somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“কোল গ্যাসিফিকেশন”-শক্তির সম্ভাবনাময় নতুন উৎস

২৬ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমগ্র বিশ্ব তথা আমাদের দেশেও বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশ উর্ধগামী এ ব্যাপারে আমরা সকলে একমত । আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকাংশই এখনো প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর। কিন্তু আতংকের বিষয় হলো বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের মজুদ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে আমাদের দেশের জন্যে উদ্বেগজনক কিছু সংবাদ রয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের যে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে তাতে আমাদের আগামী তিন দশক চলবে মাত্র। সুতারাং এখনই সময় এসেছে আমাদের বিকল্প জ্বালানী উৎস খোঁজার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনেক আগেই শুরু করে দিয়েছে এই অন্নেষণ, যার সর্বাধুনিক ফসল হলো “কোল গ্যাসিফিকেশন” অথবা কয়লা গ্যাসসীকরণ। বিকল্প জ্বালানী উৎস হিসেবে নবায়নযোগ্য বা “রিনিউআ্যাবলএনার্জি’র নাম আগেও বারবার এসেছে,এখনো আসছে। কিন্তু এখনো এ ব্যাপারটি পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে। তাছাড়াও ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্যে নবায়নযোগ্য শক্তি এখনো ততোটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। আর আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে শক্তির এই বিপুল চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করাটা বেশ উচ্চাভিলাষীও বটে।বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ও বিশুদ্ধ ও আন্তর্জাতিকমানের উন্নত কয়লা উৎপাদনকারী দেশ। তাই বর্তমানে শক্তি তথা বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিকল্প শক্তির অন্নেষণে “কোল গ্যাসিফিকেশন” হতে পারে সম্ভাবনাময় একটি উপায়।
বর্তমানে আমাদের দেশে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশপাশি । কিন্তু প্রক্রিয়াটি অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভজনক নয় তেমনি কর্মদক্ষতার দিক থেকেও ততোটা উন্নত নয়, তদুপরি পরিবেশের জন্যেও হুমকিস্বরূপ।
এটি এমন একটি পদ্দ্ধতি, যাতে কয়লাকে হাইড্রোজেন ও মিথেন সমৃদ্ধ জ্বালানীতে রুপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে বিকল্প জ্বালানীর উৎস হিসেবে এই পদ্ধতিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও এটি শুরু হয় মূলত অষ্টাদশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে। ঊনিশ শতকের শুরুতে-যা বানিজ্যিক রুপ লাভ করে। এই শতকের চল্লিশের দশকের আগ পর্যন্ত তাপ ও আলোর উৎস হিসেবে উত্তর আমেরিকান ও ইয়োরোপীয় দেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। পঞ্চাশের দশকের দিকে তূলনামূলক সস্তা ও দূষণহীন প্রাকৃতিক গ্যাস এর জায়গা দখল করে নেয়।
কিন্তু বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের মজুদ কমতে থাকায় আমাদের দৃষ্টি এখন আবার ফেরাতে হচ্ছে ওই “কোল গ্যাসিফিকেশন”-এর দিকেই।
পূর্বে যে পদ্ধতিতে কয়লাকে গ্যাসীভূত করা হতো তাতে কর্মদক্ষতা যেমন ছিল স্বল্প, তেমনি পরিবেশের জন্যেও ছিল তা হুমকিন্বরূপ। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির ফলে বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে সমন্বিত যুগপৎ গ্যাসীকরণ চক্র(Integrated gasification-combined cycle)যাতে কয়লাকে প্রথমে গ্যাসে পরিণত করা হয় এবং পরবর্তীতে একে পরিশোধিত করা হয়(অম্লীয় উপাদান ও অপদ্রব্য দূর করা হয়)। পরবর্তীতে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয় গ্যাস টার্বাইনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে। পরের ধাপে গ্যাস টার্বাইন হতে নির্গত গ্যাসের তাপকে কাজে লাগিয়ে বাষ্প প্রস্তুত করা হয়,যা স্টিম টার্বাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগে।
“কোল গ্যাসিফিকেশন”-এর উপকারিতা অনেক। এদের মূলত দূ’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত পরিবেশগত উপকারিতা, দ্বিতীয়ত শক্তির অপচয় রোধ (যুগ্ম বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে)। তাছাডাও স্বাস্থ্য ও পারিবেশগত উপকারিতা, সল্প উৎপাদন ব্যয়,অন্যান্য উপজাত হিসেবে হাইড্রোজেন ও হাইড্রোকার্বনজাত অন্যান্য তরল জ্বালানীসহ অন্যান্য মূল্যবান জ্বালানীর বিপূল অর্থনৈতিক অথবা ব্যবহারিক সম্ভাবনা ইত্যাদি তো রয়েছেই।
শেষ করার আগে বলতে হয়, সভ্যতার এই ক্রান্তিলগ্নে বিকল্প জ্বালানীর খোঁজে মানব জাতির বহু দশকের অন্তহীন প্রয়াসের অগ্রসরমান পথে “কোল গ্যাসিফিকেশন” অনেকটা নতুনরূপে পেছন ফিরে তাকানোর মতই। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নে বিশ্বজুড়ে আবিষ্কৃত ও অনাবিষ্কৃত খনিজ কয়লার উপযুক্ত গ্যাসীকরণই হতে পারে বর্তমান ও আগামীর জ্বালানী সমস্যা সমাধানের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি।

[সংক্ষিপ্তরূপে সমাপ্ত।পরবর্তিতে পরিবর্ধন করা হবে]
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×