সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়াতে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই নতুন পে-কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 26 May 2013, 09:47 AM
সরকারের মেয়াদ আর সাত মাস বাকি থাকতে এই ঘোষণা দিলেন মুহিত। আগামী ৬ জুন বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন তিনি।
তবে বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মাহার্ঘ্যভাতা ঘোষণার ‘কোনো পরিকল্পনা নেই’ জানিয়ে মুহিত বলেন, “আমার বাজেটে কোনো মাহার্ঘ্য ভাতা নাই। তবে আমি কমিশনের কাজটা করে যাব।”
পরের সরকারে এই পে-কমিশন বাস্তবায়নে জটিলতা হবে কি না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “আমি কিছু ইন্ডিকেশন রেখে যাব।”
সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বেসরকারি খাতের কাছাকাছি হওয়া প্রয়োজন বলেও মত প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
“এতে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কমানো যাবে। সরকারি চাকরির আকর্ষণ বাড়বে।
“বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কারো বেতন ১০০ টাকা হলে আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনও ৭০ টাকা করতে চাই। এটা না হলে তো হবে না। কারণ পাবলিক সার্ভিস ইজ ভেরি ইমপরটেন্ট।”
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩১ আগস্ট ‘সপ্তম পে-কমিশন’ গঠন করে সরকার। সে সময় বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করেন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
বর্তমান সরকারের প্রথম বছর ২০০৯ সারের নভেম্বরে ওই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়। এতে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন চার হাজার ১০০ টাকা বেতন ধরা হয়।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য এর আগে ২০০৫, ১৯৯৬, ১৯৮৯, ১৯৮৪, ১৯৭৬ ও ১৯৭২ সালে বেতন কমিশন গঠন করা হয়।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন দেয়ার দাবি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে যে কাঠামো আছে ‘সেটাই ভাল’।
“আন্তর্জাতিক ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী তাদের বেতন দিলে আমার বেতনের সমান তাদের বেতন হয়ে যাবে।… তারা এটা না বলে কারখানায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বাড়ানো, অতিরিক্ত গেইট বানানোর কথা বলত পারত।”
অর্থমন্ত্রীর মতে, বেতন নয়, হরতালই হলো পোশাক খাতের সামনে প্রধান সমস্যা।
“আজকে হরতাল বন্ধ হোক, কাল থেকেই বায়াররা আসবে। হরতাল হলো রিয়াল প্রবলেম।”
পোশাক শ্রমিকদের জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও এ সময় তুলে ধরেন মুহিত।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণেও একটি মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে গেজেট জারি হওয়ার কথা।
আসন্ন বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা আগের মতোই রাখা হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সাধারণত নির্বাচনের বছরে প্রবৃদ্ধি কম ধরা হলেও এবার তা হবে না।”
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ অর্জিত হতে পারে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ধারণা। গত অর্থবছর বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগ নিয়ে তার ‘ভয়ঙ্কররকম রিজারভেশন’ আছে।
“এই ইনভেস্টমেন্টে বিনামূল্যে টাকা খাটাতে হয়। এই টাকায় যখন ফি দেয়া হবে তা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে।”
শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার আওতায় কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে চাইলেও যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় ‘গ্রামীণ’ নাম দিয়ে কোনো প্রস্তাবেই ছাড়পত্র দিচ্ছে না। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ফিরে যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “ইউনূস সাহেব গ্রামীণ ফোন যখন করেছিলেন তখন বলেছিলেন এটা হবে গ্রামীণের বেনিফিট। কিন্তু এটায় গ্রামীণের বেনিফিট কিছুই নাই। আমার মনে হয় গত ২০ বছরে তারা দুইশ’ কোটি টাকার মতো সাহায্য পেয়েছে।”
ইউনূসের প্রতিষ্ঠান ‘ব্যক্তি কেন্দ্রিকভাব’ গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “উনি চলে গেলে কি হবে সেটা আমরা জানি না।”