somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানুভব এক ইরানি প্রেসিডেন্টের কথা

২৮ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মোহাম্মাদ খাতামি । ইনি ইরানের একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। ইরানের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি হিসেবে এঁর মেয়াদকাল ছিল ১৯৯৭ সালের ২ অগাস্ট থেকে ২০০৫ সালের ৩ অগাস্ট। ব্যাক্তি জীবনে খাতামি অত্যন্ত উদার ও সহানুভূতিশীল। প্রখ্যাত ইংরেজ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক এঁকে ‘...অনলি অনারেবল মিডিল ইস্ট লিডার অভ আওয়ার টাইম’ বলে অবহিত করেছেন। ইরানের তরুণ সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয় খাতামি। ২০০৯ সালে খাতামি ঘোষনা করেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট ইলেকশানে দাঁড়াবেন। কিন্তু পরে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সুহৃদ মীর হোসের মৌসাভী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন দেখে ...



মানচিত্র। ইরান



মানচিত্রে ইরানের য়াযদ প্রদেশ; এটিই ইরানের সবচে বড় প্রদেশ।



ইরানের য়াযদ প্রদেশ

মোহাম্মাদ খাতামি ১৯৪৩ সালের ১৪ অক্টোবর ইরানের য়াযদ প্রদেশের আরদাকান এ জন্মগ্রহন করেন। বাবা আয়াতুল্লা রুহুল্লা খাতামি ছিলেন য়াযদ শহরের খাতিব। খাতামি পাশ্চাত্য দর্শনে বি এ পাস করেছেন ইসফাহান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । তবে কৌওম- এ ইসলামী বিজ্ঞান নিয়েও পড়েছেন। এরপর জার্মানির হ্যামবুর্গ চলে যান সেখানকার ইসলামি সেন্টারে যোগ দেওয়ার জন্য। ইরানি বিপ্লব অবধি জার্মানি থাকেন।



১৯৭৯ ইরানের ইসলামি বিপ্লব সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিল।

১৯৯৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে খাতামি ৭০% ভোট পেয়ে সবার বিস্ময়ের উদ্রেক করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে গুরুত্ব নানা রাষ্ট্রীয় পদে আসীন ছিলেন। খাতামির ভাই ড. মোহাম্মদ রেজা খাতামি ছিলেন ইরানি আইন সভার ডেপুটি স্পিকার।
আগেই বলেছি খাতামি ছিলেন উদার। রাষ্ট্র পরিচালনায় সে উদারতা প্রতিফলিত হয়। তিনি জনকল্যাণে নানাবিধ সংস্কার করেন। ইরানে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতিকেই সমর্থন করেছেন।



তেহরান।

খাতামি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন, ছিলেন সহনশীলতা। অপরাপর রাষ্ট্রের সঙ্গে গঠনমূলক কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ‘আন্ত;সাংস্কৃতিক সংলাপ’-এর প্রবক্তা; যাকে বলা হয় ‘ডায়ালোগ অ্যামঙ্গ সিভিলাইজেশনস’। এটি আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। মার্কিন রাষ্টবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি. হানটিংটন যে সর্বনাশা ‘ক্ল্যাশ অভ সিভিলাইজেশন’-এর কথা বলেছেন খাতামি প্রবতিত ‘ডায়ালোগ অ্যামঙ্গ সিভিলাইজেশনস’ তত্ত্ব আমার মতে প্রাচ্যের মানবিক প্রতিক্রিয়া। এই তত্ত্বের গুরুত্ব বিশ্বের চিন্তাশীল ব্যাক্তিমাত্রেই উপলব্ধি করেছিলেন। যার ফলশ্র“তিতে খাতামির সুপারিশের ভিত্তিতেই ২০০১ সালে জাতিসংঘ ‘ইয়ার অভ ডায়ালোগ অ্যামঙ্গ সিভিলাইজেশনস’ ঘোষনা করে।



‘দ্য ম্যান উইদ দি চকোলেট রোব’

আগেই বলেছি। ইরানের তরুণ সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয় খাতামি। ২০০৫ সালের ২২ ডিসেম্বর খাতামির রাষ্ট্রপতির মেয়াদকালের কয়েক মাস পর ইরানের তরুণ প্রজন্মের শিল্পী কর্মীরা খাতামির সম্মানে তেহরানের বাহমান ফারহাংসারা হলরুমে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি ‘দ্য ম্যান উইদ দি চকোলেট রোব’ নামে পরিচিত। ২২ ডিসেম্বর রাত ছিল শাব এ চেহলে বা য়ালদা উৎসবের রাত। টিন এজার ও তরুণ তরুণীরা তেহরানের বাহমান ফারহাংসারা হলরম মুখরিত করে তোলে। জনপ্রিয় ইরানি অভিনেত্রী পেগাহ আহানজারানি ছিলেন অনুষ্ঠানটির অন্যতম আয়োজক। অনুষ্ঠানটি সর্ম্পকে স্থানীয় সংবাদপত্র কিছু না লিখলেও ইন্টারনেটে ‘দ্য ম্যান উইদ দি চকোলেট রোব’ সম্পর্কে প্রচুর খোঁজ খবর নেওয়া হয়। ইরানি ব্লগেও এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়। (২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনিজাদ ক্ষমতায় চলে এসেছেন। তিনি সম্ভবত অস্বস্তি বোধ করছিলেন!) ... অনেকেই অনুষ্ঠানটিকে ‘কনসার্ট’ বলেছেন। জনৈক ব্লগার তার ব্লগে লিখেছেন-‘ তরুণরা এমন আচরণ করছিল খাতামি যেন পপ স্টার।’ ইরানের হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রাষ্ট্রীয় নেতার জন্য তরুণ সমাজের আবেগময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেল।



খাতামি পড়াশোনা করেছেন ইসলামী শাস্ত্রে,সেটাই যে সব কিছু নয়, তা তিনি প্রমান করেছেন। অক্টোরবর ২০০৮ সালে আধুনিক বিশ্বে ধর্মের অবস্থান বিষয়ে একটি আর্ন্তজাতিক সম্মেলন আয়োজন করেন।

মোহাম্মাদ খাতামির উত্তরসূরি ইরানের ষষ্ট প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনিজাদ। ঔরঙ্গজেব এর সঙ্গে বাদশা আকবরের যে পার্থক্য প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনিজাদ এর সঙ্গে মোহাম্মাদ খাতামি যেন একই পার্থক্য আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করি। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনিজাদ, আমরা অবগত আছি যে, অতিশয় কট্টরপন্থি। তিনি অনেক কট্টরপন্থায় বিশ্বাসের পাশাপাশি ইতিহাসের নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যার অন্যতম হল- ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইহুদি নিধন বা হলোকাষ্টকে ‘মিথ’ মনে করা। এমন কী ইরানে এ বিষয়ে সম্মেলন আয়োজন করে ৬০ লক্ষ ইহুদি হত্যাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা কেেছন! এ প্রসঙ্গে রবার্ট ফিস্ক লিখেছেন ... The best reply to Ahmadinejad's childish nonsense came from ex-president Khatami of Iran, the only honourable Middle East leader of our time, whose refusal to countenance violence by his own supporters inevitably and sadly led to the demise of his "civil society" at the hands of more ruthless clerical opponents. "The death of even one Jew is a crime," Khatami said, thus destroying in one sentence the lie that his successor was trying to propagate. (দেখুন, A Lesson From The Holocaust For Us All By Robert Fisk 03 April, 2006 The Independent)


কট্টরপন্থিদের হাতে পড়ে ইরান আজ ভয়াভয় সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ইরানের পারমানবিক স্থাপনাসমূহ ধ্বংসের লক্ষ্যে মার্কিন রণতরী ভারত মহাসাগরে উপস্থিত। এই দুযোর্গকালে মোহাম্মাদ খাতামির মত মহানুভব রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন বোধ করছি। যিনি হয়ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে বসে সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট উত্তোরণের কোনও গ্রহনযোগ্য পথ দেখাতে পারতেন- কট্টরপন্থিদের কাছ থেকে তেমনটা আশা করা যায় কি?
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×