যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে মহৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ফাদার লরেন্স সি. মারফি। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে তিনি সেখানকার বধির শিশুদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করেছেন। কিন্তু এখন উইসকনসিনের মানুষই ধিক্কার দিচ্ছে ফাদার মারফিকে। আদালতের তদন্তে প্রমাণিত যে প্রায় ২০০ বধির শিশুকে যৌন নির্যাতন করেছেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও ভাষাহীন শিশুরা সে নির্যাতনের তথ্য মানুষকে জানাতে পারেনি। পরিণত বয়সে এসে এখন মুখ খুলছে তারা। আকারে-ইঙ্গিতে কিংবা লিখে জানাচ্ছে শৈশবে তাদের ওপর ফাদার মারফির নির্যাতনের কাহিনী।
১৯৫০ সালে চার্চ পরিচালিত সেন্ট জন'স বধির স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মারফি। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত টানা ২৪ বছর স্কুলটির নানা পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ সময়ের মধ্যেই স্কুলের ছাত্র বধির শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন মারফি। সম্প্রতি কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় ওই ঘটনায় ফাদার মারফিকে রক্ষার জন্য ভ্যাটিকানকে দোষী করার পর মুখ খুলতে শুরু করেছে স্কুলটির সাবেক ছাত্ররা। তাঁর নির্যাতনের শিকার ডোনাল্ড মার্শাল জানান, 'মানুষের সামনে সে খুব ভালো থাকত। কিন্তু একা পেলেই ভিন্ন চেহারা ধারণ করত। বিছানায় বসে আমার শরীরে হাত বুলাতো এবং জোর করে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করত।'
বর্তমানে ৫৯ বছর বয়স্ক স্টিভেন গিয়ের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, 'নয় বছর থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত অনেকবার আমাকে ধর্ষণ করে ফাদার মারফি। আমি কখনোই এ কাজে রাজি হতাম না, আর সে আমাকে ধর্ষণ করত।' পুরনো স্মৃতি হাতড়ে তিনি জানান, 'তিনি বধিরদের সঙ্গে আকার-ইঙ্গিতে কথা বলতে খুব দক্ষ ছিলেন এবং বলতেন, ঈশ্বরের নির্দেশে আমি তোমাকে যৌনকর্ম শেখাচ্ছি। বিষয়টি গোপন রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন তিনি।'
মারফির নির্যাতনের শিকার আরেকজন হলেন আর্থার বুডজিনস্কি। তিনি জানান, ১৯৬০ সালে তার মাত্র ১২ বছর বয়সে মারফি তাকে ধর্ষণ করেন। তিনি আরোও জানান, 'সে দুষ্ট মানুষ হলে আমি তার কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু সে আমার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করত। ফলে বিশ্বাস করতে পারতাম না যে সে ভুল করছে।' গ্যারি স্মিথ নামে অপর এক ভুক্তভোগী জানান, ১২ বছর বয়স থেকে শুরু করে ফাদার মারফি তাকে ৫০ থেকে ৬০ বার ধর্ষণ করেছে। তিনি জানান, 'ওই স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমি খুবই ক্ষুব্ধ মানুষ ছিলাম।' স্মিথ জানান, 'তিনি সবকিছুকেই ঈশ্বরের যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতেন। ফলে আমি মোহিত হয়ে যেতাম।' তিনি রাতে অনেক শিশুকে ফাদার মারফির নিপীড়নের শিকার হতে দেখেছেন বলেও জানান।
গিয়ের জানান, 'তিনজন যাজককে বিষয়টি জানালেও তারা এতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো আমাকে বিষয়টি গোপন রাখার জন্য হুমকি দেন। তাঁরা বলতেন, তুমি বাজে বকছো। এমন কিছু কখনো ঘটেনি।' দীর্ঘ ৩০ বছরের চেষ্টার পর অবশ্য তাঁরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে সক্ষম হন। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আর্চবিশপ উইকল্যান্ড ফাদার মারফির বিচারের জন্য ভ্যাটিকানকে চিঠি দেন। ভ্যাটিকান অবশ্য এ অভিযোগের বিচার করেনি। ফলে ১৯৯৮ সালে যাজকের মর্যাদা নিয়েই মৃত্যু হয় মারফির। পরে নির্যাতনের শিকার হওয়া পাঁচজন চারটি মামলা করে উইসকিনসন শহরের চার্চের বিরুদ্ধে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, টাইমস, ডেইলি মেইল।
সংবাদ সুত্রঃ কালের কন্ঠ