somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অহর্নিশ মরে যেতে যেতে বেচেঁ উঠা পুনরায় মরে যাওয়ার জন্য

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন.. কাওয়ার্ডস ডাই মেনি টাইমস বিফোর দেয়ার ডেথ। আমি ভীরু , কাপুরুষ। আমি প্রতিদিন মরি, আবার মরতে মরতে বেচেঁ উঠি। এবং এভাবেই আমার বেচেঁ থাকা হয়। এক, দু্ই করে তেত্রিশ বছর। এই তেত্রিশ বছরে কতবার যে মরেছি!

খুব সম্ভবত প্রথম আমি যে বার মরেছিলাম আমার বয়স ছিল সাত, কিংবা আটও হতে পারে। অজপাড়াগায়েঁর ছেলে হয়েও ওই বয়সে সাতাঁর জানতাম না। পুকুর ঘাটে গোসল করার সময় পাড়ার একছেলে দুষ্ঠুমি করে ধাক্কা দেয়, অথৈ পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে আমি মরে যেতে থাকি। কিভাবে যে আবার বেচেঁ উঠি তা এখন আর মনে নেই। আমার প্রথম মরে যাওয়ায় একটা লাভ হয়েছিল আমি বুঝতে পেরেছিলাম বেচেঁ থাকার জন্য সাতাঁর শেখাটা জরুরী।

সেই থেকেই আমার মরে যাওয়ার শুরু। পাশের গ্রামের সাথে ফুটবল ম্যাচ হবে বাজারের মাঠে। সবাই যাচ্ছে। শুধু আমি যেতে পারিনা। বন্ধুদের সাথে মারামারি, নদীতে সাতার মাঠে দৌঁড়ানো কিছুই করা হয়না আমার। সেই ভীরু, কাপুরুষ আমি কিভাবে যে একজনকে ভালোবেসে ফেলি সেটাই একটা বিস্ময়, বন্ধুদের কাছে; আমার নিজের কাছেও। তারপর যথারীতি তার চলে যাওয়া। ওর বিয়ের রাতে একগাদা ঘুমের ওষুধ কিনি মরে যাওয়ার জন্য। না, ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরার সৌভাগ্য আমার হয়না। আমি না মরে মরে যাই, আবার মরার জন্য। এবং প্রতিনিয়ত মরতেই থাকি।

কলেজ, ভার্সিটি জীবনে সহপাঠিরা যখন ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে পুরো ক্যাম্পাস বেড়িয়েছে আমি তখন চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। হলে আমার জন্য বরাদ্দ সীটে এক বড়ভাই যখন তার এক অনুজকে তুলে দেয় আমি তখন ফ্লোরে শোয়াঁ ছাড়া কিছুই করতে পারিনি মরে যাওয়ার ভয়ে। কতবার ডাইনিং এ খাওয়া না পেয়ে চলে এসেছি। রাতে কলা- পাউরুটি খেয়েছি কখনো কখনো, কখনোবা কিছুইনা, তবুও আমার কিছুই বলা হতো না। বাংলা অভিধানে প্রতিবাদ বলে একটি শব্দ আছে। ওটা শুধু অভিধানে পড়েছি, কোনদিন প্রয়োগ করা হয়নি।

বাঙালী জাতির একটি ঐতিহাসিক দিনে জম্ম বলে যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি নিজেকে একটু অন্যরকম মনে হতো। যদিও আমার জম্ম কোনদিন হবে এতে আমার বিন্দুমাত্র ভূমিকা ছিলনা তথাপি একটা বিশেষ দিনে জম্ম নিতে পেরে ভেতরে ভেতরে যে কিছু অহংকার ছিলনা তা বলা যাবে না। কিন্তু ঐ অহংকার পর্যন্তই আমার আর কোনদিন রফিক, জব্বার কিংবা বরকত হয়ে উঠা হয়নি। তাদের মতো বুকের রক্ত দিতে না পারি প্রতিবাদের হুন্কারতো দিতে পারতাম। না, কখনো কোন প্রতিবাদ আমার করা হয়নি শুধু মরে যাবার ভয়ে। আচ্ছা এমন যদি হতো আমার জম্ম ২১ ফেব্রুয়ারি না হয়ে অন্য কোন দিন হলো। যেমন ধরি ১৬ ডিসেম্বর কিংবা ২৬ মার্চ অথবা ১৫ আগস্ট কিংবা ৭ নভেম্বর তবে কি আমি অন্যরকম হতাম। তবে কি আমি প্রতিবাদ করতে শিখতাম। যারা প্রতিবাদে বুকের রক্ত ঢেলে দেয় কিংবা কাপিঁয়ে দেয় মসনদ তাঁদের জম্ম কি বিশেষ কোন দিনে হয়, নাকি তাদেঁর জম্ম দিতে পেরে ঐদিনগুলো বিশেষ হয়। আমার মতো একজন বিশেষত্বহীন মানুষ একটি বিশেষ দিনে জম্মনিয়ে কেবলই অপরাধবোধে ভুগি। অক্ষমতার, প্রতিবাদহীনতার উনুনে নিয়ত দগ্ধ আমি।

এখনো প্রতিনিয়ত হায়েনাদের উল্লাস দেখি, আমার ভায়ের মৃতদেহ দেখি পানির ট্যান্কির ভিতর, আমার নিরাপত্তাহীন বোন যখন সন্ত্রস্ত হয়ে হেটেঁ যায় শকুনের লোলুপ দৃষ্টির সামনে; বয়সের ভারে ন্যুজ বাবা যখন দু'য়েক টাকা বাচাঁনোর জন্য দরাদরি করে সবজি বিক্রেতার ধমক খায় তখনও আমি মরে যেতে থাকি। এভাবেই অহর্নিশ আমি মরে যাই, কিংবা মরে গিয়ে আবার বেচেঁ উঠি পুনর্বার মরে যাওয়ার জন্য।

৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×