somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাফিন, আজ কেন জানি তোর কথা খুব মনে পড়ছে।

১১ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাফিন। তখন বয়স ছিল সাড়ে চার বছর। খুব হাসি খুশি ভামূর্তি সম্পন্ন একটা শিশু। সম্পর্কে আমার খালাত ভাই।
যখন কথা বলতে শেখে তখন থেকেই তার কথা বার্তায় কি যেন একটা খুঁজে পেতাম। খুব মধুর একটা কিছু হবে। আর আমার সাথে তার খুনসুটির কোন অন্ত ছিলনা। যদিও ওদের সাথে খুব কম দেখা হত। আমাকে সব সময় "তুই"
সম্বধন করে কথা বলত। আমার খুব মজা লাগত। ইচ্ছে করেই ওকে খেপিয়ে তুলতাম ওর মুখের মিষ্টি গালি শোনার জন্য। ওর যে কথাটা আমাকে এখনো খুব নাড়া দেয় সেটা হল " তোর নাক ভাইঙি দিবুন দেইকতুনি" (আন্চলিক ভাষায়)। এর অর্থ হল "তোর নাক ভেঙে দেব দেখিস"। এই কথাটা ওর মুখে এত পরিমান ভাল লাগত তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা।

আর যে বিষয়টা আমি এখনো কষ্ট পাই, সেটা বলি।
ওদের বাড়ি চুয়াডাংগা শহরে। চুয়াডাংগার ব্লগাররা চিনতেও পারেন। ও "সজল জোয়ারদার" এর ছেলে।
আমি তখন খুলনায় পড়াশুনা করি । বাড়ি থেকে ট্রেনে যাওয়া আসা করতাম। চুয়াডাংগা ষ্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা লাগত। একবার বাড়ি থেকে খুলনা যাচ্ছি। খুব জরুরি একটা কাজে খালার সাথে দেখা করতে হবে। শাফিনের মা আমার খালা। ট্রেনের সময় বিকাল পাঁচটা। আমি ঠিক সাড়ে চারটায় খালার বাড়ি গিয়ে পৌছাই। ট্রেন ধরার টেনশনে শাফিনের জন্য চকলেট নেওয়ার কথা একদম ভূলে গেছি। আমি খালার সাথে কথা বলছি, এর ভিতর ও কোথাথেকে ছুটে এসে আমার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিল। আর বলল (ওর ভাষায়) আমার জন্য চকলেট এনেছিস? বললাম ভাইয়া আমি তো একদম ভূলে গেছি। তাড়াতাড়ি চল, সামনের দোকান থেকে চকলেট কিনে দিচ্ছি। খালা জোর করলেন। আজ না, অন্যদিন চকলেট দিও। আর ওকে উদ্দেশ্য করে বললেন " ভাইয়া যেদিন চাকরি পাবে,সেদিন তোমার জন্য অনেকগুলা চকলেট নিয়ে আসবে"।
আমিও কোনরকম বিদায় নিয়ে চলে আসি।
কিন্তু আমি জানতাম না যে, এটাই শাফিনের সাথে আমার শেষ দেখা।

১৫ ই আগষ্ট। ২০০৬ সাল। শাফিন ওদের বাড়ির সামনের ছোট্ট আঙিনায় খেলা করছে। সময়টা ভরা দুপুর। ওদের বাড়িতে নতুন দরজা লাগানো হবে। তাই চৌকাঠের একটা বিশাল এবং ভারি একটা দরজা কিনে এনে প্রাচিরের সাথে হেলান দিয়ে রাখা হয়েছে। আর শাফিন ঐ দরজার সামনে খেলছিল। কিন্তু হঠাৎ কিভাবে যেন ঐ ঘাতক দরজাটা চৌকাঠ সহ শাফিনের গায়ের উপর পড়ে যায়। একটা চিৎকার দেওয়ার সুযোগও পায়নি বাচ্চাটা।
শাফিনের ছোট্ট জীবনটা ওখানেই শেষ।

আমি সামান্য দুই টাকা দামের চকলেট শাফিন কে দিতে পারলাম না? ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা চলে আসে।

আমার চোখে সহজে পানি আসে না। কিন্তু ওর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা যখনই ভাবি, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা।
আর কখনই ভাবতে পারিনা শাফিন আমাদের মাঝে নেই।

এরচেয়ে ভাল ভাবে লিখতে পারলামনা। তাই সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×