০
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×