একটু ভূমিকা নিই।আমাদের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে।জয়ধ্বনি।তার দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান হবে।আমি তখন ছিলাম বাড়ি তে।ওখান থেকেই শুনি,'গল্প লিখি-কবিতা লিখি' পরিচয়ের সুবাদে আমাকে স্যুভেনিরের সম্পাদনায় রাখা হয়েছে।নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে কোন প্রকার আস্থা না থাকা সত্ত্বেও রাজি হয়ে গেলাম।ক্যাম্পাসে ফিরে কাজ ও শুরু করে দিলাম।
অনুষ্ঠানের দিন পাঁচেক আগে সহপাঠি বানীতোষ এসে বললো,দোস্ত,একটা নাটক লিখ্যা দাও!
বললাম,ধুর ব্যাটা।আমি কখনো নাটক লিখি নাই।
সে বলে,যা পারিস,একটা লিখ্যা দে।তোর মত।
নাটক লেখার কথা ছিলো ০২ ব্যাচের রচি ভাইয়ের।উনি ব্যস্ততার কারণে লিখতে পারবেন না।কি আর করা?
বানীতোষের সাথে বসে থিম ঠিক করলাম।ওর দাবি ছিলো,ফানি কিছু।কিন্তু আমার নিজের ফান নিজের কাছেই কাতুকুতু টাইপের লাগে বলে বললাম যে হালকা ফান দিয়ে সিরিয়াস কিছু তুলি।
কিছু পয়েন্ট সিলেক্ট হলো।নেতাদের দ্বৈতসত্তা।মোবাইলে মিথ্যাচারিতা।দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি।মুক্তিযোদ্ধাদের অসহায়ত্ব।আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার।
এরপর স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু।লিখি।কাটি।আবার লিখি।শেষে মোটামুটি একটা দাঁড় করালাম।নাম দিলাম 'প্রতিকৃতি'।পাঁচটা ক্যারেক্টার।
এখন নাটক টা শেয়ার করছি।শেয়ারের আগে বলে রাখি।স্ক্রিপ্ট লেখার সময় অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়েছে।নির্দিষ্ট সময়।অভিনেতাস্বল্পতা।দর্শক চাহিদা।
সংলাপ অনেক জায়গায় ঝুলে গেছে।কিছু জায়গা অপ্রাসঙ্গিক লাগতে ও পারে।আশাকরি,ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি পাবো।আরো আমার ভালোলাগার ডায়ালগ গুলো হাইলাইট করে দিলাম।
======================================
নাটক : প্রতিকৃতি
চরিত্র
১. তোষামোদী: কুতুব উদ্দিন মাওলা।
২. নেতা: আলী শাহজাহান আযমী।
৩. সেজান: নেতার ছেলে।
৪.রুপা: সেজানের প্রেমিকা।
৫.রুপার বাবা: কমরেড আনোয়ারুল হক।
==========================================
দৃশ্য এক.
[মঞ্চ অন্ধকার থাকবে।স্পটলাইট জ্বলে উঠলে দেখা যাবে,তোষামোদী দর্শকের দিকে পাশ রেখে চুল আচড়াচ্ছে আর গুন গুন করছে.....ও টুনির মা তোমার টুনি....]
হঠাৎ গান থামিয়ে বলবে..
তোষামোদী: কই গো গিন্নি?তোমার আলুভর্তার আর কতদূর?পেটের মইধ্যে ত ইরাক আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে...
[দর্শকের দিকে ফিরে হতাশামেশানো গলায় বলবে]
আমার বউ।মাশাল্লা,সাজুগুজু ছাড়া সবকিছু তে সাফল্য নিয়া ফেল করে।মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে থ্রি ডাইমেনশনাল একটা আছাড় মারি।তবে,এটা সম্ভব না।বউ আবার নেতাজীর কাছের লোক।মানে হইলো,নেতাজীর শ্যালিকার দেবরের তালতো বোন সে।কিছু বলার উপায় নাই।
[একটু থেমে]
নেতাজীর কথা যখন আসলো,তাইলে বলি,নেতাজী আমার বিশাল কারবার হে।
[দু হাত দুদিকে প্রসারিত দেবে।গদগদ কন্ঠ]
মাঝারি সাইজের একটা দলের নেতা।দলের নাম টা বলা যাইব না।সারাদিন ব্যস্ততা।
চলেন,নেতাজীর সাথে একটা সাক্ষাত করে আসি।
[তোষামোদী ধীরে ধীরে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাবে।মাঝখানে একটা চেয়ার রেখে আসবে কেউ।অপর পাশ থেকে নেতা ঢুকবেন।চেয়ারে বসবেন।
আরো কয়েকজন সাধারণ মানুষ নেতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসবে]
নেতা:শোন মিয়া রা।আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন তার পথে জিহাদ করতে।নইলে কবীরা গুনাহ।এটার কোন মাফ নাই মিয়া।কাইন্দাও পার পাইবা না।
এদেশে তাঁর শাসন কায়েম হবেই।ওসব বাহাত্তর তিয়াত্তরের সংবিধান ফালতু জিনিস।পচাত্তরেই শেষ হয়ে গেছে।আল্লাহর আইন বড় আইন মিয়া রা।
[নেতার কথা আস্তে আস্তে শব্দহীন হবে।মুখ নড়বে শুধু।তোষামোদী মুচকি হাসতে হাসতে প্রবেশ করবে আবার।]
তোষামোদী: কি ভাই,নেতাজী কে সেরকম ঈমানেয়ালা মনে হয় নাই?হা হা হা।নেতাজী আমার আসলেই কঠিন ঈমানদার।
তবে বাইরের দিকে।
[নেতা হাতের ইশারা করলে সাধারণ মানুষ গুলো বেরিয়ে গেলে নেতা চেয়ারে শরীর টানটান করে বসবে।]
ভেতর টা কিন্তু ভিন্ন।
[তোষামোদী চুপ থেকে দর্শকের এ মাথা থেকে ও মাথা দেখে হঠাৎ প্রশ্ন করবে]
আচ্ছা,আপনারা কি ধুতরা ফুল দেখেছেন কখনো?ছোট ছোট,রং মাখা পাপড়ি?দেখতে সুন্দর।কিন্তু ভেতর টা বিষাক্ত।
[উচ্চস্বরে হেসে]
আমার নেতাজী হলেন সেই ধুতরা ফুলের মত।যায় হোক,উনার দিকে চোখ রাখেন।নিজেরাই ধরতে পারবেন।
[তোষামোদী বেরিয়ে যাবে]
(চোখ বন্ধ অবস্থায় নেতা...)
নেতা: কুতুবউদ্দীন?
[একটু থেমে]
ঐ কুতুইব্বার বাচ্ছা।কই গেলি?
[হন্তদন্ত হয়ে তোষামোদীর প্রবেশ]
তোষামোদী:হুজুর।
নেতা: এক থাপ্পড়ে তোর বত্রিশ দাঁত ফেইলা দেয়া দরকার।কাজের সময় কই থাকস?
তোষামোদী: হুজুর।বত্রিশ দাঁত তো নাই।বউয়ের থাপ্পর খাইয়া কাল রাইতে দুইটা পইড়া গেছে।
নেতা:ফাজলামি করস না আমার সাথে?বউয়ের থাপ্পর খেয়ে দাঁত পড়সে...লজ্জা করে না বলতে?
তোষামোদী:এইটা ত হুজুর ছোটবেলায় ইসবগুলের ভুষির সাথে গুলে খেয়ে ফেলছি।লজ্জা থাকলে কি আর আপনার লগে ঘুরি?
নেতা: কি!!এত সাহস তোর....
তোষামোদী: না মানে হুজুর,বলছিলাম যে লজ্জা থাকলে কি আর বেয়াদবের মত আপনার সামনে সামনে ঘুরি?তখন ত আপনি সামনে আর আমি পেছনে...
নেতা: ফালতু কথা বাদ।তোরে যে কাম টা করতে বলছি।করছোস?
তোষামোদী: সে আর বলতে হুজুর।জায়গা মত ফুট্টুস হয়ে গেছে।হে হে হে।
নেতা: মানে কি ?শিয়ালের মত খ্যাক খ্যাক না করে খুলে বল।
তোষামোদী: মানে হইলো,কাইল রাইতে আপনার রগকাটা বাহিনী রে অর্ডার করা হয়েছে।ঢাকায় একজন রে ব্রাশফায়ার,রাজশাহী তে একজনরে সোজা ম্যানহোলে,আরো কয়েকজনের হাত পা এর রগ,চট্টগ্রামে একজন রে কোপানো হয়েছে।
হপ্তাখানেক পর আরো কয়েকজন হইবো।
নেতা: ওরে বেকুব।আস্তে বল।দেয়ালেরও কান আছে।টিভি আর পেপার আলা রা হুনলে আর রক্ষা নাই।আমার এমপি হওয়ার খায়েশ শেষ কইরা দিবো।
[নেতা তোষামোদীর দিকে ঝুকবে]
ব্যবসার খবর বল।
তোষামোদী:ভালো খবর,হুজুর।পাকিস্থান থেকে কেনা হয়েছে এবার।ওরা অর্ধেক দামে দিছে।জিনিস ভালো।ট্রিগার চাপার আগেই নাকি এগুলা ঠাস করে।যার দিকে তাক,সে জায়গাতেই ঠুস।বাঁচনের উপায় নাই।
নেতা:আলহামদুলিল্লা।শালা গো এবার মজা দেখাবো।হা..বিচার চায়..রক্তের শোধ চায়।
কে কার রক্তে শোধ নেয়,দেখা যাবে এবার।হা হা হা।
তোষামোদী:তয়,হুজুর,একটা সমস্যা হইছে।চট্টগ্রামে কিছু মাল ধরা পড়ছে।একটাতে পাকিস্থানী সীল মারা।পেপারওয়ালা রা ঘাপলা করছে খুব।
নেতা:আরে,জায়গা মত টাকা ঢাল।মিডলইস্ট থেইকা টাকা কি কম আনছি আমি?টাকা দিলে সব সাইজ হয়ে যাইব।
আর কিছু?
তোষামোদী:ছোট্ট একটা প্রবলেম হুজুর।
নেতা: কি?
তোষামোদী:না মানে হুজুর...আপনার ছেলে..
নেতা:বিলাইয়ের মত মিউ মিউ শুরু করলি ক্যান?সেজানের কি হইছে আবার?
তোষামোদী:না মানে ...কাল বিকালে সেজান ভাইরে দেখলাম.. পার্কে ..এক মেয়ে..
বিনয় (নেতা) আর বানীতোষ (তোষামোদী)
[লাইট নিভে যাবে]
দৃশ্য দুই
[লাইটা জ্বললে দেখা যাবে,রুপা আর সেজান কথা বলছে।}
সেজান:কি ব্যপার?চুপ করে আছো অনেকক্ষণ ধরে..
রুপা: কি বলবো?তুমি তো হ্যা না কিছুই বলছো না।
সেজান:কিসের হ্যা না?
রুপা: কয়বার বলতে হবে?কতবার বলছি,আব্বু বিয়ে ঠিক করে ফেলছে।যা করার তাড়াতাড়ি কর।নইলে সব শেষ হয়ে যাবে।
[সেজান হা হা করে হেসে উঠবে।]
সেজান:এটা তো শুনছি।এটা নিয়ে এত টেনশান করার কি আছে?আব্বু ফ্রী হলেই তোমাদের বাসায় পাঠাবো।
রুপা:উনি যদি রাজি না হন?
সেজান: ওটা আমার উপর ছেড়ে দাও।আমি যেভাবে বলবো,সেভাবে বলবো।
এবার একটু হাসো তো ময়না পাখি...
রুপা:ফাজলামি করবা না আমার সাথে...
সেজান: না,ময়না পাখি,দোয়েল পাখি,এভাবে বলো না।আমার কলিজা যে তাতে শিয়ার স্ট্রেসের উর্ধ্বমুখি খপ্পরে ফালা ফালা হয়ে যায় গো..
[রুপা হেসে ফেলবে।]
[রুপার ফোন বাজবে]
রুপা:[ফোন বের করে] এই রে..আব্বু ফোন করছে..চুপ থাকো একদম..
[ফোন রিসিভ]
রুপা: হ্যালো আব্বু বলো..
[একটু থেমে]
রুপা: হ্যাঁ এইতো..স্যারের বাসায় এখনো..ফিজিক্স পড়া শেষ..কেমেস্ট্রি শেষ হলেই চলে আসবো।
[একটু থেমে]
রুপা: ঘন্টা দেড়েক লাগবে আর...
একটু থেমে]
না না..কোথাও যাবো না..সোজা বাসায় চলে আসবো..
[একটু থেমে]
রুপা:বাই আব্বু।
সেজান: আসো,ভালোবাসার হাইড্রোক্লোরিক এসিডে আবেগের সোডিয়াম নাইট্রেট মিশিয়ে ফেলি ...
রুপা:মানে কি?
সেজান:তুমিই তো বললে,কেমেস্ট্রি পড়ে চলে আসবা।
রুপা:মাইর খাবা কিন্তু..চলো..বাসায় ফিরতে হবে..
সেজান:হা হা হা...চল ময়না পাখি..
রুপা:আবার?
[লাইট নিভে যাবে]
দৃশ্য তিন
[নেতা বসে থাকবে চেয়ারে।পাশে দাঁড়ানো সেজান।পেছনে তোষামোদী]
নেতা: সেজান।কুতুবউদ্দীন মাওলা যা বলছে তা কি ঠিক?
সেজান: কুতুবউদ্দীনের মত পা চাটা পাবলিক কি বলছে,সেটা জিজ্ঞেস করার জন্যই কি তুমি আমাকে ডেকেছো?
তোষামোদী: হুজুর।আমি পা চাটা?আপনি কিছু বলেন..সেজান ভাইয়া আমাকে এত বড় অপমান......
সেজান:[ধমকে উঠে] কুতুব,তুই চুপ থাক।তোরে না বলছি আমার সামনে আসবি না..
নেতা: কতুবউদ্দীন চুপ থাকো।সেজান...হ্যা বলো।কে মেয়েটা?কি নাম তার?বাবা কি করে?
সেজান: নাম রুপা।বাবা স্কুল মাষ্টার।
[নেতা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে।]
নেতা: অসম্ভব।একজন স্কুল মাষ্টারের মেয়ের সাথে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদের ছেলের বিয়ে হতে পারে না,সেজান।আমার মান সম্মানের কথা ভাবা উচিৎ তোমার।
সেজান:হাসালে আব্বু।তোমরা সুবিধাবাদি রাজনীতিক রা কি করে আবার সম্মানের আশা করো?সম্মান বরং প্রাপ্য রুপার বাবার।একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উনি...
[তোষামোদী কেশে উঠবে]
নেতা: মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার?কি নাম তার?
সেজান:কমরেড আনোয়ারুল হক।
নেতা:মুক্তিযোদ্ধা ফোরামের সভাপতি আনোয়ারুল হক?
সেজান:হ্যা।মুক্তিযোদ্ধা ফোরামের সভাপতি।একজন যোদ্ধা।একজন কমরেড।
নেতা:[খুকখুক করে কাশতে কাশতে চেয়ারে বসতে বসতে]
ঠিক আছে সেজান।তোমার কোন ইচ্ছা আমি অপূর্ণ রাখিনি।রুপার সাথেই তোমার বিয়ে হবে।
সেজান:থ্যাংকু আব্বু।
নেতা:ঠিক আছে সেজান।এখন তুমি যাও।
[সেজান বেরিয়ে যাবে]
তোষামোদী: হুজুর...কিরাম কিরাম য্যান লাগতিসে..হা হা হা...ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদের ছেলে বিয়ে করছে স্কুলমাষ্টার মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে...হা হা হা..
নেতা:রাজনীতি একটা দাবা খেলা রে কুতুব।চাল টা যেভাবেই হোক নিজের দখলে রাখতে হয়..নইলে সব শেষ..
তোষামোদী:[মাথা চুলকাতে চুলকাতে] ঠিক বুঝলাম না হুজুর...
নেতা: এজন্যই তো তোকে আদর করে ডাকি ছাগল উদ্দীন।পত্রিকা পড়স না?ট্র্যাইবুনাল হইতাছে..মুজিবের খুনীদের ফাঁসি হয়ে গেছে..এবার কাদের পালা?
তোষামোদী: হা হা হা।হুজুর এবার বুঝে ফেলছি।যুদ্ধাপরাধী তালিকায় আপনার নাম আসবো।বিচার হবে।ফাঁসি হবে।কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ফোরামের সভাপতি যদি হয় আপনার বেয়াই...নাম কেটে দেয়া যাবে...
নেতা:ঠিক ধরছোস কুতুব।উপরের সারির নেতা রা সব ফেঁসে যাবে।আমার রাস্তা হয়ে যাবে পরিস্কার।আমি হব নতুন আমীর।হা হা হা।
তোষামোদী: আমাকে একটা চেয়ার দেয়া লাগবে কিন্তুক.....
নেতা:সব হবে রে কুতুব সব হবে।এখন যা তুই ।আমাকে একটু ভাবতে দে।
[তোষামোদী বেরিয়ে যেতে যেতে লাইট নিভে যাবে]
দৃশ্য চার
[আনোয়ারুল হক ঘাম মুছতে মুছতে চেয়ারে বসবেন।]
বাবা: রুপা..এক গ্লাস পানি দে তো মা..
রুপা:[মঞ্চের বাইরে থেকে]আনছি আব্বু।
[পানির হাতে রুপার প্রবেশ]
রুপা:তুমি এত কাহিল হলে কিভাবে?ঘেমে টেমে কি অবস্থা করেছো....
বাবা: কি করবো রে মা..বাজারের যে অবস্থা..সব জায়গায় আগুন..কেনার উপায় নেই...সব সিন্ডিকেটের হাতে..সাধারণ মানুষের নাগালের অনেক বাইরে....
রুপা: সিন্ডিকেট কারা করে?কারা নিয়ন্ত্রন করে এসব?
বাবা: সব মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা রে মা..তাদের সাথে আছে কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ।ব্যবসা রে মা সব ব্যবসা.....
রুপা: তোমরা প্রতিবাদ করো না কেন?সিন্ডিকেট ভেঙে দিলেই তো পারো..
বাবা: সিন্ডিকেট তাদেরই.. যারা আবার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করে..প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয় না।মুক্তিযোদ্ধাদের কোন দাম আছে এদেশে?
রুপা:তোমরা ত্রিশ লাখ মানুষ রক্ত দিলে আব্বু..যুদ্ধ করলে....কি লাভ হলো?যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তারা এখন মন্ত্রী হয়..দামী বাড়ি গাড়ি...আর তোমরা?বাজারের আগুনে পুড়ে মরছো....
বাবা: ভুল বললি রে মা।আমরা তো কোন লোভের জন্য যুদ্ধ করি নি।
[উঠে দাঁড়াবে]
এই সবুজ শ্যামল বাংলা মায়ের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছি।
আমরা জাতি হিসেবে খুব উদাসীন রে মা..তাদের বিচার করতে পারি নি।তোরা নতুন প্রজন্ম ও আমাদের ভুলের পথে হাঁটছিস।দলে দলে তাদের অনুসরণ করছিস।
মা রে..আমরা যুদ্ধ করে বিজয় এনেছি।তোদের আরো বড় যোদ্ধা হতে হবে।বিজয় কে রক্ষা করতে হবে।
[থেমে যাবেন।ধীরে ধীরে চেয়ারে বসবেন]
আচ্ছা,তুই না একটা ছেলের কথা বলেছিস?কি যেন নাম ?
রুপা:সেজান।
বাবা:হ্যা।ওর বাবা কে নিয়ে আসার কথা না?
রুপা:বিকেলে আসবে ওরা।
বাবা: বিকেলে?ঠিক আছে।[উঠে দাঁড়াবে] আমি এখন বেরুবো।একটা মীটিং আছে।
রুপা:দুপুরে কিন্তু বাসায় চলে আসবে।একসাথে খাব।
[লাইট নিভে যাবে]
দৃশ্য পাঁচ
[একপাশে দুটো চেয়ার খালি থাকবে।অপর পাশে দুটো চেয়ারের একটা তে বসে আনোয়ারুল হক পেপার পড়বেন।]
[তোষামোদীর প্রবেশ]
তোষামোদী: আসসালামুআলাইকুম জনাব।বাবা সেজান সহ আমরা চলে এসেছি।উনা রা বাইরে আছেন।
রুপার বাবা: আরে আরে বাইরে কেন?জলদি ভেতরে নিয়ে আসো।
[সেজান সহ নেতার প্রবেশ]
নেতা:স্লামালাইকুম ভাইসাহেব।উতলা হবেন না।আমি আবার ব্যস্ত মানুষ।মা রুপা কে ডাকুন।আংটি পরিয়ে দেই।শুভকাজে দেরী করতে নেই..
[চেয়ার টেনে বসতে যাবে]
রুপার বাবা:[শীতল কন্ঠে] ওখানেই দাঁড়াও শাহজাহান আযমী।কি ভেবেছো তুমি?আমি তোমাকে চিনতে পারবো না?
নেতা:ভাইসাহেব,পুরোনো কথা টেনে কি লাভ?নতুন করে সব শুরু হবে।আত্মীয়তা হবে।
রুপার বাবা:কি শুরু হবে শাহজাহান?সব তুমি ভুলে গেলেও আমরা পারি না।আর আত্মীয়তা?না শাহজাহান।হায়েনা আর রক্তচোষাদের সাথে মানুষের কোন সম্পর্ক হতে পারে না ।
সেজান: মিঃ আনোয়ারুল হক।আপনি আমার বাবা কে অপমান করছেন।
[রুপার ধীরে ধীরে প্রবেশ]
রুপার বাবা: হ্যা করছি।কারণ,তোমার বাবা একজন খুনী।যুদ্ধাপরাধী।একাত্তরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলো সে।হিন্দুপাড়ার অনেক মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছে ।অনেক নিরীহ মানুষকে নজের হাতে খুন করেছে তোমার বাবা।
সেজান:কি প্রমাণ আছে আপনার কথার?
রুপার বাবা:প্রমাণ চাও?জিজ্ঞেস করো তোমার বাবা কে।
তার হাত দেখো ধরে।এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে।এখনো পশু রয়ে গেছে সে।নিরীহ ছাত্রদের হাতে ধর্মের আফিম আর অস্ত্র তুলে দিয়ে নষ্ট করছে জাতির ভবিষ্যত।নিজের পিঠ বাঁচাতে লাশের রাজনীতি শুরু করেছে।
[নেতা নিচের দিকে চেয়ে থাকবে]
রুপা: সেজান ছিঃ।একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান তুমি।রাজাকারের রক্ত তোমার শরীরে।সে রক্ত আমার সন্তানের দেহে বইতে দিতে পারি না আমি।আমার কাছে লুকিয়েছো এসব।তুমি প্রতারণা করেছো।
আমি চাই,এখনি তুমি তোমার নরপশু জন্মদাতা কে নিয়ে বেরিয়ে যাবে এখান থেকে।
[বাবার দিকে ফিরে] চলো বাবা।
মুন্নী (রুপা) আর দীপ (আনোয়ারুল হক)
সেজান : রুপা শোনো।আমি তোমাকে..
রুপা: হ্যা জানি ভালোবাসো।ত্রিশ লক্ষ মানুষ যদি স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন দিতে পারে,আমি কেন তোমাদের পতনের জন্য নিজের ভালোবাসা কে কোরবানি করতে পারবো না?
তুমি চলে যাও,সেজান।
[বাবা কে নিয়ে বেরিয়ে যাবে রুপা]
সেজান: আব্বু রুপার বাবা যা বললো,এগুলো কি সত্যি?
নেতা:এগুলো ভুল ছিলো রে বাবা।আমি বুঝতে পারি নি।ভুল করে ফেলেছি।
সেজান: চুপ করুন মিঃ আলী শাহজাহান আযমী।ধর্মীয় রাজনীতির আড়ালে আপনার চেহারা ঢাকা থাকলেও আজ সব খুলে গেছে।
আপনি আমার জন্মদাতা,এটা ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে আমার।
আপনি কারো পিতা নন।কেউ নন।আপনি খুনী।যুদ্ধাপরাধী।আপনার ফাঁসি চাই আমি,ফাঁসি চাই।
[সেজানের প্রস্থান]
[নেতার সামনের দিকে চেয়ে থাকবে]
নেতা:কুতুবউদ্দীন।
তোষামোদি: শুনেছিস?সেজান আমার ফাঁসি চায়।আমার ছেলে আমার ফাঁসি চায়।হা হা হা।আমি যুদ্ধাপরাধী।খুনী।হা হা হা।
তোষামোদী:হুজুর।
নেতা: [হঠাৎ হাসি বন্ধ করে] কুতুব।আন্ডারগ্রাউন্ডে খবর দে।কালকের পত্রিকায় আনোয়ারুক হকের লাশের ছবি দেখতে চাই আমি।
তোষামোদী:জ্বী হুজুর।
নেতা: আমি খুনী,কুতুব।আনোয়ার ঠিক বলেছে।আমি খুন ভুলে যাই নি।হা হা হা।
[লাইট নিভে যাবে]
--------------------------------------------------------------------------
দৃশ্য ছয়
লাইট জ্বললে দেখা যাবে,আনোয়ারুল হক হেঁটে আসছেন।হঠাৎ চারপাশ থেকে নারায়ে তাকবীর বলকে কয়েকজন ঝাপিয়ে পড়বে।{ভাইব্রেটিং লাইট}
দর্শক শুধু আনোয়ারুল হকের চিৎকার আর জবাই কর,রগ কাট... এ জাতীয় কথা শুনতে পাবে।
আক্রমণ কারী রা পালিয়ে গেলে লাইট জ্বলে উঠবে।
আনোয়ারুল হকের লাশ পড়ে থাকবে।ধীরে ধীরে তোষামোদীর প্রবেশ।
তোষামোদী: দেখলেন তো সব।আমার নেতাজীর ভেতর বাহির দেখে কি মনে হলো?উনি মুখোশ এঁটে রেখেছেন বলে কিছু বোঝা যায় না।রক্তের হোলি খেলায় মেতেছেন আবার।একজন একজন করে কমরেড আনোয়ারুক হক দের রক্তাক্ত লাশের ছবি পত্রিকায় আসতে থাকবে।
[কিছুক্ষণ চুপ করে দর্শকের উপর চোখ ঘুরিয়ে আনবে]
আচ্ছা,আপনারা কি বোবা?কালা?অন্ধ?দেখতে পান না কিছু?শুনতে পান না?
মুক্তিকামী যোদ্ধাদের লাশের ছবি আর কত দেখবেন?আমার নেতার মত রক্তচোষা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেয়া লাশের ছবি দেখতে পান না?
অতীত কে বেমালুম ভুলে গেলেন?লাখ লাখ শহীদের কথা ভুলে গেলেন?
ছিঃ।আপনাদের ধিক্কার জানাই।ছিঃ।
[লাইট নিভে যাবে]
=====================================
পোস্ট বড় হয়ে গেছে অনেক।এটাই আমার নাট্যকার(!) হয়ে উঠার কাহিনী।আগামী পর্বে নির্দেশক হবার গল্প আর ভালোলাগার কিছু বিশেষ অনুভূতি শেয়ার করবো।যদি আপনার চান আর কি!