somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ সমূহ

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান ও পদক্ষেপসমূহ

আজমাল হোসেন মামুন
সিঃ সহ-সমন্বয়কারী (আইএমসিএস)
বিপিকেএস।

বাংলাদেশের মত দেশে দু’মুঠো খাবার খেয়ে বাঁচতে পারায় দায়। কারণ, এদেশ আয়োতনের দিক থেকে ৯০তম স্থানে হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ৭ম। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ২০০৯ সালের বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান জনসংখ্যা হচ্ছে, ১৬ কোটি ২০ লাখ। অথচ ১৯৭১ সালে জনসংখ্যা ছিলো মাত্র সাড়ে ৭ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে,এ জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ ১০ ভাগ তথা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতার শিকার। অধিকাংশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব হয় নি এ দেশের। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থার আশাতীত উন্নয়ন ঘটেনি। এরা সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিত, অনগ্রসর ও দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠী হিসেবে রয়ে গেছে। অতি দুঃখের সাথে বলতে হয়, স্বাধীনতার ৩৯টি বছর অতিক্রম করলেও আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সঠিক পরিসংখ্যান হয় নি। আদম শুমারি হলেও সঠিক সংখ্যা নিরূপণ হয় নি। ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী হচ্ছে জনসংখ্যার ১.৬ ভাগ অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার যা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) এর মতে ৭ দশমিক ৮ ভাগ, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের মতে, ৮ দশমিক ৮ ভাগ এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের মতে,৫ দশমিক ৬ ভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বাংলাদেশে রয়েছে।
ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান সমন্ধে ভালোভাবে জানা সম্ভব হয় নি। যেটুকু জানা গেছে তা প্রতিবন্ধী স্ব সংগঠন সমূহের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করার মাধ্যমে। হয়ত: স্ব সংগঠন কাজ না করলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অবস্থান বিভিন্ন ভাবে তুলে ধরা গেলেও নিম্নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান সম্বন্ধে আমার ব্যক্তিগত ধারণা দেওয়া হলো:

পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারের অবস্থান কেমন সে সম্বন্ধে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাস্তব ধারণা রয়েছে। কারণ, পরিবার থেকেই তাদের অবস্থান তৈরি হয়। তবে একথা সকলকে স্বীকার করতে হবে যে, কোন না কোন ভাবে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোন পরিবারে বেশি, কোন পরিবারে কম। অবহেলার দরুণ হতাশা, দুর্দশা, দারিদ্র্যতার অভিশাপ নিয়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করে। যেখানে ৮০ ভাগই জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে বলে ঠিক মতো তিন বেলা খাবার জোটে না। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থা আরো গুরম্নতর। অনেক সময় অনাহারে জীবন কাটাতে হয় অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের। পরিবার তিন বেলা খাবার দিতে পারে না সেখানে কিভাবে আবার স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষার ব্যবস্থা করবে তা সকল মানুষই বুঝে। ফলে জনসচেতনতার অভাবে কোন কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবার তাদের বোঝা হিসেবে ধরতে দ্বিধাবোধ করেন না। অনেক পরিবারে গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুর্দশা ও কষ্ট দেখে মহান আল্লাহর কাছে প্রতিবন্ধী সন্তানের মৃত্যু কামনা করে। অনেক পরিবারে নারীর ওপর দোষ চাপিয়ে প্রতিবন্ধী সন্তান ও তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অনেক সময় প্রতিবন্ধী সন্তানের মাকে হত্যা পর্যন্ত করে যা ইতোপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাড়িতে থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অসহায়ভাবে বেকার জীবন যাপন করে বলে তাদের মতামত সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হলেও তা পরিবার গুরুত্ব দেয় না। তবে স্ব সংগঠন সমূহের কার্যক্রমের ফলে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পরিবারের সংসারের দায় দায়িত্ব পালন করছে। তবে তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য।
অতি দরিদ্র্য পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশু বা ব্যক্তিকে আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য করে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করে। এবার আসা যাক মধ্য বিত্ত ও ধনাঢ্য পরিবারে দিকে। ধনী পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরো লাঞ্ছিত, অপমানিত, দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাঁরা পরিবারে পরিচয় দিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী সন্তানটির কথা মোটেও ভাবে না অর্থাৎ গোপন রাখে। সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার কথাতো চিন্তা করাই যায় না অনেক সময়। আর্থিক সঙ্কট না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে দ্বিধাবোধ করে। যৌবন বয়স অতিক্রম করলেও বিয়ের খোঁজ রাখে না। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ক্ষেত্রে কোন অধিকার দেওয়া হয় না পরিবার থেকে।

পরিবারের বাইরের অবস্থান: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব সংগঠন সমূহ তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ প্রতিবন্ধিতা বিষয় সম্বন্ধে অবগত হলেও সে সব এলাকায় কাজ শুরু হয় নি সে সব এলাকার শিক্ষিত ও সুশীল সমাজও প্রতিবন্ধিতা বিষয় সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত নয় বলে সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রতিকুল পরিবেশ আজও গড়ে ওঠেনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের। সমাজে নেই তাদের মানুষ হিসেবে মর্যাদা। ফলে এলাকার জনসাধারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এখনও বিভিন্ন ব্যাঙ্গ করে সম্বোধন করে। সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কিছুই করতে পারে না। তাই সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ কম। ফলে তারা সমাজের বৈষম্যের শেকল পুরোপুরি ভাংতে পারে নি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী। অনেক সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিয়ে দিতে চায় না। তাদের প্রজনন ক্ষমতাকে অস্বীকার করা হয় বললে ভুল হবে না। সমাজে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতার পরিমাণও কম। মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের কোন ভূমিকা রাখতে দেওয়া হয় না। সামাজিক সাংস্কৃতি কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ করা হয় না প্রবেশগম্যতা অভাবে। নিম্নে সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করছি:

(1) স্থানীয় পর্যায়ে: স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে যেমন অবহেলার শিকার তেমনি স্থানীয় ভাবে অনেকে বৈষম্যে শেকল ভেঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে মর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে। যেমন: অনেক স্থানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যঙ্গ করে ডাকা হয়। আবার অনেক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা আত্মপ্রত্যয়ে বলিয়ান হয়ে বিভিন্নভাবে সমাজে অবদান রাখছে। কেউ শিক্ষকতা করছে, ব্যবসা করছে, খুদ্র কুটির শিল্প পরিচালনা করছে, কৃষি কাজসহ নানা কাজ করছে। প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-শুনা করছে। ২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এককভাবে অংশগ্রহণ করে ১৬ জনই বিজয়ী হন এবং তারা এখনও দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
(2) জেলা পর্যায়ে: যদিও একসময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঘর থেকে বের হওয়া খুব কষ্টকর ও লজ্জাকর ব্যাপার ছিলো। কিমত্মু এখন অনেকাংশে সে ধ্যান ধারণা পাল্টেছে অনেকট ক্ষেত্রে। যেমন: অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা প্রদান কার্যক্রম ও প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের উপ-বৃত্তি প্রদান জেলা স্টিয়ারিয় কমিটিতে প্রতিবন্ধী নারী ও প্রতিবন্ধী পুরম্নষ উভয় সুযোগ পেয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অনেক স্থান প্রবেশগম্য করে তৈরি করা হয়েছে যদিও তা সমত্মসজনক নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন দিবসে সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের সমস্যা সম্বন্ধে তুলে ধরতে পারছে।

(3) জাতীয় পর্যায়ের অবস্থান: বর্তমানে জাতীয় পর্যায়েও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেক এগিয়ে চলেছে পূর্বের তুলনায়। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা প্রদান কার্যক্রম জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি, উপ-বৃত্তি প্রদান কমিটি, ও প্রতিবন্ধিতা জাতীয় সমন্বয়ক কমিটিতে প্রতিবন্ধী স্ব সংগঠনের প্রতিনিধি রয়েছে। যেমন: আবদুস সাত্তার দুলাল ও লাল মুন থং বম ইত্যাদি।

(4) আমত্মর্জাতিক পর্যায়ের অবস্থান: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায় নয়, আমত্মর্জাতিক পর্যায়ের অবস্থানকেও খুব খাটো করে দেখার অবকাশ শেষ হয়েছে অনেক আগে। বর্তমানে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রতিনিধি বাংলাদেশের একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ডিজএ্যাবল্ড পিপলস্ ইন্টারন্যাশনাল (ডিপিআই) এর গেস্নাবাল সেক্রেটারী জনাব, আবদুস সাত্তার দুলাল দায়িত্বশীলতার সাথে প্রতিনিধিত্ব করছে যা বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।


আয়মূলক কর্মকান্ডে অবস্থান: যদিও আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। তবুও সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা’র সহযোগিতায় অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আয়মূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে যাদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোকপাত করছি:

(1) কৃষি কাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান: কৃষি উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবদান রয়েছে, তা সরকারও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) ‘কৃষি উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে। যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ,প্রতিবন্ধী স্ব-সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ওই কর্মশালার সুপারিশের ভিত্তিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে একটি সরকারি আদেশ জারি করেন। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কৃষি, মৎস্য চাষ ও পশু পালনের ক্ষেত্রে সরকারি সংশিস্নষ্ট উপজেলা পর্যায় থেকে প্রতিবন্ধী কৃষকদের সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কৃষিঋণ বিতরণকারী সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বরাবর একটি সার্কুলার জারি করেছে যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কৃষি ঋণ পায়।
(2) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: যান্ত্রিক যুগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা টিকিয়ে রেখেছে বিভিন্ন হসত্ম শিল্প ও কারম্ন কার্য সম্বলিত বসত্মুকে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ের অনেক প্রতিবন্ধী নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হসত্ম শিল্প ও কারম্নকার্য সম্বলিত বসত্মু তৈরি করছে। ওসব বস্ত্ত জাতীয় ও আমত্মর্জাতিক পর্যায়ে নজর কাড়ছে। যেমন: জামালপুর ডিপিওডি ও টাঙ্গাইল ডিপিওডির প্রতিবন্ধী সদস্যদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি।
(3) সরকারি ও বেসরকারি চাকুরি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মর্যাদার সাথে চাকুরি করছে। তবে দিন দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি চাকুরি প্রার্থীদের জীবন বৃত্তামত্ম ‘বিপিকেএস’ সহ বিভিন্ন সংগঠন সংগ্রহ করছে। যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।
(4) তথ্য, যোগাযোগ এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা: আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্ক্রীন রিডার সফট্ওয়ারের মাধ্যমে অনায়াসে কম্পিউটার চালাতে সক্ষম। অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও কম্পিউটার বিভাগে কাজ করছে।



শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান: বাংলাদেশে প্রায় ১৬ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। অথচ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার উপযুক্ত সুযোগ ও অনুকূল পরিবেশ নেই। ২০০৫ ইং সালে প্রকাশিত ‘‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়’’ গ্রন্থের তথ্যানুসারে এই দেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য পাঁচটি (মোট সিট ২৪০), বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি (মোট সিট ১০০), শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সাতটি ( মোট সিট ২৭০) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তিনটি প্রতিবন্ধী মডেল স্কুল (মোট সিট ১৯০) রয়েছে। সমন্বিত কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় একটি স্কুলে ১০ আসন হিসেবে ৬৪ জেলায় ৬৪০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ২০ টি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দু-তিনটি, অটিস্টিকদের জন্য চারটি এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫০ টি স্কুল ও সংগঠন বা সংস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় নিম্ন বিত্ত পরিবারের নাগালের বাইরে। তবুও বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে অসংখ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়ন করছে। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ জন প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪% শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।

গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ: আমাদের বাংলাদেশে ১৯৮৫ সাল থেকে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। এর পূর্বে দৃষ্টি এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যক্রম শুরম্ন হয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে আমাদের দেশে। তবে সরকারি পদক্ষেপ গৃহীত হওয়ার পিছনে যেমন বেসরকারি সংগঠন সমূহের এ্যাডভোকেসি ও লবিং রয়েছে তেমনি বেসরকারি পদক্ষেপ গৃহীত হওয়ার পিছনে সরকারের সমর্থন রয়েছে।

সরকারি পর্যায়ের পদক্ষেপ সমূহ:

(১) আমত্মর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় দলিল, আইন, কনভেনশন ও নীতিমালা অনুমোদন: আমরা অনেকেই জানি, জাতিসংঘ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য প্রথম দশক ১৯৯৩-২০০২ ঘোষিত হয় এবং এ দশকের লক্ষ্য অর্জনে ১২ দফা এজেন্ডা ফর এ্যাকশন গ্রহণ করা হয়। প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা ডিসেম্বর ১৯৯৫ প্রণীত হয়েছে। ২০০১ সালের ৪ এপ্রিল জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসে ‘জাতীয় সংসদ’ এর অনুমোদনক্রমে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১’ পাস হয়। ৯ মে ২০০৭ তারিখে ৯১ তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক সনদকে স্বাক্ষর করে র‌টিফাই করেছে।

(২) শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ইশারা ভাষার স্বীকৃতি: মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ২০০৯ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারী বইমেলা উদ্বোধনকালে ইশারা ভাষায় টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে এখন ইশারা ভাষায় সংবাদ প্রচার করা হয়। বেসরকারি চ্যানেল সমূহ এগিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন সমূহ লবিং ও এ্যাডভোকেসি করছে।

(৩) বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তক ও ব্যাচেলর অব ইডুকেশনে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রবন্ধ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এবারের শিক্ষা নীতিমালায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা বিষয়ে অনেক কিছু অমত্মর্ভূক্ত করেছে।
(৪) সরকারিভাবে মর্যাদার সাথে দিবস উদ্যাপন: সরকারিভাবে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর ১৯৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যৌথভাবে ৩ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’ এবং ২০০১ সাল থেকে প্রতি এপ্রিল মাসের ১ম বুধবার ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’ উদ্যাপন করে থাকে। উক্ত দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান মন্ত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রোড়পত্র বের করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান তুলে ধরেন সমাজে।
(৫) মিডিয়ায় প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে প্রচারণা: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সফলতা ও ব্যর্থতার কাহিনী বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল ও সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়ে থাকে। প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যাপারেও নানা মুখী অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হয়।
(৬) প্রবেশগম্যতা: হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহজভাবে প্রবেশগম্যতার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী কল্যাণ বিধিমালা ২০০৮ এর গেজেটে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার জন্য ইমারতের নূন্যতম মান নিশ্চিত করতে।

(৭) সরকারি চাকুরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটা সংরক্ষণ: সরকারি ৩য় ও ৪র্থ শেণী চাকুরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অনাথদের জন্য ১০% ভাগ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও এবারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা উল্লেখ ছিলো। তবে বিসিএস ক্যাডারে ১% কোটা সংরক্ষণের প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।

(৮) প্রতিবন্ধিতার সনদ পত্র প্রদান: সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলা পর্যায় থেকে প্রতিবন্ধিতার সনদ পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। এ সনদপত্র চাকুরি, ব্যাংক ঋণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।

(৯) পরিবহন ও যাতায়াত: রেল, নৌপরিবহন ও বাসে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নৌপরিবহন ও রেল ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ হ্রাস করা হয়েছে। বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৯ টি আসন সংরক্ষিত রাখা রয়েছে।
(১০) স্বাস্থ্য সুবিধা: সরকারি হাসপাতাল সমূহে গরিব, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা সুবিধার জন্য সমাজ কল্যাণ বিভাগ নামে একটি শাখা চালু রয়েছে।
(১১) সরকারি প্রশিক্ষণ: শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। পাশাপাশি খুলনা উপ-কেন্দ্র, চট্টগ্রাম, রাজশাহী পিএইচটি সেন্টারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।
(১২) বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অর্থ বরাদ্দ: জাতীয় রাজস্ব বাজেটে প্রতিবছর সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ভাতা, উপবৃত্তি ও বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে।
(১৩) জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন ও ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ: সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূলস্রোত ধারায় সম্পৃক্ত করে নেতৃত্ব গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত সংগঠন সমূহকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এছাড়াও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধী শাখা, সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় প্রতিবন্ধী বিষয়ক ৪৬ জন ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
(১৪) ব্রেইল প্রেস: গাজীপুরের টঙ্গীতে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে একটি ব্রেইল প্রেস রয়েছে। সেখান থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন বই তৈরি করা হয়।
(১৫) বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত: ১৯৯১ সালে সরকারি উদ্যোগে মিরপুরে ‘জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালঢের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় এ উদ্যোগ খুবই সামান্য।

বেসরকারি সংগঠন সমূহের পদক্ষেপ সমূহ:
(1) বিভিন্ন প্রকল্প বাসত্মবায়ন: দাতা সংস্থা ও ব্যক্তিদের নিজস্ব সহায়তায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত সংগঠন সমূহ বিভিন্ন প্রকল্প বাসত্মবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকান্ড গৃহীত হয়েছে। যেমন: সিবিআর, আইবিআর, ইনক্লুসিভ এ্যাপ্রোচ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিভিং এবং পিএসআইডি এ্যাপ্রোচ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে ‘উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-উদ্যোগ (পিএসআইডি)’ এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বেশি লাভবান হয়েছে।
(2) সহায়ক উপকরণ তৈরি: বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ সহায়ক উপকরণ তৈরি করে থাকে। যার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চলাফেরা করে থাকে। যেমন: বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস), জাকির হয়িট ক্যান, সাইক ও ব্র্যাক ইত্যাদি।
(3) থেরাপী সার্ভিস প্রদান: যে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থেরাপী প্রয়োজন তাদের থেরাপী সার্ভিস প্রদানের উদ্দেশ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ কাজ করে। যেমন- বিপিকেএস ও সিআরপিসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন।
(4) বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান: বেসরকারি সংস্থা সমূহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। যেমন- বিপিকেএস কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করে, ভকেশনাল ট্রেনিং অব দ্যা বস্নাইন্ড (ভিটিসিবি)’ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চক-প্রেন্সিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
(5) স্কুল পরিচালনা: শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের স্কুল পরিচালনা করে বেসরকারি সংগঠন সমূহ। যেমন- সুইডস্ বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক চিলড্রেন (সোয়াক) অটিস্টিক শিশু এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জাতীয় বধির সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতষ্ঠান স্কুল পরিচালনা করে থাকে। যদিও এসব স্কুলে শিক্ষা অর্জন ব্যয়বহুল।
(6) বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি: বেসরকারি সংস্থা সমূহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলা-ধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। যেমন- জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতি প্রতিবছর বিভিন্ন খেলা-ধূলার আয়োজন করে, বিপিকেএস হ্যান্ডি ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় প্রতিবছর শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাপানে পাঠিয়ে থাকে। ২০০৪ সালে চাঁদপুর ডিপিওডি’র অর্থসচিব হাফসা হ্যান্ডি ম্যারাথনে প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
(7) বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে সরকারকে সহায়তা: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত সংগঠন সমূহ গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করে। যেমন: বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা, জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইন ও শিক্ষা নীতিমালার খসড়া প্রণয়নে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। ফলে সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যাপারে স্পষ্ট উলেস্নখ রয়েছে।
(8) গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা: বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর গবেষণা করে থাকে। সিএসআইডি, ইউনিসেফ ও বিপিকেএস ইতোপূর্বে গবেষণা করেছে। বিপিকেএস-এর গবেষণার নাম হচ্ছে, ইমপ্যাক্ট স্টাডি অব পিএসআইডি।
(9) সভা-সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা, সংবাদ সম্মেলন ও কনফারেন্সের আয়োজন: বেসরকারি সংস্থা সমূহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিদ্যমান সমস্যা সমূহ নিরূপণ করে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা, সংবাদ সম্মেলন ও কনফারেন্সের আয়োজন করে থাকে। যার মাধ্যমে সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা সম্বন্ধে অবগত হয়। অনেকসময় র‌্যালী, মানববন্ধন, জেলা সমাবেশ ও মহাসমাবেশ করে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য।
(10) সরকারি সুযোগ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে এ্যাডভোকেসি ও লবিং: সরকারি পর্যায়ে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর যে সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা আদায়ের জন্য বেসরকারি সংস্থা সমূহ এ্যাডভোকেসি ও লবিং করে থাকে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপকৃত হয়। যেমন: সরকারি চাকুরি, সনদপত্র, স্কুলে ভর্তি সহ নানা কর্মকান্ড।
(11) নেটওয়ার্ক সংগঠন তৈরী: আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে দু’টি গ্রম্নপ কাজ করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে যেসব সংগঠন কাজ করে তাদের অধিকাংশই হচ্ছে For the Disabled Peoples. এসব সংগঠনের নেটওয়ার্ক হচ্ছে ‘এনএফওডবিস্নউডি’। এ প্রতিষ্ঠানের সংগঠ সদস্য সংখ্যা ৩০১ জন। সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রকৃত অংশগ্রহণ একেবারেই নেই, প্রতিবন্ধী নারীরা সেখানে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। সরকার ও উক্ত নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে আসলেও প্রতিবন্ধী নারী ও ব্যক্তিদের স্ব-সংগঠনের উন্নয়নে, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বা তাদেরকে শক্তিশালী করতে কোন ভুমিকাই পালন করে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষেরা তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকারও পায় না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে গত ১৮ বছর ধরে প্রতিবন্ধী ফোরামের নেতৃত্ব প্রদানকারী সভাপতির নিজের প্রতিষ্ঠানেও হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা নেই। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব সংগঠন বা আত্ম সহায়ক প্রতিষ্ঠান। আর এগুলোর কার্যক্রম সমন্বিত ও শক্তিশালী করার জন্য গড়ে উঠেছে ‘ন্যাশনাল এ্যালাইয়েন্স অব ডিজএ্যাবল্ড পিপলস্ অর্গানাইজেশন (ন্যাডপো)। প্রতিবন্ধী নারীদের ইস্যুকে এগিয়ে নিতে, তাদের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় নেটওয়ার্কও ‘প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ গড়ে উঠেছে। সত্যিকার অর্থে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব সংগঠন সমূহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করছে।
(12) রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা: ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেখানে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা উলেস্নখ করেছিলো। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল সমূহ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করেছে।



তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যে কোন দেশের সরকার এগিয়ে না আসলে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন করা একা বেসরকারি সংস্থার পক্ষে যেমন সম্ভব নয় তেমনি সরকারের পক্ষে একা সবকিছু করা সম্ভব নয়। তবে স্বাধীনতার পর আমাদের দেশের সম্পদ অনুযায়ী আশাতীত উন্নতি হয়েছে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর। মাত্র এক যুগে আগে অনেক স্কুলে প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করতো না। এখন ভর্তি করছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-শুনা করছে। সরকারি, বেসরকারি চাকুরি করছে। নেতৃত্ব প্রদান করছে।


লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
(প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্য-যোগাযোগ উন্নয়নকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক)
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস)
মোবাইল:০১১৯১০৮৯০৭৫
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৩:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×