somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাগরিক প্রেসনোট-৫: এগুলোর কোনটাই মৃত্যু নয়, রাষ্ট্র ও কর্পোরেটদের হাতে সংঘটিত খুন!

২২ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুন-হত্যাগুলোকে অনায়াসে মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে শাসকগোষ্ঠীর দায়মুক্তির প্রাতিষ্ঠানিক রেওয়াজ পাকাপোক্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে, অনেক দিন থেকে, ঐতিহাসিকভাবেই। দিন দিন এ রেওয়াজটা দানবীয় চর্চায় রূপ নিচ্ছে। এ দানবীয় কর্মে রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হয়েছে কর্পোরেট বেনিয়া এবং তাদেরই পরিচালিত, তাদের কাছে নতজানু গণমাধ্যম। সংবাদপত্র, বেতার- টেলিভিশন। এদের ক্ষমতাকেন্দ্রীক নিরবিচ্ছিন্ন সংগমে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠছে শাসন-শোষণের অভিধান। দিনযাপনের শব্দমালায় যুক্ত হয়েছে কত বিচিত্র সব শব্দ। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, ক্লীনহার্ট, আরো কতো কী। যে দরিদ্র কৃষক কোন দিন বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ পাননি, সরকারি জরিপে যাকে নিরক্ষর, পড়ালেখা না জানা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, বাংলা বর্ণমালার সাথেও যার পরিচয় ঘটেনি, কাঠামোগত দারিদ্রের কারণে, সে দরিদ্র নিরক্ষর কৃষকও ক্রসফায়ারের প্রায়োগিক অর্থ বুঝে। কিন্তু এ বুঝাবুঝি তার মনে কোন ক্ষত তৈরি করে না। তাকে আতংকগ্রস্থ করে না। তাকে পীড়িতও করে না। বিনাবিচারে মানুষের খুন হয়ে পড়ে থাকায় তাকে আবেগতাড়িত করে না। বরং রাষ্ট্র ও অনুগত গনমাধ্যম কর্তৃক নিত্য মগজ ধোলইয়ের ধারাবাহিকতায় কেউ কেউ, বলা যায় বেশির ভাগ, এর সমর্থকও হয়ে উঠে। কারণ তথ্য অভিগম্যতার সীমিত পরিসরে সে কেবল মূদ্রার একটি পিঠই স্পর্শ করতে পারে। অপর পিঠ অধরাই থেকে যায়। তথ্য-উপাত্তকে অধরা করে রাখাটাও শাসকের অনিবার্য চরিত্র, শোষণের অনিবার্য হাতিয়ার।
এইতো সেদিন বিকেল বেলা খোদ রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-১ এ যে দু’জন নাগরিকের জীবনাবসনকে ঝড়েমৃত্যু বলে গণমাধ্যমগুলো প্রচার করেছে, সে দু’টি তাজা প্রাণের অস্বাভাবিকভাবে হঠাৎ ঝরে যাওয়াকে আমি স্রেফ হত্যা বলেই মনে করি। খাবারের দোকানের ১৫ বছর বয়সের টগবগে কর্মী সাইফুল, যে ঝড় ও বৃষ্টি উপভোগ করতেই ঘরের বাইরে এসেছিল অথবা অজ্ঞাতনামা গাড়ির চালক, যে গাড়িতেই নিরাপদে বসে অনিরাপদ হয়েছিল, যার আর ফিরে যাওয়া হয়নি, কখনও হবে না তার প্রিয় জনের কাছে, এ দু’জনই মূলত: খুন হয়েছে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতায়। সিটি করপোরেশনের ক্রমাগত দায়িত্বে অবহেলায়। সর্বপোরী দানব কর্পোরেট এর বিজ্ঞাপন পরিবেশনে দানবীয় বিলবোর্ডের হামলায়। বিবেক খেকো বিজ্ঞাপন পরিবেশনের পদ্ধতির কাছে যেখানে পরাজিত হয়েছে যাবতীয় নিয়ম এবং হাজার হাজার পথচারীর সম্ভাব্য ঝুকি, জীবন-মৃত্যূ বিবেচনা।
শুধু ঢাকা নয়, প্রতিটি শহরের প্রতিটি রাস্তার আকাশ ঢাকা পড়েছে বিশাল বিশাল আকারের এ সব দানবীয় বিলবোর্ডের কাছে। বিলবোর্ডগুলোই হয়ে উঠেছে নগরীর বিকল্প আকাশ। কিন্তু এগুলো এতটাই নাজুক যে, মাত্র ঘন্টায় ২৬-৫৬ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে যাওয়া ঝড়েই ভেঙ্গে পড়েছে। খুন করেছে তরতাজা দু’টি জীবন। কর্পোরেটদের দানবীয় বিলবোর্ডের হামলায় মানুষ খুন করা অথবা হাত-পা-অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেড়ে নেয়ার ঘটনা এ প্রথম নয়। এর আগেও হয়েছে। ২০০৭ সালেও ঢাকা বিমানবন্দরের সামনে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। একই বছর প্রগতি সরণিতেও বিলবোর্ডের নিচে চাপা পড়ে একজন শ্রমিক জীবন হারিয়েছেন। কিছুই হয়নি, না রাষ্ট্রের, না কর্পোরেটদের। ঢাকায় এ সব বিলবিবোর্ডের অনুমোদনকারী সংস্থা সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যদি দায়িত্বশীল হতেন, দায়িত্ব পালন করতেন, মানুষের ভেতরে অনুভূত চাহিদা তৈরি করে মুনাফা তৈরির প্রতিযোগিতা যদি না থাকতো কর্পোরেট চরিত্রে, অথবা রাষ্ট্র যদি এ প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নিত, তবে এ খুনগুলো এড়ানো যেত। সুতরাং এ সব জীবননাশের সংবাদ যখন ঝড়ে মৃত্যু বলে পরিবেশিত হয় তখন তাকে রাষ্ট্র ও কর্পোরেটের দায়মুক্তির প্রক্রিয়া বলেই মনে হয়। এবং এর বড় প্রমাণ যে বিলবোর্ডের নিচে পড়ে এ মানুষগুলো জীবন হারিয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্র কর্তৃক সে কোম্পানীর নাম না ছাপানো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেও প্রধান কয়েকটি পত্রিকার একটিতেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর নাম উদ্ধার করা যায় নি। বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির সম্ভাবনার কাছে সৎ সাংবাদিকতার পরাজয় ঘটেছে ঠিক এভাবে।
ঠিকাদার কোম্পানীর অতি মুনাফাবাদিতা আর দায়িত্বহীতার কারণে এখানে ওভারব্রিজ ঙেঙে পড়ে মানুষের মাথায়। নির্মানাধীন দালান ভেঙে পড়ে মানুষ খুন হয়। কিন্তু ঠিকাদার কোম্পানীর কিছুই হয় না। ট্রাফিক আইন প্রয়োগ না হতে হতে গাড়ির চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রায় প্রতিদিন রাস্তায় মানুষ পিষে চলে যায়। মায়ের হাত ধরে থাকা অবুঝ শিশুর মাথা ও মগজ সব কিছু থেতলে দেয়। রাস্তায় ছিটকে পড়ে থাকে শিশুর লাশ। তাতেও কিছু হয় না। বরং তখনও দূরে দাঁড়িয়ে উপরি কামাইয়ের শিকার খোঁজে পেশাদার ট্রাফিক দল। এতসব খুনের মিছিল রাষ্ট্রের কাছে, শাসকের কাছে, শোসকের কাছে এগুলোকে কেবল মৃত্যু বলেই বিবেচিত হয়। কখনো ঝড়ে মৃত্যৃ। কখনও বাসচাপায় মৃত্যু। তাদের দায়মুক্তির প্রক্রিয়া হিসেবে। বন্ধ কর এ দায়মুক্তির পথ। ঠিক এখনই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:০৩
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×