somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোয়ান্টাম মেডিটেশন কেন?[

১৫ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোয়ান্টাম মেডিটেশন কেন?
মহাজাতক

মানুষের অসীম শক্তি ও সম্ভাবনাকে সবসময় শৃঙ্খলিত ও পঙ্গু করে রাখে সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে প্রচলিত ধারণার শৃঙ্খলে সে ক্রমান্বয়ে বন্দি হয়ে পড়ে। পরিবেশ যা তাকে ভাবতে শেখায় সে তা-ই ভাবে, যা করতে বলে তা-ই করে। যে হতে পারতো যুগস্রষ্টা বিজ্ঞানী, হতে পারতো শতাব্দীর অভিযাত্রী, অমর কথাশিল্পী, হতে পারতো মহান নেতা বা বিপ্লবী, হতে পারতো আত্মজয়ী বীর বা ধর্মবেত্তা, সেই মানব শিশুই ভ্রান্ত ধারণার বন্দি হয়ে পরিণত হচ্ছে কর্মবিমুখ হতাশ ব্যর্থ কাপুরুষে। এ ব্যর্থতার কারণ মেধা বা সামর্থ্যের অভাব নয়, এ ব্যর্থতার কারণ বস্তুগত জিঞ্জির নয়, এ ব্যর্থতার কারণ মনোজাগতিক শিকল।

প্রতিটি মানবশিশু সুপ্ত মহামানবরূপে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু কায়েমী স্বার্থ সৃষ্ট মনোজাগতিক জিঞ্জির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে তাকে পরিণত করে এক অসহায় নিরুপায় প্রাণীতে। সার্কাসের হাতির জীবনের দিকে তাকালে এই মনোজাগতিক দাসত্বের বিষয়টি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।

জঙ্গল থেকে দুরন্তপ্রাণ চঞ্চল হস্তী শাবককে ধরে এনে ৬ ফুট লোহার শিকল দিয়ে শক্ত থামের সাথে বেঁধে রাখা হয়। প্রথম দিকে হস্তী শিশু শিকল ছেঁড়ার জন্যে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায়। কিন্তু এত ছোট শরীর দিয়ে সে জিঞ্জির ভাঙতে পারে না। উল্টো তার পা-ই রক্তাক্ত হয়ে যায়। ফলে একসময় এই গণ্ডি ও বন্দিত্বের কাছে হস্তী শিশু আত্মসমর্পণ করে। এভাবে তার মধ্যে তৈরি হয় সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। সে বিশ্বাস করতে শুরু করে এই গণ্ডি, এই জিঞ্জির থেকে তার মুক্তি নেই। এটাই তার নিয়তি।

হস্তী শিশু বিশালদেহী পূর্ণাঙ্গ হাতিতে পরিণত হওয়ার পরও তাকে কুকুর বাঁধার শিকল দিয়ে ছাগল বাঁধার খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেও সে এই ৬ ফুট বৃত্তকেই তার পৃথিবী ধরে নেয়। যখনই শিকলে টান পড়ে তখনই সে তার বৃত্তের আরো ভেতরে প্রবেশ করে। ভ্রান্ত বিশ্বাস তাকে বলে এর চেয়ে আর এগুনোর সাধ্য তোমার নেই। এমনকি দেখা গেছে সার্কাস মেলায় আগুন লাগলেও হাতি তার শিকল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করে না। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কারণ ভ্রান্ত বিশ্বাস তাকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে রাখে। যখন তার দেহের শক্তি একটানে খুঁটিসহ সব কিছু উপড়ে ফেলতে পারে, তখনও সে ভাবে এই ৬ ফুট বৃত্তই আমার নিয়তি। তার এ শৃঙ্খল লোহার নয়, খুঁটির নয়। এ শৃঙ্খল হচ্ছে মনের।

আমাদের অবস্থাও এখন তা-ই। আমাদের প্রতিটি মানুষের প্রতিটি পরিবারের পুরো জাতির বিপুল সম্ভাবনা, শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সংস্কার, ভ্রান্ত বিশ্বাস, শোষক ও পরাভববাদীদের আরোপিত মিথ্যা ধারণার শৃঙ্খলে আমরা নিজেদেরকে গণ্ডিবদ্ধ ও বন্দি করে ফেলেছি। দুর্দশাগ্রস্ত ও গ্লানিকর জীবনকেই আমরা আমাদের নিয়তি ও ভাগ্যরূপে মেনে নিচ্ছি। সার্কাসের হাতির মতোই পুড়ে মরে গেলেও শিকল ভাঙার কোনো চেষ্টা করছি না। কিন্তু শুধুমাত্র একবার এ সংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলে দিলে দেখতে পাবো আমরা প্রত্যেকে এক বিপুল শক্তির আধার। এই ভ্রান্ত ধারণার শিকল ভেঙে মুক্ত বিশ্বাসে উপনীত হওয়াটাই হচ্ছে মানুষের আসল স্বাধীনতা| কারণ মুক্ত বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। বিশ্বাসই মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। বিশ্বাসই অভাব দূর করে, প্রাচুর্য সৃষ্টি করে।

মুক্ত বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় মানুষের মানবিকতার উত্থান পর্ব। তখনই সে বুঝতে পারে- সে সৃষ্টির সেরা, আশরাফুল মাখলুকাত। নিজের অসীম শক্তি ও সম্ভাবনাকে বুঝতে পারে। লোভ-লালসা, ভীতি, কাপুরুষতা ও প্রবৃত্তির শৃঙ্খল যে অনন্য মানবসত্তাকে বন্দি করে রেখেছে, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার শক্তি তার মধ্যে জন্ম নেয়। সে মুক্তি পায় প্রাত্যহিক জীবনের ক্লান্তিকর একঘেয়েমি থেকে। মুক্ত বিশ্বাস প্রতিটি কাজে চিত্তকে করে একাত্ম। আর কাজের সাথে একাত্ম হতে পারলে প্রতিটি কাজ হয়ে ওঠে আনন্দের উৎস।

দৈনন্দিন জীবন বেশির ভাগ চিন্তাশীল মানুষের জন্যেই যুগে যুগে ছিলো এক ক্লান্তিকর বিড়ম্বনা| এ ক্লান্তিকর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তির পথ সচেতন মানুষ সব সময়ই খুঁজেছে। এক শিষ্য গুরুর কাছে বললেন, এই ভাত খাওয়া, গোসল করা, কাপড় পরা, সংসার করা, প্রার্থনা করা- এই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি চাই।
গুরু বললেন, ভাত খাও, গোসল কর, কাপড় পর, সংসার কর, প্রার্থনা কর।
কিছুদিন পর শিষ্য আবার আর্তি জানালেন।
গুরুরও সেই একই জবাব। একই নির্দেশ।

গুরু-বাণীর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে শিষ্যের লেগেছিলো এক যুগ। এক যুগ পরে তিনি বুঝেছিলেন, যান্ত্রিকতার স্বয়ংচালিত ক্রিয়ার মতো কাজ করে যাওয়ার ফলেই প্রাত্যহিক কাজে একঘেয়েমি চলে আসে। বেশিরভাগ সময়ই মন অতীতে বা ভবিষ্যতে বিচরণ করে বলেই আমরা বর্তমানকে পুরোপুরি উপভোগ করতে ব্যর্থ হই। বর্তমান হয়ে ওঠে একঘেয়ে। দিনের প্রতিটি কাজের সাথে চিত্তকে একাত্ম করতে পারলে, প্রতিটি কাজের মাঝে আত্মনিমগ্ন হতে পারলে, মনোযোগ নিবদ্ধ করতে পারলেই যান্ত্রিকতার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিটি কাজই হয়ে ওঠে আনন্দের উৎস। তখন প্রতিদিনের প্রতি লোকমা আহার, প্রতিবারের গোসল, প্রত্যেক কাপড়, স্ত্রীর সাথে আলাপন, দৈনন্দিন কর্তব্য ও দায়িত্ব- অর্থাৎ প্রতিটি কাজেই মনে হবে এ এক নতুন জগত, এ এক নতুন জীবন, এ এক নতুন আনন্দলোক। প্রতিবারের প্রার্থনাতেই আপনি পুলকিত হবেন, চমকিত হবেন, স্রষ্টাকে উপলব্ধি করবেন নিত্য নব মহিমায়। প্রতিটি চাওয়া পরিণত হবে পাওয়ায়। প্রতিটি সেজদা পরিণত হবে মেরাজে।

ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তির পথ হচ্ছে মেডিটেশন। দৈনন্দিন কাজের একঘেয়েমিকে নতুন আনন্দলোকে রূপান্তরিত করার পথও মেডিটেশন। কারণ মেডিটেশন আপনার মনকে বর্তমানে নিয়ে আসে। মেডিটেশন অতীতের ব্যর্থতার গ্লানি আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা থেকে মুক্ত করে বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তে সংযোজন করে নব নব মহিমা। প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি বিষয়ের অন্তর্লোকে সে মনকে প্রবেশ করায়। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ সচরাচর বিষয়কেও নতুন পর্যবেক্ষণী আলোয় নতুন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর করে তোলে। অন্তর্লোককে উদ্ভাসিত করে নতুন জ্ঞান আর উপলব্ধিতে। মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে। এই আত্মশক্তির আবিষ্কার ও আত্ম-অনুভব এমন এক মুক্ত বিশ্বাস- যা আপনাকে সকল শিকল থেকে মুক্ত করবে, দৈনন্দিন একঘেয়েমি রূপান্তরিত হবে আনন্দে।

মেডিটেশনের পথ ধরেই আপনি লাভ করবেন পারিপার্শ্বিক দুষ্টচক্রের শৃঙ্খল ভাঙার অন্তর্গত শক্তি। সংকীর্ণ, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর আচরণ অভ্যাস ছিন্ন করে বপন করবেন মুক্ত আচরণ অভ্যাসের বীজ। ভয়, উদ্বেগ, হতাশা কাটিয়ে লাভ করবেন অভূতপূর্ব প্রশান্তি। পুরনো ‘আমি’র জায়গায় স্থান করে নেবে নতুন আলোকিত ‘আমি’। আপনি অতিক্রম করবেন আপনার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা। আপনার উত্তরণ ঘটবে অনন্য মানুষে। আপনি পাবেন আপনার প্রথম ও পরিপূর্ণ স্বাধীনতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৫৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×