somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট্ট শহর : কানাডার লন্ডন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলাতে প্রচুর ভ্রমন কাহিনী পড়তাম । আর পড়তে পড়তে চলে যেতাম সাত সাগর পাড়ি দিয়ে হাজার মাইল দূরের কোন দেশে । মাঝে মাঝে ইচ্ছা হতো … সত্যি সত্যি যদি যেতে পারতাম সেসব স্বপ্নের দেশে!

পড়াশুনার সুবাদে সে সু্যোগটা এসেছে ২০০৮ এর ডিসেম্বরে। শহরের নাম লন্ডন, দেশের নাম কানাডা । টরেন্টো থেকে বাসে ২ ঘন্টার পথ। কানাডাতেও যে লন্ডন নামে একটা জায়গা আছে সেটা আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষই জানেনা…এখানে আসার আগে আমারও জানা ছিলনা ।এখানকার অনেক কিছুতেই ইউকে’র লন্ডনের ছাঁয়া। বাড়ী ঘর গুলো একদম ছবির মতো করে সাজানো। এই শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী টার নাম ও দেয়া হয়েছে “টেমস”! এই টেমস নদীকে ঘিরেই আয়োজন করা হয়েছে ছোট ছোট শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা। ডাউন টাউনের রিভার সাইডে মাটি ফুড়েঁ বের হচ্ছে পানির ফোয়ারা। বাচ্চারা যখন গোসলের জন্যে ঝরণার পানিতে ছুটোছুটি করে তখন ইচ্ছা হয় বাচ্চাদের সাথে আমিও নেমে পড়ি!

এই শহরের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম চমৎকার। আগে থেকে বাস পাস নিয়ে রাখতে হয়। অবশ্য বাসে উঠেও টিকেট কাটার সু্যোগ আছে। যদিও সেভাবে ভাড়াটা একটু বেশীই গুনতে হয়। একটু পরপরই বাস আসছে নির্ধারিত বাস স্টপেজে, আর সবাই সুশৃংখল ভাবে উঠছে সে বাসে। আমাদের দেশের মতন এই দেশেও বাসের মধ্যে রাশ আওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যারা বসে আছে তারাও কোনো বৃদ্ধ কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধী সম্পন্ন মানুষ বাসে উঠলে, সংগে সংগে তাদের জন্যে নির্ধারিত আসন ছেড়ে দেয়; আর বাস চালক নিজে এসে বেঁধে দেয় তাদের হুইল চেয়ারের বেল্ট। আমাদের যাদের নিজেদের গাড়ী নেই, শহরে যাতায়াতের জন্যে এই বাস গুলোই হল মূল ভরসা। কিন্তু একবার এক মাসের উপর বাস ধর্মঘট ছিল। খুব টেনশনে ছিলাম। কারণ আমাদের বাসা থেকে ইউনিভার্সিটি হেটেঁ যেতে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতন লাগে। সেটাও কোন ব্যাপার না। কিন্তু সমস্যা হল ঘরের বাইরের তাপমাত্রা যখন শুন্যের নিচে নেমে যায় তখন হাটাঁ বেশ কষ্টকর হয়ে দাড়াঁয়। বাস ধর্মঘট শুরুর সাথে সাথে ইউনিভার্সিটি থেকে অনেক গুলো গাড়ী ভাড়া করা হল যাতে করে একদিনের জন্যেও ক্লাস কিংবা রিসার্চ বন্ধ না থাকে। অবাক করা ব্যাপার হল…সাথে সাথে প্রচুর মানুষও পাওয়া গেল যারা ভলান্টিয়ার হিসাবে গাড়ী গুলো চালানোর দায়িত্ব নিবে। এছাড়া আরো অনেকেই ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিল যে তারাও চায় স্টুডেন্টদেরকে ওদের গাড়ী করে ভার্সিটি পৌছেঁ দিতে…তবু পড়াশুনা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় !

এই শহরে প্রচুর মানুষ আছে যারা তাদের পোষা কুকুরকে তাদের পরিবারেরই অংশ মনে করে। রাস্তায় বের হলেই অনেক সময় চোখে পড়বে ড্রাইভিং সীটের ঠিক পাশেই বসে তাদের প্রিয় বন্ধুটি (!) জানালা দিয়ে উকিঁ দিয়ে দেখছে আপনাকে। প্রথম প্রথম আমিও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষই যেখানে গাড়ীতে উঠার সু্যোগ পায়না; সেখানে "এই দেশী পোষা প্রাণীটি" দিব্যি গাড়ীতে বসে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের জন্যে আছে সুন্দর একটা ঘর। অনেকেই নাকি আবার তাদের আদরের প্রাণীটিকে স্কুলে পাঠায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্যে। আমি যে কোর্সটিতে টিচিং এসিসট্যান্ট হিসাবে কাজ করছি, সেই কোর্সের এক ছাত্রী প্রতি ক্লাসে তার শিক্ষিত কুকুরটিকে নিয়ে ক্লাসে আসে। কুকুরটিও একজন আর্দশ ছাত্র হিসাবে প্রফেসরের লেকচার শুনে ! সবার কুকুর ই যে এ রকম তা নয়। একবার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এমনি এক কুকুর ঘেঁও ঘেঁও চিৎকারে দৌঁড়ে এসেছিল আমাদের দিকে। পরে সেটির মালিকের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেয়েছিলাম! যদিও মালিকের মতে ওর “পাপ্পি” নাকি খুবি জেন্টেল!

লন্ডন শহরে শ’খানেক বাংলাদেশীর বাস। তাদের বেশীর ভাগই আবার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওয়ান্টারিও’র স্টুডেন্ট ও তাদের পরিবারের অংশ। এখানকার বাংলাদেশী পরিবার গুলো একে অন্যের প্রতি খুবি আন্তরিক। বিভিন্ন উইক এন্ড গুলোতে বিভিন্ন বাসায় বসে জমজমাট আড্ডা। ঈদের ঠিক পরের শনি কিংবা রবিবারে আয়োজন করা হয় ঈদ পূনর্মিলনী উৎসবের। সুখে দুঃখে এক সাথে আছে এখানকার বাংলাদেশী পরিবারগুলো।

বাংলাদেশে যেমন বাসা থেকে বের হলেই দোকান, এখানে ব্যাপারটা সেরকম নয়। বেশীর ভাগ দোকানে যেতে হয় গাড়ী করে। এখানকার দোকান গুলো পরবর্তী সপ্তাহে কোন কোন জিনিস গুলো সস্তায় দিবে তা আগের সপ্তায় ফ্লাইয়ারে প্রকাশ করে। আমরা যারা বাংলাদেশী আছি তারা প্রতি বৃহষ্পতিবার বিভিন্ন দোকানের ফ্লাইয়ার দেখে খুঁজে বের করি কোন দোকানে কি সস্তায় দিচ্ছে। আর শনি-রবিবারে বের হয়ে পড়ি অভিযানে । এখানকার সব জিনিসের দাম আগেই নির্ধারণ করা থাকে বলে কোন জিনিস কিনতে দাম-দর করার প্রয়োজন পড়েনা। আবার বক্সিং ডে'তে অর্থাৎ ক্রিসমাসের পরদিন বিভিন্ন দোকানে থাকে বিশেষ ছাড় ! অনেকে খুব ভোর থেকে বিভিন্ন দোকানের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে ভালো জিনিসটা পাওয়ার আশায়!

লন্ডনের বিভিন্ন শপিং মলে আছে পাবলিক লাইব্রেরীর শাখা। লাইব্রেরীর মেম্বার হওয়া যায় খুব সহজে। মেম্বাররা বিনা খরচায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, তুলতে পারে বই কিংবা সিনেমার সিডি। খুব মজা পেয়েছিলাম যখন দেখলাম কিছু বাংলাদেশী সিনেমার সিডিও সেখানে স্থান পেয়েছে।

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে সামারে “সান ফেস্ট” নামে কয়েকদিন ব্যাপি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের শিল্প, সংগীত আর রকমারি খাবার নিয়ে হাজির হয়। অনেক দেশের মানুষের সাথে দেখা হয় সান ফেস্টে গেলে। লন্ডনের স্প্রিংব্যাংক পার্ককে ধরা হয় কানাডার শহুরে পার্কের সবচে’ বড় উদাহরণ হিসাবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্প্রিংব্যাংক পার্ক ধারণ করে এমন এক সৌন্দর্য্য যা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না !

লেখাটা বেশ বড় হয়ে গেল। এতক্ষণে নিশ্চয় পাঠকদের ধৈর্যচূতি ঘটেছে ! এ পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে ডেকে বললাম, দেখতো গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু বাদ পড়েছে কিনা…ও বলল, “অমিত চাকমা”; আসলেই তো ! এক্কেবারে ভুলে গেছি। যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ি সেটার প্রেসিডেন্ট যে একজন বাংলাদেশী সেটাই যে লিখা হয় নাই! এখানকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অমিত চাকমা’র মতো আরো অনেক বাংলাদেশীই আছেন যারা বিদেশে আমাদের দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে চলেছেন।।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৩০
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×