somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশি ‘জন্তু’ !!!

০১ লা মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিমি বা ডলফিন মানেই আমাদের কাছে বিদেশি ‘জন্তু’। টেলিভিশন চ্যানেলেই শুধু তাদের দেখা মেলে, দূর থেকে দেখে আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এই দেশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা জাতের ডলফিন। আমাদের সমুদ্রসীমাতেও সাঁতার কাটে তিমি।
এ কথাটা হয়তো অনেকেরই অজানা বা ভাসা ভাসা জানা ।
গত কিছুদিন আগে তাদের নিয়েই প্রথম আলোতে কিছু তথ্যবহুল ফিচার লিখেছিলন খসরু চৌধুরী ।
সেটাই হুবহু তুলে ধরলাম।


নদী-খালগুলোয় হঠাত্ হঠাত্ চোখে পড়ে এদের। নৌকায় করে চলতে গিয়ে হঠাত্ দেখা যায়, ভুশ করে ভেসে ওঠে, আবার ডুবে যায় মেটে রঙের একটি প্রাণী। কাউকে জিজ্ঞেস করলে হেসে বলে—শুশুক।
অথচ এটি নিখাদ এক প্রজাতির ডলফিন! এটিই মিষ্টি পানির গাঙ্গেয় ডলফিন। আরও কয়েকটি প্রজাতির মতো আমাদের এক দুর্লভ সম্পদ।
পৃথিবীর খুব কম দেশের নদীতেই মিষ্টি পানির ডলফিন দেখা যায়। আমাজান নদীতে মিষ্টি পানির ডলফিন আছে। মিয়ানমারের ইরাবতী মোহনায় কিছু ডলফিন আছে। চীনের ইয়াংজি নদ এবং পাকিস্তানের সিন্ধু নদে মিষ্টি পানির কিছু ডলফিন আছে। আর ভারত, নেপাল, বাংলাদেশের নদীগুলোয় মিষ্টি পানির গাঙ্গেয় ডলফিন আছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিন্ধু নদের ডলফিন গাঙ্গেয় ডলফিনেরই একটি উপপ্রজাতি।
আমাদের দেশের খুব চেনা এই গাঙ্গেয় ডলফিনের (Platanista gangetica) গায়ের রং হয় কালচে বাদামি অথবা মেটে। আঁটসাঁট লম্বা শরীর, মাথা গোলাকার, ঠোঁট সুচালো, দুই পাশের পাখনা ও খাড়া লেজের পাখনা শক্তিশালী, পিঠের দিকটা সামান্য উঁচু ত্রিকোণাকৃতি, চোখ অত্যন্ত ছোট। শুশুক প্রায় অন্ধ প্রাণী। শুধু আলোর হ্রাস-বৃদ্ধিটা এরা একটু বুঝতে পারে। এরা বাদুড়ের মতো ‘ইকো-লোকেশন’-এর মাধ্যমে শিকারের অবস্থান বুঝে নেয়। প্রধানত মাছ, কাঁকড়া খেয়ে জীবন ধারণ করে।
শুশুক অবশ্য মোহনার লবণজলের নদীতেও দেখা যায়। তবে এরা সাগরে যায় না।
বঙ্গোপসাগর মোহনার নদী কর্ণফুলী, মেঘনা, ফেনী, বলেশ্বরসহ সুন্দরবনের লবণজলের নদী-খালে দেখতে পাওয়া যায় ইরাবতী ডলফিন (Orcaella brevirostris)। এরা শুশুকের চেয়ে গাঢ় বর্ণের। ঠোঁট নেই, মাথা ভোঁতা, দুই পাশের পাখা শক্তিশালী, পিঠের পাখাটি ছোট ত্রিকোণাকার। এরা শুশুকের মতো লাফঝাঁপ করে না, ধীরেসুস্থে ভেসে আবার ডুবে যায়। শুশুকের পাশাপাশিই শিকার ধরে, দলে দু-তিনটির বেশি দেখা যায় না। ইরাবতী নদীর মোহনার চেয়ে সুন্দরবনের খাঁড়িতে এদের বেশি দেখা যায়।
আকারে ছোট, কালচে রঙের আরেক ধরনের ডলফিন আমাদের সুন্দরবনের বড় নদীগুলোয় দেখা যায়। দেখতে অনেকটা ছোট আকারের ইরাবতী ডলফিনের মতো। নাম রিভার ফিনলেস পরপয়েজ (Neophocaena phocaenides)। এরা অত্যন্ত লাজুক। জাহাজ বা নৌকা থেকে অনেক দূরে ভেসে ওঠে।
সুন্দরবনের বড় নদীর খাঁড়িগুলোর জল শুষ্ক মৌসুমে কিছুটা স্বচ্ছ হয়ে এলে গোলাপি ডলফিন (Souca chinensis) সাগর থেকে খাঁড়িতে ঢুকে পড়ে। এরা আকারে শুশুকের চেয়ে বেশ বড়। গায়ের রং হালকা বাদামির সঙ্গে গোলাপি আভাযুক্ত, তবে বাচ্চাদের রং কালচে। এরা অত্যন্ত তত্পর প্রাণী, চার-পাঁচটি মিলে দল গঠন করে। এরা প্রধানত মাছ খায়, তবে কাঁকড়া, স্কুইডও এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। এদের পিঠের পাখা বেশ বড়।
এবার আসি তিমির কথায়। আমাদের সুন্দরবনের মালঞ্চ নদীর মোহনার ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ থেকে শুরু হয়েছে অতলস্পর্শ ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ এলাকা। ওই এলাকায় বঙ্গোপসাগরের মহীঢাল ১০০ মিটার। কিন্তু পাশের অতলস্পর্শ ৫০০ মিটার গভীর, আরও দক্ষিণে ৮০০ মিটার গভীর। এ ধরনের অতলস্পর্শকে ‘সাবমেরিন হল’ বা সাবমেরিন ক্যানিয়ন বলা হয়। এখানে পলি জমতে পারে না। এই অতলস্পর্শ চলে গেছে শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি। এই এলাকাগুলোতে প্রচুর প্লাঙ্কটন, জেলিফিশ, ছোট চিংড়িজাতীয় প্রাণী, স্কুইড ও ক্যাটল ফিশ বাস করে। এদের খেতে এই এলাকায় জড়ো হয় ডলফিন ও তিমি।
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির মাধ্যমে এলিজাবেথ ফারনি মনসুর ও রুবাইয়াত মনসুর তাঁদের দলবল নিয়ে ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন প্রজাতির সামুদ্রিক ডলফিন এবং এক প্রজাতির তিমি খুঁজে পেয়েছেন অতলস্পর্শ এলাকায়।
অতলস্পর্শে যে তিমি প্রজাতিটি নিয়মিত দেখা যায়, সেটি হচ্ছে ব্রিডিস হোয়েল (Balaenoptera edeni)। এটি মাঝারি আকারের তিমি।
ব্রিডিস বেলিন জাতের তিমি। এদের দেহের উপরি ভাগ বাদামি থেকে সাদাটে, নাকের ছিদ্র দুটি। এই ছিদ্র দিয়ে এরা ভেসে ওঠার পর ঝরনার মতো জল ছড়ায়। ২০-২৫ মিনিট পর পর ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় আরেকটি তিমির উপস্থিতি সম্পর্কে গুঞ্জন আছে। কটকা অভয়ারণ্যের সমুদ্রসৈকতে একটি স্পার্ম তিমির (এই তিমির আকৃতি অনেকটা শুক্রাণুর মতো) মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল একবার। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন, এটি আমাদের এলাকার, নাকি দূর সমুদ্র থেকে ভেসে এসেছে।
অতলস্পর্শ এলাকায় দেখা মেলা তিন প্রজাতির ডলফিনের একটি হলো বটল-নোজ ডলফিন (Tursiops truncatus)। আকারে মোটামুটি বড়সড়, ঠোঁট লম্বাটে, অনেকটা বোতলের অগ্রভাগের মতো, চোখ স্পষ্ট, পিঠের পাখা বেশ বড়, দেহের বর্ণ উপরি ভাগ হালকা বাদামি, তলার দিকটা হালকা হলদেটে। এরা খুব আমুদে প্রাণী। ৩০-৪০টি প্রাণী মিলে মাছের ঝাঁকে আক্রমণ চালায়। অনেক লাফঝাঁপ করে, শূন্যে ডিগবাজি খায়।
বটল-নোজ ডলফিন ও স্পিনার ডলফিন (Stenella longirostris) জাহাজ বা জেলে-নৌকার কাছাকাছি থেকে সাঁতরাতে ভালোবাসে। একে বলে ‘বো রাইডিং’। পৃথিবীর যেসব অ্যাকুরিয়ামে ডলফিন শো হয়, সেখানে বটল-নোজ ও স্পিনার ডলফিনের ব্যাপক কদর।
আরেক প্রজাতির ডলফিন বঙ্গোপসাগরে দেখা যায়। এই প্রজাতির নাম স্পটেড ডলফিন। ঠোঁট লম্বাটে, পিঠের পাখার তলার দিকটা ছড়ানো, শীর্ষ দেশ সুচালো। এরাও দলেবলে শিকার করে।
দুনিয়ার মানুষের মন জয় করা এই তিমি-ডলফিনগুলো স্রেফ বিদেশি প্রাণী নয়; আমাদের সম্পদও বটে। তিমি-ডলফিনগুলোকে নিয়ে গর্ব করার পাশাপাশি এগুলো রক্ষার জন্যও কি আমরা কিছু করতে পারি না?
গত কিছুদিন আগে তাদের নিয়েই প্রথম আলোতে কিছু তথ্যবহুল ফিচার লিখেছিলন খসরু চৌধুরী ।
সেটাই সবার জানার জন্য হুবহু তুলে ধরলাম।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×