somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

***বিষয়টি কি এতটাই ঠুনকো?***

১২ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি শিশু ধীরে ধীরে বর্ণামালা শিখতে শুরু করে। প্রথমে বলা শিখে এরপর লেখা। লিখতে যেয়ে কত পরিশ্রমই না করতে হয়, পেনসিলটা ভালোভাবে ধরা শিখতে হয়, বর্ণমালাগুলো ঠিকমতো করে লেখা শিখতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে সে শব্দ তৈরী করতে শিখে তারপর ধীরে ধীরে এক একটা বাক্য তৈরী করতে শিখে। ধারাবাহিক একটা প্রক্রিয়া, প্রথমেই একটা শিশু যদি বর্ণমালা না শিখে, তাহলে সে বাক্য তৈরী করতে পারবে না।

বাক্য লিখতে যেয়ে যখন ভুল হয় তখন তাৎক্ষণিকভাবে খুব কম মানুষই তার ভুলগুলো ধরতে পারে। পরবর্তীতে যখন সে পুনরায় লেখাটা পড়ে তখন ভুলগুলো তার চোখে পরে আর পরবর্তীতে যেন এমন ভুল না হয় সে ব্যাপারে সে সতর্ক হয়। তার এই ভুল ধরাটা নির্ভর করে তার জানার উপর, সে যদি না জানে তাহলে ভুলটাকেই সে শুদ্ধ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে।

একজন মুসলিমকে অবশ্যই ইসলাম কি, ঈমান কি এই বিষয়ে নির্ভূল জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাটাকে দেখে “সময় হলে একটু পড়ব” হিসেবে। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম সে ওহী নাযিল করেছেন সেখানে কোন নামাজের আদেশ দেওয়া হয়নি, রোজা রাখার কথা বলা হয়নি, যাকাতের কথা বলা হয়নি, হজ্জ্বের কথা বলা হয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
“পড়! তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক্বঃ ০১)

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার প্রথম আদেশটিই ছিল, পড়!

অনেক মুসলিমই নামাজ পড়ছে, রোজা রাখছে কিন্তু তারা কি পড়ছে? হয়তো অনেকেই পিএইচ ডি ডিগ্রীটা পর্যন্ত নিয়ে ফেলেছেন কিন্তু তবুও এখন পর্যন্ত তিনি পড়েন নি। কারণ, ইসলাম সম্পর্কে, ঈমান সম্পর্কে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন নি। ইসলাম, ঈমান সম্পর্কে জ্ঞান এমন কোন বিষয় নয় যা নিজে নিজে একটা ধারণা-অনুমান করে নিলাম আর হয়ে গেল বা কোন বন্ধু-বান্ধবের কাছে থেকে, অমুক এইটা বললো, তমুক সেইটা বললো আর তাই যথেষ্ট। ইসলাম, ঈমান সম্পর্কে জ্ঞান শিখতে হবে অবশ্যই কুরআন এবং সহীহ সুন্নাহ থেকে, বুঝতে হবে সাহাবীদের মতো করে, তারপর সেই অনুযায়ী জীবনকে সাজাতে হবে। কিন্তু গোড়াতেই গলদ, আমরা পড়ছি না।

বিষয়টি এতটাই ঠুনকো যে আমরা তো গুরুত্ব দেই-ই না আর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার কোন তাগিত অনুভব করি না। আমরা ধারণা করি সে একা একাই শিখবে বা এত কি দরকার, নামাজ পড়লেই তো হল! একটি শিশুকে অক্ষর-জ্ঞান, ছবি আকা, গান শেখানো, নাচ শেখানোতে বর্তমান বাবা-মা’রা ঠিক যতটা যত্নবান ঠিক ততটাই অযত্নবান ইসলাম, ঈমান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার বিষয়টি সম্পর্কে। কেউ কেউ বাসায় হুজুর রেখে প্রাথমিক আরবী অক্ষর জ্ঞান এবং কুরআন পড়াটা শেখান আর কুরআন একবার খতম দিয়ে মনে করেন আমি আমার কর্তব্য পালন করে ফেলেছি।

আর এভাবেই যখন এই শিশুগুলো যখন বড় হবে তখন তাদের স্বাভাবিক ভাবেই ইসলাম, ঈমান সম্পর্কে কোন জ্ঞান থাকে না আবেগ থাকে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তাও থাকে না। জীবনটাকে সাজানোর জন্যে যা কিছু করা দরকার আর তা করতে যেয়ে ঈমান আকীদা বিরোধী কিছু করলেও কারো মনে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা জাগে না। কারণ, ছোটবেলায় সে একবার বা ততোধিকবার কোনআন খতম দিয়ে সে ইসলামের দায়িত্ব পূর্ণ করে ফেলেছে। সপ্তাহে মাত্র একবার মসজিদে যাওয়া বা বছরে মাত্র দুইবার নামাজ পড়া মুসলমানের সংখ্যাই অধিক।

আমি যদি বাক্যের মধ্যে নতুন কোন বর্ণ লিখে যদি বলি এইটা ‘ব = Õ" তাহলে আপনারা বুঝবেন আমি ভুল করছি বা নতুন কিছু আবিস্কার করতে চেষ্টা করছি। আপনাদের এই বুঝতে পারাটা সম্ভব হয়েছে কারণ, ছোটবেলা থেকে বর্ণমালা সম্পর্কে আপনাদের স্পষ্ট ধারণা থাকার কারণে। এখন ইসলাম, ঈমান সম্পর্কে যদি এমন পরিস্কার ধারণা না থাকে আর কেউ কিছু একটা বলে ইসলামের নামে চালিয়ে দিল, নামাজ পড়ার একটা নিয়ম শিখিয়ে দিল আর তাই সারা জীবন পালন করা হয় তখন বৃদ্ধ বয়সে ইসলামকে জানতে যেয়ে বিপত্তি বাধে। মুরুব্বীদের কাছ থেকে দেখেছি, আমাদের বাপ-দাদারা এরুপ করতেন, এইটা আমাদের ঐতিহ্য প্রভৃতি। তখন প্রকৃত ইসলাম তাদের সামনে উপস্থিত হলেও তারা গ্রহণ করেন না বা গ্রহণ করতে খুবই কষ্ট হয় কারণ সারা জীবন তারা যা মেনে এসেছেন বৃদ্ধ বয়সে এসে তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। শিশুদের সামনে এই বৃদ্ধরাই “ইসলামের” মডেল! অর্থাৎ তারাও বুড়ো বয়সে “ইসলাম” করবে! আরে এখনি এত কি, বুড়ো বয়সে করবো, মসজিদে যেয়ে সারাদিন পড়ে থাকবো, একটা নামাজও বাদ দিবো না। অর্থাৎ ইসলাম কে তারা একটা আনুষ্ঠানিক বিষয় হিসেবে দেখে আর তাই বুড়ো বয়সে ইসলাম করবো এই ধারণাটা তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে।

বর্ণামালার মতো করে যত্ন করে যদি ইসলাম, ঈমান শিখানো হতো তাহলে আজ এত মুনাফেকী, কু-প্রবনতা, আল্লাহর আদেশ অমান্য করা, সুদ-ঘুষে ডুবে যাওয়া, প্রতরণায় চাতুরতা সম্পন্ন এত মুসলমান থাকতো না! আমার এই লেখাটির উদ্দেশ্য, মুসলিম ভাই-বোনেরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইসলাম-ঈমান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করেন এবং সে অনুযায়ী জীবনটাকে সাজিয়ে তোলেন। তা না হলে দুনিয়ায় বাহবা পেলেও, দুনিয়ায় কোটি সম্পত্তির মালিক হলেও চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্থদের দলে শামিল হতে হবে।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের মুসলামন ভাই-বোনদের হিফাজত করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের তোমার পূর্ণ আনুগত্যশীল-কৃতজ্ঞ বান্দাহ হওয়ার তৌফিক দান কর। আমীন।
আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত রাসূল ﷺ , তার পরিবার, সাহাবী ও কিয়ামত পর্যন্ত তাদের যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর অর্পিত হোক। আমীন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×