somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তা করি-২

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিন্তা করি-১

হাই সাহেব নিজে খুব একটা বাংলা ছবি দেখেন না। তিনি শুক্রবারের দুপুরের এই সময়টা খাওয়া দাওয়া শেষ করে হয় একটা ঘুম দেন নয়তো কিছু দলিল পত্র নিয়ে বসেন। সিনেমা শেষ হওয়া মাত্র তিনি তার মেয়েদুটোকে এক ধমক দিয়ে পড়তে বসতে পাঠান। বড় মেয়েটা সাথে সাথে পড়ার টেবিলে বসে। কারন সে জানে যেহেতু তার বাবা ছবি দেখে মজা পান না। যেহেতু সকলে মজা পাচ্ছে অথচ তিনি মজা পাচ্ছেন না। যেহেতু এই মজা না পাওয়া তার মনে বিরক্তির উদ্রেক করে অথচ তিনি কাওকে কিছু বলতে পারেন না সেহেতু তিনি এখন তার মনের পুঞ্জীভুত ক্ষোভ বেত্রেঘাতের মাধ্যমে তার বড় মেয়ের উপর ঝাড়তে পারেন। তাই সাবধানতা হিসেবে সে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে। বই পত্র উল্টায়। খাতায় কিছু আকিবুকি করে। কিন্তু পড়াশুনা করে না। তার বাবা তার পড়া দেখতে টেবিলে আসবেন না। সে কি পড়ছে বা না পড়ছে তা নিয়ে তার বাবার মাথাব্যাথা নেই। সে যে পড়ার টেবিলে বসে আছে সেটাই তার বাবার সন্তুষ্টি। কারন পিতৃদায়িত্ব হল সন্তানকে পড়ার টেবিলে বসানো। উনি উনার দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র।

ছোট মেয়েটা পড়ার টেবিলে বসে না। সে এখনো অনেক ছোট। তাই বাবার আদরও পায় বেশী। সে কিছুই মানে না। সকল আদেশ অবজ্ঞা করে। কেউ কিছু বললে সে এখনো চিৎকার করে কাঁদতে বসে। তার চিৎকারের ভয়েই তাকে কেউ কিছু বলে না। সকলেই আসলে একটা স্থিতাবস্থা চায়। সে বাংলা ছবি দেখা শেষ করে বাড়ীর উঠোনে লাকড়ি দিয়ে খেলা আরম্ভ করে। মাটিতে আকিবুকি আকে। তার বাবা পারতপক্ষে তাকে মারে না। তবে তার মা প্রায়ই তাকে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অথবা চুল টেনে দেয়। সে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার কাছে যেয়ে নালিশ করে। তার বাবা তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। জিজ্ঞাসা করেন, "মা কই মারছে তোরে আম্মু"। ছোট মেয়েটা তার কোথায় কিভাবে কত জোরে তার মা মেরেছে তার সবিস্তার বর্ণনা দেয়। বর্ণনা দিতে যেয়ে সে তার কান্না ভুলে যায়। তার বাবা তখন তার মাকে বলে, "আমার মেয়েকে মারবা না, আর জানি কখনো আমার মেয়েকে মারতে না দেখি, নয়তো তোমার খবর আছে"। মেয়ের মা প্রতিউত্তরে উলটা আরো কতক্ষন মেয়েকে বকাঝকা করে। ঐদিকে মেয়ে গল্প শুরু করে তার বাবার সাথে। গল্পের ফাকে সে তার বাবাকে তার কোন নতুন একটা আবদারের কথা বলে। বেশীরভাগ আবদারই হয় কোন নতুন পুতুল বা জেলা সদর থেকে চকবার আইসক্রিম এনে দেওয়া সম্পর্কিত। হাই সাহেব মেয়ের সব আবদার মেনে নেন। তিনি তার ছোট মেয়েটাকে বড়ই ভালবাসেন। ভাসবাসেন তার বড় মেয়েটাকেও। ছোট মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বসে গল্প করতে তার খুব ভাল লাগে। আর খুব ভাল লাগে যখন তার বড় মেয়েটা তাকে এক কাপ চা বানিয়ে এনে দেয়। উনার সবেধন নীলমণি এই মেয়েদুটোকে নিয়ে উনার অনেক আশা। তার মেয়েদুটো একদিন অনেক বড় হবে, বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। হাই সাহেবের প্রথম সন্তানটা ছিল একটা ছেলে। জন্মের সময়ই ছেলেটা মারা যায়। তারপর এই দুটো মেয়ে। উনি কখনো তার স্ত্রীকে বলেননি আমাদের একটা ছেলে থাকলে খুব ভাল হত। তবে উনার স্ত্রী মাঝে মাঝে বলে আমাদের একটা ছেলে থাকলে কতই না ভালো হত। হাই সাহেব তার স্ত্রীকে থামিয়ে দেন। বলেন, "এখনকার যুগে ছেলে মেয়ে সব সমান"। তার স্ত্রী কিছু বলেননা। তবে হাই সাহেবের মনে একটা ছেলের জন্য কন ক্ষোভ আছে কি নাই, তা আমরা কেউই জানি না।

পাঠক আমরা কিন্তু এখনও হাই সাহেবের স্ত্রী আর মেয়ে দুটোর নাম জানিনা। চলুন তাদের একটা নাম দেওয়া যাক। বড় মেয়েটার নাম দিই ......... কি নাম দেওয়া যায় বলুন তো? আমি চিন্তা করছি কি নাম দেব। বুঝে উঠতে পারছি না। কারন এরপরের কাহিনী হয়তো অনেকদূর পর্যন্ত গড়াবে। সেখানে বড় মেয়েটা একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সেইসব ঘটনায় তার নামটা কি মানানসই হবে? আমাদের একটা নাম দরকার। ছোট মেয়েটাও একসময় বড় হবে তার জন্যও একটা উল্লেখযোগ্য নাম দরকার। হাই সাহেবের স্ত্রীর জন্য নাম বাছাইয়ের ঝামেলায় আমরা আর যাব না। এমনিতেই দুটো নাম ঠিক করতে অনেক ঝামেলা দেখা দিচ্ছে। উনাকে আমরা হাই সাহেবের স্ত্রী বা মেয়েদুটোর মধ্যে বড় বা ছোটটার নাম ধরে সেই নামের মা হিসেবে চালিয়ে দেব। বড় মেয়েটার নাম দিই ধরুন অনন্যা। পরে ভাল না লাগলে বদলিয়ে দেব। ছোটটার নাম দিই তানহা। ভাল না লাগলে নাম পরবর্তীতে বদলানো হবে। যাক এবার নামকরণ শেষে আবার তাদের জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়া যাক।

অনন্য একটা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। বিদ্যালয়টার নাম এডভোকেট মাহতাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়। এই নামটা অবশ্য আমার খুব পছন্দ হয়ছে। এডভোকেট মাহতাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়, নামটা বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা একতলা হাই স্কুল। যেখানে একটা মাঠ আছে। সেই মাঠে প্রতিদিন সকালে পিটি করানো হয়, সমাবেশ করান হয়, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়, শপথ করান হয়। যেখানে গ্রীষ্মের রোদে ত্যাক্ত বিরক্ত ছাত্র ছাত্রীরা তাদের সমাবেশ শেষ করে ক্লাসে প্রবেশ করে। প্রথম ক্লাসটা হয় সাধারণত বাংলা বা ইংরেজী বা গণিত, সাধারণত বাংলাদেশের উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে যা হয়ে থাকে। শিক্ষক আসেন কিছুক্ষণ পর রোল কলের খাতা নিয়ে। যারা যারা গতদিন স্কুলে আসে নাই তারা দাঁড়িয়ে থাকে বেত খাবার জন্য। সবাই হাতের লেখা বা বাড়ীর কাজের খাতা জমা দেয়। শিক্ষক সেগুলোতে স্বাক্ষর করেন। অনন্যা গতকাল ছবি দেখার পর টেবিলে বসে একটা গল্পের বই পড়েছে। আজকের বাংলা হাতের লেখা সে লিখে নাই। অথবা বলা যায় ভুলে গিয়েছিল লিখতে। সে জানে না, আজকে স্যার হাতের লেখার জন্য পিটুনি দেবেন কি দেবেন না। এখন সে কিছুটা চিন্তিত। সে ক্লাসে সেকেন্ড গার্ল। ক্লাসের এক নং রোলের অধিকারী একটা ছেলে। তিন নম্বর স্থানটা আরেকটা ছেলের। চার রোল আরেকটা ছেলের, পাচ নম্বরে আবার আরেকটা মেয়ে। ছয় আর সাতে দুটো ছেলে, আট নম্বরে আরেকটা মেয়ে। নয় দশ আবার দুটো ছেলে দখল করে রেখেছে। এই দশ জন ক্লাসের মোটামুটি মান সম্পন্ন ছাত্র। বাকীদের অবস্থা খুবই করুণ। যা খেলাধুলা করার এই দশজনই করে পরীক্ষার সময়। বাকীরা অত্যন্ত কষ্টকর অবস্থায় দিনাতিপাত করে। পাশ ফেল নিয়ে তাদের টানাটানি।.................................
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×