somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তরুণ শিক্ষক!

০২ রা মার্চ, ২০১০ ভোর ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানীং ক্লাসে ভীষণ আনমনা মনে হয় নিজেকে। স্প্রিঙ সেমস্টারে একজন নতুন শিক্ষক পেলাম আমরা। বয়সে একেবারেই তরুণ। চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই ছাত্র না শিক্ষক। ক্লাসের সময় যাতে নষ্ট না হয় তাই জাস্ট টাইমটা ঘড়িতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে স্যারকে ডাকতে গেলাম! স্যার অন্যদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। বললেন আসছি...১০মিনিট!
তখন থেকেই মেজাজ খারাপ! আমার মতো (অনেকের মতে সুন্দরী) মেয়ের ডাকে আসলেন না? ...ঠিক আছে দেখা যাবে....

কাটায় কাটায় একটা দশে ক্লাসে ঢুকলেন! চেয়ারে বসলেন না। ডায়াসে দাঁড়ালেন। আমাদের সম্বোধন করছেন আপনি আপনি করে...অবশ্য আমাদের সঙ্গে কেউ কেউ আছেন যারা স্যারের চেয়ে বয়সে অনেক বড়ই হবেন! আমি প্রাণপণ চেষ্টা করলাম কোনওভাবেই যেন ক্লাস তথা স্যারটাকে ভালো না লাগে। অর্থাৎ ফাঁক খুঁজছিলাম ভুল ধরার। কিন্তু না পুরুষরা যেভাবে বাসর রাতে বিড়াল মারে তারচে গভীর শক্তিমত্তার সাথে স্যার ক্লাস নিলেন, আমরা প্রায় সমস্বরে বলতে বাধ্য হলাম স্যারের ক্লাসটা খুব ভালো লাগলো।
পরদিন ভীষণ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি কোনওভাবেই যেন স্যারের একমিনিটও না হারাতে হয় আমাদের। কিন্তু না এইদিন তিনি পুরো ২০ মিনিট দেরি করে ক্লাসে ঢুকলেন; কৈফিয়ত দিলেন এই বলে যে আজ সকালে আসতে দেরি হয়ে গেছে তাই সবার ক্লাস ২০ মিনিট অ্যাডভান্স করে অ্যাডজাস্ট করতে হলো।....
আমরা অনুযোগ করলাম, স্যার আমরা?
আপনারা ফুল ১ঘণ্টা পাবেন।
তারপর সেই রুদ্ধশ্বাসের একঘণ্টা।...কেমন করে কেটে যায় আমি কিছুই টের পাই না। শুধু মনে হয় সবগুলো কোর্স যদি স্যার নিতেন! এভাবেই কয়েকটা ক্লাস যেতে না যেতে স্যার আমাদের সবারই খুব প্রিয় হয়ে উঠলেন। এবং আমাদের এতোদিনকার প্রিয় স্যার এবং ম্যাডামদের তালিকায় তিনি প্রথম কারণ তাদের ব্যাপারে তার মন্তব্য শুনে বুঝলাম তিনি নিজেও তাদের ভক্ত! এক স্যার সাধারণত আরেক স্যারের প্রশংসা করেন না, এই স্যার করছেন, কেন?...

প্রসঙ্গক্রমে একদিন স্যার তার জীবনের একটা গল্প বললেন....আমরা তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে এক সময় কেঁদে ফেললাম, অথচ স্যার কেমন নির্বিকারভাবে বলছে...হাসছে...এবং এতো বেশি অকপট! যেন আমরা তার স্টুডেন্ট নই তার বন্ধু একান্ত কাছের জন।

এর কিছুদিনপর...
স্যার আমাদের ক্লাস টেস্ট দিলেন। আমরা কয়েকজন খুব সিরিয়াস! স্যারের দেয়া তারিখেই পরীক্ষা দেবো। কিন্তু দূর থেকে আসা কয়েকজন আপত্তি তুলল....তারা পরের সপ্তাহে দেবে... স্যার তাতেও রাজি হলেন এতে আমাদের স্যারের প্রতি যে একবাক্য আনুগত্য সেটা দেখাতে ব্যর্থ হলাম তাই মনে মনে কষ্টও ছিল। কিন্তু স্যার এবাব খুব কড়া ব্যবহার করলেন, পরীক্ষার ডেট ২টা এর বাইরে আর কারও এক্সকিউজ শোনা হবে না। রাজি? ২ ডেটে পরীক্ষা নেয়ার পরও দেখা যাবে কেউ না কেউ অংশ নিতে পারেনি, তার দায়ভার কে নেবে? আর কেউ নিলেও আমি নেবো না।
স্যার যুক্তি দেখালেন পরীক্ষার নির্দিষ্ট তারিখে কারও কোনও বিশেষ সমস্যা হয়ে যেতে পারে, সেটা কন্সিডার করা হয় তাই বলে আগে থেকেই যদি কেউ প্ল্যান করে থাকে যে আরকে ডেটে যেহেতু নেবে তাহলে পরের ডেটেই দেই! সেটাকি সুযোগের সদ্ব্যাবহার হয়ে যায় না?
আমরা প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা দিলাম।
সেদিন আর ক্লাস করা গেলো না। পরের সপ্তাহে পরীক্ষা দিল বাকীরা। সেই ক্লাসটাও মাইর গেলো। লস হলো আমাদেরই। ব্যাপারটা আমার মনপুত হয়নি, আমি স্যারকে ফোনে ক্ষোভটা ঝারলাম...স্যার যদি এমনই হয় তাহলেতো আমাদের অনেকগুলো ক্লাস মাইর যাবে....আমরা আপনার একটা ক্লাসও হারাতে চাই না।...
সেদিন স্যারের কণ্ঠটা সম্পূর্ণ অন্যরকম!
ফোন রিসিভ করে স্যারই আগে সালাম দিলেন, তারপর আমি আমার পরিচয় দিলাম। স্যার আপনি আপনি করে বললেন....আমি বললাম স্যার আমি চাকরিজীবীও না কয়েক সন্তানের মাও না, আমাকে আপনি আপনি করে বলবেন না। কয়েকজন বুড়ো হাবড়ার জন্য পৃথিবী থেকে ছাত্রশিক্ষকের সম্পর্কটা উল্টে যেতে পারে না। স্যার ডিফেন্সে না গিয়ে সরাসরি বললেন আচ্ছা বলো----
কিন্তু প্রচণ্ড শব্দে না স্যার শুনছেন আর না আমি! তবু যা বলার বলে জিজ্ঞেস করলাম স্যার আপনি কোথায় এতো শব্দ কীসের?
-মাছের হাটে
-মাছের হাটে?
-হ্যা,বাংলা একাডেমির মাছের হাটে
ও আচ্ছা, তাই বলেন! খুব জমেছে তাই না স্যার?
হুঁ,
স্যার আমরা আসি?
আসো! বইমেলাতে তো তোমাদেরই আসা উচিৎ!
স্যার আপনি কতক্ষণ আছেন?
এই ঘণ্টাখানেক!
স্যার আরেকটু বেশি থাকেন! আমি আসছি....
মজার ব্যাপারটা ঘটলো এরপরই। মেলায় পৌঁছতে আমার সময় লেগেছে ঘণ্টা খানেক। তারপর স্যারের সাথে ঘুরে ঘুরে বই দেখা...তবে স্যারের কিছু পরিচিত বন্ধুস্থানীয়রা আমাদের এমনভাবে ট্রিট করলেন! সেদিন বাসায় ফেরার পর আমি কিছুতেই স্থির হতে পারছিলাম না।....আমি কী স্যারের....ভাবতেই গা কাটা দিচ্ছিল....ছিঃ মানুষ কী বলবে?
স্যারকে আমি একটা বই গিফট করলাম, সেটাও বোধয় আমার উচিৎ হয়নি, প্রেমে অপ্রেমে। আসলে তরুণ শিক্ষককে কী বইইবা দেয়া যেতো! প্রবন্ধের? জানি সেটা তার ঢের আছে। নিশ্চই প্রেমের কবিতার বই স্যারের নেই?....স্যার একটা বই কিনলেন বইটা দেখে আমার সমস্ত আনন্দ পানি হয়ে গেলো। অবশ্য অনেকগুলো বই তিনি এমনিতেই পেয়েছেন। তার প্রকাশক-লেখক বন্ধুমহলের। কিন্তু রান্নার বই কেন কিনলেন? স্যারকি তবে বিবাহিত? নিজেকে বোঝালাম হলেই বা কী? আমি জানি না স্যার আমার আনমনা ভাবটা লক্ষ্য করেছেন কি না। তবে আমার ব্যাপারে তার কোনও কৌতূহলই দেখলাম না। কিন্তু শেষকালে তিনি এমন একটা কাজ করলেন! রান্নার বইটা আমাকে গিফট করলেন! আমাকে কেন রান্নার বই গিফট করলেন? এর মধ্যে কি কোনও ইংগীত আছে? রান্নার বই আমাকে রান্নাঘরের পরিবর্তে ছাদে আর বেলকনিতে পায়চারি করালো। ঘুমুতে দিল না একদম।
খুব ইচ্ছে করছিল স্যারকে ফোন দিতে, কিন্তু কিছুতেই পারলাম না। কোত্থেকে যে এতো জড়তা জড়ো হলো বুঝলাম না। তরুণ স্যারকে ফোন দেয়া মানা.......
১৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×