somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যন্ত্রণা-১২

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুইদিন অপেক্ষা করতে হয় না। পরদিন রাতেই প্রিয়ন্তীর খোঁজ পায় তমা। যাওয়ার পথে এ্যাক্সিডেন্ট করেছিল প্রিয়ন্তীদের বাস। একটা প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দিয়ে বাসটা উল্টে পড়েছে রাস্তার পাশের একটা খাদে। ওর মা মারা গেছেন সাথে সাথেই। প্রিয়ন্তী আর ওর বোনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওর বোন বেঁচে গেলেও সন্ধ্যার দিকে প্রিয়ন্তী মারা যায়। প্রিয়ন্তীর বড় ভাই খবরটা জানানোর জন্য ফোন করলেন। কান্নার জন্য উনি কথা বলতে পারছিলেন না। তমাকে বললেন প্রিয়ন্তী শেষ মূহুর্তে তমাকে একটা কথা বলতে বলেছিল। ও বলেছে, “‍‍"তমা যেন কখনো হেরে না যায়"”। ফোন ধরে চুপ করে থাকে তমা। কোন কথা বলে না, বলতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে ভাইয়া ফোন রেখে দিলেন। আম্মাও কাঁদছিল। প্রিয়ন্তী ছোটবেলা থেকে তমার বন্ধু। বাসায় যাতায়াত করতো, ওর অনেক আদর ছিল তমাদের বাসায়। কিন্তু তমা কাঁদে না। ওর কান্না পায় না। ভীষণ রাগ হয়, অভিমান হয়। "কি করে প্রিয়ন্তী পারল ওকে এই অবস্থায় একা রেখে চলে যেতে? ও কেন যাবে! ওর কি উচিত হয়েছে?" তমার বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ভীষণ ভীষণ একটা শূণ্যতা। পাথরের মত বসে থাকে তমা। কিছু দেখে না, কিছু শোনে না, কিছু ভাবে না। ওর চোখে একফোটা পানিও আসে না।

আম্মা ওর অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। অনেক সান্ত্বনা দেয়, অনেক কথা বলে কিন্তু ওর কোন বিকার হয় না। সাপের মত ঠান্ডা চোখে একবার তাকায় আম্মার দিকে, আস্তে করে আম্মার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে চলে যায়।

“"প্রিয়ন্তী কি করে এতবড় একটা অন্যায় করল তমার সাথে? ও কি করে পারল? এখন তমা কার কাছে যাবে, কাকে বলবে ওর কষ্টের কথা!”" তমা কেমন বোধশূন্য হয়ে যায়। দিশেহারার মত তাকিয়ে থাকে ঘরের মাঝখানে। ওর চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে যেতে থাকে ঘরের প্রতিটা জিনিস, চারদিকের আলো। লুটিয়ে পড়ে তমা মেঝেতে।

................................... ............................................ ................................................

তমা একেবারে নির্বাক হয়ে যায়। কারো সাথে কথা বলে না, কোন কথাতে তার কোন প্রতিক্রিয়া হয় না, কিছু খায় না। সারাদিন শুধু মূর্তির মত বসে থাকে। দিনের পর দিন চলে যায়, তমার অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। ডাক্তার দেখানো হয়। সবাই একই কথা বলে, ‘'প্রচন্ড মানসিক আঘাতে এই অবস্থা হয়েছে। ওকে দু:শ্চিন্তায় রাখা যাবে না, সবসময় ভাল আর আনন্দেও কথা বলতে হবে, ভাল হয় কোথাও থেকে ঘুরে আসলে।’' কিন্তু ওর কাছে কেউ আসতেই ভয় পায়। তন্ময় দূর থেকে ভয়ে ভয়ে দেখে সরে যায়, আব্বা কখনোই সামনেই আসে না। আম্মা এসে মন খারাপ করে বসে থাকে, কোন কথা বলে না, কিছুক্ষণ পরে চোখে আঁচল চেপে উঠে চলে যায়। কলেজের টেস্ট পরীক্ষা চলছে, বন্ধুরা ব্যস্ত, কেউ আসে না দেখা করতে। কোন কিছুতেই তমার কোন বিকার হয় না। এই মানসিক-শারীরিক অবস্থায় পরীক্ষা দেয়া সম্ভব না। আম্মা গিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে এসেছে। ভাল ছাত্রী আর সবার প্রিয় বলে স্যার অনুমতি দিয়েছেন যে এই পরীক্ষাটা না দিলেও বিশেষ বিবেচনায় তমা ফাইনাল দিতে পারবে।

ওই ঘটনার পর প্রায় দুইমাস চলে গেছে। এইচ এস সি পরীক্ষার আর দেড়মাস বাকি। একদিন সকালে তমা বলে ও কলেজে যাবে। এতদিন পরে তমাকে কথা বলতে শুনে আম্মা খুশিতে অস্থির হয়ে উঠে। তবু একা ছাড়তে ভয় পায়। বলে, '‘ঠিক আছে যাবি। চল আমিও সাথে যাবো।’'
তমা ঠান্ডা গলায় বলে, '‘কোন দরকার নাই। আমি একাই যাবো।’'
আম্মা আর জোর করে না। তমা বুঝতে পারে আম্মা ওর সাথে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে। তমা বের হয়ে আসে বাসা থেকে। ও এতদিনে জানে মারুফ নাই দেশে। ওই ঘটনার পর পরই ও চলে গেছে দেশের বাইরে। তমার ইচ্ছা হয় মারুফের সাথে দেখা করতে। ওর পাওনাটুকু মিটিয়ে দিতে। ওর মনে হয় সবকিছুর জন্য মারুফই দায়ী, প্রিয়ন্তীর মৃত্যুর জন্যও। কিন্তু এখন তো আর কিছুই করা সম্ভব না। অক্ষম রাগে তমা শুধু ছটফট করে।

কলেজে পৌঁছে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করে তমা। বলে ও পরীক্ষা দিতে চায়। কিন্তু এতদিন বিরতিতে ও অনেক পিছিয়ে পড়েছে। স্যার এ ব্যাপারে ওকে কোন সাহায্য করতে পারবে কি না। স্যার ওকে বলেন যেসব সাবজেক্টে ও দুর্বল সেগুলো জানাতে, যা যা সাহায্য প্রয়োজন ঠিক করতে। সাবজেক্ট টিচারদের স্যার বলে দিবেন। তাঁরা প্রয়োজনীয় সব সাহায্য করবেন।

বাসায় ফিরে আসে তমা। ব্যস্ত হয়ে পড়ে পড়ালেখা নিয়ে। আর সবকিছু ভুলে যায়। ভুলে যায় মারুফকে, ভুলে যায় কিছু ঘটেছিল ওর জীবনে, ভুলে যা প্রিয়ন্তীকে, এই নামে কাউকে ও চিনতো কখনো। ওর জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য ফাইনাল পরীক্ষা, পরীক্ষায় ভাল করা। পরীক্ষা, পড়ালেখা ছাড়া যেন পৃথিবীতে আর কিছু নাই। পরীক্ষার ব্যস্ততা দিয়ে ও পালাতে চাইছে সমস্ত ভয়ংকর স্মৃতি থেকে। মাঝে মাঝে মাথা ভারী হয়ে যায়। আর কাজ করে না। অসহ্য ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু ও পাত্তা দেয় না। এভাবেই প্রায় আড়াই মাসের গ্যাপ সত্ত্বেও ও পরীক্ষা দিল আর অনেক অনেক ভাল রেজাল্ট করল। ওর এই রেজাল্ট একেবারেই অপ্রত্যাশিত। সবাই খুব খুশি। কিন্তু তমার কোন ভাবান্তর হয় না। ও নির্বিকার, নির্লিপ্ত।


চলবে............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৫২
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×