somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলামত সুবিধার নয়

১০ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে জাতীয় সংসদের একেকটি নিবার্চনের পর স্কুল, কলেজ, হাঁট-বাজার, পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে রদবদল ঘটে তার ভেতর সহজেই ধামাচাপা পড়ে যায় দখলদারিত্বের কূট-পরিকল্পনা। প্রতিটি সংসদীয় সরকারই তার ক্ষমতার সম্ভাবনাকে অটুট রাখর স্বার্থে এহেন কাজ কারবার ঘটায়। সঙ্গে যোগ হয় কতিপয় উন্নত রাষ্ট্রের আধিপত্য, আঞ্চলিক রাষ্ট্রের প্রভাব, সাম্রাজ্যবাদী সম্পর্ক ও বৈশ্বিক রাজনীতি। কিন্তু প্রচার-প্রপাগান্ডায় ক্ষমতাধারীরা যা জনগনের সামনে বিশ্লেষণ করে তাতে বেশ আড়াল-আবডাল থাকে। আদতে ক্ষমতাধারীরা পরাজিতদের ক্ষমতা কাঠামো থেকে সরিয়ে যে ছক বাস্তবায়ন করে তা মোটেই গণমানুষের স্বার্থে নয়। কেননা, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোয় জয়ী, পরাজয়ী রাজনৈতিক শক্তি দু’য়েই কার্যত দারিদ্র্য ও শোষণ পুনরুৎপাদনের ব্যবস্থাকেই পাকাপোক্ত করে। জাতীয় সম্পদ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি দখল ও লুন্ঠনে আর্ন্তজাতিক একচেটিয়া পুঁজি ও বিভিন্ন বিশ্বসংস্থার কাছে নত হয়ে থেকে লিঙ্গীয়, জাতিগত, শ্রেণীগত বৈষম্য ও নিপীড়নকে স্থায়ী করতে তার ক্ষমতা কাঠামোকে বিন্যস্ত করে। অথচ গায়ে দারিদ্র্য বৈষম্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সন্ত্রাস দমন, জঙ্গি নির্মূল, জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন অছিলার যে নামাবলি গায়ে ধারণ করে তা রীতিমত জনসাধারণের সাথে ভেকবাজি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই বলে কি রাজনৈতিক মঞ্চে যারা নর্তন-কুর্দন করেন তাদের আলোচনা-সমালোচনা জনগণ করতে পারে না কিংবা পারবে না? অবশ্যই পারে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের সরকারের অতীত, বর্তমানকে মূলায়ন করলে যে ভবিষৎতের বিবেচনা বোধ দাঁড়ায় তাতে জনগণ প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত হয়, অন্ধকার দেখে। এবং আলোচনা-সমালোচনার বাক্যবাণে এ বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোর গায়ে ক্ষয়ও ধরায়। রাষ্ট্রের কার্যকারিতা, অকার্যকারিতা সম্পর্কে সে প্রশ্ন তোলে, রাষ্ট্র কোথায় সক্রিয় আর কোথায় কখন অষ্ক্রিয় সে অনুসন্ধান করে, চোখ-কান খোলা রাখে রাষ্ট্র কখন অন্যের উপর চড়াও হয়, চরমপন্থী, সন্ত্রসী আখ্যা দিয়ে ক্রসফায়ার করে আর কখন বিশ্বায়নের ভণিতা দিয়ে মার্কিন নীতির কাছে, ভারতীয় হম্বিতম্বির কাছে কাছা খুলে উন্মুক্ত হয়।
আজকের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিন্ন দুই ধারার রাজনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং দু’য়ের আপাত বিরোধ অনেকাংশেই জনগণের বিভিন্ন পর্যায়ে সংক্রমিত হলেও সত্য হলো জনগণের জীবন-যাপন, সম্পদ লুন্ঠন,জাতীয় স্বার্থ নিয়ে জালিয়তি, বৈষম্য, শ্রেণী নিপীড়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার রক্ষা ও বিকাশে তাদের দু’য়ের ঐক্যটা বেশ মৌলিক। যদিও আর্ন্তজাতিক সংস্থাসমূহ (তাদের স্বার্থ রক্ষিত হলে) এবং সরকার(যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে) বলবে এবং বলে থাকে- আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন ঘটাচ্ছি, আইন-শৃঙ্খলা সুষ্ঠ আছে, দেশকে অমুক-তমুকের হাত থেকে উদ্দার করে ছাড়ব, দেশে বিনিয়োগের হার বাড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। খেয়াল করলে দেখা যাবে এসব বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে লেজুড় সমর্থক সেই সব সুবিদাবাদিরা যারা বিভিন্ন ফাঁক-ফোঁকড়ের সুযোগ নিয়ে, দলবাজী করে, কু-উপায়ে, কালো পথে টাকা কামাইকারী ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, আমলা, এনজিও, মিডিয়াসহ বিভিন্ন পেশাজীবি শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ, বুদ্ধিজীবি। এসব সাফাইবাজদের বলন-কওন দেখে/শুনে পাঠক বা দর্শক কখনো বিমোহিত, কখনো বিমূঢ় বা কখনো আশাবাদী হয় এবং তার চিন্তা-চেতনের, জ্ঞান কাঠামোয় এসব প্রক্রিয়া অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করে। ফলে দেশের সত্যিকারের হালচালের বর্ণনা বিস্তৃত জনগোষ্ঠির কাছে যেহেতু নিজে নিজে আসে না, আসে মাধ্যম হয়ে, কখনো আওয়ামী লীগ ও তার জোটের কখনো বিএনপি ও তার জোটের বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যম গুলোর নির্ধারিত ছাঁচে পড়ে । তাই তারা যে সংবাদ, তথ্য, তত্ত্ব পরিবেশণ করে তাতে মনোযোগি হওয়া, নির্ভর করা প্রায়াংশেই বিপদজ্জনক, ঠিক নয়। কেননা, যা জানি, জানায় তার প্রকৃত চিত্র আংশিক ভাবে, পুরোপুরি ভাবে নতুবা বিকৃত ভাবে আমাদের কাছে হাজির হয়। কারণ, নিজেদের নিজস্ব নীতিমালা, ব্যবসায়িক , সামাজিক, মত-পথ, স্বার্থানুযায়ী এসব মাধ্যম গুলো সংবাদ যাচাই-বাছাই করে ও মেজাজ-মর্জি অনুযায়ী, সুবিধা-অসুবিধা মোতাবেক দেখায়/শোনায়।
বিগত কয়েক দিন ধরে দেশের যে যে পরিস্থিতি সংগঠিত হচ্ছে তাতে সহজেই অনুমেয় দেশের ভবিষ্যৎ পুনরায় ১/১১-এর গুরুচন্ডালীতে ঘুরপাক খেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক ছাত্র হত্যাকান্ড সেই দিকেই মোড় নেয়। তৎপরতাটা বেশ খেলুড়ে। বাস্তবতা বনাম বাস্তবতা, বাস্তবতা বনাম অবাস্তবতার মিশেল দিয়ে পরিস্থিতিটা ঘোলা করে তোলা হচ্ছে। আর ঘোলা জলে শেষ পর্যন্ত কে মাছ ধরায় পটু তা দেখার পালা এখনো শেষ হয় নি। এমনিতে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গড়ে তুলেছে নতুন নতুন স্বার্থগোষ্ঠী, নতুন নতুন ক্ষমতা পরিধি(পুরাতনদের মধ্যে কোথায় প্রমোশন নয়ত ডিমোশন হয়েছে)। এক বছর বয়স না হতেই গেল চার দলীয় বিএনপি জোট সরকারের শিখিয়ে দেয়া ক্রসফায়ার ক্রসফায়ার খেলা খেলে বেশ হাত পাকিয়েছে সে। আর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ইশতেহার চুক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দেশ প্রেমিক আওয়ামী সরকার বাংলাদেশের জন্য যে ভবিষৎ ট্র্যাজেডি দাঁড় করালো তার হিশাব-নিকাশ, কলা-কৌশল বলে, এদেশের মানুষকে যৌথ চুক্তি শুধুই প্রতারিত করেছে। প্রতারিত জনগোষ্ঠি এ বির্তকিত চুক্তির তিনটি দ্বিপাক্ষিক, দুটো সমোঝতা ও একটি যৌথ ইশতেহার নিয়ে সারা বাংলাদেশ তথা রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষের ভেতর প্রবল শংকা ঘটায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ডান-বাম পক্ষ ভারত সফরের ‘অর্জিত সাফল্যের’ জয়জয়কার করার বিপরীতে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক জোট ‘শতভাগ ব্যার্থ’ হওয়ার নালিশ তোলেন এবং দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। আবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ চুক্তির দ্বিধা-দ্বন্দ, সত্য-অসত্য তুলে ধরে পক্ষাবলম্বন বা বিরুধীতার চরিত্র উদ্গাটন প্রগতিশীল ভাবে এদেশের বুদ্ধিজীবিতার উপর যে দায়-দায়িত্ব বর্তায় তা তারা পালনে অক্ষম। দুঃখ, আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবিতাও স্থূল দলীয় স্বার্থ ভরাক্রান্ত বিবৃতি বৈ কোন গুরত্ব রাখে না। ফলে বিএনপি ও তার ধর্মীয় বন্ধুরা এসব ইস্যুতে যে প্রেক্ষাপটের প্রয়াস নেয় তা মূলত প্রকৃত ভারত বিরুধিতার আড়ালে সাম্প্রদায়িক চরিত্র নেয়, দেশ রক্ষার নামে ক্ষমতা লিপ্সার পরিবেশ তৈরী করে। খেয়াল করলে দেখা যায় যে সাম্রাজ্যবাদীদের প্রজেক্ট বাস্তবায়নকারী সুশীল মুখোশ পরে আবির্ভূত ‘সুশীল সমাজ’ যারা বিষাক্ত বিশ্বব্যবস্থার ভেতর জনগণকে খাপ খাইয়ে নেয়ার ‘প্র্যাগমেটিক’, ‘বাস্তবানুগ’ পথ দেখায়, এরা যখন কথা বলবার সময় তখন মৌনব্রত থাকে, কারণ ঐ একটাই চাতুর্যমাখা এই সুশীল মুখ গুলো জনগনের নয় প্রভু (সাম্রাজ্যবাদী প্রথম বিশ্ব )ধারা নির্ধারিত।
ফলে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ চুক্তিকে আঞ্চলিক কূূটনীতি এবং আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক নিরাপত্তার আলোকে বিচার বিবেচনার যে ধারা তা সংগঠিত না হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক গুষ্টি তা স-স্বার্থে ব্যবহার করছে। এবং এ ব্যবহার মূলত তাদের নয় বিদেশী চর-অনুচরদের তথা বিদেশী আধিপত্যের সরাসরি প্রবেশের সুযোগকেই বহুগুনে বাড়িয়ে তুলবে। কেননা, স্রেফ ভারত স্বার্থ নয় এ চুক্তির সাথে মার্কিনীদের তকদিরও জড়িত। এ অঞ্চলের আর্ন্তজাতিক ভাবে শক্তিধর চীনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্ধন্দী ভারত এবং মার্কিন শক্তি তাদের লড়াইকে সংগঠিত, জোরালো করার স্বার্থে বাংলাদেশ ভূখন্ডকে ব্যবহার করতে চায়। ভারত হলো প্রথম দেশ যা বুশের Ÿিশ্বব্যাপী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ কর্মসূচীতে স্বাক্ষর করে। ভারতের অর্থনৈতিক এবং জ্বালানীর উপর গুরুত্বারোপ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উভয় সরকারের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক রয়েছে ও নিরাপত্তা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিও একই রকমের। জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার, সন্ত্রস বিরোধী লড়াই, চীনের উথান মোকাবিলায় এবং আর্ন্তজাতিক অর্থনৈতিক সংস্করের মতো বড় বড় বৈশ্বিক ইস্যূতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতকে বড় বেশী প্রয়োজন। গেল ২০-২২ জানুয়ারী’১০ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক প্রধান উপ-সহকারী মন্ত্রী প্যাট্রিক এস মুন বাংলাদেশে এসে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট(সংক্ষেপে ‘টিফা’) চুক্তি বিষয়ে চাপ দিয়েছেন এবং ভারত-বাংলাদেশ শীর্ষ বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন (সূত্র-বুধবার, ২৭ জানু)। এছাড়া মার্কিনী প্রসাশন বিএনপি ক্ষমতামলে ২০০৩ সালে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ উন্নয়ন নামে, ২০০৪ সালে ‘পারসোনাল আইডিন্টেফিকেশন সিকিউর কমপারিজন এন্ড ইভাল্যুয়েশন সিসটেম’(সংক্ষেপে পিসেস। চওঝঈঊঝ) নামে এবং আরো গোপন চুক্তি স্বাক্ষর করে দেশের জন্য বিশাল ফাঁড়া তৈরী করে রেখেছে (স্থান, সময় সংকটাপন্ন বলে পরবর্তি সময়ে এসব চুক্তির বিষক্রিয়া সর্ম্পকে বলার আগ্রহ রাখি)।
এখন আওয়ামী সরকারের বয়স অনুযায়ী আর্ন্তজাতিক শক্তি-দ্বন্দ্বের কবলে সে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নের সময় এসে পড়েছে? তাই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের সময়-সুযোগকে ব্যবহারের আশায় আওয়ামী লীগ ও তার লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগ স্বভাব মতোন (নির্দেশ মতোও) খুন, সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও হতাহতের মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। এদিকে আবার বিএনপি-জামাত জোটের মধ্যেও সংকট ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। তথাকথিত ১/১১-তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দরুন এবং ক্ষমতাসীন থাকাকালীন আবস্থায় ভাগাভাগি লুটপাটের দ্বন্দ্ব, আভ্যন্তরীণ ক্ষমতার আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কেন্দ্রের দ্বন্দ্ব, দূনীতির কারণে উপদলীয় দ্বন্দ্বসহ তাদের নেতা-কর্মীদের উপর বর্তমানের মামলা, হামলা, সংসদে আসন সংক্রান্ত জটিলতা, পক্ষ-বিপক্ষ বিবাদ, অন্তর্কলহ, কোন্দল কাটিয়ে বিএনপি চায়- তাদের সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা কাটাতে ও শক্তি-সমর্থ জানান দিতে ও কর্মীদের গা গরমের বিশেষ বিশেষ মহড়ার তাদের দরকার। ফল স্বরূপ বিএনপি টিপাই মুখ, এশিয়ান হাইওয়েসহ কথিত ভারত বিরোধিতার নামে বিভিন্ন ইস্যূতে যখন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আওয়ামী লীগের জন্য তা অবশ্যই মাথা ব্যাথার কারণ। এমন নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গেল ছাত্রদলের বঞ্চিত ও সুবিধাবাদী দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষ। সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে ছিল ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ। এর পরপরই ছাত্রলীগের হল দখলের সংঘর্ষে সাধারণ ছাত্র আবু বকর হত্যাকান্ড ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে সাধারণ ছাত্র ফারুক হত্যাকান্ড ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকান্ডের জের ধরে দেশের ভবিষৎ যাত্রার আলামত ভালো নয়।
এখানে আবার সুযোগ বুজেই কোপ মেরেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের ভেতর শিবির ঢুকে পড়েছে এ ধূয়া তুলে অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কু-কর্মকে আপাত রক্ষা করলেন। আর পরিস্থিতিকে ডাব্লিও বুশের মতো ‘জঙ্গি’ নিধন প্রেক্ষিতের দিকে টেনে নিলেন (হয় তোমরা আমাদের সঙ্গে আছো অথবা তোমরা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছ- এ তত্ত্বে সারা বিশ্বকে বিবেচনা করেছিল বুশ। তার ব্যতয় নিশ্চয় বর্তমান ওবামা আমলেও ভিন্ন নয়, বৈশ্বিক রাজনীতি সচেতন মাত্রই তা বোঝেন।)। খুব অল্প সময়ের জন্য মানুষ ভুলে গেল ছাত্রলীগের তান্ডব। এসময় ছাত্রদল নিশ্চয় তার ভবিষৎ লক্ষ্যের কর্মসূচী প্রণয়ন করছে। যাই হোক এ সমস্ত খেলা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের যে আশংকা তৈয়ার করে তার ভেতর সহজেই বিদেশী শকুনের ছায়াটাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। প্রায় সময়ই ঘটনা আপনি ঘটেনা তা ঘটানো হয়, উষ্কানী শব্দটার অর্থহীন কোন প্রয়োগ নিশ্চই নেই। আর ঘটানোর বেলায় দুই কাক শকুনের প্রতিনিধিত্বই করে। এর ভুরি ভুরি প্রমান আমাদের দেশেসহ পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে আছে।
বাংলাদেশে সব চাইতে সুরক্ষিত দূর্গের নাম ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। এ দূর্গের কাছাকাছিও এ দেশের মানুষের পক্ষে যাওয়া কঠিন। এর পরপরই আছে ভারতীয় দুতাবাস। উদ্বেগের কথা হলো সা¤প্রতিক কালে ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশী নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর আস্থা হারিয়ে স্বদেশী (ভারতীয়) নিরাপত্তা রক্ষীদারা নিরাপত্তা জাল তৈরী করেছে। নিশ্চই তারা বর্তমান ঘটনার আলামত সম্পর্কে আবগত। আর আমরাও আবগত যে যেকোন পক্ষ-বিপক্ষই তার সুবিধা হাসিলের জন্য ছাত্র সংগঠনকেই আগে লেলিয়ে দেয়, কাজে লাগায়। এ কাজের বেলায় সাধারণ মানুষ কারো নাম দেয় ইসলামী জঙ্গি, কারো নাম দেয় ধর্মনিরপেক্ষ জঙ্গি। দুই’কেই কাজে লাগাল বিদেশী চর-অনুচরেরা। ইতিহস বলে, ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও গোষ্টিসমূহ সবসমই যুক্তরাষ্টের আর্শীবাদ পেয়ে এসেছে। সিআইয়েসহ তার বিভিন্ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানেই একাজ সম্পন্ন হয়েছে। সে জন্য জেনেটিক দিক থেকে এদের মধ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা কিংবা এ বিষয়ে অর্থপূর্ণ কার্যকর কোন চিন্তার ধারাবাহিকতা কখনোই দেখা যায় নি। সোভিয়েত বিরোধিতা, কমিউনিজম বিরোধিতাসহ বিভিন্ন ধন-সম্পদ লুটপাটে ইসলামপন্থীদের দোয়া, সমর্থন কিংবা কাজে খাটানো জন্য ছলে-বলে-কৌশলে এ সাম্রাজ্যবাদীরা বহু মুসলিম প্রধান দেশের সরকার ও ইসলামপন্থীদের কলকাঠি হিসাবে কাজে লাগিয়েছে। এবং বিরোধে জড়িয়ে দিয়ে তা নিষ্পত্তির মাতাব্বর সেজেছে। উদ্দেশ্যটা বেশ রাজনৈতিক। আমরা নিশ্চিন্তে বলতে পারি কতগলো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখনো এসব কান্ডকীর্তন চলছে। এদেশে আওয়ামী বুদ্ধিজীবি এবং আওয়ামী মার্কা লোকেরা জঙ্গি জঙ্গি করে এমন শোর তুলেছে যাতে মনে হয় ধর্মীয় সন্ত্রসীরাই এদেশে মূল সন্ত্রসী কায়কারবার চালনা করছে। বিএনপি আমলে তাদের উস্কানি ও লালনপালন যথেষ্ট ছিল অবশ্যই, কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে এখন ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের সন্ত্রসীরাই লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করছে। ধর্মনিরপেক্ষ প্রপঞ্চবাদীদের একাংশের ধারণা দেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা হলে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের হটিয়ে দিলেই দেশে প্রগতিশীলতার , শান্তির, উন্নতির সুবাতাস বইবে। এটা যে মিথ্যা ও বিভ্রান্ত ব্যকারণ তা আওয়ামী লীগই তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করছে আরো করবে। এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা ভুলে যায় কিংবা খেয়াল করে না ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতাই প্রতিক্রিয়াশীলতার একমাত্র রূপ নয়। আজকের দুনিয়ায় পূঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সাথের লেজুড় শক্তি গুলোই প্রতিক্রিয়াশীলতার মূল হর্তকর্তা। এদেশে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরোদ্ধে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রাম প্রয়োজন হলেও সে সংগ্রাম কোন মৌলিক সংগ্রাম নয়। মৌলিক সংগ্রাম হলো শোষকের যে শ্রেণীগত শাসন দেশে দেশে জারি আছে তার বিরোদ্ধে সংগ্রাম। এ সংগ্রাম জনগণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পারলে, বিকাশ ও সাফল্য নিশ্চিত করতে পারলে তার পার্শ্ব ফল হিসেবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা এমনিতেই উচ্ছেদ হবে। শুরু হবে প্রকৃত মানুষের ইতিহাস। কে করবে এ সংগ্রাম, আওয়ামী-বিএনপি ধারা? মনে রাখা উচিত ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা মূলত ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গেই অঙ্গঅঙ্গি ভাবে জাড়িত।। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদি দৃষ্টিভঙ্গি ও শক্তিসমূহ সামগ্রিক ফ্যাসিবাদি কাঠামোর অংশ হিসেবেই বেড়ে উঠে।
এখন এসব খুনখরাপি, জামাত-জঙ্গি নিধনের যে প্রক্রিয়ার বিপুল বিক্রমে আবির্ভাব ঘটছে তা আমাদের জান্তে-অজানন্তেই বিপর্যয়ের রসদ যোগান দিবে। এ স্বার্থেই প্রশ্ন উঠবে, উঠা নিশ্চই উচিত- যখন জামাত জোটের ক্ষমতাকালীন আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপ তার রাজনৈতিক ও সশস্ত্র কর্মতৎপরতা সংগঠিত করে তখন বিশ্ব সন্ত্রাসের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচারণ কি ছিল ও কতটুকু ছিল? ঐ সময় চার দলীয় জোটের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কি কি ধ্বংশযজ্ঞের চুক্তি হয়ে ছিল ? চারদলীয় জোটের সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী সংস্থাগুলোর (বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা,-এডিবিসহ বিভিন্ন এনজিও, দাতাগোষ্টি) কি কি আতাঁত হয়ে ছিল? এবং মুখে ভারত বিরোধিতা করলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভারতের প্রবেশে, আধিপত্য বিস্তারে বিএনপি-জামাত জোটের ভূমিকা কি ছিল, কোন প্রতিরোধ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা, বিশ্লেষণ করা এবং সেই সাথে মিলিয়ে দেখা এসব কূটচালের সাথে আওয়ামী লীগের তফাত কতটুকু। কেন তেল-গ্যাস চুক্তি বাস্তবায়নে দু’পক্ষই সমান তালে থাকে? কেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢোকার এবং কৃত কোন অপরাধের জন্য বাংলাদেশ সরকার তার কোন বিচার করতে পারবে না, আর্ন্তজাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে সোপার্দ কিংবা আবেদন করে অপরাধের বিচারও চাইতে পারবেনা, সাথে সাথে অন্য দেশে অপরাধ করে বাংলাদেশে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবে। এসবের সাথে কেন উভয়েই এক ও অভিন্ন থাকে? প্রশ্ন উঠছে এবং আরো উঠবে ২০০৯ নির্বাচন পরবর্তী আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন বৈদেশিক নীতি ও চুক্তির মাপকাঠি কি কি এবং তার পাপ-পূণ্যের হিশেব-নিকেশ। সব কিছু মিলিয়েই আওয়ামী- বিএনপি জঙ্গি ধারা ও জামাতসহ বিভিন্ন ইসলামী জঙ্গি গ্রুপের চরিত্রের ভেদবিচার করা আজ প্রতিটি দেশ প্রেমিক, মুক্তিকামী মানুষের জন্য কর্তব্য। নয়ত অব্যাহত এ ধারার কৃতকর্মের ফল স্বরূপ বাংলাদেশ বিশ্ব ফ্যাসিবাদী ধারার কল-কব্জা হয়ে ক্রমশ ক্ষয়ে পড়বে, অগোচরে বহুজাতিক পূঁজির কাছে বিকাবে জীবন-যাপন ও জাতীয় সম্পদ।
তাই আজ মার্কিনী লাঠিয়াল হিসাবে ইসলামী বর্ম নিয়ে(দুই দলকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে জঙ্গিবাদের পক্ষে-বিপক্ষে কাজে লাগায়)লুটেরাদের প্রধান হিসাবে এদেশের ভিতর সব রকমের প্রতিক্রিয়াশীলতার জন্ম দিয়ে দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী-বিএনপি রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নানান রকমের দুষ্টক্ষত বিকাশিত করছে ও করবে তা স্পষ্ট। তাতে জঙ্গিবাদের ছুঁতা দিয়ে সহজেই ঢুকতে সক্ষম হবে বহিরাগত শত্রু।
আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, খুনা-খুনি, দখলদারি, সর্দারি- মুরুব্বিয়ানায় আর ইসলামী ঝান্ডার তৎপরতা, তুলকালাম তুলে দিয়ে এ বাঁটপাড় সরকার/রাষ্ট্র লোকচক্ষুর মনোযোগে গোলমাল বাঁধিয়ে- আটঘাট বেঁধে একের পর এক দরকষাকষি বা চুক্তি বলে জনগনের জীবন-জাপন, সম্পদ, কতৃত্বের উপর মার্কিনী নীতি ও বহুজাতিক পুঁজির তকমা/সিলমোহর এঁটে দিচ্ছে। অতএব দেশের অতীত, বর্তমান হয়ে ভবিষৎ যাত্রার আলামত সুবিধার নয়।

(লিখেছিলাম-১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১০.)
এ লেখাটি সাপ্তাহিক বুধবার-এর ১বর্ষ, ২৭সংখ্যা, ৩ চৈত্র ১৪১৬, ১৭ মার্চ ২০১০- এ প্রকাশিত হয়, শিরোনাম ছিল, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর লুটপাট ও দেশের ভবিষ্যৎ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×