somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

শঙ্কা বাড়ছে, সরকার কি অনুধাবন করছে?

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শঙ্কা বাড়ছে, সরকার কি অনুধাবন করছে?
ফকির ইলিয়াস
========================================
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বাঙালিদের মাঝে দাঙ্গা চলছে। সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যে দাঙ্গায় হতাহতের ঘটনা কাঁপিয়ে তুলেছে শান্তির ভিত। সরকার বিভিন্নভাবে এ দাঙ্গা দমনের চেষ্টা করলেও তা সমাধান করতে পারছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে আবারও সেনা মোতায়েন করবে সরকার। এবং তা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
এদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে ক'দিন আগে বোমাসাদৃশ বস্তু পাওয়া যায়। গেল মঙ্গলবার রাতে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে বলে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে একুশের দিনে শহীদ মিনার থেকে পুষ্পার্ঘ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রলীগ নামধারী পাষন্ডদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন একজন তরুণী।
বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি তীব্র শঙ্কা আর প্রতিকূলতার মুখোমুখি বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। এই যে অশনি সঙ্কেত এর নেপথ্যে কে? বা কারা? তা খুঁজে দেখতে সরকার খুব দৃঢ় প্রত্যয় দেখাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। যদি সরকার শক্তিশালী অবস্থান নিত, তবে একের পর এক ঘটনাবলি রাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে তুলত না।
মনে রাখা দরকার, প্রতিক্রিয়াশীলরা সব সময়ই নিজেদের খোলস পাল্টায়। তারা কেন তা করে, তা বোঝা কিংবা জানা যায় কিছুদিন পরই। সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের শীর্ষ ২৪ জন ছাত্রনেতার পদত্যাগের ঘটনা তেমনি জল্পনার জন্ম দিয়েছে। শিবিরের ইতিহাসে এটি একটি বড় ঘটনা। কেন এমনটি হলো? এর দুটি কারণ অনুমান করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে, মৌলবাদী জঙ্গিপনা, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদিতার বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ করে এসব নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা দলীয় শীর্ষ নেতাদের অবৈধ আধিপত্য মেনে নেননি।
আর দ্বিতীয়টি হতে পারে, রাষ্ট্র যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে উন্মুখ তখন তারা সাময়িকভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে মুখোশাবরণে গিয়েছেন মাত্র। এটা তাদের কৌশল বদল ছাড়া অন্য কিছু নয়। তারা জনসমক্ষে 'পদত্যাগ' দেখালেও নেপথ্যে থেকে নিজেদের শীর্ষদের মতবাদই প্রচার এবং পালন করবেন।
কোনটা সত্য, তা জানতে-বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে। তবে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবেই। কারণ শিবির নেতাদের এ পদত্যাগ মোটেই ছোট করে দেখার বিষয় নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর আগে 'হিজবুত তাহরীর' নামের একটি সংগঠনকে এ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল। মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রজন্মের মাঝে জঙ্গিবাদ, কট্টরবাদিতা ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা যারা করছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ধর্মীয় চেতনা প্রতিষ্ঠার নামে জিহাদী উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা একটি লক্ষ্যণীয় বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে যারা নিজেদের ধর্মীয় প্রচারণা সংগঠন বলে দাবি করে। মুসলিম উম্মাহ ইন আমেরিকা (মুনা), ইসলামিক সার্কেল ইন নর্থ আমেরিকা (ইকনা), দাওয়াতুল ইসলাম প্রভৃতি সংগঠনের সংগৃহীত বড় অঙ্কের ফান্ড কোথায় যায়, কী কাজে ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে বেশ অনুসন্ধিৎসু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা।
এটা সবারই জানা, যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশ, যে দেশ সাংবিধানিকভাবে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। 'ফ্রিডম অব রিলিজিওন' বিষয়টি সাংবিধানিকভাবেই এখানে স্বীকৃত। কিন্তু সে স্বাধীনতার অপব্যবহার করে কেউ যদি কট্টরবাদের আশ্রয় নেয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনি বিধিকে চ্যালেঞ্জ করে তবে তা হতে পারে জঘন্য অপরাধের শামিল। যুক্তরাষ্ট্র এখন গোটা বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নিজ ভূমির অভ্যন্তরে বিষয়টির বিস্তার সম্পর্কে বেশ সতর্ক হয়ে উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে যেসব মুসলিম ধর্মাবলম্বী বন্দি রয়েছেন, তাদের মাঝে ধর্মীয় বাণী প্রচারের জন্য ইমামরা দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বেশ কিছু ইমাম প্রকারান্তরে এসব বন্দির মাঝে কট্টরবাদিতা ছড়ানোর প্রয়াসী হয়েছেন। এ নিয়ে 'চ্যানেল ফাইভ' একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এফবিআই কর্তৃক তল্লাশির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ইমাম নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন গোয়েন্দাদের গুলিতে। এ ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি উত্থাপিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী মহলে। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি প্রশাসনকে শঙ্কিত করে তুলেছে তা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পদে আসীন মুসলিম কর্মজীবীদের কারও অপতৎপরতার আশঙ্কা। সে সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ধর্মীয় মৌলবাদ ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা।
এখানে বিভিন্ন মসজিদ কর্তৃক পরিচালিত যেসব ইসলামি স্কুল রয়েছে তাদের শিক্ষা ক্যারিকুলাম সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। তারপরও ধর্মীয় অনুশাসন (কোরআন-হাদিস) পড়ানোর নামে কোন ছাত্রছাত্রীর ব্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে কি-না সে বিষয়টিও পরখ করে দেখছে শিক্ষা বিভাগ। বিশেষ করে নিইউয়র্ক, নিউজার্সি, শিকাগো, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো বহুল মুসলিম অধ্যুষিত অঙ্গরাজ্যে বিভিন্ন ইসলামি স্কুলগুলোর প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি সে সত্যই প্রমাণ করছে।
বর্তমান এ সময়ে ওসামা বিন লাদেন বেঁচে আছেন কি-না তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। অনেকে মনে করেন, একটি জুজুর ভয় বাঁচিয়ে রাখতেই বিন লাদেন ইস্যুকে স্থায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বিন লাদেন এবং তার অনুসারীরা বারবার বলছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রক্তে আমাদের বীজ পুঁতে দিয়েছি। প্রকারান্তরে তারা নতুন প্রজন্মের আমেরিকান মুসলিমদেরই বুঝাতে চাইছেন।
ধর্মের মৌলবাদী উন্মাদনা কিংবা কট্টরপন্থি ধারা, সমাজের কল্যাণে কি প্রকৃতপক্ষে কোন কাজে আসে? এ প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন সম্প্রতি একটি নিবন্ধে ,যুক্তরাষ্ট্রের একজন সমাজ বিশ্লেষক ড. ওয়ারেন নিগেলস। তিনি বলেছেন, 'কট্টরপন্থিরা প্রথমে শান্তির বাণীর দোহাই দিলেও পর্যায়ক্রমে তারা নিজেদের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। আলজেরিয়া, সোমালিয়া এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অথবা শিয়া-সুন্নীদের মাঝে যে কলহ, দাঙ্গা চলছে সেটা কি প্রমাণ করে না এরা আসলে শান্তি নয় বরং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকেই লালন করছে।'
বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যে জঙ্গিবাদী গ্রুপগুলো নানা অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে এরা মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। ১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এরা নানা প্রকারে, নানা আবরণে আবির্ভূত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এসব বিভিন্ন গ্রুপকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টাই করছে মাত্র। নিজ নিজ ভূমিতে এসব অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে-সেসব দেশের গণমানুষকেই।
নিউইয়র্ক, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি- সেলী ফর্ড

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×