somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইর খাওয়া-২

০৩ রা মার্চ, ২০১০ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইর খাওয়া-১

মাইর খাওয়ার ব্যাপারে আমি ছিলাম নির্লজ্জ্বের মত। আমার কিন্ডারগার্ডেনে সাধারণত ধর্ম ক্লাস থাকত সব শেষে। আমরা সব পুলাপান ব্যাগে ধর্ম বইটা বাকি সব বইয়ের উপরে রাখতাম। এখনকার পুলাপানেও এই কাজ করে কিনা জানিনা। ধর্ম বইটা বাকী সব বইয়ের উপরে রাইখা আমরা ধর্ম জিনিসটারে আলাদা শ্রদ্ধা দিতাম। কেউ আমাদের এইটা শিখায় নাই, অথবা কারও দেখাদেখি আমরা এইটা করতাম না। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জিনিসটা আইসা পড়ত। পরে একদিন এক আপায় বলল, ধর্ম বই বাকী সব অইয়ের নীচে রাখা উচিত। আমরা শুনলাম। কেন রাখা উচিত তা আর জিগাইলাম না। কারণ বাংলাদেশী স্কুলের পুলাপানের স্বভাব হইল শিক্ষকরা যা বলে সব মাইনা নেয়া, প্রশ্ন করা এইখানে বারণ। যেমন ধরেন, ক্লাসে অংক করানির সময় স্যারে অংক কিছুটা কইরা জিজ্ঞাসা করত, "এই সবাই বুঝেছ?" তামাম ক্লাস কইত, "হ্যা হ্যা হ্যা, আমরা সব বুঝেছি"। আসলে তো বুঝতাম ঘোড়ার আন্ডা। উল্টা না বুঝার কারণে মাইর লাগায় কিনা সেই ভয়ে সবাই কইতাম, " হ হ বুঝছি"। জিনিসটা ভাইবা আমার কাছে এখন মজাই লাগে। যাই হোক আপার কথামত আমরা কেন জানি ধর্ম বইটা বাকী সব বইয়ের নীচে রাখতে পারলাম না। আমাদের কেন জানি মনে হইল, নাহ ধর্ম বই বাকী সব বইয়ের উপরেই থাকা উচিত। যাই হোক ধর্ম বইয়ের কথা আইসা পড়ল অন্য কারণে। আমাদের ধর্ম আপা আমাদের বেত্রাঘাত না কইরা কানে ধরাইয়া ক্লাসের সামনের মাঠে দাড়া করাইয়া রাখতেন, যাতে সারা স্কুলের পুলাপান দেখে, বিশেষ কইরা ছোট ক্লাসের পুলাপান। আমার যেহেতু ছোট ক্লাসের পুলাপান নিয়া কোন এলার্জী নাই তাই আমি মহানন্দে ধর্ম ক্লাসের পড়া পইড়া যাইতাম না। ক্লাস শুরুর আগে পারলে একটু পড়তাম, প্রশ্ন করলে বানাইয়া বানাইয়া যতটুকু পারি উত্তর দিতাম। আল্লাহর গুণগান করার জন্য ধর্ম বই পড়া লাগে না, নিজেই বহুত গুণগান করা যায়। হাই স্কুলের পুলাপান তো মনে হয় এহনও ধর্ম পরীক্ষায় নিজের হাদীস চালাইয়া দিয়া আসে, খালি মিথ্যা কথা না লেখলেই হইল। সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। সেইদিন আছিল আরবী হরফের একটা পড়া। যবর যের পেশ দিয়া বিভিন্ন ক্যারিকেচার। আল্লাহর গুণগান করার সুযোগ সেইদিন ছিল না। ফলাফল আমি ধরা খাইয়া গেলাম। তবে আমার এই নিয়া বেশী চিন্তিত দেখা গেল না। আমি মহানন্দে একটু তাজা বাতাস খাওয়ার জন্য কানে ধইরা বাকী পোলাপানের সাথে ক্লাসের বাইরে গিয়া দাড়াইলাম। মরলে সবই মাটির নীচে, কে রাখে কার খবর। অতএব লজ্জার কিছু নাই। আমি সুন্দর দাড়াইয়া দাড়াইয়া বিশ্রাম নিতে ছিলাম আর কান মালিশ কইরা রক্ত সঞ্চালন করতে ছিলাম। সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। আমার পিতৃদেব আমাকে স্কুল থিকা নেওয়ার জন্য কেন জানি বাইছা বাইছা ঐ দিনই আসিলেন। অন্যদিন উনার কোন খবর থাকে না, আমি একা একা বাসায় যাই আর উনি কিনা এইরকম একটা দিনে আসলেন, যেইদিন আমি কানে ধইরা মাঠে ক্লাসের বাইরে দাড়াইয়া আছি। উনি আরো একটু বেশী বুইঝা ছুটির সময়ও আসেন নাই , বরং ছুটির একটু আগেই আইসা পড়ছেন। ছুটির সময় আসলেও কোন সমস্যা ছিল না, সুন্দর ব্যাগ গুছাইয়া আমি উনার সাথে প্রফুল্ল চিত্তে বাড়ী যাইতাম। কিন্তু কপালের নাম গোপাল।

আমার এই অবস্থা দেইখা উনি কোনমতেই খুশী হইতে পারলেন না, বরং একটু লজ্জিতই হইলেন বলা যায়। উনি আমার ক্লাসের ধর্ম আপারে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ধরনের শাস্তি দিচ্ছেন এদের। ধর্ম আপা আমাকে আরো বেশী বেইজ্জতি করার জন্যই বললেন এদের কানে ধরাইয়া দাড়া করাইয়া রাখা হইতাছে, এরপর যারা পড়া পারবে তাদের দিয়া এদের কানমলা দেওয়া হইবে। আমি তো শ্যাষ। মান ইজ্জতের কথা বাদ, মান ইজ্জতের টাইম নাই, বাড়ী যাইয়া যে আমার কি অবস্থা হইব সেইটা চিন্তা কইরাই আমার ঘাম ছুইটা যাইতাছে তখন। আমার পিতৃদেব বললেন, পুলাপান তো নচ্ছার, এরা তো আবার স্কুল ছুটির পর যাদের দিয়া কানমলা দেওয়াইছেন তাদের কান মলব রাস্তায়। ধর্ম আপা বললেন, সমস্যা নাই, এই কাজ করলে তাদের নামে নিগৃহীতরা আগামী কাল ক্লাসে বিচার দিবে এবং এদের আবার শাস্তি দেওয়া হইবে। অর্থাৎ স্কুলের শাস্তির কাল হাত স্কুলের বাইরেও বর্ধিত। শালার এক জেলখানার জীবন কাটাইছিরে ভাই। কোন দিন বিকালে শান্তিমত এলাকার রাস্তা দিয়া অথবা বাজার দিয়া ঘুরতাছি, এমন সময় কোন ম্যাডাম যদি দেইখা ফালায় তাইলে পরেরদিন কৈফিয়ত দিতে হয় কেন ঘুরলাম রাস্তায় রাস্তায়। আরে বাল আমার মন চাইছে আমি ঘুরছি, তাতে কার কি? আমি তো আর স্কুলের কোন নিয়ম ভাঙ্গি নাই। এত সুশীল শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট পুলাপান হওনের কোন খায়েস আমার নাই, আমার এর থিকা রাস্তার ছেলে হইতেই বেশী আগ্রহী।

আব্বাজান আমারে বাড়ীতে নিয়া স্কুল ড্রেস খুলনেরও সময় দিলেন না। আম্মাজানরে ডাকিয়ে আনিলেন এবং আমার কান্ডকীর্তির কথা বর্ণনা করিলেন। আমারে তখনই ধর্ম বই খুইলা বইতে হইল আর বলতে হইল কি পড়া পারি নাই। আমারে বলা হইল তোরে আজকে খাবার দেয়া হবে না যতক্ষণ না তুই এই পড়া শেষ না করতে পারিস।

মোর জ্বালা কি যে করি!!! তবে ততক্ষণে বুঝছি আমারে আরেক দফা উত্তম মধ্যম দেওয়া হইবে না, অতএব আমার আর চিন্তা নাই। আমি সুবোধের মত পড়া ব্যাখ্যা করতে লাগলাম। হায়রে ধর্ম বই, হায়রে আলিফ বা তা সা জ্বীম হা ............লাম মীম...... ওয়াও হা হামজা ইয়া.........

বাংলাদেশের শুরুর স্তরের শিক্ষাব্যাবস্থা জঘণ্য। এইখানে একটা বাচ্চা দম আটকাইয়া মরে, যদি তারে নিয়মিত পড়াশুনা করতে হয়। মুখস্ত মুখস্ত আর খালি মুখস্ত আর নাম্বার পাওয়া। সাধারণ সুন্দর সুন্দর জিনিসগুলিও এখানে খুব কঠিন করে তোলা হয়।


চলবে............
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২৪
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×