somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বনলতার সেনের নাটোরে

০৩ রা মার্চ, ২০১০ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর সব মানুষকে সকালে ঘুম থেকে জাগাতে বোধ হয় এই একটা লোভই দেখানো হয়, আরলি টু রাইজ এন্ড আরলি টু ... মেকস অ্যা ম্যান ...
আমাকেও এমন জ্ঞান দিচ্ছিলেন আমার এক আত্মীয়, বড় ভাই।
আমি জানালাম, এইটা কোনো কথা না। ঘুমই আসল জিনিস। মাথা ঠান্ডা রাখে। চিন্তা করার জন্য মস্তিস্ককে প্রস্তুত করে।
আর ঘুম যদি স্বাস্থ্য টাস্থ্য অথবা জ্ঞানী বানাতো তবে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী থাকতো বাংলাদেশের লোকাল বাসের ড্রাইভার, হেলপার, কন্ডাক্টররা।
ঘুমের পক্ষে এতো এতো প্যাঁচাল সহ্য করতে না পেরে এবার তিনি সরাসরি বললেন নাটোর যেতে চাইলে তোমাকে সকালেই উঠতে হবে।
বনলতা সেনের নাটোর দেখতে আগ্রহ বরাবরই আমার ব্যাপক। কিন্তু সকালে উঠার কথা শুনে তা নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। তবে হঠাৎ মাথা একটা চ্যালেঞ্জ দানা বাধলো। ঘুমের কাছে বনলতা হেরে যাবে?
না।
তা হতে দেয়ো যাবে না। জীবনবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আমাকে সকালে উঠতে হবে। আমি রাজী হলাম।
ওকে। যাবো।
২.
খুব ভোরেই উঠতে হলো। সাধারণ বা অসাধারণ কোনো ক্ষমা আমার জন্য বরাদ্দ ছিলনা। কারণ, তার বেলা ১টার মধ্যে নাটোর পৌছাতে হবে। সেখানে তার কাজ আছে।
তো যেই কথা সেই কাজ। অনেক রাতে ঘুমানো মানুষের ভোরে ঘুম থেকে উঠার বিপদ অনেক। সবচেয়ে বড় বিপদ অনেকক্ষণ ধরে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়না। উল্লেখ্য এই নেটওয়ার্কটা মোবাইলের না, নিজেরই। ঘুম থেকে জেগে উঠার পর অনেক সময় লাগে বুঝতে যে কী হচ্ছে? আমি কী জেগে উঠেছি কিনা? না ঘুমাচ্ছি?
যাই হোক, সব সমস্যা শেষ করে ঘুম থেকে উঠলাম এবং বনলতার শহরে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। প্রাথমিক গন্তব্য মহাখালি বাসষ্ট্যান্ড।
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে পৌঁছলাম মহাখালি বাসষ্ট্যান্ড।
সেখানে ভোরকে আর ভোর মনে হলোনা। মনে হলো, দুপুর হয়ে গেছে। আর মনে হলো দুনিয়ার সব মানুষ যেন উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে। এতো ভীড়। মহাখালি বাসষ্ট্যান্ড মেন মহাপূর্ণ বাসষ্ট্যান্ড।
তার উপর প্রচুর বাস সার্ভিস। যেগুলো বাস সার্ভিসের নাম হলেও কারো না জানা মানুষের কাছে সেগুলো ধোকার কারন। যেমন কিছুক্ষণ পরপর কাউন্টার থেকে চিৎকার, এই হানিফ আইসা গ্যাছে। ওই মামুন আইসা গ্যাছে। আলম চইলা আসছে।
এগুলো যে বাস সার্ভিসের নাম তা না জানা থাকলে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে, দেখি কে আসলো? তবে এগুলো কম বেশি সব জানা থাকায় কেউ পথেও দিকে তাকায় না। পথ ধরে পা বাড়ায়।
বাস এসে গেছে।
আমরাও কোনো এক ব্যাক্তি নামধারী বাস সাভির্সের টিকেট কেটে উঠে বসলাম। বসলাম মানে বসা না। সিটটা বাকাটাকা করে অসম্পূর্ন ঘুম সম্পাদনের চেষ্টায় রত হলাম। কিন্তু খুব বেশি সফল হলাম না। কোথাও ঘুরতে গেলে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে তাকিয়ে থাকতে পারি। ভালো লাগে। আমার কাছে দেখার চেয়ে বড় কিছু নাই।
দেখতে দেখতে চলে এলাম প্রায় সিরাজগঞ্জ। মোটমুটি অর্ধেক পথ। খাবারের বিরতী। আমরাও নেমে গেলাম। খিদে লাগুক আর না লাগুক হোটেল দেখলে খিদাকে আর রোখে কে?
খাওয়া দাওয়ার পর আবার আমাদের যাত্রা শুরু। আবার শুরু দেখাদেখি।
৩.
নাটোরে যে জায়গাটাতে নামলাম, তার নাম বনপাড়া। আমরা সেখানে নেমে উঠলাম হেলিকাপ্টার নামের এক বাহনে। শ্যালো ইঞ্জিনে চালিত গাড়ী। ওটা ছাড়া বিকল্প যান খুঁজে পাওয়া গেলনা। মানুষ নিজের ক্ষমতার চেয়ে বেশি বলে ফেললে সেটাকে বলা হয়, ছোট মুখে বড় কথা। এই যানটাকেও আমার তেমনই লাগলো। শব্দের তুলনায় গতি অনেক কম। বেশি আওয়াজ, গতি কম। সেই যে চলা শুরু করলো আমাদের নিয়ে, থামার নাম গন্ধ নেই। অনেকক্ষণ পরপর একটু আগায়। সে এক বিরাট জার্নি। তিন কিলোমিটার যেতেই দুপুর বানিয়ে দিল। সেই বাহনে উঠলে মনে করার উপরে চলতে হয়। যে স্টেশনেই আসুক না কেন ভাবতে হবে এর পরেরটাই আমাদের। না হয় বিরক্তীর সীমা থাকবেনা। আমরাও আমাদের বিরক্তী আর সহ্যের শেষ সীমার দুই ষ্টেশন পরে গিয়ে নামলাম। উল্লেখ্য, আমার আত্মীয় রিটায়ার্ড আর্মি পারসন হওয়ার সুত্রে তার কাজ ছিল নাটোরের দয়ারামপুর আর্মী ক্যান্টনমেন্টে। সেটা ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের দফতর। তার কাজ শেষে আমরা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ঘুরে দেখলাম। ভালোই। সুন্দর। সাজনো গোছানো পরিবেশ। পুরাতন কিছু বাড়ীকে বেশ সুন্দরভাবে রণাবেক্ষণ করা হয়েছে এখানে। বিশাল এলাকা নিয়ে এই জায়গাটা দৃস্টিনন্দন।
সেখান ঘুরে চলে গেলাম নাটোর শহরে। যেতে আবারো সেই বাহন মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে চলা হেলিকাপ্টার। আবারো সেই আকাশ বাতাস কাপানো শব্দ। আবারো সেই অল্প চলা। অবশেষে একটা সময় গিয়ে পৌঁছলাম মূল শহরের কাছাকাছি। এবার নিতে হবে রিকশা। সারি সারি সাজানো রিকশা সামনে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, যাবে কিনা?
সে সানন্দে রাজী হলো। উঠে বসলাম। তবে আমার কেন যেন রিকশাওয়ালকে চেনা চেনা লাগছিল। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কে সে?
যাই হোক, তার কথা চিন্তা করা থেকে নিজেকে বিরত রেখে বনলতা সেনকে খোঁজার চেষ্টা রত হলাম। তবে বনলতা সেনকে তো আর পাওয়া যাবে না। তার উত্তর প্রজন্মকে খোঁজার চেষ্টায় মনোনিবেশ করলাম। রিকশার পাশ দিয়ে যেই যায়। মনে হয় সেই বনলতা সেন-এর মেয়ে। বনলতা সেন এর নাতি।
মাঝে মাঝে ইচ্ছেও করছিল জিজ্ঞাসা করে ফেলি, আচ্ছা আপনার নানুর নাম কি? আপনার নানুর নামে কী কোনো কবিকে জড়িয়ে স্ক্যান্ডাল আছে?
এসব ভাবতে ভাবতে অনেক কিছুই দেখা হয়ে গেলো। ভালো লাগলো, রাজবাড়ীট। বাইরে থেকে খুবই সুন্দর। সময় না থাকায় ভেতরে যাওয়া হয়নি।
ছোট শহর নাটোর ঘন্টাখানেকের মধ্যে অনেকটুকু দেখা হলো। চলে যেতে হবে। পেছন থেকে যেন অমিতাভ বচ্চন টাইপের ভয়েসে কেউ বলছে, আপকা সমেয় সমাপ্ত। কিন্তু তার আগে খাওয়া দাওয়া করা খুবই প্রয়োজন। হোটলে গিয়ে এক মজার ভালো জিনিস পেলাম। খাবার মেনু হিসেবে ওয়েটার জানালো অনেক কিছুর কথা। মন আটকে গেলো কোয়েল পাখিতে। অর্ডার দিলাম। দিয়েই মনের ভেতর ঝামেলা শুরু হলো আমার আত্মীয়ের। কোয়েল পাখি ছোট। এর এতো দাম। আর এক প্লেটে কয় পিস থাকে কে জানে?
কিন্তু পরে যা জানলাম, তা ভালোই। পুরো পাখিই রান্না করে এনেছে। দুই পিস। এবার মনে হলো, দাম এতো কম কেন?
যাই হোক কম দামে ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে পা বাড়ালাম বাসের পথে। বাসে ওঠার আগে, বাধ সাধলো এক হকার। নাটোরে এসছেন আর কাঁচাগোল্লা নিয়ে যাবেন না?
আমরা এক সঙ্গে জিবে কামড় দিয়ে উঠলাম, তাইতো। কাঁচাগোল্লা বিক্রেতার মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে তার কাছ থেকে অনেক বেশি দামেই কাঁচাগোল্লা কিনে ফেললাম। মনে মনে বললাম, আজ আপনি না থাকলে কি যে হতো?
সব হলেও একটা জিনিস আর হলো না। বনলতা সেন বা তার পরবর্তী কাউকেই না দেখে রওয়ানা দিতে হলো। মনে এক চাপা অস্বস্তি নিয়ে এগিয়ে চললাম ঢাকার পথে। বাস চলছে। আর বাসে চলছে টিভি। জনপ্রিয় সঙ্গীত প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠান ইন্ডিয়ান আইডলের সিডি দেখানো হচ্ছে। আমিও আর কিছু দেখার না পেয়ে এবং বনলতা সেনকে দেখার অতৃপ্তি কাটাতে তা দেখতে লাগলাম। হঠাৎ এক শিল্পীকে দেখে চমকে উঠলাম। ঘটনা কী একে যেন কোথায় দেখে এলাম। হঠাৎ মনে পড়লো, আরে এর চেহারাতো সেই রিকশাওয়ালার মতো।
এবার আমার কিছুটা অস্বস্তি কাটলো।







১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×