somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শখের শখ

১৩ ই মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা-ইংরেজি দুই বিষয়েই "আমার শখ" শিরোনামে কম বেশি সবাইকে রচনা, প্যারাগ্রাফ পড়তে হয়েছে।

বেশির ভাগ বইয়ে বাগান করা হল প্রিয় শখ।
কল্পনার সেই বাগানে সবাই যত্ন করত, ফুল ফোটাতো, নিড়ানি দেওয়া, পানি দেওয়া আরও কত কাজ। কয়েকজন আবার এক কাঠি সরেস! শাক-সব্জি পর্যন্ত ঐ বাগান থেকে তুলে আনতো। সাংঘাতিক ব্যাপার! :-*

কিছু কিছু বইয়ে অবশ্য বইপড়া, স্ট্যাম্প সংগ্রহ এগুলো শখ হিসেবে থাকতো। (আমি মাত্র একবার পেয়েছি)।

পরীক্ষার খাতায় বাগান করলেও আমার শখ ছিল অন্য কিছু। যেটা ৫-৬ মাস পরপর পাল্টে যেত!

স্টিকার জমানো:

স্কুলের পাশেই ছিল একটা দোকান, সেখানে বই, খাতা আর হাবিজাবি জিনিসপত্র বিক্রি করত। স্কুল ছুটির পর ঐ দোকানের সামনে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া কষ্ট ছিল।
(প্রতিটা স্কুলের পাশে এ রকম একটা দোকান দিতে পারলে বিল গেটস হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র)

বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঐ দোকান থেকে কিনতো, ফলে মোটামুটি সবার কাছে একই ধরনের স্টিকার থাকতো। যারা অন্য দোকান থেকে কিনতে পারতো তাদের কাছে থাকতো এক্সক্লুসিভ স্টিকার! তাদের কদর ছিল অন্যরকম। ;)
একবার এক মামী আমাকে কিছু আলাদীনের স্টিকার দেন। পুরাই এক্সক্লুসিভ! নিজেকে তখন প্রেসিডেন্ট লেভেলের কিছু একটা মনে হত! :D

ভিউকার্ড:

উরে বাপরে! সে এক এলাহি কাজ কারবার! কত রকম, আর কত ধরনের ভিউকার্ড ছিল বলার মত না।
আমার ধারনা এ ব্যাপারটা এখনো অনেকের মধ্যে আছে। কিন্তু এখন ভিউকার্ড কালেক্ট না করে ওয়ালপেপার ডাউনলোড করে!

পোস্টার:

ব্যাগে করে নিয়ে তো আর ক্লাসে দেখাতে পারতাম না, বন্ধুদের বাসায় নিয়ে এসে দেখাতাম আর কি আমার কি কি পোস্টার আছে! B-)
আমার রুমে এখন পোস্টার আছে একটা। গিটারের ছবির মধ্যে সব বিখ্যাত গিটারিস্ট এর নাম।

কয়েন জমানো:


অনেক জনপ্রিয় একটা শখ।
আমার খুব বেশি দিন এই শখ ছিলোনা। কারন কয়েন জোগাড় করা আমার জন্য একটু কষ্টকর ছিল।

স্ট্যাম্প জমানো:



আরেক দুনিয়া কাঁপানো শখ!

মেইল আর মোবাইল এর কারনে এই শখের অবস্থা করুন বলা যায়। আমারও খুব বেশি দিন এই শখ থাকেনি। মূলত বাইরে তেমন কেউ থাকতো না, ফলে কালেকশন করাটা কষ্ট ছিল। /:)

বই পড়া:

(পরে অন্য একটা পোস্ট দিব)


গান শোনা:

(আগে একটা পোস্ট দিয়েছি)

আমার গান শোনার ইতিহাস!


ছবি আঁকা:
কিছুই আঁকতে পারিনা তেমন, কিন্তু ছবি আঁকতে অনেক ভালো লাগে। ছবি আঁকার ব্যপারে শিশুসুলভ চিন্তা থেকে এখনো বের হতে পারিনি, ইচ্ছাও নেই!

ছবি আঁকা

ইলেকট্রনিক্স:


খেলনা গাড়ির মোটরে ব্যাটারি লাগিয়ে ইলেকট্রনিক্স এর প্রতি আগ্রহ শুরু! আমার ধারনা অনেকেরই ইলেকট্রনিক্স এর প্রতি আগ্রহ এভাবে শুরু হয়!
সাফল্য: দুইটা কলিংবেল, একটা রানিং লাইট।
আর অর্ধ-সমাপ্ত অনেক গুলো সার্কিট!

ক্যামেস্ট্রি ল্যাব:


ক্লাস নাইনে উঠার পর মনে হল আমার নিজের একটা ল্যাব থাকলে মন্দ হতো না। কিন্তু এর সাথে তো অনেক কিছু জড়িত!
অর্থনৈতিক সরবরাহ , নিরাপত্তা, বাসার অনুমোদন!

বাসার অনুমোদন পাওয়া গেল একটু গাইগু্ই করার পর। জমানো টাকা পয়সা এক করলাম। এক বন্ধু পাওয়া গেল, আমার মতই আগ্রহী।

সব প্রস্তুতি শেষ। হাটখোলা মার্কেটে গেলাম।
কিন্তু আমাদের কাছে এসিড, ক্যামিকেল বিক্রি করবে কে! /:)

অনেক ঘোরাঘুরির পর এক দোকানদার আমাদের আগ্রহের মূল্যায়ন করলেন।

তারপর, আস্তে আস্তে কিনে আনলাম সালফিউরিক, হাইড্রোক্লোরিক, নাইট্রিক এসিড। সোডিয়াম এক টুকরো, ম্যাগনেসিয়াম এর একটা রিবন, এক টুকরা লেড, সামান্য পরিমান সালফার (লাইসেন্স ছাড়া কেনা যায়না মনে হয়), এক পাউন্ড কপার, জিন্ক সহ আরো বেশ কিছু লবণ, ক্যামিকেল। বীকার, টেস্ট টিউব, ফ্ল্যাস্ক কিনলাম বেশ কিছু!
ছোটখাট একটা ল্যাব হয়ে গেল! :)

অনেক সাবধান ছিলাম, যার কারনে কোন বিস্ফোরন/বিপদ হয়নি। নাইট্রিক এসিড কে অনেক ভয় পেতাম! সাবধানে ব্যবহার করতাম অনেক।

মাইক্রোস্কোপ:



স্কুলে মাইক্রোস্কোপ দেখে ভাবলাম, আমারও একটা থাকলে মন্দ হয়না। ৫০০ টাকায় কিনে আনলাম "সরল অনুবীক্ষণ যন্ত্র"। পিঁপড়া, মশা, গাছের পাতা ছাড়া তেমন কিছু একটা দেখে লাভ নেই এটা দিয়ে। :((


স্কাউট, বি.এন.সি.সি:


স্কুলে থাকতে করতাম স্কাউটিং। ২ বছর ।
কলেজে বি.এন.সি.সি। ৬-৭ মাস !

দুটো সংগঠন ছিল শৃংঙ্খলার। কিন্তু কোনটাই নিয়মমাফিক চলতো না। মনের দু:খে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিলোনা। X((X((

গিটার, বাঁশি:

শিখতে শুরু করার কিছুদিন পর এইচ.এস.সি পরীক্ষা শুরু হয়। সেই সাথে গিটার শেখা বন্ধ হলো।
টিউটোরিয়াল দেখে মাঝে মাঝে বাঁশি বাজানোর চেষ্টা করি। (বাদ্য যন্ত্রের মধ্যে বাঁশি বাজানো মনে হ্য় সবচেয়ে কঠিন।)


...............................

আমার বাসায় কেউ আমাকে ফার্স্ট, সেকেন্ড হওয়ার জন্য গলা চেপে ধরেনি, যেটা সমসাময়িক অনেকের ক্ষেত্রে ঘটতে দেখেছি। এই জন্যই হয়তো এত শখ নিয়ে মেতে থাকতে পেরেছি।
অন্যায় আবদার অথবা হিংসা-ঈর্ষার কারনে কোন আবদার করিনি।

"অমুকের এটা আছে আমারও থাকতে হবে" এই মনোভাব কখনও মাথায় আসেনি। আর এই না আসার ব্যাপারটা আমার মা খেয়াল করেছেন। ফলে পুরষ্কার স্বরূপ আমার শখের চাহিদা মিটিয়েছেন নানাভাবে। কখনো টাকা-পয়সা দিয়ে, কখনো অনুমোদন দিয়ে, আর সবসময় অনুপ্রেরনা দিয়ে যেটা একজন সন্তানের সবচেয়ে বেশি দরকার।


আমার এই ব্লগ এমন অনেকে পড়বেন যারা অনেক ক্ষমতাবান, নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য।
আপনার ছোট ভাই-বোনের, সন্তানের যে কর্মকান্ড আপনার কাছে নিছক সময়ের অপচয় বলে মনে হচ্ছে, হয়তো তার কাছে সেটা অনেক বড় কিছু। নিজের আগ্রহের মূল্যায়নের জন্য কি আরেকটু বেশি সময় কি সে পেতে পারে না আপনার কাছে?









সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:১৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×