somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখালীর বনলতা সেন (রম্য গল্প)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রদের এখনো নবীন বরণ হয় নি। ক্লাশ শুরু হয়েছে প্রায় ২ সপ্তাহ হতে চলল...
প্রতিদিনের মতো আজও ক্লাশ শুরু হওয়ার কথা কিন্তু ১০ মিনিট পেরিয়ে যাবার পরও স্যার আসছেন না। নবীন বরণ কবে হবে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই! নিজেরাই নিজেদের বরণ করে নেয়ার চেষ্টায় রত সবাই... ফলে পুরো ক্লাশ সরগরম বাজার হতে সময় নিল না...
পুরো ক্লাশ আলাচনা, সমালোচনা, হিসাবনিকাশ, পরিচিতি, বন্ধুত্ব, বিনিময় প্রথা, কবিতা প্রভৃতিতে মেতে উঠেছে!

এখানে দুটো জিনিস বেখাপ্পা লাগতে পারে... একটি হল হিসাবনিকাশ আর একটি হল কবিতা। ক্লাশে আবার কিসের হিসাব নিকাশ হবে? আসলে হিসাবনিকাশ যা হবার হচ্ছে ঐ প্রথম বেঞ্চে...মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা নোট পাবার মানসে একে অপরের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে!

দ্বিতীয় বেখাপ্পা জিনিসটি হল কবিতা। কলেজের ছাত্ররা কবিতা লিখতেই পারে... কিন্তু স্যার নেই এমন অবস্থায় পুরো ক্লাশ যেখানে আনন্দে মেতে উঠেছে সেখানে কোন ছাত্র যদি কবিতা লেখার চেষ্টা করে সেটা একটু হলেও আমাদের চোখে কেমন যেন ঠেকে!
হ্যাঁ কবিতা লেখা হচ্ছে ... না! ভুল হল বোধহয় ! কবিতা লেখার চেষ্টা করা হচ্ছে ... কবিতাটা যদি লেখা শেষ হয় তাহলে আপনারা জানতে পারবেন... এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নেই!

এই কবিতা প্রয়াস চলছে ক্লাশের একেবারে শেষ বেঞ্চে। যেখানে একটি হ্যাংলা শুকনো হাঁড়ি মুখের তরুণ কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে চেষ্টা চালিয়ে যাক আমরা আবার একটু ঘুরে আসি প্রথম বেঞ্চ থেকে যেখানে ক্লাশের তথা জেলার সবচে মেধাবী ছাত্র মীরুর সাথে দুই ভয়ংকর রূপবতী তরুণী এবং এক মায়াবতী নোট পাবার মানসে বন্ধুত্বের কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে...
ভয়ংকর রূপবতী দুজন আবার ভয়ংকর রকম মেধাবীও বটে! ভয়ংকর বলার কারণ তাদের অভিভাবকরা তাদের অতি মেধা নিয়ে চিন্তিত... ওদের একজনের বড় ভাই ছাত্রজীবনে এতই মেধাবী ছিল যে ইন্টারমিডিয়েটে উঠে সে যেন কেমন হয়ে যায়... তারপর একদিন পশুপ্রেমী হয়ে এখন বনে জঙ্গলে ঘুরে! সুতরাং ভয়ংকর রূপবতী মেধাবী কন্যাটি এবার ইন্টারে কী করে তাই নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ।

যাই হোক এটা তাদের চিন্তা তাদেরই থাক। আমাদের চিন্তা কবি ও মায়াবতী কে নিয়ে। মায়াবতীও বিরাট মেধাবী। জেলায় তাঁর স্থান ৫ম। সেও প্রথম মানে মীরুর সাথে বন্ধুত্বের কূটনৈতিক আলোচনায় রত। অবশ্য মায়াবতীর রূপ প্রথম দর্শনেই কারো নজর কাড়ে না... তবে কেউ যদি জীবনানন্দের বিরাট ভক্তদাস হয় তাহলে ভিন্ন কথা!

কী আশ্চর্য! সৃষ্টিকর্তার এই মানুষ মানুষ খেলা! এই ক্লাশেই জীবনানন্দের সেই ভক্তদাস বসে আছে! বসে আছে একেবারে ক্লাশের শেষ বেঞ্চে... যেখানে একটি কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে ... সে অবশ্য সহজে হতাশ হচ্ছে না। ব্যর্থ হয়ে সে আবার নবউৎসাহে নতুন করে শুরু করছে।
এবার তার সংক্ষিপ্ত কলেজ জীবনী বলে নিই। প্রথম দিন সে কলেজে এসছে সেই হিন্দি গানটা আবৃত্তি করে! কবি তো গাইতে পারে না! আবৃত্তি পারে! সে আবৃত্তি করতে করতে এসেছে... ‘প্যাহেলা দিন হ্যায় কলেজ কা... ডর লাগতা হ্যায়!’ আপনাদের কী এই গানটার মিউজিক ভিডিওটির কথা মনে আছে? আমি জানি মোটেও মনে নাই! অনেকে হয়ত গানটিই শোনেননি। এই যেমন ধরুন আমি নিজেই শিল্পীর নামটাই ভুলে গেছি! তবে মনে আছে গানের প্রথম দুটো লাইন আর মিউজিক ভিডিওটির কথা...

আমাদের কবির মতই হ্যাংলা তরুণ কলেজের প্রথম দিন ভয়ে ভয়ে ক্লাশে আসে... প্রথম দর্শনেই সে প্রেমে পড়ে যায় একটি মেয়ের! মেয়েটিও ছেলেটিকে পছন্দ করে ফেলে!
কী আশ্চর্য! আমাদের কবিও একই গান গেয়ে কলেজে আসল এবং প্রথম দর্শনেই মায়াবতী সামিনার প্রেমে পড়ে গেল!
তবে...তবে সামিনা তাকে দেখেও নি... দেখলেও খেয়াল করে দ্যাখেনি... প্রেমে পড়ার তো প্রশ্নই আসে না! কারণ সামিনার টার্গেট মীরু... নোটই প্রধান কারণ বোধহয়... অবশ্য কোন বিশ্বস্ত সূত্র ছিল না তাই বিস্তারিত খবর পাওয়া যায়নি!

কবি প্রথম দিনই বসেছিল শেষ বেঞ্চে। সামিনা প্রায়ই মীরুর সাথে প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য যুদ্ধ করে অন্যদের সাথে! দুদিন পর কবি যখন দেখল সামিনার ভেতরে কবি কে খুঁজে নেয়ার দূরতম সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না তখন সে নিজেই কবিকে সামিনার সাথে পরিচিত করাতে চাইল! কবির প্রথম কেীশল ছিল নিম্নরূপ--

সে পেছনের বেঞ্চ থেকে বাইরে বের হয়ে গেল... বাইরে সামান্য গিয়ে আবার ফিরে এলো...ফিরে এলো সামিনার সামনে দিয়ে কিছুটা দৃঢ়পদে... (মুখ দিয়ে শব্দ না করে জুতা দিয়েই শব্দ করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে সে!) এভাবে তিনবার সে একই কাজ করল একটু পরপর... সামিনা তখন কূটনৈতিক বৈঠকে ব্যস্ত! কে আসল কে গেল তার দেখার সময় কই!
কবি দেখল সামিনা যেন মীরুর সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে! সে শুনল সামিনা মীরুকে আপনি আপনি করে বলছে!
ও! তাহলে সেও কবির মতই নার্ভাস? আহারে! নার্ভাস+নার্ভাসী হলে কতই না ভাল হত! জীবনানন্দময়ই হতো!
নাহ্ মনে হচ্ছে সেটা হবার নয়!

তবে কবি হাল ছাড়ল না! সে তার দ্বিতীয় কেীশল প্রয়োগ করল--

সে বহু সাহস সঞ্চয় করে তৃতীয় বেঞ্চে বসেছে। সামিনা বসেছে দ্বিতীয় বেঞ্চে। সে ভেতরে ভেতরে রোমান্টিকতার শীতে কাঁপছে...আর দেখছে ... দেখছে আর কাঁপছে!
হঠাৎ কবির সব শেষ! সব শেষ!

মীরু সামিনাকে বলে উঠল,‘তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন? আমাকে তুমি করেই বলো!’
একথা শুনে সামিনার চোখমুখ যে কী উজ্জ্বল হয়েছে তা আর বলার নয়! আর কবির চোখমুখ যে কী রকম অন্ধকার হয়েছে তা বলার আছে...এতোক্ষণ তো সে রোমান্টিক শীতে কাঁপছিল তবে এবার সে ছ্যাঁকার গরম অনুভব করা শুরু করে... শ্যামলা মুখখানি পুড়ে যাওয়া পাতিলের তলার মতো করে সে ধীরে ধীরে তৃতীয় বেঞ্চ ছেড়ে পুরানো ঠিকানায় যাত্রা করে! সামিনা নগদ সুযোগের সদ্ব্যবহারে ব্যস্ত... বাকীর খবর নেয়ার সময় তার কই?

আজ স্যার এখনও আসেনি। প্রথম ক্লাশ বোধহয় হবে না...
বাকীরা কলেজ জীবনের আনন্দ কে পুরো উপভোগ করে জীবন কে জীবনানন্দময় করে তোলায় ব্যস্ত...
আর শেষ বেঞ্চে শেষ কোণায় স্বপ্নভঙ্গের বেদনাক্রান্ত কবিও তার জীবনকে জীবনানন্দময় করে তোলার চেষ্টায় রত... সে শেষ বেঞ্চের শেষ কোণায় থাকায় সামিনাকে দেখতে পাচ্ছে! সামিনার চুল তার পিঠের উপর ছড়িয়ে রয়েছে... কবি লোভ সামলাত পারল না এই সেীন্দর্যকে কবিতায় গেঁথে ফেলতে...

সে পংক্তি আনার চেষ্টা করছে ঝাড়া ৩০ মিনিট ধরে... কিন্তু পংক্তি আসছে না! তার পংক্তি গুলো বোধহয় সামিনার চুলের সাথে পেঁচিয়ে গেছে! সামিনার মাথা থেকে তার মাথায় আসতে পারছে না!
তবু সে হাল ছাড়ল না... সে চোখ বন্ধ করে আবার চেষ্টা করল...
এবার তার কবিতার পংক্তিগুলো বনলতা সেন আর সামিনার চুলের প্যাঁচাপেঁচিতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে...

অন্ধকার! অন্ধকার!
নাই কোন অধিকার
চোখ খুলিয়া চাহিবার!
মীরু কে নার্ভাস হয়ে বলেছিলে,
তুমি কী নোট এনেছেন?
আমাকে কী কোনদিনই বলবে না,
এতদিন কোথায় ছিলেন?
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নোয়াখালীর বনলতা সেন!

-------------------------



২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×