বিখ্যাত উপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "দিবারাত্রির কাব্য" উপন্যাসের কিছু পংক্তি, আমার জীবনদর্শন নিয়ে নতুন কিছু ভাবনার অবকাশ তৈরী করেছে। তাই, এই কিছু লাইন ধরে রাখার একটি প্রচেষ্টা...
"কোথায় কাজ? কি কাজ আছে মানুষের? অংক কষা, ইন্জিন বানানো, কবিতা লেখা? ওসব তো ভান, কাজের ছল। পৃথিবীতে কেউ ওসব চায় না। একদিন মানুষের জ্ঞান ছিলনা, বিজ্ঞান ছিলনা, সভ্যতা ছিলনা, মানুষের কিছু এসে যায়নি। আজ মানুষের ওসব আছে কিন্তু তাতেও কারো কিছু এসে যায় না। কিন্তু মানুষ নিরুপায়। তার মধ্যে যে বিপুল শূন্যতা আছে সেটা তাকে ভরতেই হবে। মানুষ তাই জটিল অংক দিয়ে, কায়দাদুরস্ত ভালো ভালো ভাব দিয়ে, ইস্পাতের টুকরো দিয়ে, আরো সব হাজার রকম জজ্ঞাল দিয়ে সেই ফাঁকটা ভরতে চেষ্টা করে। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখ, জীবন নিয়ে মানুষ কি হৈচৈ করছে, কি প্রবল প্রতিযোগিতা মানুষের, কি ব্যস্ততা!কাজ!কাজ!মানুষ কাজ করছে! বৌকে কাঁদিয়ে বৈজ্ঞানিক খুঁজছে নূতন ফরমূলা, আজো খুজছে, কালও খুজছে। দোকান খুলে বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে চারিদিক ছেয়ে ফেলে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ব্যবসায়ী করছে টাকা। ঘরের কোনে প্রদীপ জ্বেলে বসে বিদ্রোহী কবি লিখছে কবিতা। কেউ অলস নয় আনন্দ, কুলি মজুর গাড়োয়ান, তারাও প্রান পণে কাজ করছে।কিন্তু কেন করছে আনন্দ?পাগলের মতো মানুষ খালি কাজ করছে কেন?মানুষের কাজ নেই বলে। আসল কাজ নেই বলে। ছটফট করা ছাড়া আর কিছু করার নেই বলে।"