somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তদন্তের আগেই অভিযুক্তের নাম বিচারের আগেই মামলার রায়!

২৮ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এটা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার শামিল -এমাজউদ্দিন
-বিচার শুরুর আগেই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে - লে. জে. মাহবুব
-কিছুটা শিথিল বাকশালী আচরণ -সাদেক খান
-এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী -শওকত মাহমুদ

শহীদুল ইসলাম : তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না, কাউকে অভিযুক্ত করা যাবে না মর্মে আইনমন্ত্রী বক্তব্য রাখলেও সরকারের অপরাপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা একটি রাজনৈতিক দলকে এবং ঐ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে অভিযুক্ত করে কথা বলছেন। এতে করে বিচার প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরুর আগেই যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা যতই বলুক যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হবে এবং প্রশ্নাতিত বিচার হবে না তারপরেও আগেই সেটা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তদন্তের আগেই অভিযুক্তের নাম জোরেসোরে প্রচারের ঘটনা প্রমাণ করে বিচারের রায়ও যেন আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রসিকিউটর, বিচারক নিয়োগ এবং পরবর্তীতে বিচার সবই হবে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সরকারের এসব কর্মকান্ডের ব্যাপারে ‘দৈনিক সংগ্রামে'র কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, তদন্তের আগে কাউকে দোষীসাব্যস্ত করা ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। এটা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার শামিল। সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই এর স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সাদেক খান বলেন, এটা কিছুটা শিথিল বাকশালী আচরণ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো বা ত্রাস সৃষ্টি করা সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আগাম মন্তব্য কারো কাম্য নয়। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করবে এটা যেমন তারা নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল তেমনি নির্বাচনের পরেও বলে আসছে। জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আইনও পাস করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল গঠন, তদন্ত সংস্থা নিয়োগ, বিচারক নিয়োগ এবং আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গত বৃহস্পতিবারও স্পষ্ট করে বলেছেন, তদন্তের আগে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা ঠিক নয়। তারপরেও একশ্রেণীর পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াতে সীমাহীন উস্কানি ও বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করা হচ্ছে। ঐসব মিডিয়া সুনির্দিষ্ট কয়েকজন শীর্ষ জাতীয় নেতাকে টার্গেট করে বানোয়াট খবর প্রচার করছে। তারা একই সাথে সময়ে সময়ে কথিত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করে চলেছে। কখনো ১৮ জন, কখনো ২১ জন, কখনো ৩৬ জনের তালিকা প্রচার করা হয়েছে। তদন্তের আগেই যেন তারা জানে কারা কারা যুদ্ধাপরাধী। এটা যদি আগে জানাই থাকে তবে তদন্তের কি প্রয়োজন? আবার সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও একই ধরনের মন্তব্য করার কারণে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে তদন্ত ও বিচার শুধুই নাটক। তারা কাকে কাকে বিচার করবে। আর সেই বিচারের রায় কি হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে।
বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতেই মনে হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে। বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার করা হলে তা কোনদিন দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি দেখে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম সম্প্রতি সুস্পষ্ট মন্তব্য করেছেন যে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী। নিজামী, মুজাহিদরা যুদ্ধাপরাধী। এটা সবাই জানে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধীদের বিদেশে যেতে দেয়া হবে না। বিচার এড়াতে তারা হয়তো বিদেশে গিয়ে আর ফিরে নাও আসতে পারে সেজন্য তাদের বিদেশে যেতে দেয়া হবে না। তাদের পালানোর সুযোগ দেয়া হবে না। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অবঃ) মজিবুর রহমান ফকির মোমেনশাহীর গৌরিপুরে এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে বলেন, আমি সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি অতি দ্রুত যে কোন মুহূর্তে নিজামী, মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের প্রচলিত আইনের বিধানই হলো তদন্তের আগে কাউকে দোষী বলা যাবে না। এমনকি তদন্তের জন্য কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করা হলেও তাকে দোষী বলা যাবে না। এটা ন্যায়নীতির পরিপন্থী। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তদন্তের আগেই কাউকে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলছে, কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলকেও অভিযুক্ত করে উক্তি করছেন তদন্তের আগেই। এটা নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বলছেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত। তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এ ধরনের মন্তব্য। আর তা যদি হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে তাহলে তো কোন কথাই থাকে না। সাবেক সেনাপ্রধান লেঃ জেঃ (অবঃ) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে নই। তবে এক্ষেত্রে চাই স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত নয়। তবে সরকারের পদস্থ ব্যক্তিদের আগাম মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বিশেষ রাজনৈতিক মোটিভ নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সাদেক খান বলেন, বিচারের আগেই রায় ঠিক করে রাখার মত কমেন্ট কারো জন্য কাম্য নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এটা একটি ছুঁড়ে দেয়া অস্ত্র। তারা আসলে ইসলামপন্থী দলগুলোকে তাদের ডেসক্রিপশন মত চলতে বাধ্য করতে চায়। এটা কিছুটা শিথিল বাকশালী আচরণ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে এভাবে ভয় দেখানো বা ত্রাস সৃষ্টি করা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আমার মনে হয় আইনমন্ত্রীর কথাই ঠিক। তদন্তের আগে কাউকে দোষী বলা বা যুদ্ধাপরাধী বলা সঠিক নয়। এর বিপরীতে যারা যেসব মন্তব্য করছেন তা সঠিক নয়। এটা কারো কাম্য নয়। ন্যায় বিচারেরও পরিপন্থী এ ধরনের মন্তব্য।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×