somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘপঞ্জিকা - ফাগুনকথন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদ্ভুত সত্যিই অদ্ভুত! এমন বিস্ময়কর ঘটনাও মানুষের জীবনে ঘটে। এখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিনা এই একটুক্ষণ আগে এমন একটা মূহুর্ত অতিক্রম করে আসলাম। পথ চলতে চলতে পান্থজনের সাথে হঠাৎ অন্য কোন পথের পথিকের সাথে যখন এমন মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় এবং সেই মানুষটি যদি চার বছরের পরিচয়ের রুপ নিয়ে হঠাৎ এমন করে রাস্তার ধারে ভুজভাজির মত উদয় হয় তাকে ঠিক কি সংঙ্গায় আখ্যায়িত করা যায় ভেবে আমি হয়রান হচ্ছি।

এত কাছে, একি শহরে আমাদের বসবাস
তবু কারো দেখা নেই...

ঠিক এই গানের লাইনদুটোর মত আমাদের ও বাস একি শহরে এবং অনেক অনেক কাছে। অনলাইনে পরিচয়ের প্রায় ৪ বছর পরেও তবু কেন যেন দুজনের মুখোমুখি পরিচয় কখনো হয়ে উঠেনি। তাও ফেইসবুকের সূত্রে একে অপরের খবর রাখছিলাম, শুভেচ্ছা বার্তা আদান প্রদান চলছিল আজ হঠাৎ সেই মানুষটার সাথে রাস্তা অতিক্রম করতে যেয়ে মুখোমুখি প্রথম পরিচয়। হ্যাঁ মুখোমুখি প্রথম পরিচয়। কিন্তু আমার বিস্ময়ের কারণ শুধু সেটি নয়। আমার তাক লেগে গিয়েছে এই জন্য যে তাকে দূর থেকে লক্ষ্য করার মুহুর্তকাল আগেই আমি তার কথাই স্মরণ করছিলাম। যে পথ দিয়ে হেটে আসছিলাম জানতাম সে তার আশেপাশেই কোথাও থাকে। ভেবে ভেবে আসছিলাম আর এই ভেবে মনে মনে হাসছিলাম যে, তার সাথে পথের মধ্যে দেখা হয়ে গেলে কিন্তু মন্দ হয় না। রাস্তার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ভাবনাটাকে কর্পুরের মতো উবে যেতে দিচ্ছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম হাটাঁর সিগনালের জন্য। ঠিক সেই সময় দেখি রাস্তার অপর প্রান্তে একটি মেয়ে ক্যামেরাতে মুখ লাগিয়ে উল্টোদিক থেকে আসা গাড়ীর ছবি তুলছে। বাতাসে তার চুলগুলি উড়িয়ে এনে বারে বারে ক্যামেরার উপর ফেলছিল আর সে চুলগুলোকে সরিয়ে চেষ্টা করছিল গাড়ীর ছবি উঠানোর। এদিকে হাটাঁর সিগনালও পড়ে গিয়েছে আর আমি যেই না পা বাড়াতে যাব উল্টোদিকের সেই মেয়েটির চুল সরানোর ফাঁকে তার মুখটা দেখে ওমনি সেখানেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম, আরে! এ যে নীরা!

একটু আগে যার কথায় ভাবছিলাম। এ কি হল! আমার ভাবনাটা যেন কেও পড়ে ফেলে মজা দেখার জন্য আমার সামনেই এভাবে দাঁড় করিয়ে দিল। আমি রাস্তা অতিক্রম করার কথাও ভুলে গেলাম। যেখানে ছিলাম সেখানেই বিস্ময়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে অপর প্রান্তের দিকে চেয়ে থাকলাম। সেই কয়েকটা সেকেন্ড আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন কয়েকটা যুগ। মহাকালের গতিকে যেন কেও দুরন্ত শক্তি দিয়ে হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে চার বছরের সব স্মৃতি ফ্লাশব্যাকের মতো যেন আমার চোখের সামনে একে একে নিয়ে এসে ফেলছিল। একটু পরেই চৈতন্য ফিরে পেয়ে ভাবতে লাগলাম আমি রাস্তা অতিক্রম করবো নাকি তার এ পাড়ে আসার জন্য অপেক্ষা করবো। দেখি সে তখনো ছবি উঠানোতেই মত্ত। তাই আর কিছু না ভেবে পা বাড়ালাম। পা চলতে চলতে ভাবছিলাম সে কি চিনতে পাবে? যদি না চিনে তাইলে কি তাকে ডাক দেয়া উচিত হব? এসব ভাবতে ভাবতে আমি ওপারে পৌঁছে গেলাম আর সে তখনই মাত্র পা বাড়ালো রাস্তা অতিক্রম করার জন্য। সে দেখলাম আমাকে লক্ষ্য করেনি। আর কিছু না ভেবে তাই ডাক পেরেই বসলাম, "নীরা!" সে এমন করে তার চুলগুলো এক পাশে সরিয়ে মাথা ঘুরালো যে ক্ষণিকের জন্য আমি ভড়কে গেলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, "এই সেরেছে! চিনতে পারবে তো!"। মুখে হাসি টেনে এনে আগের কথার রেশ ধরে বললাম, "রাইট?"। সে "ইয়েস" বলে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তখনো আমার মুখের দিয়ে চেয়ে আছে দেখে মনে মনে প্রমাদ গুণলাম। একটু আগে তাকে লক্ষ্য করার আগের ভাবনাটা যাতে সে আমার মুখ দেখে পড়ে ফেলতে না পারে তাই চেষ্টা করছিলাম মুখের অভিব্যক্তিগুলোকে আড়াল করতে। হাসিটা ধরে রেখে বললাম, "আমি ___"। নিজের নাম বললাম আর ওমনি তার প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মুছে গিয়ে সেখানে জায়গা করে নিল অনাবিল এক হাসি। "আরে __ তুমি!"। আর আমিও হাঁফ ছেরে বাঁচলাম, যাক চিনতে পারলো অবশেষে।

নীরা: শেষমেষ দেখা হয়েই গেল তাহলে!

দুজনেই তখন একে অপরের দিকে চেয়ে হাসছি। এই মুহুর্তগুলোর জন্য কেন যে কোন কবি কোন সংলাপ বেঁধে রেখে যাননি। হাসি ছাড়া তখন আর কি বলে যে মনের কথাগুলো প্রকাশ করা যায় আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না। তার মনের খবর জানিনে। সেও হয়তো কথা খুজে পাচ্ছিলনা। অনলাইনে যার সাথে রাজ্যের কথা বলা যায় সামনা সামনি তার সাথে পরিচয়ে এমন করে মুখে কথা বাধবে কে জানতো! এমন মিষ্টি-মধুর অস্বস্তিকর অবস্থায় পরতে হবে জানলে তখন কি আর ডাক দিতাম।

আমিঃ
নীরাঃ আমাকে চিনলে কি করে?
আমিঃ মুখ দেখে আর হাতে ক্যামেরা দেখে
নীরাঃ (হেসে) ও। চেষ্ঠা করছিলাম উঠানোর।
আমিঃ তুলতে পেরেছো? ফেইসবুকে দেখতো পাবো নিশ্চই?
নীরাঃ না ভালো আসেনি। ক্যামেরাটা আমার না। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করেছি।
আমিঃ ওহ্‌
নীরাঃ তুমি কি এখানেই থাক?
আমিঃ না, একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম।
(ক্ষণিক থেমে)
নীরাঃ কিছু খাবা নাকি!
আমিঃ (কথাটা কেন আমার আগে মনে আসলোনা সেই ভেবে নিজেকে একটা গাল পেরে নিলাম। এখন আর হ্যাঁ বলা যায় না। মুখে হাসি ধরে রেখে বললাম) না না ঠিক আছে। (তখন মনে হচ্ছিল ঘড়ির কাটা যদি পেছনে টেনে নিয়ে গিয়ে খাবারের প্রস্তাবটা আমার মুখ দিয়ে বের করে দিতে পারতাম। যাক এখন আর পস্তিয়ে কি হবে)
নীরাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
(একটু পর)
নীরাঃ আচ্ছা চলি তাইলে।
আমিঃ (হেসে বললাম) আচ্ছা।

বিদায় বেলাকার কথা কি কি হল এখন আর সেগুলো মনে নেই। আমার মাথায় কেবল ঘুরপাক খাচ্ছিল সে আমাকে খাওয়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল আর আমি না বলে বসেছি! এমন করে ভজঘট পাঁকিয়ে ফেললাম! বিদায় নিয়ে দুজন দুদিকে যখন চলে গেলাম তখন তার সাথে বলা কথাগুলো রিইয়ান্ড করে করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, সমস্ততেই নিজেকে একটা অসভ্য রুপে উপস্থাপন করেছি। তবে সবকিছু চাপিয়ে এই আনন্দ আমাকে গ্রাস করছিল যে, নীরার সাথে পরিচয় হওয়া গিয়েছে তাও এমন বিস্ময়কররুপে।

হেটে ফিরতে ফিরতে এক জায়গায় দেখি একুশের মঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে। আর কয়েক ঘন্টা পরেই এই জায়গাটা ভরে উঠবে ফুলে ফুলে, আর বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আসা অগুণিত মানুষে মানুষে। নীরা আর একুশের কথা ভাবতে ভাবতে ধীরে ধীরে ফিরে চললাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:০২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×