somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণ ভালবাসা আমার লেখা গল্পটি ভালবাসা সংকলনে প্রকাশিত

১৪ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজের কথাঃ যৌবনের প্রারম্ভের ভালবাসাটি ছিল নিখাদ খাঁটি। কামনা ছিল না, ছিল না কোন লালসা। শুধু ভিন্ন ধর্মের কারণেই আমাদের ভালবাসার মিলন ঘটেনি। অথবা আমি কাপুরুষ বলে। দোয়া করবেন সবাই সে যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক।

ভালবাসা কোন জাত ধর্ম মানে না। ভাল মন্দ কোন কিছু নির্ধারণ না করে মনের গভীরে অজান্তেই কাউকে না কাউকে স্থান করে দেয়। কিভাবে যে সে আমার মনের অজান্তে শরতের শিউলী ঝরা দিনে মনের গভীরে স্থান করে নিল বুঝতে পারলাম না। আমাদের জাত ধর্ম আলাদা, আমরা একই এলাকায় বসবাস করি কিন্তু আলাদা সমাজ ব্যবস্থায়, আলাদা ধর্মীয় বিশ্বাসে। কিন্তু ভালবাসা আমাদের কাছে নিয়ে আসে। ভুলিয়ে দেয় জাত ধর্ম অনুশাসন। সে আর আমি যেন যুগ যুগ ধরে একে অপরকে চিনি। এভাবেই শুরু হলো আমাদের কিশোর থেকে যৌবনে পর্দাপনের শুরুটা। আমরা একে অপরকে উপলদ্ধি করলাম গভীরভাবে। আমরা একদিন দেখা না করে থাকতে পারি না। অনেক কষ্ট করে হলেও তার সাথে দেখা করি। সামাজিক বাধা, অভিভাবকের চোখ রাঙানী কোন কিছুই আমাদের দমাতে পারে না। বন-বাদাড়ে, মেঠো পথে আমরা সুযোগ পেলেই দেখা করি। তার সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতোই। সবচেয়ে সৌন্দর্য ছিল তার মনের বিশালতায়, আমি অনেক সময় বলতাম কে বেশী ভালবাসি? তুমি বেশী না আমি! আমি তার কাছে বার বার হার মানতাম। আর এই হার মানাতেই ছিল আনন্দ।

আকাশে চাঁদ উঠলে যেমন সবাই দেখতে পায়, তেমনি আমাদের অসম ভালবাসাও প্রকাশিত হয়ে গেল সমাজের কাছে। একদিন কাকী মা আমাকে ডেকে বললেন,
বাবা তোমাকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই, আমার নিজের ছুরি আমার পেট কেটেছে।
কথাটি বুঝতে আমার বেগ পেতে হলো না। তিনি নিজের মেয়েকেই দোষারোপ করছেন।

আমাদের দেখা সাাত সীমিত হয়ে গেল। রাতের আঁধারে ওদের বাড়ির পিছন দিকের জঙ্গল দিয়ে আমি তার পড়ার ঘরে জানালার কাছে দেখা করি। কোন কথা বলা যায় না, তার বাবা বারান্দায় জল চৌকিতে শুয়ে থাকেন। শুধু চোখের দেখা-অশ্র“পাত আর নিরব ভালবাসা। ছোট্ট চিরকুট লিখে ওর হাতে রাখি, আমাকেও দেয় তার লেখা। কতবার যে সেগুলো পড়া হয়েছে বলতে পারব না।

এরই মধ্যে আমার ভার্সিটিতে ভর্তি যুদ্ধে নামতে হলো। অনেক কষ্ট করে রাত জেগে পড়াশোনা করলাম, সে আমাকে সাহস আর প্রেরণা দিল। আমাদের দেখা সাাতের সময় কমে গেল। আমি ইচ্ছে থাকলেও তার সাথে দেখা করতাম না, যদি পড়াশোনায় তি হয় এই ভেবে। একই বছর সে ভাল পজিশন নিয়ে এসএসসি পাশ করে নাটোর শহরে সরকারী মহিলা কলেজে ভর্তি হলো। যাক, এবার আমাদের আর কোন সমস্যা হবে না। ভর্তির পরে বেশ কয়েকবার দেখা হলো। সরকারী মহিলা কলেজের কঠোর নিয়ম, বাবা ভাই ছাড়া ছাত্রীদের সাথে কারও দেখা করার বিধান নেই। তবুও সুদুর রাজশাহী হতে আমি আসি দেখা করার জন্য। একটু দেখা হয়, কথা বলা যায় না। এই দেখাতেই মনে হয় আকাশে চাঁদ হাতে পেয়েছি। ভার্সিটিতে নতুন কাস অনেক নতুন অভিজ্ঞতা কিন্তু আমার মন পড়ে রয় নাটোরে। কাসে মন বসে না।

ভয়াবহ ছাত্র সংর্ঘষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভার্সিটি বন্ধ করে দেয়া হলো। আমি পড়লাম মহা ফাপড়ে। বাড়িতে ফিরে কিছুতেই তার সাথে যোগাযোগ রা করতে পারলাম না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এখন সে হোষ্টেলে থাকে না। শহরের বাইরে এক আতœীয়র বাসায় থেকে কাস করছে। বন্দুক হাতে শিকারীর ছদ্মবেশে ওর আতœীয় বাড়ির আশে পাশে পাখি শিকারে নামলাম। যদি একটিবার দেখা হয়! ভাগ্য ভাল বলতে হবে। পড়ন্ত বিকালে দেখা গেল প্রেয়সীর। নদীর ধারে হাঁটতে বেড়িয়েছে। সঙ্গে অচেনা একটি মেয়ে। আমাকে সে ঠিকই চিনতে পারলো। অনেকদিন পর দেখা, দেখা মাত্রই সে কেঁদে ফেললো মনের অজান্তেই। আমারও চোখ ঝাপসা হয়ে এলো, কোন কথা শব্দ হয়ে বের হতে চাইল না। দু’একটি কথা হলো আকার ইঙ্গিতে। সঙ্গের মেয়েটি বুঝতে পারেনি। তখন ছিল রমজান মাস, একটু পরেই ইফতারের সময় হবে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বিশ্বজয়ী বীরের মতো বাড়ি এসে লম্বা ঘুম দিলাম।

কালের স্রোতে হারিয়ে গেল আমাদের দেখা সাাতের সুযোগ। প্রায় ৬ মাস পরে আমার এক আতœীয়র মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমাকে সে ভুলে যেতে অনুরোধ করেছে। বিশ্বাস করতে পারলাম না। পৃথিবীর নির্মম সত্যের মুখোমুখী আমাকে হতে হবে- একদিন খবর পেলাম দু’দিনের জন্য সে বাড়ি এসেছে। এই তো সুযোগ! এ সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না। গেলাম ওদের বাড়ি। সদ্য গোসল করে ভেজা কাপড়ে উঠানে একধারে চুল শুকানোতে সে ব্যস্ত।

আমি তার মুখোমুখি হলাম, দিনের বেলায় ভুত দেখার মতোই চমকে উঠলো। তার কাছে জানতে চাইলাম,
এসবের মানে কি?
সে কোন উত্তর দিলো না।
তার ছোট ভাই এসে আমার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করলো। নিরবে সে এসব দেখলো... কোন কথা বলল না। ােভে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে অচেনা মনে হলো। এই কি সেই? যে আমাকে পাগলের মতোই ভালবাসতো! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তার চেতনাহীন নিরাসক্ত মুখটা দেখে বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো।
তার হাত ধরে শুধু বললাম... আমাকে তুমি নিজ হাতে হত্যা করো, এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না।
আমাকে সে শুধু বললো, একই ধরণের কষ্ট আমিও পাচ্ছি, তবুও আমি নিরুপায়। তুমি চলে যাও।
এর মাঝে ওর ভাই এসে হ্যাচকা টানে তাকে ঘরে তুলে দরজা আটকিয়ে দিল, পরাজিত সৈনিকের মতো আমি পেছন দিকে পা বাড়ালাম।

তার কান্না জড়িত কন্ঠ আমাকে বিচলিত করলো না। আমি তার কোন কথা শুনতে পেলাম না..... লক্ষ কোটি জনতার মাঝে হারিয়ে গেলাম। আর পিছু ফিরবো না। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। সামনে আমার অনেক দায়িত্ব, একজন মানুষের জন্য জীবনকে নষ্ট করার মানে হয় না। তার ভালবাসাকে পুঁজি করেই আমি সামনের দিকে এগুলাম। হতাশায় থামা নয়।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×