somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় জগৎ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২য় অংশ:

এক অলিখিত দন্ড নিয়ে জসিম তখন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পথে পথে হাটে। ভিন্ন চোখে খুজে বেড়ায় কোন চাহনীর চাকচিক্য। রাস্তায় হাটতে গিয়ে ইদানিং জসিমের একটা প্রিয় আভ্যাস হলো শিমুকে বাটখারা বানিয়ে অন্য সবাইকে মেপে দেখা। জসিম দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পায় কার ভেতরটা কেমন! তার আকার, আয়তন আর ওজনইবা কি। খট খট খট ভাঙ্গা রাস্তার রিকসায় কিংবা দ্রুতগামী সিএনজি টেক্সিতে বাতাসের বাতুলতায় স্খলিত আভরণের ণকালীন বদান্যতায় জসিম আপ্লুত হয়। জীবনের বদলে যাওয়া হয় জীবনে প্রথম একটি নারীদেহ দেখার অভিজ্ঞতায়। জসিমের জীবনে সৃষ্টি করে দ্বিতীয় জগৎ। সযতনে লালিত ও চর্চিত হওয়া দ্বিতীয় জগৎ, যার সন্ধান শুধু আব্বাস কেন, কোন বাপের ব্যাটারই জানা নেই। এটি জসিমের একান্ত নিজস্ব।

ক'য়েক ঘন্টা পর আবার ফিরে আসে ঘরে। সদর দরজায় লাগানো থাকে তালা আর শুন্য ঘরে কেবলই ভেসে বেড়ায় শিমুর সুগন্ধি। ঘ্রানেন্দ্রিয় আরো সু করে তুলতে চায় জসিম। আরো কিছু গন্ধ খোঁজে, আদিম গন্ধ। খালি গায়ে গড়াগড়ি খায় আব্বাসের বিছানায়। নাকে খত দিয়ে ঘুরে বেড়ায় বিছানার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। যেন বা উপাসনা করে সন্তুষ্ট করতে চায় কোন দেবীকে। লুলা ভিুকের আকুলতায় মনের আকাঙ্খা হাত বাড়ায় স্বর্গীয় অথচ পার্থিব কোন আপেলের আশায়। আর কবিতা লেখে। ছন্দ, লয়, মিলহীন কবিতা যার অরে অরে জড়ানো থাকে তীব্র পিপাসা, ছত্র থেকে ছত্রে গড়িয়ে পড়ে আঠালোতা, আপেল পাবার উদ্দেশ্যে।

নিরুত্তাপ জীবনে একমাত্র উত্তাপ ছিল ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম। তার মাঝেও পানি ঢেলে দিতেই বুঝি একদিন ঝপাঝপ বৃষ্টি এলো! জসিম মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে চ্যাপ্টা তোষক বিছানো চৌকিতে গড়িয়ে গড়িয়ে সাহিত্যে নিমগ্ন হয়েছিল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ভাবে যাচাই করছিল বিভিন্ন গল্পের নাটকীয় গল্পগুলোকে। বৃষ্টি এসে তাকে উদাসীন করে তুলল। নিমগ্নভাবে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে তদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল জসিম। ফ্যান্টাসির নানা উপাদানগুলো লাল, নীল রঙের আশ্চর্য বুদবুদের মত ঘুরতে থাকছিল তার চারপাশে। এমন সময় সহসা বজ্রপাতের মত গুড়–ম গুড়–ম শব্দে দরজায় আঘাত পড়ে।

জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বাড়ীওয়ালার বাসার কাজের মেয়ে, সাবেক গার্মেন্টস্ কর্মী, দেড় বছরের কন্যা সন্তানের জননী ও এক বছর আগে স্বামী পরিত্যক্তা - রীণা। মালিক পরে লোক বলে রীণার মধ্যেও একটা মালকিন মালকিন ভাব রয়েছে। তাই দরজায় বজ্রপাত হতেই পারে। বিহবল জসিম করণীয় ভাবতে থাকে।

‘ ভাইয়া দরজাডা খুলেন না, ভিইজ্জা যাইতেছি তো’ খলবলিয়ে অস্থিরতা প্রকাশ করে রীণা।
এক হাতে লুঙ্গি গোছাতে গোছাতে অন্য হাতে দরজা খোলে জসিম। বিহবলতার কৈফিয়ত দেয় ‘ঘরে কেউ নাই তো ......’।
‘তো কি অইছে, আমি কি বাগ? ইশশিরে, খালাম্মার শুকনা কাপরগুলা ভিজ্জা গেল’! বলে অর্ধ ভেজা কাপড়গুলো জসিমের চেয়ারের হাতলে রেখে জসিমের দিকে ঝুঁকে কুন্তল চর্চায় ব্যস্ত হয় রীণা।

বাড়ীওয়ালার আধুনিকা মেয়ে সিলভীর ব্যবহৃত সাদা জর্জেটের কামিজটির মালিকানা পরিবর্তন সুত্রে বর্তমান মালিক রীণা। ভেজা কামিজ গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়ে অর্গল খুলে যায় গোপনের। চুল ঝাকানোর ছন্দে মনে হচ্ছে কাঁচের দেয়ালে আটকা পড়া খয়েরী চঞ্চুর একজোড়া শুভ্র কবুতর ডানা ঝাপটা ঝাপটি করছে মুক্তির পিপাসায়।

এই নির্জন দুপুরে, জলে ভেজা হাওয়ায় কিছুণের মধ্যেই হঠাৎ করে জ্বরের ভাইরাস আক্রমন করে জসিমকে। সারা শরীর হতে বিকিরণ ঘটে তাপের আর জসিম বিকারগ্রস্থ হয়। অন্ধ ভিখারীর মত লাল, নীল, সাদা সব বর্ণ একাকার হয়ে যায়। এক অমোঘ আকর্ষনে জসিম কাচপোকার মত এগিয়ে যায়। হাতড়াতে হাতড়াতে কোমল বাহুলতার নীচ দিয়ে দুই করতলে মুঠো করে ধরে ফেলে দোদুল্যমান দুটি পায়রা। ভলো ভাবে ধরে রাখে যেন মুঠো আলগা হলেই এই বর্ষণমুখর দুপুরে উড়ে যাবে ওরা।

এ্যই .....হি হি হি..... ভাইয়া করেন কি! করেন কি! হি হি হি! মুচড়ে মুচড়ে রীণা লেপ্টে যয়ি জসিমের সাথে।

জসিমের মনে হতে থাকে রীণা নিউজপ্রিন্ট কাগজের মানুষ। অনেক আগে থেকেই তার সাথে পরিচয়, অভ্যস্ত নিবিড় লেনদেনে। তাই টানতে টানতে খিল খিল খিল ভাঙ্গতে থাকা রীণাকে নিয়ে যায় আব্বাস ভাইয়ের খাটে। কাঁপা হাতে তোষকের নীচ থেকে বের করে আনে অন্যজনের মোড়কবদ্ধ প্রতিরোধ।
রীণা প্রগলভ ও গভীর গলায় বলে ওঠে “দেইখ্যা তো মনে হয় ভাজা মাছও উল্ডাইয়া খাইতে পারে না, এহন দেহি সব ব্যবস্থাই আছে”।

ব্যপক পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে রীণা বন্দরে নোঙ্গর ফেলে জসিম। কখনো তার কাছে মনে হয় চট্টগ্রাম বন্দর, কখনো খুলনা বন্দর, কখনো শিমু বন্দর, অপসৃয়মান সিএনজির যাত্রী বন্দর আর কখনো বিদেশীনি বন্দর। মনে মনে বিভিন্ন বন্দরগুলোর নব্যতা মাপতে থাকে গভীর মনোযোগী কাপ্তানের মত। নোঙ্গরের আঘাতে আলোড়িত হয় উপক’লের নোনা পানি। প্রথম সমুদ্রযাত্রার উত্তেজনায় থরো থরো কাঁপে জসিম। যেন এক দিনেই সাত সমুদ্দুর আর তের নদী পাড়ি দিয়ে দেবে। পানি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এক সময় হঠাৎ নীরব হয়ে যায় জসিম। যেন আসন্ন কোন সাইকোনের প্রতিায় অপেমান হয় সে। তারপরই, তেমন কোন পূর্ব সংকেত ছাড়াই জসিমের শরীর ফুঁড়ে ওঠে ঘূর্ণি, অচেনা আঘাতে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত করে রীণা বন্দর জলোচ্ছাসের আঘাতে প্লাবিত করে দূর্বল হয়ে পড়ে ঝড়। তারপর শুধুই নীরবতা। এতোণের ব্যস্ততা ও কর্মচাঞ্চল্য হঠাৎ করেই যেন থেমে যায়। মাঝ দুপুরে সমাধি পাড়ের নীরবতা ছড়িয়ে পড়ে জসিমদের সেমি পাকা ভাড়া ঘরে।

বিদ্ধস্ত রীণার কাছ থেকে গড়িয়ে দূরে সরে যেতে যেতে জসিমের মাথায় দু’টি চিন্তা প্রধানতর হয়ে ওঠে। যথাঃ ০১. ‘একটি সিগারেট খাবো’ এবং ০২. ‘এ আমি কি করলাম’। এই চিন্তাদ্বয়ের অবকাশে কখন যে রীণা টলতে টলতে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় আর বাড়ীওয়ালী খালাম্মার কাপড়গুলো নিয়ে নীচে চলে যায় তা খেয়ালও করতে পারেনা। তার ভাবনা জুড়ে এখন অন্য চিন্তা। সিগারেটে কষে টান দিতে দিতে ভাবে, যে ভাববিলাসে সে মত্ত এতোদিন, যে ফ্যান্টাসি তার সকাল দুপুরের অবকাশ কাটানোর সবচেয়ে প্রিয় বিষয় তার শেকড় আসলে অনেক গভীরে প্রথিত। এতো সস্তা নয়। খুব গভীর ভাবে জড়ানো কারো সাথে ছাড়া এই বিনিময় বড়ই অপ্রাসঙ্গিক, বড়ই বিড়ম্বনার। কি যেন একটা চিরতরে হারিয়ে ফেলার বেদনা আর অচেনা অনুশোচনা দগ্ধ মন নিয়ে জসিম কাধে তোয়ালে ফেলে। বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়।

রীণার মুখোমুখি হবার ভয় থাকলেও গত দুই ধরে পার পেয়ে গেছে জসিম। তৃতীয় দিন আর হলো না। সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরে আব্বাস দাতে লুঙ্গি কামড় দিয়ে ঘামে ভেজা জামা-অন্তর্বাস পরিত্যাগ করছে। জসিম ষাট ওয়াট বাল্বের অস্বচ্ছ আলোয় কোচিং সেন্টারের চাররঙা সচিত্র প্রগতি বিবরনীর উপর হতাশ চোখ বুলাচ্ছে। এই সময় দরজায় খট খট শব্দ হলো। অনিচ্ছুক জসিম দরজা খুলে প্রথমে হতচকিত হয়ে পরমুর্হূতে গুটিয়ে গিয়ে পেছনে সরে এলো। বাড়ীওয়ালা চাচা এসেছেন। আব্বাসের চোখে মুখে নিখাদ বিস্ময়। চাচাতো এভাবে কখনো আসেন না! আর মাসের সবেমাত্র উনিশ তারিখ আজ। ভাড়া চাওয়ারও তো কোন প্রশ্ন নেই।

প্রশ্নবোধক সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে ‘ চাচা এই সময়’?
‘তোমারে ঘরে ফিরতে দেইখ্যা উপরে উঠছি, কথা আছে তোমার লগে’।
বুড়া ভাড়া বাড়ানোর ধান্দা করছে। মন্দ মুখে আব্বাস ভাবে, ‘ কি কথা বলেন চাচা’?
‘ দেখ আব্বাস, পাড়ার সবাই মানা করলেও তোমাগরে ভাল লাগছিল বইল্লা ব্যাচেলর ভাড়া দিছিলাম। এখন দেখি মস্ত বড় ভুল করছি’! দুবাই আতরের গন্ধ ছড়িয়ে স্বাগোক্তি করলেন বাড়ীওয়ালা।
‘কেন চাচা কি হইছে’? আব্বাসের ধন্দ কাটেনা।
‘ হওয়ার তো কিছু আর বাকি থাকলো না। তোমাগো লগে থাকে যে জসিম্ম্যা, হেয় রীণার ইজ্জত লইছে’।
সিলিংয়ের টিনের চাল যেন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়েছে আব্বাসের উপর। হতবিহ্বল ভঙ্গিতে বলে, ‘কবে? কখন’?
‘গত পরশুকা। এই ঘরে’।
আব্বাস এবার স্বতস্ফ’র্ত আন্তরিক অবিশ্বাস নিয়েই বলল,‘ কি কন চাচা! আমি বিশ্বাস করিনা। প্রমান কি’? জসিম ম্যান্দা ছেলে, সে শিমুর সাথের গোপন অভিসারও দেখে ফেলেছে, কিন্তু সে যে এই কাজ করবে সেটা আব্বাসের কাছে অবিশ্বাস্য।
‘ রীণা কি নিজের এমন বিষয় নিয়া মিথ্যা কথা বলবে? ডাক দাও হারামজারে, জিগায়া দেহ’। তারপর চাচা জসিমের বিভিন্ন খুঁটিনাটি চিহ্নাদী নিয়ে যে বিষদ বিবরণ ফাঁদতে শুরু করলেন।

দুবাই চাচার মুখ বন্ধ করতেই কি না? আব্বাস ডাকে জসিমকে। জসিম গুটিগুটি পায়ে এসে দাড়ায়। চেয়ারে বসার সাহস হারিয়েছে সে। আব্বাস বিব্রত স্বরে প্রশ্ন করে ‘জসিম, ব্যাপার কি সত্য’? আনত নেত্রের নীরবতায় সহসা নগ্ন হয়ে পড়ে জসিমের সম্মতি।
‘ ছি ছি জসিম এইডা তুমি কি করলা? এইডা তোমার কেমন রুচি? আর্তনাদ করে উঠে আব্বাস। ‘ রীণা কি কয়’? আব্বাসের প্রশ্ন।
‘ রীণার কথা তুমি রীণারেই জিগাও’, দায়িত্ব নেন না দুবাই চাচা। ‘ওই রীণা, রীণা? এদিগ আয়’। চিৎকার করে ওঠেন চাচা। রঙ্গ মঞ্চে রীণার আগমন ঘটে। সদর দরজার পাশে মিশে দাড়ায়। মৃদু চোখ ঘুরিয়ে নেয় উপস্থিত সমাবেশের দিকে। স্থির হয় জসিমের উপর।
‘ রীণা তুই ক জসিইম্মা তরে কেমনে কি করছে’? চাচার চোখ হালকা চকচকে।
না রীণা চুপচাপই থাকে। হঠাৎ করে একরোখা কন্ঠে বলে ‘ হেরে কন আমারে বিয়া করতে’।
আব্বাস চমকে উঠে, আর জসিম? আর কোন মানসিক মহামারী জসিমকে স্পর্শ করে না। সে এখন হাত পা বাঁধা একটি চোর মাত্র। আরো খারাপ কি ঘটতে পারে? মৃত্যু? জসিম তো এখন তাই প্রত্যাশা করছে মনে মনে। এই পরিস্থিতির থেকে মৃত্যুই শ্রেয় মনে হচ্ছে তার কাছে!
নড়েচড়ে ওঠে আব্বাস। কথা বলে, ‘ এইটা কি বল রীণা! একটা ঘটনা ঘইট্টা গেছে এহন বিয়ার প্রশ্ন আসে কেন? জসিম ছাত্র মানুষ তার বাপ-মা আছে, এইডা একটা আন্দাজি কথা হইল না?
‘ কাম মারার সময় মনো আছিল না? আমারে হে নষ্ট করছে। এহন বিয়া না করলে দর্ষণের মামলা করুম। মাইয়ালোকের লগে আকাম করনের শখ গোয়া দিয়া ঢুকাইয়া দেমু’। গ্রামীন ব্যাংক আর আশার ুদ্রঋণ গ্রহীতা রীণার কন্ঠে ঝাসির রাণীর ঝাঁঝ।
‘না মামলা মোকদ্দমা কেন হইবো, চাচা মুরুব্বী আছে ওনারা একটা সমাধান বাইর কইর‌্যা দিব। তুমি কোন চিন্তা কইরো না’। আব্বাস অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে।
‘ আমি চিন্তা করুম কেন? চিন্তা যা করার আপনেরা করেন। কাইলকা দুপুরের মইদ্যে বিয়ার ব্যবস্থা না করলে আমি কাউরে ছাড়তাম না। সবতারেই আমার চেনা আছে’। সংপ্তি অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করে নীচে চলে যায় রীণা। আর বাকী সবাই মাথা নীচু করে বসে থাকে।
‘ বিরাট ভুল করছি, বিরাট ভুল! মাথা নেড়ে মুখ নীচু করেন বাড়ীওয়ালা। তারপর আলোচনা শুরু করেন আব্বাসদের সাথে।
আর দশটা দুপুরের মতই সাধারন দুপুর। সাদা ভাত, আলু-গোশ আর মুশুরির ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে নগদ পকেটে পুরে বিদায় হলেন কাজী । সদর রাস্তার নালার পাশে একটা সেমিপাকা ঘর ভাড়া নেয়া হয়েছে। রীণার প্রতিবেশী খালা গতরাতেই ব্যবস্থা পাকা করেছেন। সাব্যস্ত হয়েছিল আজ দুপুরের পর জসিম বউ নিয়ে মেস ছেড়ে নতুন বাসায় উঠবে।
এক ট্রাভেল ব্যাগে কাপড় চোপড়, খবরের কাগজে মোড়া বই, গোটা বারো অডিও ক্যাসেট ও একটা ক্যাসেট প্লেয়ার, একটা আলনা আর একটা চ্যাপ্টা তোষক সমেত চৌকি। জসিমের এইতো সম্বল। রীণা বাড়ীওয়ালার বাসায় আছে। নীচে ভ্যানের উপর চিৎ করে রাখা চৌকি-তোষক, ভ্যানচালক আর তার বালক সহযোগী হল্লা করে আলনা নামাচ্ছে। জসিমের একহাতে টাভেল ব্যাগ আর ক্যাসেট প্লেয়ার আর অন্য হাতে বইয়ের বোঝা।
দুই হাতের ভরে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে করতে হঠাৎ করে বুদ্ধি ঝিলিক দেয় জসিমের মাথায়। সিদ্ধান্ত নেয়। পড়ে থাক চৌকি আর আলনা চিৎ হয়ে ভ্যানের উপর, হাতের মালামাল নিয়ে একটু এগিয়ে পানের দোকনের সামনে থেমে থাকা একটি খালি রিকশায় হঠাৎ উঠে পড়ে জসিম। সোজা বাস স্টেশন আর তারপর গ্রামে। মা নিশ্চয়ই ঠেলে ফেলবেন না তাকে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গোমতীতে গোসল করে পরিশুদ্ধ হবে সে। শুরু করবে নতুন জীবন। যে জীবনে থাকবে না কোন আব্বাস, শিমু , রীণা কিংবা কোন বাড়িওয়ালা। এমন কি শহরের নষ্ট বাতাস প্রশ্বাসে নিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া সাহিত্যানুরাগও পরিত্যাগ করবে সে।

সময় থেমে যায়। ভ্যানওয়ালা আর তার বালক সহকারী অনন্ত কাল ধরে নামাতে পারে না আলনাটাকে, বাড়িওয়ালী খালাম্মা আর সিলভি বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়েই থাকে এমন এক লুইচ্চ্যাকে সামনা সামনি দেখার কৌতুহলে, রীণা অপো করতে থাকে স্বামীর, আব্বাস আপদ বিদায় হবার মহেন্দ্রণের। অপো করতে করতে তাদের গায়ে শ্যাওলা পড়ে যায়। শুধু জসিমই গতিশীল, শুধু জসিমই যাচ্ছে অন্য সবাইকে স্থির করে দিয়ে।

কিছুদুর যেতে না যেতেই হঠাৎ হু.....শি.........উ...উ...উ...উ...উ... করে সামনের চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয় রিকশাটা। আর রিকশাওয়ালা কুৎসিত একটা ভঙ্গি করে বলে, ‘ধ্যূৎ বাল! গতকাইল না সারাইলাম ফুডাডারে’!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×