somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

১২ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭

কিস্তি-৮
ফোন কেটে গেল। কথা বলার কোন সুযোগ পেল না অহনা। বিছানায় ওঠে বসলো সে। ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল। কে এই লোক? প্রতিদিন ফোন করে। তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে লোকটা। পরিচিতদের মধ্যে কেউ একজন অবশ্যই। হিসাব মেলায় অহনা। চেনার চেষ্টা করে কে হতে পারে।
বাইরে দরজায় নক হচ্ছে। নিপুণ ডাকছে অহনাকে।
আপু আসবো?
হ্যাঁ আয় নিপুণ।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো নিপুণ। সামনে এসে কাচামাচু হয়ে দাঁড়ালো। অহনা বললো-
হ্যাঁ বল কি ব্যাপার?
পঞ্চাশটা টাকা চেয়েছিলাম।
বস এইখানে।
খাটের কোণায় বসলো নিপুণ। নিচে নামলো অহনা। বললো-
তুই একটু বস। আমি হাত-মুখটা ধুয়ে আসি।
চোখ খুলে রাখতে পারছে না নিপুণ। ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে। বসে থাকতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। পা ঝুলিয়ে রেখেই খাটে শুয়ে পড়লো সে। দু’ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো।
নিপুণ ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে অহনা নাস্তা আনতে গেল। ফিরে এসে দেখে নিপুণ নেই। এঘর ওঘর খুঁজে কোথাও তাকে পাওয়া গেল না। বাবা অফিসে চলে গেছেন। সামি স্কুলে। মা রান্নার জোগাড়ে ব্যস্ত। তিনি কিছুই বলতে পারলেন না। নিপুণের ফোন নম্বর জানেন কিনা জিজ্ঞেস করলে মা অবাক হয়ে বললেন-
নিপুণের মোবাইল আছে নাকি? সে ফোন পাবে কোথায়?
আস্তে করে অহনা বললো- আছে মা। ওর এক বন্ধু গিফট করছে।
মায়ের সঙ্গে কথা শেষ করে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় অহনা। এ সময় সেল ফোনটা বেজে ওঠে। নীদ ফোন করেছে।
ফোন ধরে অহনা বললো- কিরে ক’দিন ধরে কোন খোঁজ-খবর নেই। ফোন বন্ধ। ব্যাপার কি? এক্কেবারে লাপাত্তা।
আর বলিস না, কপালে সিল পড়ে গেছে।
সিল পড়ে গেছে মানে কি? তুই-ও কি শেষ পর্যন্ত লাড্ডু গিলে ফেলেছিস?
লাড্ডু মানে? কিসের লাড্ডু গিলে ফেলেছি?
আরে ওই যে দিল্লিকা লাড্ডু।
অহনা...। ও মাই সুইট অহনা। কেন যে তুই ছেলে হলি না!
নীদ ভার্সিটির দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুই কি আজ কাসে আসবি?
হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আসছি।
তাইলে রেখে দে। ক্যাম্পাসে আয় তারপর সব শুনবো।
লাইন কেটে দিল অহনা।

ক্যাম্পাসে যখন পৌঁছলো অহনা তখন ১০টা বাজার সামান্য বাকি। হাতে সময় আছে আধ ঘণ্টার ওপরে। কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়া যাবে। এদিক-সেদিক তাকিয়ে সহপাঠীদের খোঁজ করতে লাগলো অহনা। দেখলো- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছতলায় কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে। সে ওদিকে রওনা হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর ছেলেটাকে দেখলো। নীদকেও দেখা যাচ্ছে ওদের সঙ্গে। ওখানে যাবে কিনা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো। এরপর এগিয়ে গেল।
কথা বলছিল- হৃদ, কম্পন, নীদ, সায়না, সুজন ও কলি। কি নিয়ে ওরা কথা বলছে তা জানতে না পারলেও হৃদের শেষ কথাগুলো শুনলো অহনা। হৃদ বলছে-
বাজে কথা রাখ, আমি হলাম একটা আহাম্মক। আমাকে দিয়ে ওসব হবে না।
কে বলেছে তুই আহাম্মক? তোর মতো চালাক দ্বিতীয়টি নেই ভার্সিটিতে।
অহনার দিকে তাকিয়ে হৃদ বলে- অনেকেই আমাকে আহাম্মক বলে।
বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা খেলো অহনা। তবে কি হৃদ-ই তার কাছে ফোন করে? তাই-বা কি করে হয়! কোনদিন হৃদের হাতে ফোন দেখা যায় নি। অহনাকে আসতে দেখে এগিয়ে গেল নীদ। হাত ধরে টেনে কাছে নিলো। তারপর গলা জড়িয়ে ধরে চুমো। সকলে অবাক। একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো। অহনাকে সবার কাছ থেকে একটু দূরে নিয়ে যায় নীদ।
শাড়ি পড়ে আজ ক্যাম্পাসে এসেছে নীদ। নাকফুলটা মানিয়েছে বেশ। যদিও ওর নাকটা একটু চ্যাপ্টা। নীদের হরিণী চোখ নয়। দেখতে অনেকটা টর্চলাইটের মতো গোল। আকারে বেশ বড়। বিড়ালের চোখের সঙ্গে ওর চোখের বেশ মিল। চেহারাটা একটু খুলেছে বলে মনে হচ্ছে।
বরাবরই বেশ হাসিখুশি ও চঞ্চল নীদ। তবে আজ অনেক বেশি। মুখে কথার খই ফুটছে। সেই যে বত্রিশ পাটি খুলেছে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। অহনাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। কখনও কখনও তাকে প্রশ্ন করছে নীদ। কিন্তু অহনাকে উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিয়ে নীদই সেই কথার উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। যে কথাগুলো বলছে নীদ তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এমন-
কেমন আছিস। আমি খুব ভাল আছি। জানিস, ঘটনা হ্যাজ বিন ঘটেটেড। বুঝলি না! ওহো অহনা তুই যেন কেমন হয়ে যাচ্ছিস। আরে শোন- এক্কেবারে পড়বি ফের মালীর ঘারে। আরে বুঝতে পারছিস না। শাড়ি, চুরি, কপালের টিপ, নাকফুলটা দেখ। দারুণ না? ডায়মন্ডের। ওখান থেকে এনেছে। ও-অ-তো রোমে থাকে। এবার বুঝেছিস তো? আরে তুই দেখি আস্ত একটা হাঁদারাম। জানিস, ও না ভেরি ভেরি হ্যান্ডসাম। আচ্ছা, ব্যাটাগো দেখি লাজশরম কিচ্ছু নাই? ও মাগো আমি লজ্জাই মইরা যাই! ওর জন্যই ক্লাসে আসতে পারছি না। বলে- আমি যতদিন আছি ততদিন ক্লাসে যেতে হবে না। ইস্‌ এক্কেবারে কাঁঠালের আঠা। সারাক্ষণ জোঁকের মতো লেপ্টে থাকতে চায়। আমিও বা কম কিসে? ওহ্‌ হো অহনা কি বলবো তোকে! দারুণ! দারুণ! ওয়ান্ডারফুল! সুপার-ডুপার।
নীদের কথার ফাঁকে কিছু বলতে চাইছে অহনা। কিন্তু সেই সুযোগ পাচ্ছে না। নীদ দিচ্ছে না। সে একবার অহনাকে জড়িয়ে ধরছে; একবার খোঁচা দিচ্ছে। কখনও বা গালের সঙ্গে গাল মিলাচ্ছে। অহনা কিংকর্তব্যবিমূঢ়! তার মনে হৃদের কথাটি ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাবিয়ে তুলছে। তাই বলে নীদের কথা শোনায় কোন অবহেলা নেই। কিংবা সেই সুযোগ পাচ্ছে না। কথার এ পর্যায়ে এসে অহনা শুধু বললো- নীদ প্লিজ, তুই একটু দম নে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবি তো।
এরই মাঝে নীদ তাকে থামিয়ে বলছে-
আরে শোন্‌ না। আমি ঠিক তোকে বুঝাতে পারছি না। কি অসম্ভব অনুভূতি, পুলক। ও মাই গড, কি শিহরণ! কিভাবে যে তোকে বুঝিয়ে বলি। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলছি। বুঝিয়ে বলতে পারছি না। বাব্বা, তুই যা চাপা। কোনদিন তো বলিস নাই। আমি বাবা ওসব রাখঢাকের মধ্যে নাই। সত্য গুড় আন্ধারেও মিঠা। লুকানোর কি আছে! তোকে আগে জানাতে পারি নাই বইলা আবার রাগ করিস না। ঘটনাটা হঠাৎ করেই ঘটে গেল। দেখতে এসেই বিয়ে। অবশ্য উপায়ও ছিল না। হাতে সময় খুব কম। মাত্র তিন মাসের ছুটিতে এসেছে। কনে দেখতে দেখতে দেড় মাস পগার পার। তাই ওরা সময় দিতে চাইলো না। ছেলে দেখে আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ব্যস, সেদিনই বিয়ে। এবার তুই-ই বল আমি কি ভুল করেছি? সাহসটা অবশ্য তোকে দেখেই করেছি। তুইও তো প্রবাসী ছেলে বিয়ে করেছিস।
এই অহনা, নীদ, তোরা ওখানে কি করছিস? ক্লাসে যাবি না? সময় হয়ে গেছে। চল যাই।
সায়না ডাকছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন অহনা। প্রথম দিকে ভালই লাগছিল নীদের কথা। শেষের দিকে কিছুটা বিরক্তি চলে আসে। মুক্তির উপায় খুঁজছিল। সুযোগটা করে দিল সায়না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×