somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিসির আলীর অমিমাংসিত স্বপ্ন রহস্য (স্যাটায়ার)

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
মিসির আলীর ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি অদ্ভ’ত স্বপ্নটা দেখেছেন। স্বপ্নের একই জায়গায় এসে তার ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি বিছানা থেকে উঠলেন। ঘড়িতে ২:২৫ বাজে। আগেও দুইবার এই একই স্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছেন। ঘড়িতে দেখেছেন ২:২৫ বাজে। তার অবচেতন মন বলছে এটা শুধু স্বপ্ন নয়। এখন আর ঘুম আসবেনা। স্বপ্ন দিয়ে প্রকৃতি তাকে কি জানাতে চাইছে। মিসির আলী জানেন প্রকৃতির এই স্বপ্ন পরীক্ষার তিনিও একটা অংশ।

শেষ কবে স্বপ্ন দেখেছিলেন মনে নেই। মনে নেই কথাটা ঠিক নয়। তার সবকিছুই মনে থাকে। মস্তিষ্ক স্মৃতিগুলো জমা রাখে। তার মস্তিষ্ককে প্রকৃতি সঠিক সময়ে স্মৃতিগুলো বের করে দিবার ক্ষমতা দিয়েছেন। উজার করেই দিয়েছেন। শেষ দেখা স্বপ্নের কথা মনে আছে। কিশোর বেলায় তিনি জরিনার প্রেমে পড়েছিলেন। তখন সব স্বপ্নই ছিলো জরিনাময়। একবার স্বপ্নে জরিনার বাবার কানমলা খেয়ে বিকটভাবে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। জরিনার বিষয়টি গোপন থাকেনি। মারের চোটে ভুত পালায়। বাবার মারে ঘাড় থেকে প্রেমের ভ’ত পালিয়ে গিয়েছিলো। সাথে নিয়ে গিয়েছিলো স্বপ্ন দেখার অভ্যাস। বহুদিন পরে তিনরাত একই স্বপ্ন দেখলেন। প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়।

গত পরশু থেকে এই স্বপ্ন দেখা শুরু । পরশু সন্ধ্যায় বাবা জর্দ্দা দিয়ে পান খেয়েছিলেন। জর্দ্দার পরিমান বেশী ছিলো। পান খাওয়ার পরে একটা দোলদোল অনভ’তি। তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়েছিলেন। সে রাতেই প্রথম স্বপ্নটা দেখলেন। ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। জেগে ঘড়িতে দেখলেন ২:২৫ বাজে। ভেবেছিলেন সন্ধ্যায় বাবা জর্দ্দা দিয়ে পান খাওয়ার জন্য এই স্বপ্ন দেখছেন। গত দুইদিন তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়েছেন। চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুমিয়েছেন। কিস্তু স্বপ্নটা দেখেছেন। স্বপ্নের একটা জায়গায় এসে ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি জেগে উঠেছেন। ঘড়ি দেখেছেন। ২:২৫ বাজে।


২.
তিনি স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। খাতায় লিখলেন ’ আমার দেখা স্বপ্নরহস্য: কারন ও প্রতিকার। খাতায় লিখলেন:-

আমার নাম মিসির আলী। একজন যুক্তিবাদী মানুষ। মাওলানা হলে আমার নামের শেষে যুক্তিবাদী শব্দটা মানুষ ভালোবেসে ব্যবহার করতো। যুক্তিবাদী মানুষদের যুক্তি ছাড়া মন উদাস হয়না-এটা ঠিক নয়। গত পরশু কোন যুক্তি ছাড়াই মন উদাস হয়েছিলো। অথবা মন উদাস হওয়ার যুক্তি প্রকৃতি আমাকে জানাতে চায় নাই। অবচেতন মন সকল তথ্য চেতন মনে পাঠায় না। সে কিছু রহস্য নিজের ভিতরে রাখতে ভালোবাসে।

মন উদাস হলে অনেক কিছুই ভালো লাগেনা। হাটতে হাটতে মোড়ের চায়ের দোকানে গেলাম। ছোট্ট টং দোকান। পাশেই পানের দোকান। ওখান থেকে জর্দ্দার গন্ধ ভেসে আসছে। কড়া গন্ধটা ভালো লাগছে। আমি পান খাইনা। কিন্তু জর্দ্দা দিয়ে পান খাওয়ার ইচ্ছা হলো। জর্দ্দা দিয়ে পান খেলাম। জর্দ্দা দেয়া পান কিশোরবেলার জরিনাকে সামনে নিয়ে এলো। এমন’তো হতে পারতো জরিনা পান বানিয়ে দিচ্ছে। আমি সংসারী মানুষের মত পান চিবুচ্ছি। দুজন আলাপ করছি। সরল জীবন। কিন্তু প্রকৃতি মিসির আলীদের সরল জীবন যাপনের জন্য সৃষ্টি করেনা।

জর্দ্দা দিয়ে পান খাওয়ায় ঝিমঝিম অনুভূতি। ঘুমাতে গেলাম। চোখের পাতা ঘুমে ভারী হয়ে এলো। স্বপ্নটা দেখলাম। অস্বভাবিক চেহারার একটা বাচ্চা ছেলে। সে কাতর স্বরে বলছে, "আংকু, মিসির আংকু, আমাদের কষ্টের কথাটা শুনবেন!! খুব আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।" তার দৃষ্টি শীতল, মুখভঙ্গী অসহায়। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই সে বলল, "আংকু আপনারা আমাদের হত্যা করেছেন। নির্বিচারে হত্যা করছেন। আমরা ভালো নেই। আমাদের থাকার জায়গাগুলো কেড়ে নিচ্ছেন। আমরা বাস্তুহারা এতিম। সবাই শ্বাস কষ্টে ভুগছি। চর্মরোগে ভুগছি।আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছি।" সে তার দগদগে ক্ষত বের করে দেখালো।

মিসির আলী অবাক হয়ে শুনছেন, "আংকু, মিসির আংকু, আমাদের একটা পুণ:বাসন কেন্দ্র চাই। সময় খুব কম। আমরা আজ বিরল প্রজাতি। শেষ প্রজন্ম। তা না হলে আমাদের এই ক্ষত ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেব। প্রতিশোধ নিবো। চরম প্রতিশোধ।" আমার গা গুলিয়ে উঠছে। আমি বিস্ময়ে জানতে চাইলাম, কেন? সে ক্ষোভ আর দু:খ মিশ্রিত স্বরে বললো, "ঘরে ঘরে বক্স খাঁট ব্যবহার করছেন। ঘরের কোনাগুলোতে ফ্রিজ আর কাপড়ের হ্যাঙার রাখছেন ।"

আমি জানতে চাইলাম, "তুমি কি পরিবেশবাদী এনজিও'র বিজ্ঞাপন মডেল?" উত্তেজিত স্বরে সে বলল, "আংকু, মডেলিং করবার অবস্থায় আমরা নেই। আমরা ধ্বংসের মুখোমুখি। এই জন্য দায়ী আপনি, আপনারা।" স্বপ্নের মধ্যেই বালকের জন্য একধরনের কষ্ট অনুভব করতে লাগলাম। সে বললো, "আজ ঢাকা শহরে একটাও কোনাভূত খুঁজে পাবেন না। ঘরের কোনাগুলো আপনাদের দখলে। খাটের নীচে যে ভুতরা থাকতো তারা গ্রামমূখী। বক্সখাট ছাড়া যে আপনাদের চলেইনা! তারা গ্রামে বক্সখাটের দু:স্বপ্ন দেখে আৎকে ওঠে। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার গাছ কেটেছেন। বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়েছেন। বাসস্থান হারানোর শোকে হার্ট এট্যাক আর ব্রেইনস্ট্রোকের মহামারীতে মামদো ভূতগুলো মরে মরে শেষ হয়ে গেল। যে কয়জন বেঁচে আছে তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারের নোম্যান্স ল্যান্ডে আতংকিত জীবনযাপন করছে। না পারছে দেশে থাকতে, না ভরসা পাচ্ছে সামরিকজান্তার দেশে যেতে।"

আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম তার ক্ষোভের কথা। সে উত্তজিত হয়ে বলল, " মিসির আংকু, আপনারা সারারাত টিভি দেখেন, বাতি জ্বালান। গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে শোরগোল করেন। আলোর অত্যাচারে আমাদের চামড়ায় পচন ধরেছে। আর নীরব থাকতে পারছিনা। আমাদের দাবীর কথা জানাতে এসেছি। দাবী পূরন না হলে প্রতিশোধ নিবো। চরম প্রতিশোধ।" কথা শেষ করেই কিশোরটি কাছে এগিয়ে এলো। তার হাতে সবুজ রংয়ের পূঁজ।চোখে উত্তেজনা। সে হিসহিস করে বললো, "আংকু, মিসির আংকু, আসেন আপনাকে পূঁজের লোশন ম্যাসাজ করে দেই।" এখানেই ঘুম ছুটে গেল। পরপর তিনরাত একই স্বপ্ন। তিন রাতই ঘুম ভেঙে দেখলাম ২:২৫ বাজে।"

৩.
মিসির আলী স্বপ্ন রহস্য ভেদ করার যুক্তি খুঁজছেন। প্রকৃতি স্বপ্ন নিয়ে খেলছে। মিসির আলীকের এই খেলায় প্রকৃতি জড়িয়ে নিয়েছে। প্রকৃতি কিছু একটা পরীক্ষা করছে। সেটা কি? শেষ রাতের দিকে তার জ্বর এলো। ভীষন জ্বর। জ্বরের ঘোরে দেখছেন জরিনা এসে দাড়িয়েছে। জরিনার বয়স বাড়েনি। লালফিতা দিয়ে বাধা দুটো বেণী। বেনী দুলিয়ে সে বলল, " জানটুশ, এতো ভাবলে চলে!! তোমার জ্বর এসেছে। আমি বাড়িয়ালাকে ডাকছি।" মিসির আলীর মাথায় জানটুশ শব্দটা ঘুড়তে লাগলো। কি মধুর শব্দ!! জানটুশ...জানটুশ...জা..ন..টু..শ..।

সকালবেলা বাড়িওয়ালা ভাড়ার তাগাদা দিতে এলেন। মিসির আলীর অবস্থা দেখে তিনি হতবাক। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। পেট কিছুটা ফুলেছে। জ্বরের ঘোরে মিসির আলী বিরবির করেছেন। বাড়িওয়ালা স্পষ্ট শুনতে পেলেন মিসির আলী বলছে জানটুশ...জানটুশ...জা..ন..টু..শ..। বাড়িওয়ালা ডাক্তার নিয়ে এলেন। তিনি পরীক্ষা করে জানালেন ভাইরাস জ্বর। পেটে গ্যাস জমেছে।

৪.
মিসির আলী স্বপ্ন রহস্যের সমাধান করেছেন। পেটে গ্যাস জমেছিলো। পেটের ভিতরের আবহাওয়া গরম হওয়ার সংবাদ পৌছে গিয়েছিলো মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক তাকে বাজে স্বপ্ন দেখিয়েছি। তিনি ২:২৫-এ ঘুম ভাঙার রহস্যও ভেদ করেছেন। দেয়াল ঘড়িটা তিনমাস আগেই নষ্ট হয়েছিলো। তাই তিনমাস যাবৎ এই ঘড়িতে ২:২৫ বেজে আছে। প্রকৃতি কোন এক পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাকে বন্ধ ঘড়িটাই দেখিয়েছিলো। দেয়াল ঘড়ি অচল থাকার বিষয়টি তার মস্তিষ্ক জানায়নি। মস্তিষ্ক হাত ঘড়িটা দেখবার কথাও মনে করিয়ে দেয় নাই।

তিনি তিনরাত একই স্বপ্ন দেখার রহস্য ভেদ করতে পারেন নাই। জ্বরের ঘোরে জরিনার আগমন এবং 'জানটুশ' ডাকার রহস্যও ভেদ করতে পারেন নাই। জরিনা কখনই জানটুশ বলে তাকে সম্বোধন করতো না। সে ডাকতো মিসিইররা বলে। জরিনার মিসিইররা ডাক শুনবার জন্য এই বয়সে তিনি একধরনের আকুলতা বোধ করছেন। প্রকৃতি কত যত্ন করেই না আকুলতা তৈরী করে।

প্রকৃতি কিছু কিছু রহস্য নিজের কাছে গোপন রাখতে চায়। এই রহস্যটাও কি প্রকৃতি নিজের কাছে গোপন রাখতে চায়? প্রকৃতি এই রহস্য নিজের কাছেই রাখুক। কিছু কিছু বিষয়ে রহস্য থাকা ভালো। মিসির আলীর এই রহস্যভেদ করতে ইচ্ছা করছেনা।

পড়ুন-
হিমু জানে আজ তার ডাক আসবেই
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৫:০২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×