somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা জামা দরকার, পিংক কালারের বঙ্গ বাজারের - হাঁটু অবধি জামা।

৩১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি জামা চেয়েছি আপনাদের কাছে
না, না পুরো ৫৫ হাজার বর্গ মাইলের লাগবে না।
শুধু নাভি থেকে হাঁটু অবধি হলেই হবে। নেহায়েত ছোট,
অল্প বয়সী একটা মেয়ের বঙ্গ বাজারের জামা কেবল।

না, না তাতে ঢাকবে না আমার স্বদেশের
তলা বিহীন ঝুড়ির লাজ; জানি ঢাকবে না
কু- নীতি, দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কলংক;
আরো জানি,
মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের বছরকে সংগ্রামের বছর,
যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে ইয়াহিয়া আমলের বিচার
বলা কটুক্তিকারীর সদম্ভ পদচারণায়
লুন্ঠিত পতাকার "বাচাঁও" আর্তনাদের আকন্ঠ শরীরেও
ওম দেবে না এই এক টুকরো জামা।
তবুও বলি আমাকে একটা জামা দিন।
লজ্জা ঢাকার জন্য নয়, নয় আমার মৌলিক চাহিদার প্রখর দাবিতেও।
আমার জামা দরকার নির্লজ্জতা ঢাকতে এই
নির্বাক সরল ব- দ্বীপের, যে বোঝে না লজ্জা, বোঝে না নির্লজ্জতা।
বোঝে কেবল শাসকের শোষণ, বোঝে অক্ষমতা , বোঝে অপরাগতা।

বালিকা আমি এখনো পাই নি জামা , কেবল পেয়েছি আশ্বাস
এই অক্ষমতা আমাকে মাথা নোয়াতে নোয়াতে মাটিতে ঠেকায়
দংশিত বিবেক আমকেও দংশায় আপাত সুখের শরীরে।
আমার বিত্ত বৈভবের মোহনীয় সুগন্ধি
শেরাটনের লবিতেই ছড়ায় আবেশ
কিন্তু মনে, নাকে থেকে থেকে আসে
চকলেট বালিকার গায়ের বোঁটকা ঘামের গন্ধ
দংশিত বিবেক এড়াতে দেয় নি ম্রিয়মান আমাকে ।
তাই কুলারের বরাবর দাঁড়িয়েও
হালকা হয়না বিবেকের অতিষ্ট কামড়।
আমি ঢাকতে চাই ,বাঁচতে চাই,
ক্ষমা ও ক্ষান্ত চাই অসমের,অসম সুখ বন্টনের।


আমি জানি তোমরা ক্যাপিটালিজমের সন্তান
বুর্জুয়ার হেজেজ এর শেষ প্রান্ত আগুন।
জানি তোমার নাম এখন পথ,পথ শিশু,
অন্য রকম স্বাধীন তুমি, তোমরা,
ভাল না লাগলে কখনো চকলেট কখনো ফুল বালিকা
তোমার চাহিদাও সামান্যই, শুধু একটু ভালোবাসা -নখ পালিসের সমান;
অথবা পিংক কালারের একটি জামা -হাঁটু অবধি
স্নেহের এক লোকমা ভাত-শুধু মরিচ বা কচলানো আলু;

মাঝে মাঝে মাঝ রাতে হয়ত আরো একটা চাহিদা বাড়ে তোমার
অতি নগন্য সে চাহিদা, ভ্রুণের পরিচয়,ঠিকানা শেকড়ের।
অথবা মায়ের ওম, পিতার কপালে রাখা হাত, ধমক, মেলায় যাওয়ার বায়না।
অতপর বাবার হাতে হাত পুরে মেলায়, নাগর দোলায়।

কিন্তু দেখ বালিকা এত কিছু আমি পারব কিনা জানি না তবে,
আমার হাতে দেখ তোমার নাঙা পোষ্টার
দেখ সেমিনারে যাওয়ার পত্রছাড়
তোমার কথা বলে বলে আমরা সেমিনারে
নিয়ে আসব নাটকীয় পরিবেশ,পিন পতন নীরবতা
কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে কুলারের ডিজিট যাবে ক্রমে নেমে।
ক্রমে হালকা হবে পরিবেশ,হবে কিছু ক্ষণিক প্রতিজ্ঞা
ভেবো না বালিকা এ তোমার দুর্দশায় মেলায় আমাদের উল্লাস!

বালিকা সত্যই তোমারটা আমরা দেখছি..খুব সিরিয়াসলি---
কিন্তু এখন যে আমার বাড়ি ফেরার তাড়া-
তোমার মত নয়,বরং তোমার বয়সী আমার মেয়েটি
আমার সেল ফোনে বারবার তাড়া দিচ্ছে
তার ক্লাসমেটের জন্ম দিনে কেক কাটার নিমন্ত্রণে।
বালিকা তুমি মন খারাপ কর না আমি কালকেই প্রেসে দিব
সেমিনারের মূল প্রবন্ধটা। জানো কি টাইট লেখা হয়েছে!
জানো সেমিনারে সবাই তোমার পক্ষে বলেছে,

বলছে সাম্যবাদের কথা, সমবন্টনের কথা।
বলেছে, "স্বাধীনতা, গণতন্ত্র তো সবার গায়ে জামা দেখার জন্য।"

তাই তুমি আজ চলে যেতে পারো। আপাতত কয়েকদিন রমনা পার্কে বা কমলাপুরের রেল লাইনে ঘুমাও।
বিরাট প্রকল্প নিয়ে এগুচ্ছি, তোমাদের জন্য কেবল জামা নয়, হতে পারে বাড়িও। যদি পাই কোন দাঁতাল দাতা সংস্থা।

জানো, তোমার ছবি নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে বিজ্ঞাপণ চলছে।
তোমাকে কেমন জামা দেয়া দরকার তা নিয়ে চলছে তুমুল টকশো;সাথে এস এম এস।তোমার টপলেস শরীরে ফোন কোম্পানীরা অলরেডি পরিয়েছে ভিজ্যুয়াল একটা লাল জামা। গ্রাফিক্স ডিজাইনের সে জামার পেছনে ফোন কোম্পানীর লোগোটা বেশ জ্বলজ্বল করছে ;
সে জামায় তোমাকে অনিন্দ্য লাগছে।
তুমি দৃপ্ত পায়ে এক গোছা ফুল হাতে এগিয়ে যাচ্ছো শহীদ মিনারের দিকে।
আর সেই সাথে বেজে উঠছে তাদের ব্র্যান্ড থিম সং। তুমি দেখলে অনেক খুশি হবে।

এই ফাঁকে আমরা হাতের কাজগুলো সেরে নিই।
টকশোর মতামতগুলো জেনে নিই,
জেনে নিই এস.এম.এস এর গুলোও;
সাথে জেনে নিই কত এস.এম.এস এ কত এসেছে।

বালিকা এ কি! তুমি এখানে কেন! কেক কাটার চকচকে ছুরির ধারে।
বালিকা তুমি এখানে কেন? কারু-মোমের আগুনের নীলাভ শিখায়?
আমি কথা দিয়েছি হয়নি তোমার!! একটু ধৈর্য্য নেই তোমার?
তোমাকে তাই কাটতে হবে ছুরির ফলায়
তোমাকে পুড়তে হবে আগুনের শিখায় :
প্রাচুর্যের,আভিজাত্যের অন্দর মহলে প্রবেশের
অনিবার্য শাস্তি স্বরূপ।
কারণ তোমাদের প্রতি রায় কার্যকর করতে
আমাদের সামনে কোন ইনডেমনিটি নেই।
নেই এখানে, নেই কোনখানে। যাও, যত্সব!! কিছু হবে না তোমাদের ।


বালিকা আমিও পারলাম না একটা জামা দিতে। তুমি আমাকে রাগিয়ে দিয়েছ। জন্মদিনের পার্টিতে তুমি আমার সফেদ কফলিনে ময়লা হাত লাগিয়েছ। বিরক্ত করেছ। আমি ব্যাপক মনক্ষুন্ন তোমার প্রতি।
তাই এভাবেই কাটবে তোমার আদি-অন্ত। শীত -বসন্ত জামা হীন, জমা হীন।

---------------ছবি -ফুয়াদ -----
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×