somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে মৃত্যুর রং নেই...

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা এরশাদ সরকারের মৃত্যুঘন্টা বাজার সময়। বাংলাদেশের অস্থিত্ব শেক্সপীয়ারয়ীয় TO BE OR NOT TO BE'র মত অবস্থা। হরতাল, বোমা আর লাশের উপর ভর করে গণতন্ত্রের পাগলা ঘোড়া কোন আস্তাবলে রওয়ানা হয়েছে তার নির্দেশনা স্বয়ং ঈশ্বরের কাছেও ছিল কিনা সন্দেহ। ‘স্বৈরাচার খেদাও-দেশ বাঁচাও‘, রাজনীতির নাট্যমঞ্চে জনপ্রিয় এ নাটক দাঁনা বেধে উঠ্‌ছে কেবল। 'এক ফুল দু’মালি' ধাচের এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র নায়ক মিঃ গণতন্ত্র, দেশনেত্রী ও জণনেত্রী নামের দুই নায়িকা আর ভিলেন এরশাদ হোসেন নামের স্বঘোষিত কবি। ত্রিভূজ দেশপ্রেমের এ কাহিনীতে চূড়ান্ত ক্লাইমেক্স হিসাবে আবির্ভূত হয় ম্যাংগো পিপল নামের পার্শ্ব চরিত্রের লাশ। লাশের প্রত্যাশায় চাতকের মত অপেক্ষায় থাকে নাটকের তিন পক্ষ। ফার্মগেটে লাশ পরেছে দু’টা। উড়ন্ত বাঁজপাখীর গতিতে দৌঁড়ে গেল সাবাই। লীগ দাবী করল একটা লাশ তাদের, একই লাশের দ্বিতীয় দাবিদার হয়ে দৃশ্যপটে হাজির হল দল। ভিআইপি রোড আর বংগবন্ধু রোডে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। লাশের মালিকানা হারানোর ভয়ে তটস্থ নায়িকার সেবাদাসের দল। মালিকানা দাবির লড়াই হাতাহাতির পর্য্যায়ে যাই যাই করছে প্রায়। এমন একটা টানটান অবস্থায় দৃশ্যপটে লাশের স্ত্রী হাজির হয়ে সবকিছু ভেস্তে দিল। বোমা ফাটালেও বোধহয় এতটা আহত হতনা, যতটা আহত হল স্ত্রীর দাবিতে। স্ত্রীর ভাষ্য মতে লাশের কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিলনা, সে ছিল নিতান্তই খেটে খাওয়া দিনমজুর, ভুল সময় ভুল জায়গায় অবস্থানের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। সাংবাদিকরাও এমন দাবির পক্ষে প্রমান দাঁড় করাল। ঘাটে ঘাটে গায়েবী জানাজা আর লাশ নিয়ে উত্তাল মিছিলের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় ভগ্ন হূদয়ে ফিরে গেল দুই পক্ষ। কুকুর বেড়ালের মত যেখানের লাশ সেখানেই পরে রইল। অভাব অনটনের কারণে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহায্য চাইল স্ত্রী। এবং এভাবেই নাটকের লাশ ফিরে গেল আপন গৃহে। ও দিকে দ্বিতীয় লাশের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে কোন অসূবিধা হলনা। এ লাশ পার্টির লাশ। পরাক্রমশালী পার্টি তখন ক্ষমতার ভরা যৌবনে। বড় বড় রুই কাতলা এল লাশের জানাজায়। কবি সাহেবও কবিতার মূর্ছনায় বিদায় জানালেন 'আপনজনকে'। চোখের পানি আর নাকের পানিতে গোসল করিয়ে লাশকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে ফেরৎ পাঠানো হল অন্তীম যাত্রায়।

রাজনৈতিক পরিচয় বিহীন মৃত্যুর কোন রং থাকেনা বাংলাদেশের মৃত্যুতে। শুধু পরিচয়ই আবার যথেষ্ট নয়, মৃত্যু হওয়া চাই প্রতিপক্ষের হাতে, তবেই এ মৃত্যু পরিপূর্ণ মৃত্যু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু বকর মরল রাজনীতির কারণে। যেহেতু প্রতিপক্ষের হাতে তার মৃত্যু হয়নি তাই এ ছিল খুব স্বাভাবিক মৃত্যু। এমনটাই ঘোষনা দিলেন মৃত্যুর ইহজগতের দেবতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফারুক মরল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, এবং তাতে ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাত। জেগে উঠল গোটা প্রশাষন, সদম্ভে ঘোষনা দিল খুনীদের মূল উৎপাটনের। চারদিকে পাইক পেয়াদা আর সেবাদাসের দল সমস্বরে চীৎকার করে উঠল, বিচার চাই! শুরু হল বিচার। এ বিচারের রায় পেতে সরকারকে আদালত পর্যন্ত যেতে হলনা, তার আগেই পরে গেল নতুন লাশ। ফারুক হোসেন মরেও অমর হয়ে রইল রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে। ‘গরীব & গরীব‘ নামের পোশাক তৈরীর কারখানায় আগুনে ধোঁয়ায় দম আটকে প্রাণ হারাল ২১জন গরীব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ মৃত্যুর কোন ক্যাটাগরীর নেই, তাই একে মৃত্যু হিসাবে গন্য হলনা। এ ধরনের মৃত্যু এতটাই স্বাভাবিক, এ নিয়ে ইহজগরের মৃত্যুর মালিক বিচার দূরে থাক সামান্য মন্তব্য করার তাগাদা পর্যন্ত অনুভব করলেন্‌না।

’গরীব & গরীব’এর মত লাখ লাখ গরীব পোশাক কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আমাদের অর্থনীতি। এ অর্থনীতির কলকব্জা ঘোরানোর জন্যেই মন্ত্রী নামের চাকরদের নিয়োগ দেয় জনগণ। মন্ত্রীরা আসেন, দেখেন এবং নেত্রী পূঁজার ফাঁকে ফাঁকে নিজদের পকেট ভরেন। যে ২১জন গরীবকে হিটলারের গ্যাস চেম্বারীয় কায়দায় হত্যা করা হল তার মূলেও রেয়েছে আমাদের জনবিচ্ছিন্ন ও নেত্রী পূঁজার রাজনীতি। আগুনে পুড়ে ঘন ঘন প্রাণ হারাচ্ছে পোশাক কর্মীর দল এবং খবরগুলো দাবানলের মত ছড়িয়ে পরছে পৃথিবীর দেশে দেশে। সেদিন বোধহয় বেশী দূরের দিন নয় যেদিন পোশাক আমাদানীকারক দেশগুলো আলটিমেটাম দিয়ে বন্ধ করবে বাংলাদেশ হতে পোশাক আমদানী। নেত্রীর পদলেহনকারী এসব মন্ত্রীদের চটাং চটাং কথার রসদ সেদিন কোত্থেকে জোগাড় হবে তা ভেবে চিন্তিত হওয়ার দিন বোধহয় ঘনিয়ে আসছে এবার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৬:০৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×