১
এক গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন কমিশন এক যৌথ নির্বাচনী সভার আয়োজন করেছে। সেখানে সব ক’জন প্রার্থী তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি বর্ণনা করবেন যাতে করে ভোটাররা এক সঙ্গে সবার বক্তব্য শুনে সহজে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যথাসময়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হল। ৭ জনের প্রত্যেক প্রার্থীই গলা ঝাঁকিয়ে মুখে মধু ঢেলে নিজ নিজ প্রতিশ্রুতির কথা শোনালেন। সভা শেষ হওয়ার পর দেখা গেল, শ্রোতাদের মাঝখান থেকে একজন উচ্চস্বরে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে,
: ‘ঈশ্বর তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি গণতন্ত্রের মতো একটি চমৎকার জিনিস আমাদের দিয়েছ।’
শ্রোতার এ রকম কথা শুনে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা চমৎকৃত হয়ে জানতে চাইলেন,
: ‘আপনি গণতন্ত্রের এত ভক্ত কেন?’
জবাব এলো,
: ‘এই মাত্র আমি বুঝতে পারলাম, একমাত্র গণতন্ত্র আছে বলেই অন্তত, ৬ জন মিথ্যুককে মতা থেকে দূরে রাখতে পারব। নির্বাচিত হবে মাত্র একজন।’
২
দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা বিষয়ে কথা বলছেন, ব্রিটেন ও ভারতের দুই রাজনৈতিক কর্মী।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক কর্মী বলেন,
: ‘গত বছর আমি দলের মধ্যে স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর জোর দিয়ে আমাদের এক কর্মিসভায় বক্তৃতা দেই। আমি বলি, পার্টির নীতি নির্ধারণে আমাদের মতো সাধারণ কর্মীর মতামতকেও মূল্য দিতে হবে। এ কথা বলার পর প্রথম মাসে আমি কোন উন্নতি দেখলাম না, দ্বিতীয় মাসেও আমি তেমন কোন উন্নতি দেখলাম না, তবে আমি আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখলাম।
তৃতীয় মাসে দেখা গেল, পার্টির বড় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আমাদের কথাও কিছু কিছু শোনা হচ্ছে।
এবার তৃতীয় বিশ্বের এক রাজনৈতিক কর্মীর পালা। তিনি বললেন,
:“ গত বছর আমিও আমাদের পার্টির এক কর্মী সমাবেশের বক্তব্য রাখি। কর্মিসভায় সিনিয়র নেতাদের সামনে আমিও আপনার মতোই জোর গলায় বলি, পার্টির নীতি নির্ধারণে আমাদের মতো সাধারণ কর্মীর মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এ কথা বলার পর প্রথম দিন আমি কিছু দেখলাম না, দ্বিতীয় দিনও আমি কিছু দেখলাম না, তৃতীয় দিন চোখ মেলে দেখলাম হাসপাতালে শুয়ে আছি। ডান চোখটা তখনও মেলতে পারছিলাম না।”
৩
একদিন এক নামকরা রাজনীতিবিদ বের হলেন হাঁস শিকারে। অনেকণ ঘোরাঘুরির পর তিনি একটা হাঁস শিকার করলেন। কিন্তু হাঁসটা গিয়ে পড়ল বেড়া দেওয়া েেতর ভেতর। বেড়া টপকে ভেতরে ঢুকতে যাবেন এমন সময় হাজির জমির মালিক। সব শুনে মালিক বললেন,
: ‘হাসটা যেহেতু আমার যেহেত পড়েছে সেহেতু হাঁসের অর্ধেকটা আমার।’
ক্ষেপে গিয়ে রাজনীতিবিদ বললেন,
: ‘হাঁসটা আমাকে না দিলে দুদিনের মধ্যে তোমার খেতের সবকিছু আমি নিলামে ওঠাব।’
জমির মালিক বললেন,
: ‘তাহলে ব্যাপারটা আমাদের এলাকার নিয়ম অনুযায়ী তিন থাপ্পড়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হোক। আমরা একজন আরেকজনকে তিনটা করে থাপ্পড় দেব। শেষ পর্যন্ত যে হার মানবে সে হাঁসটা পাবে না।’
রাজনীতিবিদ ভাবলেন, বেয়াদপ কৃষককে কষে তিনটা থাপ্পড় মারা যাবে, হাঁসটাও পাওয়া যাবে। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। দুজন হাঁসটা নিয়ে গ্রামের মোড়লের কাছে গেলেন। কৃষকের কাছ থেকে সব শোনার পর থাপ্পড় পর্ব শুরু হলো। প্রথমে কৃষক তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে রাজনীতিবিদের গালে কষে তিনটা থাপড় দিলেন। অনেক কষ্টে সহ্য করে এরপর রাজনীতিবিদ প্রস্তুতি নিলেন কৃষকের গালে থাপ্পড় মারার জন্য।
তখন কৃষক বলে উঠলেন,
: ‘আমি হার মানছি। হাঁসটা নেতা সাহেবকেই দেওয়া হোক।’
৪
দুই রাজনীতিবিদের মধ্যে মধ্যে আলাপ হচ্ছে-
প্রথম রাজনীতিবিদ : জানিস মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারটা কিনে ফেলি।
দ্বিতীয় রাজনীতিবিদ: অত সহজ না বন্ধু! ওটা আমি বেচলেতো।
৫
একজন আমেরিকার, একজন ইংল্যান্ডের আর একজন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ একসাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। কে কাকে কিভাবে টেক্কা দেবে তা নিয়ে প্রত্যেকেই ব্যাতিব্যাস্ত।
হঠাৎ আমেরিকান নেতা বলে উঠল,
: জানো, আমরা কী রকম বীর? কোন বাঘ যদি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলে তার দিকে শুধু বন্দুকটা তাক করলেই কেল্লা ফতে! গুলির কোনো দরকার নাই!
এই কথা শুনে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ বলল,
: এ আর এমন কি? আমাদের এমন সাহস যে বন্দুক বেরই করতে হয় না। ঝোলার ভেতর থেকে বন্দুকের নলটা যদি কোনভাবে বাঘ ব্রাদারের নজরে পড়েছে বা কোনমতে টের পেয়েছে তাইলে সেইখানেই তার হার্ট আ্যাটাক!!
এই দুইজনের কথা শুনে বাংলাদেশের লোকটা ভাবছে আমার তো প্রেস্টিজের ব্যাপার। তাই সে চট করে বলল,
: আরে ধুরো মিয়ারা! তোমরা কোন জমানায় আছো? আমাদের তো বন্দুক-ফন্দুক কিস্যু লাগে না! ওই সব আমাদের সাহসের কাছে ফালতু জিনিস, ফাও প্যাচাল!
কথা শুনে আমেরিকান আর ব্রিটিশ তো অবাক। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে
: তাহলে তোমরা বাঘ মারো কিভাবে?
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের উত্তর
: আরে মিয়া এইডা কোনো ব্যাপার? কোনো বাঘ আমাদের সামনে আইলে তার সামনে গিয়া আমরা শুধু বলি,
: ” এ রাম ! তুমি ন্যাংটো-পুটো? ”
বাঘটা তখন লজ্জাতেই মারা যায়!
৬
প্রধান প্রকৌশলী একটা সেতু পরিদর্শনে বেড়িয়ে দেখলেন যে, সেখানে কোনো সেতুই নির্মিত হয়নি! এর মানেটা কী? জানতে চাইলে হাতে-নাতে ধরা পড়ে সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার স্বীকার করলেন যে, সেতুটি আসলে কোনোদিনই নির্মাণ করা হয়নি। তারা দুজনে মিলে ভুয়া বিল জমা দিয়ে সরকারি কোষাগারের অনেক টাকা পকেটস্থ করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে রিপোর্ট হলে ওদের পথে বসতে হবে। তাই দুজন বড় সাহেবের পা ধরে বসে আছেন। প্রধান প্রকৌশলীর মায়া হওয়ায় তাদের মা করে দিলেন। এর দুমাস পর প্রধান প্রকৌশলী তার টেবিলে দেখেন সেই সেতু মেরামতের একটা বিল! তিনি সহকারী প্রকৌশলীকে ডেকে ধমক দিয়ে বললেন, সেতু নেই, অথচ সেটা মেরামতের বিল সই করতে পাঠিয়েছেন? সহকারী প্রকৌশলী ঘাড় চুলকে বললেন, দুবছর ধরে ওই সেতু মেরামতের বিলে সই করে আসছেন স্যার! হঠাৎ যদি এখন বন্ধ করেন তাহলে প্রশ্ন আসবে, সেতুটি নিয়মিত মেরামত কেন করা হচ্ছে না ! !
৭
দুই ভোটার কথা বলছে-
প্রথম জন : গেছিলাম ভোট দিতে, দিতে পারলাম না। কে জানি আগেই আমার ভোটটা দিয়া গেছে।
দ্বিতীয় জন : তাতে কী! আমারটাও কে জানি দিয়া গেছিল, আমি আরেকজনেরটা দিয়া আসছি।
প্রথমজন : আমারে কি বেকুব ভাবছস? আমিও একই কাজ করছি!
৮
এক লোকের খায়েশ হয়েছে তিনি সংসদ নির্বাচন করবেন। দাঁড়িয়েও গেলেন ভোটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ভোট হলো। গণনা শেষে দেখা গেল, তিনি মাত্র তিনটি ভোট পেয়েছেন। লোকটির স্ত্রী তো রেগে আগুন। বলল,
: ‘আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম, তুমি নিশ্চয় অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাস। তা না হলে তৃতীয় ভোটটা দিল কে?’
৯
প্রধানমন্ত্রী গেছেন এক গাড়ি প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে। প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে খুবই উৎফুল। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে একটি দামি গাড়ি গিফট করতে চাইলেন। প্রধানমন্ত্রী বিব্রত হয়ে বললেন,
: ‘না না, আমি বিনে পয়সায় কিছু নিতে পারি না। এতে করে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে।’ উদ্যোক্তা বললেন,
: ‘তাহলে আপনি গাড়ির দাম বাবদ আমাকে দশটি টাকা দিন।’
প্রধানমন্ত্রী বললেন,
: ‘গ্রেট আইডিয়া। তাহলে আমাকে পাঁচটি গাড়ি দিন।’
এই বলে তিনি একটি পঞ্চাশ টাকার নোট এগিয়ে দিলেন।
১০
দুই ভোটার কথা বলছে-
প্রথম জন : গেছিলাম ভোট দিতে, দিতে পারলাম না। কে জানি আগেই আমার ভোটটা দিয়া গেছে।
দ্বিতীয় জন : তাতে কী! আমারটাও কে জানি দিয়া গেছিল, আমি আরেকজনেরটা দিয়া আসছি।
প্রথমজন : আমারে কি বেকুব ভাবছস? আমিও একই কাজ করছি!
১১
এক রাজনীতিবিদ কাম ব্যাবসায়ীর দুধ বহনকারী গাড়িটা অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে উল্টে গেলো! দুধে ভেসে গেলো রাস্তা। দেখতে দেখতে সেখানে ভিড় জমে গেলো। ভিড়ের মাঝ থেকে জনৈক নেতা এগিয়ে এসে দুধ বহনকারী গাড়ির ড্রাইভারকে বললেন,
: এজন্য নিশ্চয়ই তোমার মালিক তোমাকে দায়ী করবে, ক্ষতিপূরণ চাইবে?
: জি।
: তুমি তো গরিব মানুষ। এতো টাকা পাবে কোথায়? এক কাজ করো, এই নাও আমি তোমাকে ৫০ টাকা দিলাম, এখন অন্যদের কাছ থেকে আরো কিছু কিছু নিলে বোধহয় হয়ে যাবে তোমার।
কিছুক্ষণের মাঝেই বেশ কিছু টাকা উঠে গেলো। ভিড় কমে গেলে নেতা গোছের লোকটিও চলে গেলেন। একজন পথিক আপন মনে বলে উঠলেন,
: কে এই মহান ভদ্রলোক?
ড্রাইভার বললো,
: উনিই তো এই গাড়ির মালিক!
১২
এক জাপানি ভদ্রলোক এসেছেন বাংলাদেশ ভ্রমনে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে সামনে অপেক্ষারত একটা ট্যাক্সিতে চড়ে বসলেন হোটেলে যাওয়ার জন্য।
একটু পরে একটা মোটরবাইক পাশ কাটাতেই জাপানিটা সোল্লাসে বলে উঠল,
: হোন্ডা, মেড ইন জাপান, ভেরী ফাস্ট!!
ড্রাইভার কিছু বলল না। একটু পরে ওভারটেক করল একটা কার, আবার জাপানির চিৎকার,
: টয়োটা, হাহা, মেড ইন জাপান, ভেরী ফাস্ট!!
ট্যাক্সি ড্রাইভার চুপচাপ শুনল, কিছু বলল না।
এরপর একটার পর একটা গাড়ি পেছন থেকে উঠে যাচ্ছে আর জাপানি লোকটার উৎসাহ বেড়ে যাচ্ছে, কখনও মিৎসুবিশি, কখনও হোন্ডা, কখনও টয়োটা বলে লাফাচ্ছে আর মনের আনন্দে গুনকীর্তন করছে,
: মেড ইন জাপান, ভেরী ফাস্ট!! ভেরী ফাস্ট!!
অবশেষে, হোটেলে পৌছল তারা। ক্যাব থেকে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে পুরা টাসকি,
: এইট হান্ড্রেড টাকা? হাউ কাম?
এতক্ষণ চুপ থাকার পর কথা বলার চান্স পেয়েছে ট্যাক্সি ড্রাইভার,
: হা হা, ইট ইজ মিটার, মেড ইন বাংলাদেশ, ভেরী ফাস্ট! ভেরী ফাস্ট!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:১৬