somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র কোরআনের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক অনুগ্রহ লাভ করা যায়

১৩ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র কোরআন হচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-র চিরন্তন এক মোজেযা এবং মানব কল্যাণ ও সমৃদ্ধির অকৃত্রিম এক পথনির্দেশক। এ কারণেই মুসলমানদের কাছে এই ঐশী গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলমানরা পবিত্র কোরআন অধ্যয়নের পাশাপাশি এর শিক্ষাকে নিজের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ) পবিত্র কোরআনকে সবচেয়ে সত্য ভাষণ, স্পষ্টতম উপদেশাবলী এবং সর্বোত্তম কাহিনী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বর্তমান সংকটাপূর্ণ সময়ে কোরআনের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ, অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি। তবে কোরআনের শিক্ষার ঐশী আলোতে অবগাহনের জন্য সর্ব প্রথমেই সে সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে, কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে।

বর্তমানে পবিত্র কোরআন ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারীদের একজন হলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি সম্প্রতি মহিলা কোরআন গবেষকদের এক সমাবেশে এই ঐশী গ্রন্থের শিক্ষা, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পাশাপাশি তিনি কোরআন গবেষণায় নারীদের সম্পৃক্ততা ও সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, কোরআন সংক্রান্ত যে কোন তৎপরতার আগে পবিত্র এই গ্রন্থকে সঠিকভাবে জানতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, পবিত্র কোরআনের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করতে পারাটা একটা সাফল্য এবং যারা তা করতে পারে তারা অনেক আধ্যাত্মিক অনুগ্রহ লাভ করে,যা থেকে অন্যরা বঞ্চিত।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, গবেষণার জন্য পবিত্র কোরআনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বা সখ্যতা গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ পুরো কোরআনের সাথে গবেষকের পরিচিতি থাকতে হবে। বারবার কোরআন অধ্যয়ন এবং এর অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে চিন্তা-বিশ্লেষণ করলে তা, কোন একটি বিষয়ে কোরআনের প্রকৃত সমাধান ও ফলাফল খোজে পেতে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও সখ্যতা প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পর্যায় তুলে ধরতে যেয়ে তিনি কোরআন আয়ত্ত্বকরণ, নির্ভুল তেলাওয়াত, অর্থ বুঝা ও তা স্মৃতিতে ধারণ এবং কোরআন নিয়ে চিন্তা-বিশ্লেষণ করার কথা বলেছেন। কোরআন গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো তা নিয়ে চিন্তা-বিশ্লেষণ করা। তবে কোরআন নিয়ে চিন্তা-বিশ্লেষণ শুধুমাত্র গবেষকদের জন্যে নির্ধারিত নয় বরং কোরআনের আয়াতসমুহ ও আল্লাহর সকল সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করার উপর খোদ কোরানেই আহ্বান জানানো হয়েছে। সূরা সোয়াদের ২৯ নম্বর আয়াতে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে, "এটি একটি বরকতময় গ্রন্থ, যা আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ নিয়ে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানরা তা থেকে শিক্ষা নেয়।"

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পবিত্র কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, কোরআন বুঝার পর আপনি তা নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন এবং কোরআনের শব্দাবলী নিয়ে ভাবতে পারবেন। এভাবেই আপনি অর্ন্তদৃষ্টি অর্জন করতে পারবেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পবিত্র কোরআন থেকে বেশি বেশি জ্ঞান আহরনের জন্য অপর যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে তা হলো, আত্ম পরিশুদ্ধি। তিনি মহিলা কোরআন গবেষকদের সমাবেশে দেয়া ভাষণে আরও বলেছেন, কোরআন নিয়ে কাজ করার আগে নিজের অন্তরকে এই ঐশী গ্রন্থের নির্ভেজাল বাস্তবতার মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত করতে হবে অর্থাৎ আত্মা পবিত্র না হলে এবং বাস্তব সত্যকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত না হলে কোরআনকে সঠিকভাবে কাজে লাগোতে পারবে না। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, স্বচ্ছ, চকচকে ও মরিচাবিহীন আয়নার মতো পবিত্র আত্মা নিয়ে কোরআনের সম্মুখীন হতে হবে,যাতে আমাদের আত্মায় কোরআনের প্রতিফলন ঘটে। কোরআনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বাধা হিসেবে কাজ করে সেগুলোও সর্বোচ্চ নেতা উল্লেখ করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, স্বার্থপরতা এবং সত্য গোপণ করার মতো অসৎ বৈশিষ্ট এ ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আসলে কোরআন নিয়ে গবেষণায় আগ্রহীদের অবশ্যই এ ব্যাপারে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আরবী ভাষার সাথে পরিচিত হতে হবে, ফিকাহ শাস্ত্রের মৌলিক বিষয়াদি জানতে হবে এবং কোরআনের শানে নুযুল সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদগণ কোরআন সম্পর্কে অনেক বই লিখেছেন এবং কোরআনের মুল্যবান বহু তাফসির গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এসব গ্রন্থ সকল মানুষ বিশেষকরে কোরআন গবেষকদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরি ও গুরুত্বপূর্ণ। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সব সময়ই কোরআনের শিক্ষা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। কারণ এর মাধ্যমে মুসলমানদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব এবং ইহ ও পরকালীন কল্যাণও নিশ্চিত হতে পারে। তিনি তার সাম্প্রতিক ভাষণে বলেছেন, কোরআনের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। কোরআনের বক্তব্য শুধু সাধারণ জ্ঞান নয় তা মানব জীবনের জন্য শিক্ষাও বটে। অনেককেই দেখা যায় কোরআন সম্পর্কে ভালো জ্ঞানের অধিকারী কিন্তু তার নিজের জীবনে কোরআনের কোন প্রভাব নেই। নিজের জীবনে কোরআনের শিক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে আমাদেরকে চেষ্টা চালাতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে তার একজন সহধর্মিনী বলেছেন, রাসূল ছিলেন কোরআনের বাস্তব প্রতিকৃতি।

পবিত্র কোরআন একজন মুসলমানের ব্যক্তি জীবনে পরিবর্তন সাধন এবং কল্যাণ বয়ে আনার পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সমস্যাবলীর সমাধান করতে সক্ষম। তবে এ জন্য কোরআনকে সঠিকভাবে জেনে তা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ সম্পর্কে বলেছেন, সকল মুসলমান ও মুসলিম উম্মাহর সামাজিক কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে কোরআন। মুসলিম উম্মাহ যদি কোরআনের শিক্ষাকে সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও মুসলমানদের অবস্থানে আমুল পরিবর্তন আসবে। তিনি পবিত্র কোরআনের প্রতি বিশ্বাস ও কোরআনের শিক্ষা নিজ জীবনে বাস্তবায়নকে মুসলিম বিশ্বের বর্তমান সমস্যাবলীর সমাধানের উপায় বলে মনে করেন। তার মতে, কোরআনের শিক্ষায় আলোকিত হলে ঐ সমাজের মানুষের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং শত্রুরা কখনোই ঐ সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, পবিত্র কোরআন সাধারণ কোন গ্রন্থ নয় যে, তা কেউ একবার পড়ার পর তা বন্ধ করে রেখে দেবে। সর্বদাই কোরআনের প্রয়োজন রয়েছে। কোরআনের প্রভাব পর্যায়ক্রমিক ও সর্ব সময়ব্যাপী। এর কোন শেষ নেই। কোরআনের দিক নির্দেশনাও অন্তহীন। আপনি কোরআন থেকে যতই শিখবেন ততই দেখবেন আরও নতুন দ্বার রয়েছে,যেগুলোও উন্মোচন করতে হবে। দেখতে পাবেন অজানা আরও বিষয় রয়েছে যেগুলোও জানতে হবে। কোরআন আসলে এমনি এক গ্রন্থ।"
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×