এখন বিকেল ৩টা। আমি দাঁত মাজতেছি। হঠাৎ শুনতে পেলাম গুড মর্নিং, পিছনে ফিরে দেখি মেসের একটা ছোট ভাই আমাকে গুড মর্নিং বলে শুভেচ্ছা জানালো। যদিও কথাটা শুনতে ভীষণ খারাপ লাগে, তবুও এই কথাটা প্রতিদিন আমাকে শুনতে হয়। এই কথাটার বিপরীতে তাকে কি বলবো তা ভাবতে ভাবতে পেটের আওয়াজ পাই, তখন মনে পড়ে কাল রাত ১১.৩০ মিনিটে ভাত খেয়েছিলাম, তারপর সারারাত এবং ২/৩ দিন অর্থাৎ১৬ ঘন্টা কেটে গেছে পেটে কোন খাবার পড়েনি।
তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে ভাত খেলাম।তারপর মনে হলো কবে যেন গোসল করেছিলাম সোমবার নাকি বুধবার ঠিক মনে পড়ছে না।আজও আমার গোসল করা হলো না।গোসল করাটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে হয়।
তারপর পড়ার জন্য টেবিলের কাছে আসতেই,কম্পিউটারের কথা মনে হলো।কম্পিউটারটা অন করলাম। কম্পিউটার অন করার পর প্রতিদিন প্রথমে যা করি তাই করতে লাগলাম অর্থাৎ দাবা খেলা শুরু করলাম।এই খেলাটা অবশ্য বেশিক্ষন খেলিনা,সবোচ্চ ২০ মিনিট ।
তারপর পড়ায় একটু মন দিলাম। কম্পিউটারটা কিন্তু অন করাই আছে।৩০ মিনিট পর মনে হতে লাগলো অনেক পড়েছি আর না পড়ি একটু দাবা খেলা উচিত।এই কথা ভাবতে না ভাবতে আমার হাতটা মাউসের কাছে চলে গেছে এবং খেলা শুরু হয়ে গেছে।
নাস্তা করার জন্য বাইরে গেলাম সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে।বাইরে যাবার সময় কাউকে দেখতে পেলাম না। দেখতে পাওয়ার কথাও না, কারন এই সময় কেউ মেসে থাকে না ,একমাএ আমি ছাড়া।নাস্তা করা শেষ হলে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করি না।সাথে সাথে রুমে চলে আসি।অনুভব করি,আমার এবং আমার রুমের মধ্যবর্তী একটা অকল্পনীয় চুম্বক শক্তির যা আমাকে এতটাই আকর্ষণ করে যে, কারো সাথে অল্প সময় কথা বলার ইচ্ছে থাকে না। আমার কাছে এই রুমটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখময় জায়গা বলে মনে হয়।যদিও এই রুমটার চারপাশে মাকড়াসার জাল দিয়ে এক প্রকার অনন্য নকশা তৈরি হয়েছে।
আমার পেটে এক প্রকার কম্পন বা ব্যথা বা শুন্যতা অনুভব করছি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১.৩০ বা তার চেয়েও বেশি,এখনো ভাত খাওয়া হয়নি।ভাত খেতে বসলাম।তরকারি দেখে ভাত খাওয়ার সেই প্রবল মানসিকতা কেটে গেল। কিন্তু খেতেই হবে না হলে কাল আবার ভাত পেটে পড়বে বিকেল ৩.৩০ মিনিটে।জোড় করে একটু ভাত খেলাম।যতটা না ভাত খেলাম তার চেয়ে অনেক বেশি পানি খেলাম।কারন আমাকে শুধু বাচঁতে হবে ।
রাত ৩.১০মিনিট।চারপাশ নিশ্চুপ আমি একা জেগে আছি ।মনে হয় এই রাতটাকে আমি পাহাড়া দিচ্চি,যদি কেউ রাতটাকে চুরি করে তাই ।হঠাৎ কান্না শুনতে পাই,বুঝতে পারি এ আমারি শরীরের কোন এক অংশের আওয়াজ।তখন মুখে দুই একটা বিস্কুট দেই আর পেটকে বলি আওয়াজ করে লাভ নেই।
সকাল ৬.৩০ মিনিট।শরীরটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে,আর জেগে থাকা সম্ভব না।শরীরে যা পড়া থাকে সেই অবস্থায় বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।তারপর চোখ খুলে দেখি আবার বিকেল ৩টা বা ৫টা।(দ্বিতীয় দিনের কথা বাকি থাকলো)